অয়ন সপ্রশংস কন্ঠে বলল,‘গ্রেট! তবে…বুঝলে কী করে যে উনি হুইস্কিই খান? কখনো খেয়েছ না কি?’ দুষ্টুমির হাসি হাসল সে।
‘না।’ আগের মতনই গম্ভীর কন্ঠে বলল সহেলি,‘ দামী মদগুলোর মধ্যে হুইস্কির গন্ধই তুলনামূলক কম তীব্র। আমি কাছে থাকায় গন্ধটা পেয়েছি, অথচ তোমরা পাওনি এই কারণে। আর বড়লোক মানুষ উনি, নিশ্চয়ই কম দামী মদ খাবেন না। আর…উনি আর্মচেয়ারে বসার সময়ে একঝলক দেখা গিয়েছিল ছোট বোতলটা। তাতে বোতলের গায়ে লেখা দুটো লেটার দেখেছিলাম। ইউ, আর আই।’
সহেলি বলে গেল,‘তিনি আমাকে কার্ড দিয়েছিলেন। তিনি মানিব্যাগ বের করেন প্যান্টের বাম পকেট থেকে বাম হাত দিয়ে, এরপর কার্ড দেন, আবার মানিব্যাগ পকেটে রাখেন। তবে বাম পকেটে নয়, ডান পকেটে, ডান হাতে। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি দুই হাত সমান তালে চালান। যাকে বলা হয় সব্যসাচী।’
সহেলি ঊষার দিকে তাকিয়ে বলল,‘তবে আমি ব্র্যান্ডি বলিনি, হুইস্কি বলেছিলাম!’ এরপর মৃদু হাসল। তার ঠোঁটে হাসি এলে বুঝতে হবে বিশেষ কিছু ঘটেছে বা ঘটতে চলেছে। কেননা, সাইকোলজি প্রফেসর সহেলি সরকারের মুখে অকারণ হাসি কখনোই ফোটে না।
অয়ন হেসে বলল,‘মনস্তত্ত্ব আর শরীরতত্ত্বের গবেষণা তবে ভালোই চলছে?’
সহেলি কয়েক সেকেন্ড পর সহজভাবে উত্তর দিল,‘মনস্তত্ত্ব আর শরীরতত্ত্ব নিয়ে কী আলাদাভাবে গবেষণা করতে হয়? দুটো তো একই বৃন্তের দুটি ফুল। মন ছাড়া তুমি চিন্তা করতে পারবে না, আর শরীর ছাড়া চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবে না।’
অয়ন আর ঊষা আর কিছু বলল না।
‘সহেলি,’ কিছু সময় পর বলল ঊষা,‘আমার একটা কথা প্রায়ই মনে হয়, আচ্ছা কেউ যদি নিজে কোনো একটা অপরাধ করে অপরাধ লুকোতে নিজেকে ভিকটিম হিসেবে দেখায়, তাহলে তাকে কীভাবে শনাক্ত করা যাবে?’
‘তার মোটিভ থাকতে পারে। আবার উক্ত জায়গায় তার উপস্থিতিও থাকতে পারে ।’
‘আর যদি তা না থাকে?’
‘সেক্ষেত্রে,’ ভাবতে ভাবতে বলল সহেলি,‘অ্যানালাইসিস করতে হবে। কেননা কিছু না কিছু ভুল সে নিশ্চয়ই করবে।’
‘কিন্তু, আমরা তো ডিটেকটিভ নই। তাহলে আমাদের কষ্ট অকারণ না সহেলি আপু?’ বলল অয়ন।
সহেলি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে আবৃত্তি করল,‘ ‘‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।’’ টাকাপয়সা হয়তো বা পাওয়া যাবে না, তবে ঊষা পরের থ্রিলার নভেলের প্লট পেয়ে যেতে পারে। তুমি পেতে পারো ভিন্নরকমের কোনো এক্সপেরিমেন্টের আইডিয়া বা নতুন কোনো থিওরি। সেটা কী অমূল্য রতন নয়?’
‘না, বরং তার থেকেও বেশি!’ হেসে বলল অয়ন,‘ কিন্তু..শুধু আমি আর ঊষাই পাব? তুমি কিছু পাবে না?’ সন্দিগ্নভাবে বলল অয়ন। সে যে সহেলির মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করছে তা তার কথার ধরনে বোঝা গেল।
সহেলি রহস্যময়ভাবে হাসল। উত্তর দিতে যাবে, তখনই কলিংবেল বেজে উঠল। সহেলি উঠে গেল দরজা খুলতে।
দরজা খুলতেই দেখা গেল, বিষণ্ন হাসি মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে মিস্টার রবার্ট ব্রাউন। কয়েকদিন আগেই তার বাড়িতে কফি খাইয়েছেন কেসের সুরাহা করে দেওয়ায়। আজ কফির দাওয়াত তাঁর।
‘আরে মি. ব্রাউন। আসুন।’ সৌহার্দপূর্ণভাবে বলল সহেলি।
উনি এসে সোফায় বসলেন। সহেলি বলল,‘কফি এখনই দেই?’
‘না না! আগে একটু কথা বলে নেই। এরপর দিও। বসো এখন।’ পকেট থেকে টিস্যু প্যাকেট বের করে একটা টিস্যু নিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বললেন মি. ব্রাউন।
‘আচ্ছা।’ সহেলি ঊষার পাশে বসতে বসতে বলল,‘হাসপাতাল থেকে এসেছেন বোধহয়।’
মি ব্রাউন থমকে গেলেন সহেলির কথায়। সহেলি বলল,‘হয়তো..জন রেডক্লিফ হসপিটাল।’
ঊষা আর অয়নও বেশ অবাক হয়ে গিয়েছে। মি ব্রাউন নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে বললেন,‘তুমি কী করে..জানলে? আমি তো একবারও বলিনি যে আমি জন রেডক্লিফ হসপিটালে গিয়েছিলাম!’
সহেলি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,‘আপনার টিস্যু প্যাকেটটা একদম নতুন। তাতে জে.আর হসপিটাল লেখা। আপনার বাড়ি জন রেডক্লিফ হসপিটাল থেকে বেশ দূরে। কারণ ছাড়া সেখানে যাওয়াটা বেশ অস্বাভাবিক,যেখানে আপনার বাড়ির কাছেই বেশ কিছু হসপিটাল আছে। আর আপনার গাড়িটা এসেছে ডানদিক থেকে। এই রোড দিয়ে জন রেডক্লিফ হসপিটালে যাওয়ার ও আসার শর্টকাট রাস্তা রয়েছে। কিন্তু আপনার বাড়ি আর অফিস, দুটোই এই রোড দিয়ে গেলে বেশ দূরে পড়ে।’
কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে বলল,‘কেন গিয়েছিলেন, বললেন না?’
তিনি দম নিয়ে বললেন,‘আমার কাজিন বারবেরির সাথে পরিচয় হয়েছিল তো সেদিন তোমাদের? তাই না?’
‘হুম। জ্যাক বারবেরি।’ বলল ঊষা।
ব্রাউন মাথা নামিয়ে বললেন,‘তার পরশু রাতে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে!’
‘কী?’ অবাক হয়ে বলল অয়ন, ‘কীভাবে? পরশু..মানে যেদিন আমাদের সাথে দেখা হলো আপনার বাড়িতে?’
‘হুম।’ মৃদুকন্ঠে বললেন ব্রাউন,‘আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে কোনো একজনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। সেখান থেকে রাতের বেলা বাড়ি ফিরছিল ম্যাকডালেন উডসের রাস্তা দিয়ে। সেখানেই..কন্ট্রোল হারিয়ে একটা গাছের সঙ্গে লেগে গেছে!’
‘উনি..’ সংকোচভরে জিজ্ঞাসা করল ঊষা,‘বেঁচে আছেন? না কি..’
‘আছে।’ বললেন ব্রাউন,‘পায়ে আর মাথায় জখম হয়েছে। কাল সকালে ওর স্ত্রী কল করে জানিয়েছে। তখন থেকে অজ্ঞান ছিল, আজ কয়েক ঘন্টা আগেই জ্ঞান এসেছে।’
‘দেখা করেছেন? কেমন আছেন এখন?’ জিজ্ঞাসা করল সহেলি।
‘হুম। মোটামুটি ভালো। তবে অনেক কিছুই হতে পারতো।’ কিছুটা কষ্ট নিয়ে বললেন তিনি,‘পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট করেছে ওর স্ত্রী।’
‘অ্যাকসিডেন্ট কেসে রিপোর্ট! কেন?’ বলল ঊষা।
‘জ্যাকের বক্তব্য,’ বললেন তিনি,‘ একটা গাড়ি এসে তার গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছে। আর সে গাড়িটাও না কি সে চেনে।’
‘তাঁর কোনো পুরোনো শত্রæর?’ জিজ্ঞেস করল সহেলি।
‘হুম।’ মাথা নেড়ে বললেন তিনি,‘সরাসরি কখনো ক্ষতি করেনি। তবে সে শত্রু বলে মনে করে।’
‘কারণ কী?’ প্রশ্ন করল অয়ন।
‘ লোকটার নাম টমাস রাইট। জ্যাকের আগের সেক্রেটারি। একটা হিসাবে গন্ডগোল করে প্রজেক্টের ক্ষতি করে দেয়। তাই অপমান করে বের করে দেয়। বরখাস্ত করার পর নিজের বিজনেস দাঁড় করিয়েছে। ‘রাইট’ ড্রেস ব্র্যান্ডের নাম শুনেছো হয়তো। তারই সৃষ্টি ব্র্যান্ড। তিন বছর আগে বের করে দেওয়ার পর আর দেখা হয়নি। দু’সপ্তাহ আগে অক্সফোর্ডের ব্রিজ নাইট ক্লাবে তার সঙ্গে দেখা হয়। জ্যাকের যাতায়াত আছে এই ক্লাবে অনেকদিন ধরেই। ওকে নতুন দেখেছে এমন ভাব করে না কি ওকে নানাভাবে ঘুরিয়ে কথা বলে বন্ধুদের সামনে অপমান করেছে। একদিন আড়ালে ডেকে নিয়ে নাকি জ্যাক সাবধান করে দিয়েছিল এরকম না করার জন্য। এরপর আর দেখা হয়নি।’
‘মি. ব্রাউন তো স্পোর্টস কার কম্পিটিশনে পরপর সাত বছর চাম্পিয়ন হয়েছিলেন তাই না?’ বলল সহেলি,‘গাড়ির ধাক্কা সামলাতে পারলেন না, এটা বেশ অদ্ভুত।’
‘আর একটা ব্যাপার কি জানো সহেলি?’ রহস্যময়ভাবে বললেন মি ব্রাউন।
‘কী?’
‘টমাস রাইটের দুটো হাতের মধ্যে ডান হাতে জোর কম। ছোট থেকেই সমস্যা। আরেকটা হাতের মাঝখানের আঙুলের হাড় ভেঙেছিল জ্যাকের অ্যাস্স্ট্যিান্ট হিসেবে আসার পর। আঙুলটা এখনো বিকল। যার কারণে ওর পক্ষে ড্রাইভ করা সম্ভব নয়।’
‘হতে পারে কাউকে দিয়ে করিয়েছে।’ বলল ঊষা,‘কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না যে, উনি শিওর হয়ে বলছেন কী করে যে এটা টমাস রাইটের কাজ?’
‘একটা হুমকি চিঠি এসেছিল ওর কাছে। সেটা দেখেই সে বুঝে গিয়েছে, টমাস ওর ক্ষতি করতে পারে।’ বলতে বলতে মি. ব্রাউন কোটের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলেন। টকটকে লাল কালিতে তাতে লেখা আছে-‘‘তোমার মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। তৈরি থাকো।’’ নিচে লেখা ‘‘টু-জ্যাক বারবেরি’’।
‘দারোয়ানের ডেস্কে কেউ রেখে চলে গিয়েছিল। দারোয়ান বাথরুম থেকে এসে পেয়েছে। আমাকে সেদিন এটা দেখাতেই এসেছিল।’ বললেন মি ব্রাউন।
‘আচ্ছা গাড়িটা কী টমাস রাইটের নিজের গাড়ি ছিল?’ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল ঊষা।
‘হ্যাঁ, রাইটের গাড়ি ছিল।’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন মি ব্রাউন,‘রাইট সেদিন তার কোনো এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। বাড়িটি ব্রিজ নাইট ক্লাব থেকে কিছুটা দূরে, পাঁচমিনিটের হাঁটা পথ। ড্রাইভার ছুটিতে ছিল। তাই ট্যাক্সি ভাড়া করে আসে আবার ট্যাক্সি ভাড়া করে ফেরে।’
‘তার বন্ধুর কোনো গাড়ি নেই?’ প্রশ্ন করল অয়ন। রহস্য ঘনীভূত হতে দেখে সে আর ঊষা দুজনেই বেশ উত্তেজিত।
‘আছে,’ মুচকি হেসে বললেন মি ব্রাউন,‘তবে দুদিন ধরে সেটা গ্যারেজে। চলছে না, তাই মেরামতের কাজ চলছে। আর তাছাড়া তুমি যদি বলো যে বন্ধুর গাড়িতে করে সে বের হয়েছে, তবে বলব এটা আমরা আগেই চিন্তা করেছি। বন্ধুটি তার লন্ডন ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার। নাম মাইকেল ওয়াটসন। ওয়াটসনের সাথে সরাসরি কথা বলা হয়েছে,
আবার তথ্য প্রমাণ হিসেবে রয়েছে ওয়াটসনের বাড়ির গেটে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা। সেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে যে, রাত ঠিক ১টার সময়ে একটা ট্যাক্সিতে করে রাইট বের হয়।’
‘আচ্ছা অ্যাকসিডেন্টের সময়ে সেখানে কোনো ট্যাক্সি ছিল না? থাকলে তো ধরা যেত।’ বিজ্ঞের মতন বলল লেখিকা ঊষা।
‘না। কোনো ট্যাক্সি সে এলাকায় ছিল না। ছিল প্রাইভেট কার।’ বললেন মি ব্রাউন। একটু থেমে বললেন,‘রাইটের গাড়িটা নিয়ে তার ছেলে জ্যামস রাইট বের হয়েছিল। ফিরেছে..’
‘রাত একটার পর।’ মি ব্রাউনের কথা শেষ করে দিল সহেলি।
মি ব্রাউন হালকা হেসে বললেন,‘রাইটের বিরুদ্ধে সব প্রমাণই জোগাড় হয়ে গেছে। শুধু এখন দুটো ব্যাপার পরিষ্কার হলেই বাবা-ছেলেকে অ্যারেস্ট করতে পারবে পুলিশ। প্রথমত, জ্যামস গাড়ি নিয়ে সেই দিকেই গিয়েছিল যেখানে অ্যাকসিডেন্ট হয়, অর্থাৎ সে করায়। আর দ্বিতীয়ত, যে গাড়িটা জ্যাক দেখেছিল, সেটা সত্যিই টমাস রাইটের। প্রথমটার ব্যাপারে খুব তাড়াতাড়ি জেনে যাব। তবে..দ্বিতীয়টা কী করে প্রমাণ হবে বুঝতে পারছি না! কোনো সাক্ষী নেই। শুধু জ্যাকের কথার ওপর ভিত্তি করে টমাস রাইটের গাড়ির ব্যাপারটা কল্পনা করে নিলে আমি হয়তো বেঁচে যাবো, আমার এজেন্সি হয়তো বেঁচে যাবে, কিন্তু কোর্টে রাইটের উকিল তো আর এই ব্যাপারটা ছেড়ে দেবে না।’
সহেলি বলল,‘এটা প্রত্যেকটি বুদ্ধিমান প্রতিপক্ষের পদ্ধতি। অপরপক্ষ যে বিষয়টা উপেক্ষা করবে, সেটাকেই নিজেদের অস্ত্র বানিয়ে অপরপক্ষকে ঘায়েল করবে।’
‘হুম। সমস্যাটা এখানেই। পুলিশ আর আমাদের চিন্তাটা এটাই।’ উবু হয়ে বসে চিন্তা করতে লাগলেন তিনি। এরপর কিছু মনে হতেই সোজা হয়ে বসে গলা খাঁকারি দিলেন। সহেলি মেঝের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছিল। তিনি সহেলিকে নির্দেশ করে বললেন,‘আচ্ছা..তুমি এ ব্যাপারে..যদি একটু সাহায্য করো..তবে ভালো হয়। তোমার কী মনে হয়?’ তিনি সটান তাকিয়ে রইলেন সহেলির দিকে।
সহেলি আস্তে করে চোখ তুলে মি ব্রাউনের দিকে তাকাল। একটুখানি ভেবে নিয়ে বলল,‘কীভাবে সাহায্য করতে পারি বলুন?’
মি ব্রাউন বেশ খুশি হলেন বোঝা গেল। তিনি হেসে বললেন,‘তোমাকে নিশ্চয়ই জানাবো সব। তুমি রাজি হয়েছো, এটাই বড়।’
‘কিন্তু সাহায্য করতে হলে ব্যাপারটা একটু গভীরভাবে আমার জানা দরকার।’ দৃঢ়ভাবে বলল সহেলি।
মি ব্রাউন বললেন,‘নিশ্চয়ই। কী জানতে চাও বলো।’
সহেলি কিছু ভাবল। এরপর বলল,‘হুমকির কাগজটা আরেকটু দেখতে পারি?’
মি. ব্রাউন কোটের পকেট থেকে বের করে সহেলির হাতে দিলেন কাগজটা। সহেলি ভাঁজ খুলে খুব মন দিয়ে দেখল কাগজটা। লাল রঙের কালিতে লেখা হয়েছে লেখাটা। দেখে মনে হচ্ছে যেন রক্ত দিয়ে লেখা হয়েছে।
কেউ কোনো কথা বলল না। চুপচাপ বসে সহেলিকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। কী এমন দেখছে সে কাগজটার মধ্যে? এটা তো লাল কালিতে লেখা একটা হুমকি চিঠি মাত্র! আগে তার এমন ছোট ছোট জিনিস গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ খুব বিরক্ত লাগত ঊষার। যখন প্রথম প্রথম পরিচয় হয়েছিল, তার বাড়িতে চায়ের দাওয়াতে এসেছিল সহেলি। ঊষার পরিবারের সাথে কিছু ছবি ফটো ফ্রেমে টাঙিয়ে রেখে ছিল সে। সহেলি গভীর মনোযোগে ছবিগুলো দেখতে দেখতে একসময়ে ঊষার ছোটবেলার তার বোনের সাথে তোলা একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে এক মনে কিছু দেখতে লাগল সে। দেখতে দেখতে ঊষাকে প্রশ্ন করল,‘তোমার বোন তোমার কত বছরের ছোট?’ সে উত্তর দিতেই এক অদ্ভুত প্রশ্ন করল সে,‘ওর কখনো পায়ে সমস্যা হয়েছিল নাকি?’
ঊষা হকচকিয়ে গিয়ে বলে,‘হ্যাঁ। পড়ে গিয়ে মচকেছিল ওর পাঁচ বছর বয়সে। বিরাট কান্ড হয়েছিল। কী কান্না যে করেছিল!’ স্মৃতি মনে করে নিজেই হেসে উঠল। হঠাৎ থেমে বলল,’তুমি কী করে জানলে?’
সহেলি উত্তর না দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডাভাবে জিজ্ঞাসা করল,‘পায়ে নিশ্চয়ই আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। হতে পারে বংশগত। তোমার বাবারও রয়েছে নিশ্চয়ই? আর তোমারও কিছুটা রয়েছে মনে হয়।’
সহেলি আরও বলেছিল,‘সমসাটা মনে হচ্ছে জয়েন্ট লেগস। যে সমস্যাটার কারণে পুলিশ হওয়া যায় না। ঠিক বলছি?’ তার দৃষ্টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যেতো, কতটা দৃঢ়তা রয়েছে তাতে।
পাঁচমিনিট পর সহেলি কাগজটা থেকে চোখ সরাল। কাগজটা ভাঁজ করে ফেরত দিয়ে দিল। আরও কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে বাস্তবে ফিরল। ব্রাউনকে উদ্দেশ্য করে বলল,‘আচ্ছা, অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার পর মি বারবেরিকে উদ্ধার করেন কে বা কারা? ’
‘ওর স্ত্রী যায় তার ভাইকে নিয়ে।’ বললেন মি ব্রাউন।
‘উনার স্ত্রী জানলেন কার থেকে?’ জিজ্ঞাসা করল ঊষা।
মি ব্রাউন বললেন,‘দুঃখিত না বলার জন্য, আসলে জ্যাকের যখন অ্যাকসিডেন্ট হয়, সে সেসময়ে ফোনে ওর স্ত্রী র্যাচেলের সাথে কথা বলছিল। কথা বলতে বলতেই, অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যায়। এরপর র্যাচেল তাড়াতাড়ি ওর ভাই রবিনকে নিয়ে ম্যাকডালেন জঙ্গলে যায়। রবিন কম্পিউটার নিয়ে পড়াশুনা করেছে, পুলিশ ডিপাটমেন্টের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ। এছাড়াও আরো নানারকম গুণ রয়েছে। জ্যাকের মোবাইল ট্র্যাক করে ওর ফোন বন্ধ হওয়ার আগে কোথায় ছিল, বের করে ফেলেছে।’
‘হুম..’ মাথা নাড়ল সহেলি। সহজভাবে বলল,‘কল রেকর্ডিং আছে কি না জিজ্ঞাসা করেছেন? ওটা একটা বড় প্রমাণ কিন্তু।’
কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেন ব্রাউন। সামলে নিয়ে বললেন,‘না..সেটা জিজ্ঞাসা করিনি। করা যাবে তো! এখনি ফোন করি তাহলে।’
‘তার আগে একটা অনুরোধ করতে পারি?’ জিজ্ঞেস করল সহেলি।
ব্রাউন হেসে বললেন,‘নিশ্চয়ই! বলো!’
‘একবার মি বারবেরির সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
‘অবশ্যই। কখন যাবে বলো।’