প্রজ্ঞাবীজ’ মূলত ওশোর নির্বাচিত চিঠি থেকে অনুবাদ। প্রিয় শিষ্যা মহারাষ্ট্রের মা মদন কুমারী পারখকে লেখা। ১৯৭৮ সালে ‘সিডস অব রেভুলেশন’ ও ১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় সংস্করণ ‘সিডস অব উইজডোম’ নামে ইংরেজিতে চিঠিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠিগুলোতে লেখক ওশো মানুষের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে গল্পাকারে বলেছেন । বলতে হয় অসাধারণভাবেই তিনি তুলে এনেছেন। একজন মানুষ জীবন সাধনায় প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর হৃদয়ে যে বীজ রোপিত হয়, সেই জ্ঞানবীজ থেকে মানুষ কীভাবে অমৃত পেয়ে যায় ও প্রেম দিয়ে পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারে তারই বর্ণনা নিখুঁতভাবে এসেছে এ বইয়ে।

অজিত দাশ আমার অনুজ ও স্নেহভাজন। বাড়ি কুমিল্লা। ভাষান্তর করতে গিয়ে নিসন্দেহে কঠিন পরিশ্রম হয়েছে তাঁর। এতো কঠিন বিষয় সত্বেও তা কতো সহজ করে মানুষের বোধগম্য শব্দ চয়ন করেছে আর সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছে চিঠিগুলোর। যেমন প্রথমই ‘আভাস’ এ বলছে—- ‘বাতাস আমার কাছ থেকে কিছু প্রজ্ঞাবীজ নিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি না সেগুলি কোন জমিতে গিয়ে পড়বে আর কে সেগুলোর পরিচর্যা করবে। শুধু এইটুকু জানি- যে মাটিতে সেগুলি পড়বে সে মাটিও অমৃত ফুলে পূর্ণ হবে। এই বীজগুলো থেকেই আমি জীবনে অমৃত এবং দেবত্বের উপলব্ধি পেয়েছি’।
এরকম অনেক জায়গায় দেখেছি- আর ভাললাগার বিষয়ও আপনাআপনি গেঁথে গেছে অনেকটা জুড়ে। তাই ভাললাগার আরেকটি বিষয় –‘সত্যের কোনো প্রতিরূপ নেই। কেননা সত্য অসীম, অনন্ত এবং অমূর্ত। তার কোননো নাম নেই, রূপ নেই, আকার নেই…।
মানুষের চেতনা তার মনের কারাগৃহ থেকে মুক্ত হলে সেই সত্য প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে সত্যকে পাওয়ার জন্য মন্দির স্থাপন করার কোনো প্রয়োজন নেই’। আবার বলছে ‘ভয়হীন চেতনার উপলব্ধিই হলো ঈশ্বরের উপলব্ধি। যে মুহূর্তে মনের সকল ভয় দূর হয়ে যায় ঠিক তখনি সত্যের আভাস দেখা দেয়’।
এরকম অনেক বলা যায়। ‘এক যুবক আমার সঙ্গে বসে আছে। অন্ধকারে তার ভীষণ ভয়। আমি তাকে বললাম, জগত অন্ধকারেই ডুবে রয়েছে।’ ‘আর আশ্চর্যের বিষয়… এই আলোর জগত আমাদের অত্যন্ত নিকটে আর অন্ধকারের জগত আমাদের থেকে অনেক দূরে। অন্ধকার আমাদের চোখের বাইরে। আর আলো আমাদের ভিতরে।… যে শক্তি দিয়ে পরকে জানা যায় সেই শক্তি নিজেকে জানতেও সমর্থ। মানুষকে পুনরায় তার শিকড়ে ফিরে যেতে হবে। সেই শিকড় হচ্ছে আত্মা এবং মাটি হচ্ছে ধর্ম। এটুকু যদি হতে পারে, তাহলে মানব জীবনে আবার ফুল ফুটতে পারে। মাটি ফুল হয়ে যায় আর নোংরা যা কিছু তা জমির সার হয়ে সুগন্ধে পরিণত হয়। মানুষের মধ্যে যে বিকার রয়েছে, সেই বিকারগুলিও ঠিক তেমনি। সেগুলি হচ্ছে শক্তি। মানুষের মধ্যে যে পশুর স্বভাব দেখা যায়, সেই শক্তির রূপান্তর ঘটালে দিব্যতাকে উপলব্ধি করা যায়। পশুত্ব আর দিব্যতায় কোনো বিরোধ নেই, বিকাশ রয়েছে’।
পরিশেষে বলবো, বইটি যারা এখনো পড়েননি পড়তে পারেন। ভালো লাগবে সবারই এ বিশ্বাস আছে আমার। শেষে প্রজ্ঞাবীজ বইয়ের শেষ পাতার কথা পাঠকদের তুলে ধরছি-
‘বীজ যেমন নিজের প্রাণকে পরিবর্তিত করে অংকুরিত হয়, কোনো চাদরে ঢাকা দিয়ে নয়। তেমনি মানুষকে নিজের প্রাণ সত্তাকে এক নতুন পর্যায়ে অংকুরিত করতে হয়, তখনই তাঁর জন্ম হয় এবং পরিবর্তন হয়’।
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ অনুজ অজিত দাশকে এমন সুন্দর বিষয় তুলে ধরার জন্য। এ বই পাঠ যেন শেষ হবার নয় তবু আমার লেখা এখানেই শেষ করছি আর লেখকের কথা স্মরণ করছি- ‘এ হচ্ছে নিত্য যাত্রি, এ চির পরিচিত। এই যাত্রিই হচ্ছে আত্মা। এই পরিবর্তনশীল জগতে, অপরিবর্তনশীলের দিকে জাগ্রত হওয়াই মুক্তি। ’
বইটি প্রকাশিত হয়েছে একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এ
প্রকাশকঃ মাওলা ব্রাদার্স