Home » ইয়েটসের কবিতা II অনুবাদ: মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান

ইয়েটসের কবিতা II অনুবাদ: মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান

ল্যাপিস লাজুলি

আমি হিস্টেরিয়াগ্রস্থ নারীদের একথা বলতে শুনেছি–
সেই সব কবিদের রং আর বাদনে তাদের বিরক্তি,
সারাটা সময়ই যারা আনন্দে উচ্ছ্বল,
কেননা এতো সবাই জানে বা জানাই উচিত
এখন যদি চূড়ান্ত কিছু না করা হয়
তবে বেরিয়ে আসবে উড়োজাহাজ আর জ্যাপোলিন,
আর রাজা বিলির মত আগুনে বোমা ছুঁড়তে থাকবে
যতক্ষণ না এ শহর মাটির সাথে গুড়িয়ে যায়।

সবাই পালন করে তাদের ট্র্যাজিক ভূমিকা,
ঐ যে দম্ভ ভরে হেঁটে যায় হ্যামলেট, ঐ আছে লিয়ার,
ওটা ওফেলিয়া, ঐটা কর্ডেলিয়া;
যদিওবা শেষ দৃশ্যও হয়,
যদিওবা সহসাই পড়বে মহামঞ্চের পর্দা,
তবুও ঐ নাটকে নিজ নিজ বিশিষ্ট ভূমিকা পালনের ক্ষমতা যদি থাকে,
তবে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে না তাদের স্ংলাপের মধ্যেখানে।
তারা জানে হ্যামলেট আর লিয়ার আনন্দে উচ্ছ্বল;
আনন্দোচ্ছ্বলতা বদলে দেয় সকল শঙ্কাকে।
সেই সব, মানুষ যা চেয়েছে, পেয়েছে ও হারিয়েছে;
নিঃসীম অন্ধকার; মাথার ভেতরে স্বর্গ জ্বলে:
ট্র্যাজেডি রয়েছে সেসবের গড়নের মূলে।
যদিও ঘুরেঘুরে একা একা কথা কয় হ্যামলেট,
আর ক্রোধে লাল হয় লিয়ার,
আর সব শেষ দৃশ্য শেষ হয়ে যায় মুহূর্তেই
শত হাজার মঞ্চের ওপরে,
তবু ট্র্যাজেডির পরিমাপে এতোটুকু তারতম্য হয় না।

তারা এসেছিল পায়ে হেঁটে, নয়তো জাহাজে,
কিংবা উটে, ঘোড়ায়, গাধায়, খচ্চরে চড়ে,
পুরনো সভ্যতাগুলো তারা গুড়িয়ে দিয়েছিল তাদের তরবারির ধারে।
এরপর তারা আর তাদের জ্ঞানও গেছে মিইয়ে:
ক্যালিমেকাস, তার হাতে গড়া সেই সব ভাস্কর্য,
যে কিনা মার্বেল ব্যবহার করতে পারতো ব্রোঞ্জের মত করে,
মনে হতো ফুলে ফেঁপে উঠছে শরীরের বসন
সমুদ্রের দমকা বাতাসে,
সে সবের কোনটিই ঠিকঠাক অবশিষ্ট নেই আজ;
সরু পাম গাছের কাণ্ডের মতন
তার লম্বা ল্যাম্প চিমনিখান টিকেছিল কেবল একদিন;
সবকিছুই ভেঙে পড়ে, আর আবার তাদের গড়ে নেয়া হয়
আর পুনরায় গড়ার কাজখানা যারা করে তারা আনন্দে উচ্ছ্বল।

দুইজন চীনামানব, তাদের পেছনে তৃতীয়জন
খোদিত ল্যাপিজ লাজুলিতে
একখানা লম্বা ঠ্যাঙওয়ালা পাখি উড়ছে তাদের মাথার ওপরে
পরমায়ুর চিহ্ন রূপে;
ঐ তৃতীয়জন, সেবক নিশ্চয়ই,
বয়ে বেড়াচ্ছে বাদ্যযন্ত্র।

ঐ পাথরের গায়ে রঙ চটে যাওয়া প্রতিটি স্থান,
প্রতিটি দৈব ফাটল অথবা গর্ত
যেন এক একটি নদীর ধারা কিংবা এক একটি হিমবাহ,
কিংবা সেইসব সুউচ্চ ঢাল যেখানে এখনো তুষার ঝরে পড়ে,
যদিও পাম আর চেরির দ্বিধাহীন শাখা
ছড়ায়েছে মধু পথের মাঝের সেই ছোট্ট ঘরটিতে
যার উদ্দেশ্যেই পথ পেরোচ্ছে ঐ চীনামানবেরা, আর আমি
আনন্দ পাই এই কথা ভেবে যে, তারা বসে আছে
ঐখানে পাহাড়ের ওপরে, আকাশের পরে,
আর কত সব ট্র্যাজিক দৃশ্যের দিকে তারা রয়েছে তাকিয়ে।
কেউ একজন বলে বাজুক তবে শোকের সংগীত;
পারদর্শী আঙুলগুলো বাজাতে শুরু করে।
তাদের চোখের মাঝে বহু বলিরেখা, তাদের চোখ
তাদের প্রাচীন, জ্বলজ্বলে চোখ আনন্দে উচ্ছ্বল।

মৃত্যু

ভীতি বা আশা কোনটিই থাকে না
মৃত্যুগামী জন্তুর ভেতরে;
সব ভয় আর প্রত্যাশা নিয়ে
মানুষ করে মৃত্যুর অপেক্ষা;
বহুবার মরেছে সে,
বহুবার উঠেছে আবার জেগে।
মহামানব তার স্বীয় গৌরবে
খুনীদের মোকাবেলায়
ছুঁড়ে দিয়েছে উপহাস
ঐ নিরুদ্ধ নিঃশ্বাসের প্রতি;
মৃত্যুকে সে চিনেছে হাড়ে হাড়ে–
মানুষই করে মৃত্যুকে তৈরি।

একখানা পোশাক

আমি আমার গানের জন্যে একখানা পোশাক বানিয়েছি যার
সারা শরীর জুড়ে এম্ব্রয়ডারি
ঠাসা যেন সব পুরাতন পৌরাণিক কাহিনী
গোড়ালি হতে একদম গলার পার।
কিন্তু ধরে ফেলেছে তা ঐ মূর্খগুলি
সবার সামনে এমনভাবে চড়িয়েছে গায়
যেন ও পোশাক তাদেরই তৈরি।
হে গান আমার, ওদেরকেই নিতে দাও সব
জানো তো নাঙা হয়ে হাঁটতে লাগে
আরো অধিক হিম্মত।

[উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস বিংশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। প্রতীকীবাদী এই আইরিশ কবির জন্ম ১৮৬৫ সালে। তার কবিতায় আইরিশ লোকগাথা  অতিপ্রাকৃতের ব্যবহার লক্ষ্মণীয়। এছাড়াও বিশেষ করে তার সাহিত্য জীবনের শুরুর দিককার কবিতাসমূহে রোমান্টিসিজমের ছাপ স্পষ্ট। অনুবাদকৃত কবিতা তিনটি তার সেই রোমান্টিক সত্তার প্রমাণ। আইরিশ জাতীয়তাবাদ আর রাজনীতি যেমন তার কবিতার উপজীব্য হয়ে এসেছে বারেবার তেমনি ব্যক্তি জীবনেও আইরিশ রাজনীতির সাথে তিনি ছিলেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯২৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৩৯ সালে ৭৩ বছর বয়সে তিনি ফ্রান্সে মৃত্যুবরণ করেন।]

অনুবাদকের আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top