Home » রবীন্দ্রগদ্যের উদ্ধৃতি ।। নির্বাচন: অজিত দাশ

রবীন্দ্রগদ্যের উদ্ধৃতি ।। নির্বাচন: অজিত দাশ


সত্যযুগ কোনোকালে বর্তমানে ছিল না, চিরকাল অতীত ছিল।


গতকাল বলে যে অতীতি সে আজই আছে, গতকাল সে ছিলই না।


সত্য পুরাতন হইলেও সত্য এবং তাহাকে ভুল বুঝিলেও তাহা সত্য।


সত্যের নিকট পরাস্ত হইলে নিবিড়ভাবে সত্যের উপলব্ধি হইয়া থাকে।


আইডিয়াকে রিয়েলিটির চেয়ে কম সত্য মনে করা আমাদের একটা মোহ মাত্র।


যাকে আশাকরি তাকে যতখানি পাই, আশা পূর্ণ হলে তাকে আর ততখানি পাই নে।


খ্যাতি জিনিসটার পনেরো আনাই মৃত্যুর পরবর্তী ভাবীকালের সম্পদ, সে সম্পদ খাঁটি কি মেকি তাতে কার কী আসে যায়।


স্বার্থের প্রকৃতিই বিরোধ।


বিশ্বাস রেখে ঠকা ভালো, অবিশ্বাস করে অবিচার করবার চেয়ে।


দুঃখের দিন যখন সে তখন তাকে পড়ে মেনে নেওয়ার চেয়ে এগিয়ে গিয়ে মেনে নেওয়া ভালো- তাতে দুঃখের ভার কমে যায়-বৃথা ঝুটোপটি করতে হয় না।


আপনাকে না ভুলিলে মিলন হয় না।


প্রতিভা সেই শক্তিকেই বলে, যে শক্তির মূল আপনারই আনন্দের মধ্যে; বাহিরের নিয়ম বা তাড়না বা প্রলোভনের মধ্যে নহে।


যাত্রার মধ্যে যে দুঃখ আছে চলাটাই হচ্ছে তার ওষুধ।


বিশুদ্ধ জড়বাদি হচ্ছে বিশুদ্ধ বর্বর।


প্রত্যক্ষকে দেখিয়া অপ্রত্যক্ষকে মনে আনাই পৌত্তলিকতা! জগৎকে দেখিয়া জগতাতীতকে মনে আনা পৌত্তলিকতা


বিকাশের অর্থই ঐক্যের মধ্যে পার্থক্যের বিকাশ।


সুখের পক্ষে ধুলা হেয়, আনন্দের পক্ষে ধুলা ভূষণ।


ইচ্ছে করলেও মন মনের কথা দিতে পারে না।


সায়ান্সেই বোলো আর আর্টেই বলো নিরাসক্ত মনই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বাহন।


ইমারত আপন ভারার জন্য কোথাও শোক করে না।


যে কাজ দায়িত্বের সে কাজ ক্ষণকালের- যে কাজ খেলার সৃষ্টির সেই কাজেই চিরকালের ছাপ।


বহুকে এক করিয়া তুলতে পারে কে। ধর্ম।


ধর্মের সংস্কার সংকীরররণ করিলে তাহা চিরশৃখনলের মতো মানুষকে চাপিয়া ধরে- মানুষের সমস্ত আয়তন যখন বাড়িতেছে তখন সেই ধর্ম ড়ে না… মৃত্যু পরররযন্ত তাহার হাত হইতে নিস্তার পাওয়াই কঠিন হয়।


মানুষের নিতান্ত আপন সামগ্রী যে দুঃখ, প্রেমের দ্বারা তাহাকে ঈশ্বরও আপন করিয়া এই দুঃখসঙ্গমে মানুষের সঙ্গে মিলিয়াছেন, দুঃখকে অপরিসীম মুক্তিতে ও আনন্দে উত্তীর্ণ করিয়া দিয়াছেন- ইহাই খ্রিষ্টানধর্মের মর্মকথা।


যে রাজা প্রজাকে দাস করে রাখতে চেয়েছে সে রাজার সর্বপ্রধান সহায় সেই ধর্ম যা মানুষকে অন্ধ করে রাখে। সে ধর্ম বিষকন্যার মতো; আলিঙ্গন করে সে মুগ্ধ করে, মুগ্ধ করে সে মারে। শক্তিশেলের চেয়ে ভক্তিশেল গভীরতর মর্মে গিয়ে প্রবেশ করে, কেননা তার মার আরামের মার।


এই বহুদেবদেবী, বিচিত্র পুরাণ অন্ধলোচারসংকুল আধুনিক বৃহৎ বিকারের নাম হিন্দুত্ব


ভারতীয় মুসলমানের গোঁড়ামি নিজের সমাজকে নিজের মধ্যে একান্ত কঠিন করে বাঁধে, বাইরেকে দূরে ঠেকায়; হিন্দুর গোঁড়ামি নিজের সমাজকে নিজের মধ্যে হাজারখান করে, তার উপরেও বাইরের সঙ্গে তার অনৈক্য। এই দুই বিপরীতধর্মী সম্প্রদায়কে ইয় আমদের দেশ। এ যেন দুই যমজ ভাই পিঠে পিঠে জোড়া; একজনের পা ফেলা আরেকজনে পা ফেলাকে প্রতিয়াদ করতেই আছে। দুইজনকে সম্পূরর্ণ বিচ্ছিন্ন করাও যায় না, সম্পূর্ণ এক করাও অসাধ্য।


যুক্তির একটা ব্যাকরণ আছে, অভিধান আছে,কিন্তু আমাদের রুচির অর্থাৎ সৌন্দর্যজ্ঞনাএর আজ পর্যন্ত একটা ব্যাকরণ তৈয়ারি হইলো না।


মানুষের কাজের দুটো ক্ষেত্র আছে- একটা প্রয়োজনের, আর একটা লীলার। প্রয়োজনের তাগিদ সমস্তই বাইরের থেকে, অভাবের থেকে, লীলার তাগিদ ভেতর থেকে, ভাবের থেকে।


যা প্রমাণযোগ্য তাকে প্রমাণ করা সহজ, যা আনন্দময় তাকে প্রকাশ করা সহজ নয়।


সমগ্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যই পরিহাসের ভিত্তি


কলার বিকাশ সামঞ্জস্যে, কৌশলের বিকাশ দ্বন্দে।


জ্ঞানের কথাকে প্রমাণ করিতে হয়, আর ভাবের কথাকে সঞ্চার করিয়া দিতে হয়।


ওস্তাদির চেয়ে বড় একটা জিনিস আছে, সেটা হচ্ছে দরদ।


শুনিবার প্রতিভা থাকা চাই।


দুঃখের বিষয় সঙ্গীত আমাদের শিক্ষিত লোকের শিক্ষার অঙ্গ নহে; আমাদের কলেজ-নামক কেরানিগিরির খারখানাঘরে শিল্পসঙ্গীতের কোনো স্থান নেই।


ভাষা নদীস্রোতের মতো- তাহার উপরে কাহারও নাম খুদিয়্যা রাখা যায় না।


রহস্যই অনিশ্চিত ভয়ের প্রধান আশ্রয়স্থান


উদ্বেগ যেরূপ আয়ুক্ষয়কর এরূপ আর কিছুই নহে।


দরিদ্র কোনোমতেই পরের নকল ভদ্ররকমে করিতে পারে না।


মানুষ সুখী হয় সেখানেই যেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সত্য হয়ে ওঠে।


কী মানুষ্যপূজায় এবং কী দেবপূজায়, ভক্তি ভক্তেরই লাভ। যাঁহাকে ভক্তি করি, তিনি না জানিলেও ক্ষতি নাই।


স্বাধীন চিন্তা যেখানে আছে সেখানে বুদ্ধির ভিন্নতা অনুসারে উদ্দেশ্যের ভিন্নতা জন্মিয়াই থাকে।

.

প্রকাশের ইচ্ছাই আমার জীবনের একমাত্র ইচ্ছা, অন্তরের মধ্যে যে চিত্র আছে সেটাকে বাইরে কর্মে গানে চিত্ররূপ দেবার কাজই আমার
.
স্বেচ্ছায় দুঃখবহন করিতে অগ্রসর হওয়াই প্রেমের ধর্ম
.
রসজ্ঞ যারা নয়, তারা বর্বর; যারা বর্বর তারা বাইরে রুক্ষ অন্তরে দুর্বল
.
নিয়মিত বেসুরো গান শোনা মানুষের পক্ষে যেমন অশিক্ষা, নিয়মিত অনুপযুক্ত ধর্মবক্তৃতা শোনা মানুষের পক্ষে একটা ক্ষতিজনক কাজ।
.
মানুষের মনে ঈশ্বরের মত অসীম আকাঙ্ক্ষা আছে, ঈশ্বরের মতো অসীম ক্ষমতা নাই
.
বরং শত্রুতা শ্রেয় কিন্তু ঘৃরণা ভয়ঙ্কর
.
আমার যে অহংকার বিষয় আছে এইটে মনে না থাকাই বিনয়, আমাকে যে বিনয় প্রকাশ করিতে হইবে এইটে মনে থাকার নাম বিনয় নহে

.

.

অজিত দাশ

কবি ও অনুবাদক।জন্ম ১৯৮৯ সালে কুমিল্লা শহরে। শৈশব ও বেড়ে ওঠা গোমতী নদীর তীরে। কলেজ জীবন থেকেই যুক্ত ছিলেন লিটল ম্যাগাজিন 'দৃক' এর সঙ্গে। কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যয়ন শেষে বর্তমানে চাকুরিজীবী। বর্তমান আবাস ঢাকার মোহাম্মদপুর। কবিতা ও ছোটগল্পের পাশাপাশি ইংরেজী ও হিন্দি থেকে অনুবাদ করেন। হিন্দি থেকে বাংলা অনুবাদের পাশাপাশি তার অনূদিত বাংলা থেকে হিন্দি কবিতা ইতিমধ্যে দিল্লী, উত্তর প্রদেশ এবং দেরাদুন থেকে প্রকাশিত স্বনামধন্য লিটল ম্যাগাজিন ও অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বই দুটি। 'ওশোর গল্প (বেহুলাবাংলা, ২০১৮), 'প্রজ্ঞাবীজ (মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৯)। এ বছর নিজের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি বাংলায় হিন্দি কবিতা অনুবাদ সংকলণ এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top