Home » কবিতা জানে না পৃথিবী // আশিসরঞ্জন নাথ

কবিতা জানে না পৃথিবী // আশিসরঞ্জন নাথ

বৃষ্টি থেমে গেলে

তারপর বৃষ্টি থেমে যায়
ধীরে ধীরে বাতাস শুকোতে শুরু করে
টানা বৃষ্টিতে ভিজে একশা হয়ে গেছিল বাতাস গায়ে তার বিন্দু বিন্দু জল আর জল
আমরা বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচতে প্রথমে বারান্দায় উঠি
দেখতে থাকি বৃষ্টিধারা আর শ্রাবণের গান
তারপর যখন তেড়ে বৃষ্টি নেমে এল
বারান্দা আর রইল না নিরাপদ
আমরা নিরাপদ জায়গা খুঁজি মনে মনে।

বৃষ্টি দেখছি, শ্রাবণের গান শুনছি
কিন্তু ভিজে যাওয়ার ভয়ে কেমন সিঁটিয়ে রয়েছি
নিরাপদ দূরত্বে বসে বৃষ্টিধারা উপভোগ আর কাকে বলে!
এ যেন যেমন বেণি তেমনি রবে চুল ভেজাব না।
এমন হাস্যকর বৃষ্টি উপভোগ অভ্যাস আমাদের।

তুমি কিন্তু মানো নি
বৃষ্টিতে ভিজবে বলে বায়না জুড়ে দিলে
কোনও কথা শুনতে চাইলে না, বুঝতে চাইলে না।
আমায় নিয়ে বৃষ্টিতেই মেতে উঠলে
ভিজে ভিজে বৃষ্টিকে বরণ করি আমরা।

বৃষ্টিতে ভিজে মাঠ,ঘাট,নদী প্রান্তর
কৃষকের বীজতলা,শস্য ক্ষেত
পুকুরে খেলায় মেতে ওঠে চাষীর পালন করা মাছ
কাক গাছের ডালে ভিজে আর আমাদের জলক্রীড়া উপভোগ করে।
হাসে মিটিমিটি।
বৃষ্টির চাদর গায়ে জড়িয়ে আমরা শ্রাবণের গানে মেতে উঠি
কিন্তু বেহুলা লখিন্দর ভেসে ওঠে না মনের মন্দিরে
লখাই বলে তুমি ডাকোনি আমাকে
আমিও বেহুলা নামে ডাকি নি তোমায়
তবুও কেমন যেন আমরা বেহুলা লখিন্দর হয়ে গেছিলাম
নিজেদের অজান্তে।

তারপর যখন বৃষ্টি থামল
আমরা আচমকা হতবাক হয়ে পড়েছিলাম ৷
দুজনের মুখ থেকেই এক সঙ্গে বেরিয়ে এল–
হে বৃষ্টি থামলে কেন। আরও কিছু সময় থেকে গেলে কী ক্ষতি হত তোমার !

ওরা জেনেও জানতে চায়

ভাল আছি বললেই ভাল থাকা যায় না
এ কথা ওরা জানে না – একথা মানি না
ওরা জানে ভাল থাকা আজ এক অভিনয়ের নাম
যার যত অভিনয় ক্ষমতা সে ততো ভাল আজ
বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল না খেলে ভাল থাকা যায় না
একথা ওরা জানে না – একথা মানি না।
ভাল থাকতে পোড় খেয়ে খেয়ে
কীভাবে ভাল থাকতে পারে কেউ
এ এক বড় বিস্ময় !

ভাল থাকতে চায় ঘাস লতা গুল্ম সব
কিন্তু পারে কি !
আকাশ কি বারমাস সুনীল হয়ে থাকতে পারে
নদী কী বারমাস ছুটে চলার শক্তি রাখে
বাতাস কী ঘুর্ণি হতে চায় কখনও
এ কথা ওরা জানে না – এ মানি না।

তবু জানতে চায় ভাল আছি কী না
যেন আমার ভাল থাকার সাথে তাদের বড় মমত্ব জড়িয়ে আছে
পলির নীচে জমে থাকা জলের মত নাকি মমত্বের বাস।
না কি ভালবাসা, নাকি কেবল অবিশ্বাস !

কবিতা জানে না পৃথিবী

বড় গোলমেলে লাগে,ছন্দ মেলে না কিছুতেই
অথচ এ পৃথিবী কবিতার আঁতুড় ঘর।
কবিতা জানে না অথচ কবিতার আঁতুড় ঘর?
এ পৃথিবী এক মহাকবি। ছন্দহীন কবি।
নয়তো আগাগোড়া এক ছন্দোবদ্ধ কবিতা
তার পরতে পরতে ছন্দের যাদু খেলা।
নয়তো ছন্দের অগোছালো সংসার।

যে কবিতা জানে সে জানে পৃথিবী কত বড় কবি
যে কবিতা বুঝে সে জানে পৃথিবী কবিতাময়।
অথচ আমি ভাবি পৃথিবী কবিতা জানে না !

কবিতা পরিভ্রমণে বেরিয়ে আমি খেই হারিয়ে ফেলি
এ কী কবিতার যাদুঘরে আটকে আছি
নদীর যেমন এ জীবনে কূল পাই নি
পাইনি কিনারা,
তেমনি কবিতার সমুদ্রে অবগাহন করেও
ছুঁয়ে দেখতে পারিনি কেমন সে।
কেমন তার চেহারা, কেমন তার ছবি।

আমার নৌকা জীবন

একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম তোমার নৌকায়
ভেসে চলে ভেসে চলে নৌকা
জীবন ঢেউয়ের তালে তালে
নৌকা চলে উজান ভাটি
মনপবনের বৈঠা বেয়ে
নৌকা চলে নৌকা চলে উজান ভাটি।
শুকনো নদী পার পায় না নৌকা থমকে দাঁড়ায়
ভাবতে পারে না কীভাবে যে কোন পারে দাঁড়ায়।
মন পবনের বৈঠা বেয়ে নৌকা চলে জলে
একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম তোমার নৌকা বেয়ে
নৌকা চলে নৌকা চলে
অজানা ঠিকানায়।

কড়া নাড়ার শব্দ

ভেতর থেকে শুনি কড়া নাড়ার শব্দ
চমকে ওঠা স্বাভাবিক
চমকে উঠেছিও।
কে এল এই অবেলায়, কড়া নাড়ে সদর দরজায় !
ছিটকিনি খুলতে গিয়ে খুলে গেল সব আভরণ।

আমাদের আবরণ আভরণে তফাৎ বল কত ইঞ্চির!
তাও খুলে যায় কড়া নাড়ার শব্দে ।
ভেতরে কেবল হুক্কা হুয়া আর হুক্কা হুয়া

কাঁঠাল গাছের ছায়ায় দু দণ্ড জিরিয়ে নেয়
আমার ছায়া ।

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top