আচিক সপ্তাহের নামের উৎপত্তি
অনেক বছর আগে মান্দি জনগোষ্ঠির প্রাচীন বাসভূমি আচিক আসং (বর্তমান ভারতের মেঘালয়ের অবস্থিত গারো পাহাড়) এর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নংচ্রাম অঞ্চলে আমিন জামসিন নামে এক মান্দি বাস করতেন। আমিন জামসিনের ঘরের পাশেই ছিল একটি জুমক্ষেত খেত । জুমক্ষেতের একটু সামনে ছিল এক পুকুর নাম দেখবিক ওয়ারি আর সেই পুকুরে বাস করতো সারেঞ্চি বুগারিক নামে এক অদৃশ্য আত্মা। পুকুরের পাড় ঘেষেই ছিলো নংচ্রামে বসবাসকারী মান্দিদের বাজারে যাওয়ার রাস্তা। পুকুরপাড় ঘেঁষে যাওয়া রাস্তা দিয়ে যখন মান্দিরা প্রতিদিন বাজারে যেতো সেই অদৃশ্য আত্মা সারেঞ্চি বুগারিক প্রতিদিনের হিসেব রেখে সেগুলোর একটি করে নতুন নাম দিত আর প্রতি সাতদিন পর নামগুলো পুনঃউচ্চারণ করতো। এইভাবে সারেঞ্চি বুগারিক সপ্তাহের সাতদিনের নামকরণ করলো-
১.গ্রিসো
২.আবেসো
৩.আইরো
৪.মেছবাল
৫.নারিংসো
৬.সানিচো
৭.চিগিচো
যেহেতু পুকুরপাড় ঘেষেই ছিলো আমিন জামসিনের বাড়ি, সারেঞ্চি বুগারিকের প্রতিদিন উচ্চারিত নামগুলো সে শুনতে পেতো এবং সেই থেকে সপ্তাহের সাত দিনের নাম মান্দি জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রচলিত এবং গৃহীত হয়েছিল।
গল্প: সোনারাম সাংমা
গ্রাম-সালপাড়া, জেলা-গোয়ালপাড়া, আসাম, ভারত
—————-
গ্যাংমা ও বলচু
বলচু (শিমুল গাছ) হলো গ্যাংমা (কার্পাস তুলা) গাছের স্বামী এবং সালগ্রার মামা। সুসিমির মায়ের মৃত্যুর দিন সালগ্রা বলচুকে সমতলে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দিল এবং সুসিমির মায়ের শবদাহ করার কাছে বলচুর কাঠ ব্যবহার করতে চাইলো। ফলে বলচু অভিমানে পাহাড়চূড়া থেকে সমতলে চলে গেল।
স্ত্রীকে ফেলে বলচুর (শিমুল গাছ) পাহাড় থেকে সমতলে চলে যাওয়া গ্যাংমাকে (কার্পাস তুলা) আঘাত দিল। গ্যাংমা বিলাপ করতে করতে কঠিন হৃদয়ে তার চিরকালীন বিধবা হওয়াকে মেনে নিলো এবং আজীবনের জন্য দুঃখ বরণ করে নিল।
এদিকে স্বামীর বিরহে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা গ্যাংমা (কার্পাস তুলা) নিজের নতুন রূপ ধারণ করল। আগের চেয়ে নতুন পাতা এবং ডাল পালা প্রসারিত করে খানিকটা ছোট হতে লাগল যেনো পাহাড়ের চূড়া থেকে সমতলে চলে যাওয়া বলচুকে (শিমুল গাছ) আরো স্পষ্ট দেখা যায়। অন্যদিকে বলচুও গ্যাংমার নজরে আসার জন্য জন্য ধীরে ধীরে আগের চেয়ে নিজের আকার ক্রমশ বড় করতে থাকল। যখন দুজনের মধ্যে অনেক দূরত্ব বেড়ে গেল পাহাড়ের চূড়ার দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন বলচুর চোখ জলে ভিজে যেত। যতই বলচু গ্যাংমার কথা ভাবত ততই তার শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করত। শিকড় গভীরে প্রবেশ করতে করতে বলচু ক্রমশ শক্ত শিকড়ের বৃক্ষে পরিণত হয়ে গেল। এবং সমতলেই রয়ে গেল।
সুসিমির মায়ের শবদাহ করার জন্য বলচুর কাঠ ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে বলচুর একরকম ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল ফলে দেখা যায় যখনই শিমুলকাঠ আগুনে পোড়ানো হয়ে সেটি শোঁ শোঁ শব্দ করে এবং অন্যান্য কাঠের মতো খুব সহজে দ্রুত পুড়ে যায় না।
গল্প বলেছেনঃ দিংবেন মারাক রাকসাম
গ্রামঃ রংবিংগিরি, গারো পাহাড়
——————–
আচিক মাস ও ঋতুর নামের উৎপত্তি
আচিকদের প্রাচীন পিতৃপুরুষ বনিপা-জেনিপা সর্বপ্রথম পাহাড়ী জঙ্গল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে জুম চাষের প্রচলন শুরু করে। এই পিতৃপুরুষরাই সূর্য দেবতা মিসি সালজংকে নিবেদন করে ঝুম চাষের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতেন এবং সর্বপ্রথম ধান উৎপাদন করেন। আচিক আসং-এ জুম চাষের প্রচলন হওয়ার পর থেকেই বনিপা-জেনিপা আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনের হিসেব লক্ষ্য করে বছরের বারো মাসের নাম-
১.গালমাকজা
২.মেবাকজা
৩.জাগ্রো
৪.সোহ্গালজা
৫.জাগাপজা
৬.জাম্বক
৭.মেজাফাং
৮.অহ্নিজা
৯.রেরোকজা
১০.খিলোকজা
১১.আউতজা
১২.ওয়াংচেংজা
এবং ছয় ঋতুর নামকরণ করেন- সিনকারি, বান্দনি, ফালিনকারি, দিনকারি, ওয়াচি এবং আহারাক।
গল্প: সোনারাম সাংমা
গ্রাম-সালপাড়া, জেলা-গোয়ালপাড়া, আসাম, ভারত
পর্ব ৩ পড়তে ক্লিক করুন
পর্ব ২ পড়তে ক্লিক করুন
পর্ব ১ পড়তে ক্লিক করুন