Home » পেঁচার গান II মহসীন আলম শুভ্র  

পেঁচার গান II মহসীন আলম শুভ্র  

আমানি

ঊনোবর্ষায় মন যে আরো মন্ত্রণাপ্রবণ হে নাগরিক তুমি কি সেরেক চিনবে না?
ঝুনঝুনে অপেক্ষায় ধ্বনির নহর
প্রবাহিত ইশারায় তুমি কেন তা বুঝো না!
ফ্যান্টেজে যাও আমাকে পাবে, অপভ্রংশে, কীর্তনে, দ্রোহে, বিন্যাসে আমাকে পাবে আমি তরুবর
দু’পা বাড়াও, হবে না আগপিছু। আমাকে দেখো তাজমহল।
কূলের কী ক্ষেম অকূল ছোঁয়
সবশেষে জনে শুধু পান্তার জল।

ধ্বনি

যে পাখির গন্তব্য নেই; বেলা শেষে তার সাথে দেখা হয়
একটি বাদামি গান আমার দিকে ছুঁড়ে সে দেয় গোধূলির ইশতেহার
অন্ধকার কূপে নগ্ন ব্যাঙ গায় না খনার গান
অঙ্কুরোদ্গমে অপ্রকাশিত দোল,বর্ষার হাওড়
আর কাহ্নপা তালপাতায় বলে না জীবনের ধ্বনি।
দেহের গিলাফ ছেড়ে প্রকৃতির উঠানে সাজসাজ রব, বৈঠকি চালে উদাম কণ্ঠস্বর
আর সানাইয়ের মৌসুমে কোনো আয়োজন নেই।
সবুজ শিশিরে মাকড়শার খাশ বুনন
প্রয়োজন নেই, শোনো
আয়োজন নেই কোনো
হয় না রাগ; নিশ্চল তানপুরা।

ক্লান্ত কেউ জেগে থাকে ঘুমপাড়ানিয়া? নৈঃশব্দের ঢেউ?
ডাকে না কেউ অবশেষে কাছে থেকে কাছে তাই;
যে পাখির গন্তব্য নেই–তার সাথে আমি সহজিয়া গান গাই।

প্রেম

দেখো, ঝরাপাতার অন্তঃস্থে কে যেন ধুকপুক ধুকপুক করছে।

স্বার্থপর

বাঁচতে বাঁচতে বুকের ভিতর একটা সাপ বেড়ে উঠছে।

অপরিচিত

চাঁদের ঠোঁটে চুমু রেখে দুই, কোন ঘরে লুকালো গাঢ় অন্ধকার?
অস্থির সময়ের মুখোমুখি হাওয়ায় উড়ে এসে বর্ষাকাল জুড়ে বসলো কার উঠানে, কার চোখে নিদান?
কার গলায় বসেছে কীর্তন আসর, বেহুঁশ বধূর যাদু মধুকর।
অনবরত দাড় বেয়ে পলিমাটির দেশে কে যাও? কেন যাও?
 
যদি পাও কহিনূর
কইয়ো দূরদেশে সাধের মেলায় কেনা পুতির মালা খসে খসে পড়ে দূর।

বর্ষাকাল

ইলশে গুঁড়ি
কুয়ো
খনা
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।

শ্যামল

পুতুলের বুকে পোড়ামাটি আমি গাঙে ডুবিয়ে তুলোবতী করে দেবো
উঠোনের চাকায় হাত রেখে বলছি
কলাপাতায় একসাথে খাবো নিরামিষ আগামিকাল।
আলবৎ শাপলার ডাটায় পয়সা করে ঝিনুকমালা তোমার গলায় শখ পরিয়ে দেবো দেখো যদি বেঁচে থাকি বিপ্লবের পর।
তোমার হাতে হাত রেখে কবিতা হবে এই প্রত্যয়ে আজ: শিকল ভাঙার আওয়াজ তুলি দলিত কিশোর।

অস্তিত্ব

তিনটি খুলি পড়ে আছে
আমি, তুমি এবং আমরা।

করোটি

জীবন থমকে যাওয়ার পর হাঁটতে হাঁটতে ভাবি স্বর্গে হাঁটার রাস্তা আছে কতটুকু?
গৌতম স্থির হলো বোধিবৃক্ষে মুহম্মদ হেরায় কলিঙ্গে অশোক জীবনানন্দ ধর্মতলায়
আর আমার অস্থিরতা যদি তুমি দেখতে!
জীবন কী চায় কেন হায় সওয়াল করলাম আদিকবিকে
তালপতায় চোখ রেখে তিনি বললেন, চঞ্চল চিত্তে তোমার ঘর নড়বড় করে
স্থির হও।
সূর্য আমার দিকে মুখ ফেরালে বলি আমার কী করে শিকড় গজাবে ইনকিলাব?
স্রোতে কিরণ রেখে বলতো দেখি কতটুকু হাঁটলে আমি মৃন্ময় হই?
আর আমার অস্থিরতা যদি তুমি দেখতে!
 
যে গলায় হাড়ের মালা সঙ্গ দিবে
আমি কুকুরুক ডেকে পৌঁছে যাই তার ঘরে তারপর
দেখো সহজিয়া কীর্তন আমি কেমন গাইবো আগত আসরে।

পেঁচার গান

যে রাতের তারা নেই, সে রাতে বেজে যায় দোতারা আড়ালে।

সাধক

চণ্ডীনগরের হাটবাজার ঘুরে কে কবি ফেরি করো কীর্তন মুখভরে?

আবহমান

হেরেম থাইকাবের হই জলঘাটে আসো বেটি
ধ্যানমগ্ন চাইরপাশে শুনো বেহুর সিফত
ভাসানে ভাইসা আমগোর পূর্বতন, সাক্ষী হউক মাটির কলস কদম গ্রহণ করিছো।
বেহাত সময়।
আরো কাছে এইসে দেখো মাটির
ফলক। জেহেনে বাসা বাইন্ধে পড়েছো নোলক
স্বপন যে নয়। সত্যই কিবা পাবো মারেফত?
আমাগো শখের দু’খান পাখা।
এ’খান মাটি রাখি হাওয়ায় উড়ে, আরখান ঘিরা দেহো নাহি কপালের শরিয়ত।

আদি

বৃষ্টি থেমে গেলে ঝরে যায় চৌষট্টি পাপড়ি সরোবর।
আমি তবু হাড়ের মালা পরে কুকুরুক ডাকতে থাকি
পূর্বজন্ম স্মরণ করি তোমার আমার:
তোমার পিঠে মিশি কালো তিল,ছুঁয়ে দিতে তোমার ঘন শ্বাস আমার পাঁজর চুইয়ে পড়ে।
 
চোখের সোনায় গড়ে দেই আশ্চর্য কানেট
তারপর আমরা হরিণের মাংশ পোড়ে গীত শুরু করি:
নৃত্যের আওয়াজে হরিণা খুর তোলে খু্ঁজতে বেরোয় হরিণীর নিবাস
তেঁতুল পেকে ঘ্রাণ ছড়ায় চারদিক
আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি।
 
আকাশের মেঘ নির্ঘুম তেলাওয়াত করে
আমরা পাতার আব্রু রেখে স্নান সারি
আঙুরের রস উপচে পড়ে তোমার স্তনদ্বয়
সহস্রদিন পর বৃষ্টি থামলে ঘুম ভাঙে
আমাদের লিঙ্গদ্বয় তখনো জড়িয়ে রাখে পরস্পর।

মনচিত্র

হাসের পালক লাইগা ক্যান কাঁপুনি মারে জলের গাও?
চালুনের ফাঁকে ফুঁইটা আছে হলুদে চাঁন
ঝিঁঝি বান্ধে গীত,সবুজ পাতার পিড়িতে
নালন্দার পাড়ে কোন কবি ধ্যানে বইসে কবিতারে চায়?
হাওয়াও জানে না উত্তরের চিঠি পৌঁছে বেহুলার দ্যাশে
কানে কানে কইয়া যায়, গেরুয়া কাপড় পইড়া বের হ তুই
আমি খঞ্জনি হাতে লই পথে চাই তোর অপেক্ষায়।

মায়াকোভস্কি স্মরণে

বুকজুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত তবু এক হাতে রিভালবার তোলে
আরেক হাতে শুরু করেন অমর প্রেমের কাব্য
মুখে রেখে মরণকামড় কাতরাতে থাকেন মঁমার্ত পাহাড়ে
তারপর আবোলতাবোল প্রলাপ বকে মরে যান
অর্ধেক দেহ কবরে পঁচে অর্ধেকটা নরকে পোড়ান
এমন ঝড়ো ও উন্মাতাল কবি তিনি
তো বলো হে নারী, তার প্রেমে কতটা টেকসই হবে তুমি?

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top