✿ খুনী রোদ
আততায়ী রোদ এসে নিয়ে গেছে
মেঠো বাতাসের সুখ।
ভিজে ভিজে এতদিন
বৃষ্টির সখা হয়ে ছিল ঘাসের সবুজ,
আজ তারা বিবাগী খড়ের রঙে
নিজেকে রাঙায়।
তালের পাতার ফাঁকে লুকানো ধারে
মেঘ কেটে হয় ফালি ফালি।
হাওয়াই মেঠাই মেঘ খসে খসে
শিমুল তুলো হয়ে মাটিতে আছড়ায়।
ওড়ে না আজ বাতাসে কিছু,
আততায়ী রোদ এসে বাতাসের সুখ
খুন করে গেছে।
••••••••••••••••••
✿ নিজের খোঁজ
নিজসত্তার অন্তর্ধান রহস্য ভেদ করবার আগেই
আরও বিকট রহস্য নিয়ে
হাজির হয়ে যায় তোমার মন।
এক দুর্ভেদ্য পরিখাওয়ালা দুর্গের মতো।
আমি সাঁতার জানি না,
পরিখা পারও হতে পারি না।
তাই দূর হতে চেয়ে দেখি
তুমি দুর্ভেদ্য থেকে দুর্গম হতে থাকো।
আমার নাগালের বাইরে থেকে
আমার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে যেতে থাকো।
তুমি একটু করে হারাতে থাকো আর
আমি একটু করে নিজেকে ফিরে পেতে থাকি।
নিজসত্তার অন্তর্ধান রহস্য বুঝি
ভেদ করেই ফেললাম!
এখন আমি জানি, তুমি থাকা মানেই
নিজেকে তোমার মাঝে লীন পাওয়া।
তাই আলাদা করে নিজেকে খুঁজে পাই না।
ভাবি, আমি কোথাও নেই।
অথচ আমি ছিলাম তোমার মাঝেই!
••••••••••••••••••
✿ নির্ঘুম রাত
কত কত রাত কেটে গেছে
তোমার ঘুমন্ত চোখের দিকে তাকিয়ে।
এতগুলো মুহূর্ত… কতগুলো মুহূর্ত!
এত বর্ষাও বুঝি আসেনি এই পৃথিবীতে!
মাঝে মাঝে জোছনার আলোয় যখন
পৃথিবীর পথ-ঘাট ভিজে যায়,
ঘুমেরা উড়ে যায় দীগন্তের দিকে।
কারো ঘুম ফেরে, আর কারোটা না।
পাশাপাশি বালিশে থেকেও
ঘুম ভাগাভাগি করা হলো না আমাদের।
তোমার চোখের পাতায় রাজ্যের ঘুম নিয়ে
আমার নির্ঘুম রাত বসবাস করে।
••••••••••••••••••
✿ একদিন
পরতে পরতে জমে থাকা
কষ্টের ভাঁজ খুললে দেখা যাবে,
আদতে তারা কষ্ট নয়!
তারা অ-ইচ্ছা, তারা না-স্বপ্ন অথবা
না-পূরণ হওয়া আকাঙ্ক্ষা।
শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ক্ষয় ধরার মতো
কষ্টেও ক্ষয় ধরায় সময়।
একদিন অবাক হয়ে দেখবে,
পুরোনো কষ্টরা আর দুঃখ দিচ্ছে না তেমন!
সেদিন আমার কথা যদি মনে থাকে
সূর্যের দিকে তাকিয়ে একটু হাসবে, প্লিজ!
আমি যখন থাকব না,
আমি তখন রোদ হয়ে থাকব।
চোখ যদি ধাঁধিয়ে যায়, তাহলে
প্রাচীন কোনো গাছের বাকলে
হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলবে,
আমার আর কোনো কষ্ট নেই।
আমি গাছের প্রাণেও থাকব।
আমি শুনে নেবো তোমার স্বীকারোক্তি।
আর নিতান্তই যদি না পারো কিছু,
একটা লম্বা শ্বাস নেবে আমার হয়ে,
আমি তোমার হৃদয়েও থাকব।
আমার অক্সিজেন দরকার হবে খুব
হৃদপিণ্ডের রক্তের তোড়ে টিকে থাকার জন্য।
••••••••••••••••••
✿ মানুষ
মাঝে মাঝে জীবনের বাঁকে
হারিয়ে যায় বেঁচে থাকার খেই!
থই না পেয়ে
হাবুডুবু খেতে হয় সিদ্ধান্তহীনতায়।
তবুও কিছুই থেমে থাকে না।
মানুষ ভুল করে,
ভুল শোধরায়,
আবার কখনো কখনো ভুলগুলো ভুলে যায়!
হিসেবের গোলমালে তালগোল পাকিয়ে
আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়।
মানুষ থামে না কিছুতেই!

নুসরাত জাহান
জন্ম : ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে। পদ্মাপাড়ের রাজশাহী জেলায়। বর্ত্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।