টুনি লাইট এবং বহুবর্ণী ডানা ঝুলে থাকা গোলাকার যন্ত্রটাকে সে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে পাকিয়ে খুব মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করছে। গোলাকার অংশটার শুরু অথবা শেষ বিন্দুটাকে খুঁজে বের করতে পারে নাকি সূক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করে মাঝে মধ্যে চোখদুটি কচলে নেয় সে। একই কাজকে প্রায় একঘন্টা করে করে একসময় তার বিরক্তি লাগল।
ফেরিওয়ালাটি যন্ত্রটা জোর করে তার হাতে তুলে দেবার সময় বলেছিল-‘লে যাইয়ে না সাহেব। য়ে বরা কাম কা চীজ হ্যায়। ইসকা নাম আউর কাম বরাবর হ্যায়।’ কিছু একটা বিশেষ গুণ থাকা যন্ত্রটাকে একবার বিশ্বাস করে দেখায় আপত্তি কীসের! কে জানে হয়তো এইবার সমস্ত কথা তার চাওয়া মতোই হয় নাকি!
দেখা যাক কী হয়– মনোভাব নিয়ে একসময় সে সিলিংটার দিকে মাথা তুলে তাকাল। এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছে, তার ভেতরে মুখ্য কথাটা হল এই যে, এই বিশেষ জিনিসটা শোবার ঘরের বিছানার ওপরেই গেঁথে রাখতে হবে। তাই ঘর্ঘর শব্দ নাকি পাতলা বাতাস দেওয়া ফ্যানটাই সারথি। স্বপ্নের মায়াবী জগৎটাতে ভ্রমণ করতে হলে সে কিছুটা কষ্ট করে ফ্যানটা বন্ধ করে শোবার চেষ্টা করতে হবে। ফেরিওয়ালাটির বক্তব্য অনুসারে শোবার ঘরের ওপরে এই যন্ত্রটি গেঁথে রাখলে নাকি স্বপ্নগুলি ফলে যাবে।
আগে স্বপ্নে দেখেছে বলে স্বপ্নদোষ, যৌন স্বপ্ন ইত্যাদি শব্দগুলি তার মনে এসেছিল। যেন স্বপ্ন মানে কিছু একটা নিষিদ্ধ রোগ। কিন্তু এখন তার জন্য স্বপ্ন দেখাটা বড়ো জরুরি হয়ে পড়েছে। বাস্তবে না ঘটা কথাগুলি স্বপ্নে একবার পেতে তার বড়ো লোভ।প্রাপ্তির সেই সুখটুকু স্বপ্নে হলেও অনুভব করার জন্য মাঝেমধ্যে তার তীব্র আগ্রহ জাগে। অথচ সে মনে থাকার মতো করে স্বপ্ন দেখে না।
সন্ধ্যার আড্ডায় সে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল স্বপ্নের রহস্যের কথা। স্বপ্নকে নিষিদ্ধ রোগের সঙ্গে একাকার করে ফেলা তাকে হঠাৎ স্বপ্নের প্রতি আগ্রহ দেখে প্রত্যেকেই তার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে এক সময় হো হো করে হেসে উঠেছিল, ‘কী ফালতু কথা বলছিস বে! স্বপ্ন তোর জন্য নিষিদ্ধ একটা বিষয়। তোর আবার কবে থেকে স্বপ্নের প্রয়োজন হল?’
সেই দিন থেকে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তিকে সে স্বপ্নের কথা জিজ্ঞেস করবে না বলে প্রায় শপথ করেছিল। কেউ বুঝতে পারে না। কেউ তার স্বপ্নগুলোকে বুঝে না। তার একটা অর্থ চাই জীবনের। তার নিজের করা সহজ কাজগুলি করা তার কখনই উদ্দেশ্য ছিল না। আর সে করতে চাওয়া কাজগুলি পাটিগণিতের কোনো সরল অংক নয় যে মন চাইলেই সমাধান সূত্র বের করে ফেলবে। সে জানে তার সেই আশাগুলি খুব সমৃদ্ধশালী। ভারী। অথচ সেগুলিকে সে মরীচিকা বলে মেনে নিতে চায় না। সাধারণ পিয়নের একটা চাকরি করে বলেই তারা আশাগুলি আধুনিক একটার মতো হবে বলে কোনো কথা নেই। অনেকদিন ধরে সে আশাগুলির পেছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ওদের সাকার করার চেষ্টায় অনেক উজাগরী রাত পার করেছে সে। অথচ হাত মেললেই ছুঁতে পারা দূরত্বেও যেন কোনো না কোনোভাবে সে তার লক্ষ্য স্থান থেকে ছিটকে পড়েছে।
সেই জন্যই ফেরিওয়ালাটির কথায় তার বিশ্বাস করে দেখতে ইচ্ছা হল। যখন কিছু কথা বা কাজে নিজের সামর্থ্য থাকে না, তখনই হয়তো মানুষ একটা অবলম্বন খুঁজে বেড়ায়!
সে পুনরায় একবার মনে করল ফেরিওয়ালাটির বলা কথাগুলি, ‘লে যাইয়ে না সাহেব। য়ে বরা কাম কা চিজ হ্যাঁয়। ইসকা নাম আউর কাম বরাবর হ্যাঁয়।’ ফেরিওয়ালার ‘বরাবর’ শব্দটিতে জোর দিয়ে বলা কথাগুলি মনে পড়ে তার ভালো লেগে গেল। সন্তুষ্টির একটা হাসিও ঠোঁটে লেগে রইল।
‘ছিঃ! আরও কয়েকটি টাকা দেয়া যেত। বেচারা এত কাজের জিনিস তাকে দিয়েছে অথচ সে দরদাম করে আসল দামের চেয়ে কুড়ি টাকা কমিয়েই ছাড়ল। নিজেকে বড়ো দোষী মনে হতে লাগল তার। জিনিসপত্রের এই মহার্ঘ্য সময়ে, তার মতোই হয়তো ফেরিওয়ালাটির অনেক দায়িত্ব রয়েছে! এভাবে যদি গ্রাহকে প্রতিটি জিনিসের দাম নিজের মতো দিতে শুরু করে তাহলে তারা পেটের ভাত কীভাবে জোগাড় করবে! ছিঃ কাজটা বড়ো খারাপ হয়েছে!’
সে স্বগতোক্তি করল। মুহূর্তের মধ্যে একজন অপরিচিত মানুষকে তার বড়ো আপনজন বলে মনে হল।
ফেরিওয়ালাটি যন্ত্রটি সম্পর্কে তাকে বিস্তারিত বলে নামটা ড্রিম ক্যাপচার বলেছিল যদিও সে নিজের মতো করে একটা নাম দিয়ে নিয়েছে স্বপ্নপালক। আকারে ততটাই ছোট, হালকা ডানা দুটি নেড়েচেড়ে সে বুঝতে চেষ্টা করে কোন পাখির ডানা হতে পারে! একটি স্বপ্ন সাকার করায় এই ডানাগুলির ভূমিকা নাকি অনেক! নিশ্চয়ই কোনো পরিযায়ী পাখিরই হবে। নাকি আমাদের শালিক অথবা কবুতরের রং করা ডানা? না এত সহজলভ্য হলে স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোটাও বাস ধরার মতো সহজ হয়ে যেত। ড্রিম ক্যাপচারের অসমিয়া অনুবাদ স্বপ্নপালক হবে নিশ্চয়ই।
সে নিজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে।
তার মনে কুটকুট করতে থাকা অজস্র স্বপ্নের পথ যেন দ্বিধাহীনভাবে মুক্ত হয়ে পড়েছে। কিছু একটা সাংঘাতিক ভার যেন হঠাৎ খসে পড়ল তার মস্তিষ্ক থেকে এবং পলকের মধ্যে অনুভব করছে তার আশাগুলি স্বপ্নের মতো টুকরো টুকরো হয়ে তার চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। আশাগুলির ঈপ্সিত টুকরো একটি কুড়িয়ে নেবার জন্য একটি মাত্র স্পর্শের প্রয়োজন!
ঘরটির এক কোণে জ্বলতে থাকা কম পাওয়ারের লাইটটা নিভিয়ে, সে বিছানায় শুয়ে পড়ল। খোলা জানালা দিয়ে প্রবেশ করা মৃদু বাতাসে ঘরের পর্দাটির সঙ্গে মৃদু লয়ে কাঁপছে ফ্যানটাতে ঝুলতে থাকা স্বপ্নপালকটা। রঙ-বেরঙের ডানাগুলির মৃদু কম্পনের সঙ্গে সেও প্রচণ্ড উত্তেজনায় কাঁপছে।
…এসি কম্পার্টমেন্টটাতে তার সামনে বসে আছে সে। মাঝে মধ্যে দুজনের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হয়। তার চোখের মণিদুটি সাদা। সেই জন্যই তার বেশি প্রিয়। এই চোখজোড়া তাকে ক্রমাগত অনুসরণ করতে থাকে…। কোথায়! স্বপ্নে? না বাস্তবে! সেই কথা তার কাছে প্রয়োজনীয় নয়। সে এখন তার সামনে, এটাই তার কাছে মুখ্য।
কোথায় যাবে সে? তার জানতে ইচ্ছা করল। অথচ জিজ্ঞেস করতেও তার সঙ্কোচ হল। একদৃষ্টিতে সে পাশের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার সাদা মণির দুই চোখে কখনও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে একটি সোনালি মাঠ, কোনো সময়ে তার দুই চোখে পড়ন্ত বেলার বিষণ্ণতার ছায়া। ভাবলেশহীন মুখটা দেখলে তার কিছু একটা তাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে। অথচ গায়ে মাথায় মোড়ে রাখা মেরুণ রঙের কাপড়টা পুনঃপুনঃ ঠিক করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শুকনো একটা কাশি মেরে সে যেন তাকে সতর্ক করে দেয়—খবরদার! কথা বলার সুযোগ নেবে না।
…ট্রেনটা নিজস্ব লয়ে এগিয়ে চলেছে। সেও কিছুক্ষণ তার আগন্তুক ইন্টারভিউটার জন্য নিজেকে আরও একটু প্রস্তুত করার জন্য লেপটপটা খুলে নিয়েছে। এই ইন্টারভিউটা তাকে লক্ষ্যস্থানের নিশ্চিত স্তরটায় নিয়ে যাবে বলে সে একশো ভাগ প্রস্তুত। তারপরেই ভিসার কাজ, আর তারপরেই সে উড়ে যাবে সাত সাগর তেরো নদীর ওপারের একটি অপরিচিত শহরে। যেখানে তার স্বপ্নের বীজটা …
কে বলেছে স্বপ্ন মানেই ভ্রম! আরে ভাই তার স্বপ্নগুলি একটা অজুহাত-বেঁচে থাকার। যেখানে নিশ্বাস থাকে সেটাই কি বেঁচে থাকার মন্ত্রণা নয়! তাহলে তার আশাগুলিও তার কাছে নিশ্বাস। বেঁচে থাকার মন্ত্রণা। ওরা কথাগুলি হেসে উড়িয়ে দিলেই হবে কি! ওদের মতো নিষিদ্ধ স্বপ্নকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে না তো সে! আসলে স্বপ্নকে একটা রোগের মতো মনে হওয়ার জন্যই হয়েছে ওরা!
…প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনিতে চোখ মেলে তাকাল সে। কম্পার্টমেন্টটাতে একটা চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষগুলি নিজের নিজের আসন ছেড়ে জানালার মুখে মুখে, দরজার কাছে দলে বেঁধেছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। ছিঃ! এভাবে তার ঘুমোনো উচিত হয়েছে কি? পাশের জানালাটা দিয়ে সে বাইরের দিকে তাকাল। ফ্যাকাশে আলোতে একটি কাজলা নদী তার চোখে পড়ল। উঁচু উঁচু লোহার সেতুর ফাঁক দিয়ে নদীটার জল টুকরো টুকরো হয়ে তার চোখে ধরা দিয়েছে। আকাশে চাঁদটা তখন কিছু একটা বিষাদে ডুবে থাকার মতো। তার ভালো লাগল না। চাঁদের এই রূপ সে পছন্দ করে না। চাঁদ মানেই রূপোলি আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে থাকা উচিত। যেন গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানও সে পরিবর্তিত করে ফেলবে।
সাদা চোখের মণি থাকা মেয়েটির কথা মনে পড়ল তার। সামনের সিটটাতে তাকে না দেখে সে লাফ দিয়ে নিচে নামল। এদিকে ওদিকে তাকে দেখল। না কোথাও নেই। কোথায় যেতে পারে! এই দুপুর রাতে একা একা মেয়েটি কোথায় যেতে পারে! নাকি সে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতে মেয়েটি কোনো স্টেশনে নেমে গিয়েছে? হতেও পারে!
হতে পারে। হতে পারে।
সে কিছুটা হতাশ হল।
ট্রেনটা কেন দাঁড়িয়ে ছিল সেই খবরটা নেওয়ার জন্য সে মানুষের ভিড়টার দিকে এগিয়ে গেল–মেয়েটি এইখানটাতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ কী হল কে জানে, নদীটা পাওয়ার পরে সে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে দিল। একজন চেঁচামেচি করে যদিও চেইন টানল ইতিমধ্যে ট্রেন অনেক দূর এগিয়ে এসেছে…
কোনো একজন চিৎকার করে বলা কথাগুলির শেষের অংশটুকু যেন তার কানে প্রবেশ করল না। কোথা থেকে এসেছিল, কোথায় যাবার জন্য এসেছিল তার কিছুই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করা হল না। নাকি এতটুকু পর্যন্ত যাত্রা পথ ঠিক করেই সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল? কী দুঃখ ছিল মেয়েটির! সাদা মণির চোখ দুটিতে ঝুলে থাকা সোনালি মাঠের মতো উজ্জ্বলতাকে ম্লান করে পড়ন্ত বিকেলের বিষাদ এত গাঢ় হয়েছিল কি তার জন্য !
তার নিজেকে অপরাধী বলে মনে হতে লাগল। একবার যদি মেয়েটির আসার উদ্দেশ্য এবং গন্তব্যস্থলের বিষয়ে সে জিজ্ঞেস করত! একবার যদি জানতে পারত মেরুন রঙের কাপড়টা ঘিরে রাখা শরীরটাতে এমনকি বেদনা লুকিয়ে ছিল।
তার বুকের স্বপ্নগুলির কি মৃত্যু হয়েছিল! স্বপ্নকে বাঁচিয়ে তুলতে পারার মতো মেয়েটিকে তার বলা হল না–স্বপ্নগুলোকে ডালপালা মেলে একটি ঘুড়ির মতো উড়তে দাও। অন্তরীক্ষে ঘুরে সে তোমার জন্য যা ফিরিয়ে আনবে সেটাই প্রকৃতপক্ষে তোমার…বলা হল না তাকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া স্বপ্নলোকটির কথা।
থেকে গেল অনেক কথা। তাকে অহরহ তাড়িয়ে বেড়ানো সাদা মণির চোখ জোড়ার স্পর্শের ন্যূনতম সীমা থেকে কিছু এক মায়াবী আবহাওয়ায় সরে চলে গেল সেখান থেকে।
তখনও কেউ তার কানে ফিসফিস করছে Dream has endless possibilities …স্বপ্নের অনিঃশেষ সম্ভাবনা আছে।’
…সে ধড়মড় করে উঠে বসল। বাইরে তখনও অন্ধকার। কোথায় আছে সে…!
ট্রেনটা ! কোথায় ট্রেনটা ?
সে যে তার লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছিল। তার আশার পথটাকে সে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল।
কোথায় লুকোলো।
তখনও তার কানে বেজে চলছিল… ড্রিম হেজ এন্ডলেস পসিবিলিটিজ। তুই থমকে থাকিস না।
ফ্যানটার ওপরে স্থির হয়ে থাকা স্বপ্নপালকটার দিকে তাকানোর জন্য একবার সে টর্চ জ্বালাল।
…
…দূর। যতসব ড্রামেবাজ কথা এইসব।
এই যে কিছু একটা করব বলে পুষে রাখা আশাগুলো…দুর্বার আশাগুলি…স্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ানো ঈপ্সিত লক্ষ্যগুলি…
কোনো অর্থ নেই এসবের। মিথ। বেকার এইসব।
ফেরিওয়ালাটির ওপর তার ভীষণ রাগ হল। তার একশো টাকা জলে গেল। কোথায় সে আর কোথায় তার সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে উচ্চ পদবীধারী চাকরি। এটা আলাদা কথা যে কখনও বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত মেলার মতো সে কয়েক জায়গায় এই ধরনের চাকরির আবেদন করে রেখেছে। নিম্ন মধ্যবিত্তীয় জীবনগুলিতে আশা মানেই ভন্ডামি। হাজারটা স্বপ্নপালক দিয়ে তার ঘরের টই ভরিয়ে দিলেও বিশ্বাসহীনতায় ভোগা, প্রেমে প্রতারিত করা একটি নিরুদ্বেগ জীবন তার। বর্ষার আগেই প্রতিবছরই গ্রামের বাড়ির খসে পড়া চালটা ঠিক করানোর জন্য মা-বাবা তার বেতনের বেশি অংশ একটা পাঠিয়ে নিজের না চলা সে একটি ব্যক্তিগতখন্ডের সাধারণ পিয়ন। ভন্ড। মধ্যবিত্তীয় জীবনে আশাগুলি এক একটি মিথ। ভন্ডামি ছাড়া কিছু নেই।
…একটা পাথর খন্ডকে লাথি মেরে গুঁড়িয়ে এক প্রকার আনমনা হয়ে সে পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে এগিয়ে চলেছে। অফিসের কাছে এসে একবার এদিকে ওদিকে তাকাল। স্বপ্নের দরদাম করে আজ নিশ্চয়ই ফেরিওয়ালাটা অন্য কারও হাতে গুঁজে দিয়েছে অন্য একটি স্বপ্ন পালক– লে যাইয়ে না সাহেব। য়ে বরা কামকা চিজ হায়। ইসকা নাম আউর কাম দোনো বরাবর হায়…
এই যে কয়েকটি ট্যাগ লাইন ব্যবহার করে যে কোনো একটি সাধারণ জিনিস অসাধারণ করে তোলা ফেরিওয়ালাটি! তার স্বপ্নগুলি কী ধরনের? স্বপ্নেও সে গ্রাহকের স্বপ্ন সাকার করার টেগলাইন আউড়ায় না তারচেয়ে নিপুণ লক্ষ্যে তার ঘরের বিছানার ওপরেও গেঁথে নিয়েছে একটি স্বপ্নপালক?
———–
অঙ্কিতা বরুয়া : অসমের নগাঁও জেলার শালনা চাবাগিচায় জন্ম। বিবাহসূত্রে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা। প্রকাশিত গল্প সংকলন ‘জোনবিলর ভেনাস’। জ্যোতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘অয়নবৃণা’

বাসুদেব দাস
১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলার যমুনামুখে বাসুদেব দাসের জন্ম হয়।শৈশব কেটেছে গুয়াহাটি শহরে। ১৯৮২ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষা তত্ত্বে এম এ করেন। আজ পর্যন্ত অসমিয়া অনূদিত গল্পের সংখ্যা তিনশো ষাটের ও বেশি।সম্প্রতি NEINAD এর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership এর দ্বারা সম্মানিত করা হয়।