Home » পুরস্কার প্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ (বাঁক বাচনের বৈঠা) থেকে কয়েকটি নির্বাচিত কবিতা ।। হাসনাইন হীরা

পুরস্কার প্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ (বাঁক বাচনের বৈঠা) থেকে কয়েকটি নির্বাচিত কবিতা ।। হাসনাইন হীরা


আয়নাতে যা দেখা যায় না

১.
‘যাওয়া’ না থাকলে ঠিকই ফিরে আসতো হাওয়া
টবের ভেতর বড় হওয়া ফুলগাছটাও
বেরিয়ে পড়তো প্রসন্ন জানালার দিকে।

২.
রেলগেটের পাশে হাত পেতে ছিল সদ্য ফোটা ফুল
অনেকটাই মানুষের মতো;
হাতে হাত রেখে বললাম, দাঁড়িয়ে আছ কেন?
ভেতরে আসো, ভেতর থেকেও বাহির দেখা যায়।

৩.
সুদূরতার মতো তাকানোর টি-শার্ট পড়ে
মানুষের জায়গা নিয়েছে টাকা
টাকার জায়গা নিয়েছে মানুষ
ভালো থাকার জায়গাটা ফাঁকা পড়ে আছে;

৪.
কফিনের ধাঁচে বেজে চলেছে একা একটি গিটার
সুর নেই, যতটুকু আওয়াজ সবটুকুই অন্ধকার।


চারুকলার অঙ্কখাতা

ভেতর দিয়ে দাগ টেনে গেছে একটা রকেট
সাদা আস্তরণ মুছতে মুছতে ডুবে যাচ্ছে সমস্ত ঋতু
আকাশ বলতে আর থাকছে না কিছুই।

মার্বেল রঙের ছোটখাটো একটা পৃথিবী নিয়ে ভাবছি
আহা! শেখার যদি আলাদা কোনো বয়স থাকতো..!!


বিস্তৃতি

‘মানুষ উড়তে চায় কেন?’ জানতে চেয়ে
পাখিপিতার কাছে একদিন চিঠি লিখেছিলাম;

অনেকটা অন্যমনস্কতার মতো আমার পিতা
উড়িয়ে দিয়েছিলেন পালকভরা উষ্ণতা;

আমার একপাশে আমি, অন্যপাশে বাবা
সম্মুখে একটা পৃথিবী রেখে
নিজেরাই নিজেদের ওজন নিতে থাকি…

কোনদিন জানতে চাই নি ‘মানুষ উড়তে চায় কেন’।


প্রেস ব্রিফিং
[ কবিতাকে সব সময় কবিতা ভেবে পড়তে নেই ]

হুইসেল

ছুরি
তুমি আস্তে হাসো
মানুষের গলা কেটে যাবে।

স্বপ্নের শিশুপাতা

আকাশ আক্রান্ত হলে মানুষ জ্ঞানি হয়ে ওঠে,
মানুষ আক্রান্ত হলে আকাশের থাকে না কিছুই।

ওজন

আমার নিজস্ব কোনো অনুমান নেই, সবই উড়াল নির্ভর।

বোকামি

কুকুর থেকে কুত্তা আলাদা করতে গিয়ে
নিজেদের মধ্যে নিজেরা
খুব বেশি কথা বলে ফেলেছি


শরীর, একটা উত্তীর্ণ পাতার বিবরণ

শরীর একটা উত্তীর্ণ পাতার বিবরণ। পাখিমনে আমি তার বাতাবরণ খুলে খুলে পড়ি। পড়ার আনন্দে উড়ে ওঠে গানের পালক। মায়া ও মস্করাবোধক আরণ্যক সুতিকায় কি ভাবছেন ফ্রেডরিক নীৎসে?

ঘড়িতে সাঁতার কেটে বয়স্ক পৌষমাস এলিয়ে পড়ে ঘুমবালিশে। জন্মের কাছাকাছি, মৃত্যুর পাশাপাশি খুব বেশি বড় করার মতো হাতে কোনো চানরাত নাই। ফের সকালে তবু জুঁইফুলের প্রেমে পড়ে যাই। বিষাদ ও বিষ্যুদবার এড়াতে এড়াতে মোহ থেকে পাঁচহাত দূরে সরে আসি। অবসর যেন ছুঁয়ে ফেলতে না পারে দীর্ঘতম হাসির কারণ। প্রেম ও প্রার্থনার পরিপূরক উত্তীর্ণ হাসিটাকেও ভালোবাসি।

ভালোবাসার কাছে বাড়িয়ে বলার মতো এমন কোনো বিষয় নেই যে, আকশটা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি।


তোমার জন্য লেখা একটা আমি

তোমার মনের কথা জানে আমার সর্ষেফুলের গ্রাম। কতগুলো প্রশ্নের সমান প্রস্তাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাখি, তোমার ধানুয়া বিকেল জুড়ে গান গাইতে চায়। গানই আমাদের আত্মার পুরাণ, চুমু খাওয়া হরিণের মিথ।

যতই অন্তরিত হও আড়াল করা যায় না দূরগামী শ্লোক। শুনে রাখ হে বয়স্ক বালক! অস্তগামী শাদা শঙ্খের ডানায় পড়ে থাকে জাহাজের চোখ। আমি কাঁকড়াবাদী সখা মমতার ম লেখা উপকুলে ভাসি, ফিরে আসি সমুদ্রের ডাকে। উষ্ণতার করিডোর জুড়ে আনন্দের বৃষ্টি পড়ে। বৃষ্টিবহুল সন্ধ্যা মানিয়ে নেয় রাত্রির নোকতা পড়া ঠোঁট। দ্রুতগামী বোটম্যানের মতো আমি নিকটবর্তী কিনার খুঁজি। শিকারের নামে

তুমি কেন বসে থাকবা হলিআর্টিজমে,
তুমি কেন ধরা খাইবা হেমন্ত অভিযানে?

দুয়ার খুললেই ভোর, চোখ মেললেই সর্ষেফুলের হাসি কুল-কুলাইয়া বাজে… এসো তবে নিজেদের বাইরে থাকা গানটাকেও গাই ঝিনুকফুলের বাগান ভালোবেসে।


ট্রামকার্ড

রঙহীন দুপুরের ছায়া কুড়াতে গিয়ে পেয়ে যাই মেঘফুলের ধারণা। আকাশমাতার বুকের ভেতর পাথরবেলা ডুকরে ডুকরে ওঠে। ছায়া দেখিয়ে নদীও সমুদ্র হতে চায়; হেসে ওঠে পালকবাদী হাওয়া।

রাত্রির ধারণা পুষে জোনাকিও ভিড়তে চায় সংসদের দলে। ছায়ার ভূমিকা নিয়ে যে কেউ পাঠ নিতে পারে বাজেয়াপ্ত চিঠির দিনলিপি। অধীনতার এমন অশ^গামীতা সাত সাত অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায়। চাঁদের আঙুলও হেঁটে হেঁটে পার হয় নিনাদের রাত। মুখপোড়া কথাগুলো তখন সুখতোড়া হয়। অসহায় ভাদ্দুর-আশ্বিনের বিরুদ্ধে বৃষ্টির অভিযোগ করে তাই লাভ নেই। ট্রামকার্ড ডানা মেললে মেঘেরাও একদিন পাখি হতে পারে। যে মেঘ উড়তে শেখে, তার জগতেই নিয়ত আকাশ বড় হয়।


জরুরী বিজ্ঞপ্তি

ঘোষণা ছাড়াই উল্টে গ্যাছে পথ। পথের পাশে শপথের পরিত্যাক্ত হাড় বাজাতে গিয়ে আমি লাই দিয়ে ফেলেছি নদীর স্রােত, উদীয়মান আকাশের মন। সকালের সাথে মেলাতে চেয়েছি ফুল ফোটার আওয়াজ। অতঃপর হাতের উপর সূর্যদয় নিয়ে হেসেছি, খেলেছি, তামাশাও করেছি। মূলত লুকাতে চেয়েছি অন্ধকার।

কবে
কখন জড়িয়েছি এই কবিতামুখি গল্পে? মনে নেই
মন সর্বদাই বিজ্ঞপ্তি প্রিয়…

তুমিও অসুখের অনুপাত কিংবা অনুযোগ মিথ্যা প্রামাণ করে বাক্য বদলানো বাতাসে ওড়ো; উড়াও তোমার চন্দ্রমাখা ব্যঞ্জনার কুড়ো।

সদ্য চাকরী হারানো মনের মধ্যে কবিতা রঙের হরেক ফুল ফোটে আছে। তুমি তার সবিশেষ ভালোবাসা নিও।


একটি মৌলিক রচনা

ঘুরিয়ে বলা কথার বিকাল পার হয়ে
কুঁচকানো আলোটার দিকে তাকাও
সন্ধ্যার সংশ্লিষ্ট আগুন জ্বেলে
আরো একবার ঘুরিয়ে দাও পথ
আকাশটা উল্টো করে পড়;
পাঁজর বেষ্টিত সামুদ্রিক অঞ্চল থেকে
রক্তের ঢাল বেয়ে বহু নদী বয়ে গেছে
বিস্তীর্ণ হাওরের দিকে।
গতিবিধি যাই হোক
একেক নদীর চোখ একেক রকম উজ্জ্বল ও উন্মুখ।

তুমি এই বিস্মৃত জলমুখ পার হয়ে এসো। উপেক্ষিত করতালি আরো বেশি সাঁতার শেখাবে তোমায়। বিমুখবার্তায় উঠে আসা ঘাসের কৌতুকে রাখো পা। রেডিসনে চিকেন কিনে খাও; হাড় চিবানোর শব্দে অনুভব করো জীবন চিবিয়ে খাওয়ার স্বাদই আলাদা।


বীজবিদ্যার ম্যাজিক

ভূমিকার মতো বলি, মগ্নতা চাই
মগ্নতার মতো বলি
শূন্যতার অপার আলোয়
সীমাহীনতার পেখম ছড়িয়ে বসো।
নির্জন জানালার পাশে
মানুষের কোনো ঋতু নেই
সময় নেই, ছায়া নেই।
প্রসন্ন কবিতার মতো আবিশ্যিক
আক্ষেপ ও আকাক্সক্ষার লণ্ঠনে
জ¦লে ওঠে বীজবিদ্যার ম্যাজিক।

একটা সমান্তরাল সকালের সফলতায় মানুষের প্রসঙ্গে মানুষ মিলিয়ে নেয় বিঘাপতি ফসলের হিসাব। মুদ্রিত স্বপ্নের কিতাব আরো বেশি মানুষের ভান ধরে বসে। আমি তার ধারাভাষ্যে ব্যাসবাক্যহীন একা মানুষের হাততালি দেখে ভাবি মানুষের জগতে মানুষ কত বোকা!

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top