Home » জলজ সহবাস // পল্লববরন পাল

জলজ সহবাস // পল্লববরন পাল

জলজ সহবাস

দিন আর রাত্রির মাঝখানে মস্ত বড়ো যে বাগান
তার ঠিক মধ্যিখানে
উপুড় অঢেল উপন্যাসোপম যে সরোবর
তার ঠিক মধ্যিখানে
নির্মিত পাঁচিলের দু’ধারে
একটায় থৈথৈ জল
অন্যটায় থৈথৈ পানি —
দুটি পৃথক জলাশয়
আর তাদের ঠিক মধ্যিখানে
রামায়ণ আর কোরাণের সশস্ত্র যুযুধান পাহারা

এক ঝাঁক রাজহাঁসের ঝাপট-ডানা
সেই দেয়াল অবলীলায় টপকে
জল আর পানি উভয়কে
চোখে আঙুল দিয়ে রোজ দেখিয়ে দিচ্ছে
পাঁচিলের দুদিকেই একইরকম
অনর্গল ঢেউখেলায় মেতে আছে
দুই হাইড্রোজেনের সাথে এক অক্সিজেনের জলজ সহবাস
মধ্যিখানে যার কোনো অস্ত্র পাহারা নেই
কোরান-রামায়ণ নেই
আছে শুধু ঝাঁক-ঝাঁক রাজহাঁসের সফেদ উড়ান

টুমরো, এন্ড টুমরো

নাক আর ঠোঁটের মাঝখানে
এক চিলতে সরু লিকলিকে দেশ
যেন দুপাশের দুই উশকো-দাড়ি গালের
সংযোগ রক্ষাকারী নিরীহ বিদ্যাসাগর সেতু
যেন দুই স্বর্গীয় মহাদেশ মুখোমুখি যুযুধান
সেই সেতুর দুই প্রান্তে
মানচিত্রে যার নাম পানামা —
ওপরে অতলান্তিক নিচে প্রশান্ত
ওপরে শ্বাসঝড় আর
নিচে কথার মস্ত বড়ো কারখানা

এই পানামা নামক নোম্যানস্‌ ল্যাণ্ডে
ঘন জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে বাস
একদল দ্বিপদী জন্তুর —
যারা কথা ও শ্বাস দুটোই
প্রতিবেশী দুটি দেশ থেকে ধার করে
আত্মনির্ভরশীল জীবনযাপন করে

গুগুলজ্যাঠা বললেন –
সেই জঙ্গল উঠে আসছে পর্বতে
বার্নাম উঠে আসছে ডানসিনানে
ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত সেক্সপিয়র থেকে রবিঠাকুরে
নোম্যানস্‌ল্যাণ্ড ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবী জুড়ে
কাঁধ ঝাঁকিয়ে জ্যাঠা বলে চলেছেন –
ওরে, পা নামা এবার
আর উত্তরে
পা গুটিয়ে বসে দ্বিপদীদের ফিসফিস স্বগতোক্তি –
টুমরো, এন্ড টুমরো, এন্ড টুমরো

যুদ্দু-যুদ্দু

রাত দশটা সতেরোয় পোষ্ট দিলাম ফেসবুকে
খুন করে এলাম অমুককে –
পনেরো মিনিটের মধ্যে দু’শো সাতান্নটা লাইক
সাতাশিটা কমেন্ট –
কী কিউট্‌, ভাগ্যিস, অভিনন্দন…
কী দিয়ে মারলেন? সেফটিপিন না সনেট?
জরথ্রুস্ট নাকি মার্ক্স? পানু না ভানু?
ত্রিশূল না আড়াই পোঁচ?
দশটা আটতিরিশে কমেন্ট এলো –
ভারতমাতা কি জয়

দু’শো সাতান্ন আর সাতাশির দিকে
দুটো অতিকায় অট্ট-স্মাইলি ছুঁড়ে
অতিমারীর মতো নিঃশব্দে
বেরোলাম রাতভ্রমণে
স্পাইডারম্যানের মতো এ-দেয়াল থেকে ও-দেয়াল

ঠিক এগারোটা সতেরোয় দেখি
চোরা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে
শ্রীঅমুক
মহানন্দে তার দেয়ালে লাল নকশায় লিখছে –
খুন করে এলাম পল্লবকে

সব্বোনাশ!
চাঁদ তারা বাঁইবাঁই
আকাশ রাত্তির বাঁইবাঁই
মাথা মগজ বাঁইবাঁই
বেঁচে আছি কিনা বোঝার জন্য
নিরিবিলি কার্ণিশে বসে
বিপ্‌বিপ্‌ কবজি গুনতে গুনতে

কী আশ্চর্য, ওখানেও
দু’শো সাতান্ন আর সাতাশি
এবং অষ্টআশিতম কমেন্টেও সেই
ভারতমাতা কি জয়

রাত বারোটা সতেরো, একটা, দুটো, তিনটে সতেরো –
আমাজনের দাউদাউ অরণ্য
আর হাঁউমাউ বাণিজ্যের
মাথার ওপরে আকাশ-ফরাশে
তাকিয়াহেলান মুদ্রায় বসে
কালপুরুষ আর সপ্তর্ষী
একমনে শতরঞ্জ খেলছেন
আর বাদশাহী গোঁফে তর্জনীর তা বুলিয়ে
একই গড়গড়ার দুই নলে মুখ দিয়ে
ভুড়ুক ভুড়ুক
ভুড়ুক ভুড়ুক

তালবাদ্য শুনে
সম্রাট নীরো বেহালা নিয়ে উঠে এলেন ছাদে

ধ্যাৎ

তাসের ইমারতের গায়ে তন্নশব্দ খোদাই করেছি
আমার নাগরিকত্ব
স্বপ্নের মধ্যে কোনো ভুল শহর ছিলো কিনা
প্রত্নতত্ত্ব ইতিহাসে

ডাকো সিবিআই, করুক তদন্ত
কিস্যু আসে যায়না আমার

কারণ ততক্ষণে আমি
জর্জেটচাটাই মোড়া নিকোনো দাওয়ায়
তাসের আলপনা সাজিয়ে
আয়নাশৈশবদের বৃত্তকেন্দ্রে
তিনশোষাট ডিগ্রি মুখে
বাবু হয়ে বসে

রোদেল গল্পে মশগুল

গল্পের কখনো সীমান্ত থাকে নাকি?
অনুপ্রবেশ বা অনুপ্রেরণা?
ধ্যাৎ

পত্রপুষ্পশোভিত গাছ দেখেও
শিকড় নিয়ে প্রশ্ন যার
প্রমাণের দায়ও তার

আর
আমি তো সেই শৈশবশিকড়েই
আমার ভয় কিসের?
ধ্যাৎ

প্রণয়ের রঙ

কী রঙ তোমার বাঁশির সুরের?
গৈরিক নাকি ফিরোজা?
মগ্নোপাসক বন্ধ দুচোখে
এতসব যায় কি বোঝা?

কী রঙ তোমার ছটফটানির?
পিঙ্গল নাকি কাঞ্চন?
ডানাহীন এই উড়ানরঙ্গে
রঙবাজি করে প্রাণমন।

হাতের নখে কি বসন্ত মাখো?
রাধাচূড়া নাকি কৃষ্ণ?
পাহাড়ি ঝর্ণাজলে স্নান চায়
একটা বাদামি শিশ্ন।

প্রণয়ের কোনো ধর্ম আছে কি?
মুসলমান বা খৃষ্টান?
প্রণয় নিজেই মূর্ত ধর্ম
চুম্বন সে প্রতিষ্ঠান।

শরীর এখন কী রঙ চাইছে?
বাসন্তী নাকি সিন্দুর?
রোমকূপেকূপে শিউরে উঠুক

মরণ
আদরবিন্দুর।

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top