জন রেডক্লিফ হসপিটাল, সন্ধ্যা ৭:০০টা।
হসপিটাল বেডে আধশোয়া অবস্থায় মি জ্যাক বারবেরি। পায়ে আর মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থাতেও বয়স ঢাকার চেষ্টার স্বভাবের ব্যত্যয় ঘটতে দেখা গেল না। কন্ঠে শুধু কিছুটা দুর্বলতার ছাপ পাওয়া গেল।
‘কোনোদিন ভাবতে পারিনি..এরকম হবে। কী ক্ষতি করেছি ওর.. কে জানে!’ ধীরে ধীরে বললেন তিনি।
‘রবার্ট, তুমি ওই বদমাসটার শাস্তির ব্যবস্থা করো! সে..সে জ্যাককে মারার চেষ্টা করেছে!’ উত্তেজিত কন্ঠে বললেন মিসেস র্যাচেল বারবেরি। মিস্টার বারবেরির সাথে বয়সের পার্থক্য তেমন নয়। চামড়া কুঁচকোলেও বয়স কম দেখানোর প্রচেষ্টা প্রখর। দুজনের চুলের রঙই গাঢ় বাদামী।
‘কোন বদমাস মিসেস বারবেরি?’ নিরুত্তাপ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল সহেলি।
‘টমাস! টমাস রাইট!’ রাগি গলায় বললেন মিস্টার বারবেরি,‘আমার আগের সেক্রেটারি! একটা অপরাধ করেছিল, এরপর বের করে দেই। তারই শোধ নিয়েছে বদমাসটা। আমার সাথে নতুন পরিচিত হওয়ার ভান করে, আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে ইঙ্গিত করে বাজে কথা বলতে শুরু করে। ’ একটুখানি নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বললেন,‘রেগে গিয়ে একদিন আড়ালে নিয়ে গিয়ে তার ওপর চেঁচিয়ে উঠি। তখন বলে, ওর সাথে আমি যা করেছি, তার শোধ সে তুলবে! আমাকে প্রাণে মারবে সে! ’
‘আর এতে আপনি ধারণা করেন যে আপনাকে সে সত্যিই খুন করবে।’ বলল সহেলি।
‘সেটা ধারণা করাটাই স্বাভাবিক।’ সহেলির দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবহেলার সুরে বললেন মিসেস বারবেরি,‘তুমি তো অক্সফোর্ডের প্রফেসর। তাই না?’
‘জ¦ী।’ ভদ্রভাবে জবাব দিল সহেলি।
‘এত প্রশ্ন কেন করছো?’ জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।
‘কৌতুহলের বশে।’ তাড়াতাড়ি বললেন মিস্টার ব্রাউন,‘কৌতুহল হয়েছে, তাই জিজ্ঞাসা করল।’
মিস্টার বারবেরি এমন সময়ে সহেলির দিকে সটান তাকিয়ে বললেন,‘তোমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব প্রখর মিস সরকার। তাকে একবার দেখেই তুমি বলে দিতে পারবে সে কীরকম। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’
‘একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?’ বলল সহেলি।
‘নিশ্চয়ই।’
‘হুমকি কাগজ পেয়ে কীভাবে বুঝলেন যে সেটা টমাস রাইটই লিখেছেন? শুধুই কী অনুমান করেছিলেন না কি..’
‘আমার শত্রæ অনেক আছে।’ একটু ভেবে বললেন বারবেরি,‘কিন্তু তারা কেউই এমন পর্যায়ের না যে আমাকে মারতে চাইবে। আর এই ক’দিনের মধ্যে একজনের সঙ্গেই আমার সংঘর্ষ হয়েছে। এছাড়াও অনুমানটা সত্যি বলে মেনে নিয়েছি, হুমকির শেষে তিনটা ডট দেখে।’
ব্রাউন ভুরু কুঁচকে কোট থেকে কাগজটা বের করলেন। সেখানে শেষে সত্যিই তিনটি ডট রয়েছে।
‘কিন্তু..এতে কী..’ বলতে চেষ্টা করল ঊষা।
‘আমার সাথে সে বহুদিন কাজ করেছে সে। তার একটা অভ্যেস ছিল, যে কোনো লেখার শেষে তিনটা ডট দেয়া। এজন্য বেশ বকাঝকাও করতে হতো তাকে।’ অবজ্ঞা নিয়ে বললেন তিনি।
কেবিনটা কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইল। কিছু সময় পর ব্রাউন বললেন,‘সহেলি, আরো কিছু জানতে চাও? বলো।’
সহেলি থুতনির ওপর হাত রেখে কিছু একটা ভাবছিল। আনমনে কথা বলল সে। ঊষা আর অয়ন অস্পষ্টভাবে শুনল শুধু কিছু বাংলা শব্দ,‘সব কাজে..পারদর্শী..সকল কাজে…পটু….’
‘কিছু বলছ সহেলি?’ এক অক্ষরও বুঝতে না পারায় ভ্রæ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলেন ব্রাউন। এই ব্যাপারটাই এখানে বেশ মজার লাগে ঊষার। ইংরেজরা বিশে^র সভ্য ও মেধাবী জাতিদের মধ্যে অন্যতম। ইংরেজদের সাথে দিন-রাত তারা ইংরেজদের মাতৃভাষায় কথা বলে, আর যখনই তারা নিজেদের ভাষা বলে, ইংরেজদের সব মেধা যেন বাতাসে মিলিয়ে যায়।
‘হুম?’ ভ্রম ভাঙল সহেলির,‘না। কিছু না। ’
‘একটা জিনিস চাই।’ সহেলি বলে উঠল।
‘কী?’ রাগি সুরে জিজ্ঞাসা করলেন মিসেস বারবেরি।
‘মি. বারবেরি তো আপনার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন তাই না?’
‘হ্যাঁ।’
‘কল রেকর্ডিং আছে?’
‘থাকবে না কেন? আছে।’
সহেলি মি ব্রাউনের দিকে ফিরে বলল,‘আমার মনে হয় রেকর্ডিংটা নিয়ে নিলে আপনাদের জন্য ভালো হবে মি ব্রাউন। ’
‘কেন? রেকর্ডিং দিয়ে কী হবে?’ হুংকার দিয়ে উঠলেন মিসেস বারবেরি,‘অ্যাকসিডেন্টের শিকার মানুষটাকে দেখে বিশ^াস হচ্ছে না?’
‘কখন কোনটা লাগতে পারে বলা যায় না মিসেস বারবেরি।’ বলল সহেলি,‘টমাস রাইটের বিরুদ্ধে যত বেশি প্রমাণ থাকবে, ততই ভালো। লোকটা চালাকি করে জেতার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু ন্যায় অন্যায়ের থেকে এক পা এগিয়ে থাকে জানেন নিশ্চয়ই? কথাটাকে চিরন্তন সত্য হিসেবে আবারো প্রমাণ করতে চান না?’
‘অবশ্যই!’ সেকেন্ডে গলে গেলেন মিসেস বারবেরি,‘নিশ্চয়ই চাই! ওই বদমাসকে শাস্তি পেতেই হবে!’ তিনি কল রেকর্ডিংটি রবার্ট ব্রাউনের ফোনে পাঠিয়ে দিলেন। ঊষা মুচকি হাসল।
’কী চালাকিটা করেছিল টমাস নাইট! মি বারবেরি বেশ ইন্টেলিজেন্ট! ৩টা ডট থেকে বুঝে নিয়েছেন!’
‘টমাস রাইট, ঊষা।’ হেসে বলল অয়ন।
ঊষা অপ্রস্তুতভাবে বলল,‘ও হ্যাঁ, টমাস রাইট। এতে হাসার কিছু নেই। ভুল হতেই পারে!’ অয়ন মুচকি হাসল।
ঊষা বলতে লাগল,‘টমাস রাইটটা নামটা তোমার চেনা-চেনা লেগেছে অয়ন?’
‘টমাস রাইট..কোথায় না তো!’ মনে করার চেষ্টা করে বলল অয়ন।
ঊষা বিরক্তসূচক শব্দ করে বলল,‘আরে..কয়েকদিন আগে তোমাকে একটা খবর দেখিয়েছিলাম মনে নেই! লন্ডন ব্র্যাঞ্চের রাইট শো-রুমে ওয়াশিংটন ব্র্যাঞ্চ থেকে মাল আনা হচ্ছিল, মাঝপথে ট্রাক অ্যাকসিডেন্ট হয়। টমাস রাইট তার স্টেটমেন্টে বলেছেন, ওয়াশিংটন ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নাকি এ ঘটনার পর থেকে উধাও! প্রায় পঁচাত্তর হাজার মার্কিন ডলার! বাংলাদেশী টাকায় প্রায় এক কোটি! ভাবা যায়!’ খবরের কাগজে বের হওয়া উত্তেজনাকর খবরগুলো কেটে সংগ্রহ করে রাখা তার ছোট থেকে অভ্যেস।
অয়ন বলল,‘ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে! ওই খবরটা! তবে..যতদূর মনে পড়ছে..পঁচাশি হাজার মার্কিন ডলার নষ্ট হয়েছিল।’ তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠল।
ঊষা অপ্রস্তুত চেহারা নিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সহেলির দিকে তাকাল। জানলার পাশে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছে সে। গানটা ‘ফুলে ফুলে দোলে দোলে’। বাতাসে তার লম্বা ঘন চুল উড়ছে। তার পড়নে সবুজ রঙের টপ আর সবুজ সালোয়ার। গলায় হালকা সবুজ লেসযুক্ত সবুজ ওড়না ঝুলছে।
‘তুমি এত মন দিয়ে কী দেখছিলে কাগজটাতে, সহেলি?’ জিজ্ঞাসা করল ঊষা।
সহেলি গুনগুন থামাল। আনমনে বলল,‘প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষর; কথা বলতে পারে। কথা বলার শক্তি আছে তাদের। মারাত্মক শক্তি। যাদের সামনে অনেকসময়ে মানুষের ১০০ টেরাবাইটের মস্তিষ্কও কাজ করে না। ’
ঊষা আর অয়ন তার কথার কিছুই বুঝল না। অয়ন বলল,‘তার সাথে কী..ওই হুমকি চিঠির কোনো সম্পর্ক আছে?’
সহেলি একবার অয়নের দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও আনমনা হয়ে গেল। বলল,‘ওগুলোও বাক্য ছিল। আর এমন কিছু শব্দ ছিল, যেগুলো মানুষের শরীরে কাঁটা দিতে সক্ষম। ’
ঊষা আর অয়ন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। সহেলি শব্দ আর বাক্যের কথা বলছে, তা তাদের মাথায় ঢুকছে না।
এমন সময়ে সহেলি ঊষাকে জিজ্ঞেস করল,‘ঊষা, সেদিন মি বারবেরি মি ব্রাউনকে একটা হাতে লেখা কাগজ দিয়েছিলেন, তাই না? নিজ হাতে লেখা উইলের রাফ।’
‘হুম।’ ঊষা অপ্রস্তুত প্রশ্নে অবাক হয়ে জবাব দিল। হঠাৎ তার সন্দেহ হলো। সে সন্দিগ্নভাবে বলল,‘আচ্ছা..তুমি কী সন্দেহ করছো..হুমকিটা বারবেরি নিজেই লিখেছেন!’
সহেলি ঠোঁট কামড়াচ্ছিল। বলল,‘হাতের লেখাতে তো মিল নেই। মানুষ যতই ভিন্নবাবে লেখার চেষ্টা করুক, ধাঁচ কোনো না কোনো ভাবে মিলবেই।’
এমন সময়ে কলিংবেল বাজল। দরজা খুলতেই দেখা গেল রবার্ট ব্রাউনকে।
‘আরে মি ব্রাউন আমি নিজেই তো যেতাম! আপনি কষ্ট করে আসতে গেলেন কেন?’ বলল সহেলি।
‘কোনো ব্যাপার না।’ হেসে বললেন মি ব্রাউন,‘আসলে তুমি যখন এর মধ্যে আছো, উত্তেজনায় থাকতে পারিনি।’
উনি বসলেন। সহেলি জিজ্ঞেস করল,‘দুটো জিনিসই নিয়ে এসেছেন?’
‘হুম।’ বলতে বলতে পকেট থেকে একটা কাগজ আর নিজের মোবাইল বের করলেন তিনি।
সহেলি এক কাপ কফি ঢেলে আনল। মি ব্রাউন কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,‘পেছনে পুলিশ লেগেছে রাইটের। সাথে আমার এজেন্সির গোয়েন্দাও আছে। যতই জেরা করি, সব নিশ্চয়ই খুলে বলবে না! তবে..’ তিনি সহেলিকে একটু পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে বললেন,‘এই কেসটা খুব বেশি ইন্টারের্স্টিং ছিল না। আর তাছাড়া এটা পুলিশ কেস। আমাদের না। ’
সহেলি মৃদু হাসল। বলল,‘কল রেকর্ডিংটা একবার শোনাবেন প্লিজ? কোর্টে পেশ করার আগে শুনে নেওয়া উচিত।’ বিনীত কন্ঠে বলল সহেলি।
‘হ্যাঁ। নিশ্চয়ই।’ তিনি মিসেস বারবেরির পাঠানো কল রেকর্ডিংটা আগেই ডাউনলোড করে নিয়েছিলেন। ফোনের ভলিউম বাড়িয়ে সামনে ধরে রেকর্ডিং অন করলেন। প্রথম দিকে স্বামী-স্ত্রীর সাধারণ কথাবার্তা চলল। এক পর্যায়ে গিয়ে সব বদলে গেল।
-‘মজা তুমিও কম করো না র্যাচেল..আর..! ’
-‘কী হলো?!’
-‘একটা গাড়ি..বার বার ধাক্কা দিচ্ছে! উফফ!(হর্নের শব্দ)’
-‘হর্ন দাও। না হলে ব্রেক..’
-‘হর্ন দিচ্ছি! আর ব্রেক কী করে করবো! ব্রেক করলেই ধাক্কা দিয়ে দিবে!’
-‘আচ্ছা, ফোন রাখো! কিছু একটা ব্যবস্থা..’
-‘আ….(গাড়ি উল্টে যাওয়া, গাছে জোরে ধাক্কা খাওয়া ও কাঁচ ভেঙে পড়ার আওয়াজ)’
-‘জ্যাক! হ্যালো জ্যাক! জ্যাক! কথা বলো! জ্যাক!’
‘এটা কিছু কী প্রমাণ করে সহেলি আপু?’ জিজ্ঞাসা করল অয়ন।
‘করে।’ শীতল কন্ঠে জবাব দিল সহেলি,‘এটাই যে, অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল, কোনো একটা গাড়ি ধাক্কা দিয়েছিল।’
‘এটা তো খুবই নরমাল একটা কেস। এটা নিয়ে মি ব্রাউন আর তুমি এত কেন ভাবছ?’ বলল ঊষা।
মি ব্রাউন বললেন,‘কারণ আছে ঊষা। তাই এত চিন্তা।’
‘কী কারণ? ’ জিজ্ঞেস করল অয়ন।
মি ব্রাউন বললেন,‘কারণ একটাই, আর বেশ বড় কারণ।’
সহেলি বলল,‘ মি বারবেরি মি ব্রাউনের বাড়ি থেকে বের হয়েই বাড়ির দিকে রওনা হননি। ’
‘মানে?’ অবাক হয়ে বলল ঊষা,‘তাহলে কোথায় গিয়েছিলেন..ও! ট্রিজ নাইট ক্লাবে বুঝি?’
‘ব্রিজ নাইট ক্লাব।’ মৃদু কন্ঠে সংশোধন করে দিল অয়ন।
মি ব্রাউন বললেন,‘কাল হসপিটাল থেকে চলে আসার পর রাত আটটার দিকে ফোনে সহেলি তার এই ধারণার কথা বলে, তখনই খোঁজ নিয়েছি আমি।’ তিনি সহেলির দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,‘কালকে রাতে তোমার সাথে কথা বলার পর আরও অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু। আমি এই ক্লাবের খোঁজ পাওয়ার পর জ্যাকের ডাক্তারের সাথে কথা বলি। তার কাছ থেকে জানতে পারি যে জ্যাকের রক্তে কিছুটা অ্যালকোহল পাওয়া গেছে।’
‘মানে উনি মদ খেয়ে ছিলেন?’ বলে উঠল অয়ন।
‘হুম।’ হেসে বললেন মি ব্রাউন,‘এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম ওর সাথে। হাজারটা কথা শুনিয়ে দিল।’
‘শুধু কথাই শুনিয়েছে?’ জিজ্ঞেস করল সহেলি।
মি ব্রাউন বললেন,‘কাজের কথাও বলেছে। তার কথা হলো সে সেদিন মদ মাত্র এক বোতল খেয়েছিল। অন্যদিনের তুলনায় অনেক কম।’
‘সেক্ষেত্রে মাতাল হওয়ার কারণে অ্যাকসিডেন্ট হয়নি।’ আত্মবিশ^াসের সাথে বলল সহেলি।
‘এত বিশ^াসের সাথে কী করে বলছো?’ প্রশ্ন করল অয়ন।
সহেলি চিন্তার সাগরে ডুবে থেকেই বলল,‘যে লোকের কয়েক বোতল মদ খাওয়ার অভ্যেস, আবার যিনি স্পোর্টস কার চ্যাম্পিয়ন, তিনি এত সহজে গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করতে পারেন না।’
‘জ্যাক গাড়িটা দেখেছিল। বর্ণনা অনুযায়ী এমন গাড়ি, টমাসেরই আছে।’ মুখ শক্ত করে বললেন মি ব্রাউন,‘তার ছেলে জ্যামস রাইট রাতের বেলা বের হয়েছিল গাড়ি নিয়ে। আর ফিরেছে..রাত দুটোর পরে। ঠিক তার দশ-পনেরো মিনিট আগে ফিরেছিলেন টমাস রাইট। গাড়িটায় সে জঙ্গলে সে সময়ে গিয়েছিল। সেদিক দিয়ে ঘুরে বাড়ি ফেরে জ্যামস রাইট। তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ওই রোড দিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সে বলেছে, তার বন্ধুর বাড়ি ম্যাকডালেন জঙ্গল পেরিয়ে। ও মাঝেমধ্যেই জঙ্গলের মাঝ দিয়ে গাড়ি চালায়। তার না কি ভালো লাগে। সে বারবেরির গাড়ি দেখেওনি, ধাক্কাও দেয়নি। আবার বলেছে সে না কি জ্যাককে ভালো করে চেনেই না, গাড়ি চিনবে কী করে।’
কিছু সময় ঠোঁট কামড়ে বললেন মি ব্রাউন,‘তো..অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আনবো, সহেলি? …১ম ব্যাপারটা পরিষ্কার। দ্বিতীয় ব্যাপারটাও তার মানে..’
সহেলি কয়েক সেকেন্ড পর বলল,‘আনলে আনতেই পারেন। আমি এর মধ্যে কথা বলার কেউ নই।’
তিনি বললেন,‘তোমার কী মত? তুমিই তো বলো যে, যা দেখা যায় তা সবসময়ে সত্য না। আর যা দেখা যায় না, তা অনেক সময়ে সত্য।’
সহেলি মুচকি হেসে মি ব্রাউনের দিকে তাকাল। তার থেকে বয়সে কত বড় উনি। ছোটদের প্রতি এমন ¯েœহ বা তার মতামতের প্রতি এমন শ্রদ্ধা সহজে দেখা যায় না। রবার্ট ব্রাউন একবার বলেছিলেন, সহেলি আর ঊষাকে দেখলে তার বড় মেয়ের কথা মনে পড়ে। তাঁর বড় মেয়ে এজেন্সির সিনিয়র ডিটেকটিভ ছিল। গুলি হামলায় মারা যায় ছয় বছর আগে।
‘আমার মনে হয় মি ব্রাউন, এত তাড়াতাড়ি স্টেপ না নেওয়াই ঠিক হবে। টমাস রাইট আর তার ছেলে জেমস রাইটের ওপর রাতদিন নজর রেখে সঠিক প্রমাণ সংগ্রহ করা ঠিক হবে। কারণ ভিকটিম যেমন প্রভাবশালী, তেমনই অভিযুক্তও প্রভাবশালী। তাই সাবধান থাকা ভালো বলে আমার মনে হয়।’
‘ঠিক বলেছো।’ মাথা নেড়ে বললেন মি ব্রাউন। সহেলির দিকে তাকিয়ে হতাশভাবে বললেন,‘জেমস আর টমাসের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া বাকি আছে বলে তোমার মনে হয়? তার গাড়ি ওই রোডে ছিল, জ্যাক বলছে ওটা টমাসেরই গাড়ি, আবার কল রেকর্ডিংটাও অনেক বড় একটা প্রমাণ।’ একটু ইতস্তত করে বললেন,‘পুলিশ অফিসাররা এখনি তাদের অ্যারেস্ট করতে চান। আমি বুঝিয়েছি, কিন্তু তাদের বক্তব্য..যথেষ্ট প্রমাণ আছে।’
সহেলি মাথা নিচু করে বাবছিল। মাথা তুলে বলল,‘আরেকটা ব্যাপার পরিষ্কার করলে ভালো হতো। পুলিশকে একবার অনুরোধ করবেন?’
‘কী ব্যাপার?’
‘টমাস রাইট আর জেমস রাইটের হাতের লেখা।’ বলল সহেলি,‘চিঠিটা তারাই লিখেছে কি না সেটা প্রমাণ করার এটাই উপায়..তার আগে একটা কথা বলুন, পুলিশ বা আপনার ডিটেকটিভরা কী রাইটের সাথে একবারও দেখা করেছেন? রেড করা হয়েছে তাদের বাড়িতে?’
একটুখানি ইতস্তত করে বললেন ব্রাউন,‘হ্যাঁ, করা হয়েছে। সম্প্রতি তাদের ব্যবসায় একট সমস্যা হয়েছে। ট্রাক অ্যাকসিডেন্ট হয়ে ৮৫ হাজার ডলার নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে এসব। তবে একটা বিষয় বলে দিয়েছেন, প্রমাণ ছাড়া আমরা যদি তাদের কোনোভাবে অ্যারেস্ট করি, তবে আমরা বিপদে পড়ব। কিন্তু এখন তা আছে।’
সহেলি ভাবনায় ডুব দিল। ভাবতে ভাবতেই উঠে জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মৃদু কন্ঠে এরপর জিজ্ঞেস করল,‘ সরাসরি পুলিশের মাধ্যমে তার বা তার পরিবারের কারো হাতের লেখা জোগাড় করা যাবে না..’ হঠাৎ তার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। সে মুচকি হাসল।
ঊষা আর অয়নের দিকে তাকিয়ে মি ব্রাউনের বোঝার সুবিধার্থে ইংরেজিতেই বলল,‘এবার একটু ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হবে। তৈরি হয়ে যাও। ’
‘কী বোঝাতে চাইছো? প্রায় একসঙ্গে বলে উঠল ঊষা আর অয়ন।