হায়দার এরগুলেন সমকালীন তুর্কি ভাষার কবি ও প্রাবন্ধিক। তাঁর জন্ম ১৯৫৬ সালে তুরস্কের প্রাচীন শহর এসকিহিরে। একাধিক পুরষ্কার বিজয়ী, হায়দার এরগুলেনের সাম্প্রতিক কবিতার বই “ভেফা বাজেন উনুতমক্তির”। তাঁর কবিতা সমসাময়িক কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশিষ্টতা অর্জন করেছে ফলে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। তিনি নিয়মিত তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প-সাহিত্য ও কবিতা বিষয়ে বক্তৃতা ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। বর্তমানে ইস্তাম্বুলের সিহাঙ্গিরে স্বপরিবারে বসবাস করছেন।
✿
খোলা বাক্য
কখনো কখনো খাম খুলে কিছুই পাওয়া যায় না
না কোনো চিঠি, না একটা কোনো ছোট্ট শব্দ
না কোনো সম্পর্ক —-
না ভোর, না কোনো দীর্ঘ দিনের সন্ধ্যা
এমনই কিছু চিঠি দিনভর লুকানো ব্যথার মতো
উড়ে বেড়ায় চারপাশে,
যদি কেউ সেই চিঠি খুঁজে ফেরে
কিংবা ছুঁয়ে ফেলে,
তাঁর হাত স্তব্ধ হয়ে যাবে,
কখনো কখনো শব্দ রিক্ততায় ঝুলে পড়ে
একাকিত্বের চিঠি—-
কখনো কখনো একটা ছোট শব্দও
পুরো চিঠিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
••• ••• ••• •••
✿
ছাইভস্মের ভাই
(সিবাস শহরে নিহত ৩৭ শহীদের প্রতি**)
এই চিঠিগুলো পাঠিয়েছি তোমাদের হৃদয়ের ঠিকানায়
এ চিঠি আমার হাতে নয়, লেখা ছাইভস্ম দিয়ে
এই প্রথম লিখেছি আমি তোমাদের সুন্দর কিছু নাম
ও আমার ভাই, ও আমার ছাইভস্মের ভাইয়েরা
এই চিঠিগুলো কোন পোস্টম্যান দিয়ে নয়
পাঠিয়েছি সেই দীর্ঘরাতে জ্বলে যাওয়া হাওয়ার হাতে
তুমি স্টাম্পের চেয়েও হালকা ছিলে,
কাগজের চেয়েও পাতলা,
এমনকি যেকোনো চিঠির চেয়েও দ্রুত,
আর এগুলো হলো তোমাদের আপন শব্দ, আমাদের ছাইভস্মের চেয়েও ভারি
জুলাই পুড়েছে, কবিতা পুড়েছে, ভাষা পুড়েছে
এমন করে যখন তোমার ছাইভস্ম,
তোমার স্মৃতি থেকেও বেশি দিন বেঁচে থাকবে
তাতে জ্বলে উঠবে চিঠি, জ্বলে উঠবে খাম, জ্বলে উঠবে স্টাম্প
আর সবার থেকে আমার মায়ের মতো জ্বলে উঠবে একটি লালগোলাপ ।
—————
** ২ জুলাই ১৯৯৩ সালে তুরস্কের সিবাস শহরে হোটেল মাদিমক এর একটি কামরায় আলিভিজম মতবাদের অনুসারী প্রভাবশালী সুফি সাধক পীর সুলতান আবদেলের স্মরণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আগুন দিয়ে ৩৭ জন বুদ্ধিজীবীকে পুড়িয়া হত্যা করে তুরস্কের তৎকালীন ডানপন্থী সরকার। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বামধারার তুর্কি বুদ্ধিজীবী আজিজ নেসিন সহ আরো অনেক লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করেছিল।

অজিত দাশ
কবি ও অনুবাদক।জন্ম ১৯৮৯ সালে কুমিল্লা শহরে। শৈশব ও বেড়ে ওঠা গোমতী নদীর তীরে। কলেজ জীবন থেকেই যুক্ত ছিলেন লিটল ম্যাগাজিন 'দৃক' এর সঙ্গে। কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যয়ন শেষে বর্তমানে চাকুরিজীবী। বর্তমান আবাস ঢাকার মোহাম্মদপুর। কবিতা ও ছোটগল্পের পাশাপাশি ইংরেজী ও হিন্দি থেকে অনুবাদ করেন। হিন্দি থেকে বাংলা অনুবাদের পাশাপাশি তার অনূদিত বাংলা থেকে হিন্দি কবিতা ইতিমধ্যে দিল্লী, উত্তর প্রদেশ এবং দেরাদুন থেকে প্রকাশিত স্বনামধন্য লিটল ম্যাগাজিন ও অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বই দুটি। 'ওশোর গল্প (বেহুলাবাংলা, ২০১৮), 'প্রজ্ঞাবীজ (মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৯)। এ বছর নিজের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি বাংলায় হিন্দি কবিতা অনুবাদ সংকলণ এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।