Home » অনুবাদে উৎসের ঐতিহ্য ধারণ ও স্বাধীনতা চর্চাঃ মনসামঙ্গল কাব্য ও দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস // মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান

অনুবাদে উৎসের ঐতিহ্য ধারণ ও স্বাধীনতা চর্চাঃ মনসামঙ্গল কাব্য ও দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস // মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান

অনুবাদে উৎসের ঐতিহ্য ধারণ ও স্বাধীনতা চর্চাঃ মনসামঙ্গল কাব্য ও দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস (1)

মনসাঃ সাপের দেবী, লোকজ এই দেবীকে একজন সর্বভারতীয় হিন্দু পৌরাণিক দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে চতুর্দশ শতকের শেষের দিক থেকে শুরু করে উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন কবিরা দেবলোক ও মর্ত্যলোকে মনসার দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের নিমিত্তে তার যে সংগ্রাম সে সব কাহিনী বয়ান করে যে কাব্য আখ্যান রচনা করেছিলেন তাই বাংলা সাহিত্যে মনসামঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত। মনসামঙ্গল পন্ডিতেরা এই বিষয়ে একমত যে কবি ভেদে আখ্যানশৈলীর ভিন্নতা ও কিছু ঘটনার ভিন্নতা বাদে সব মনসা কবিরাই তাদের কাব্যে একই কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন রূপে বয়ান করে গেছেন আর এভাবেই প্রায় পাঁচ শত বছর ধরে মনসামঙ্গল কাব্যের একটি ধারা গড়ে উঠেছে। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্ববহ আর সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ মনসামঙ্গল কাব্য কিন্তু বিশ্বসাহিত্যের দরবারে নিজের পরিচয় তুলে ধরবার সুযোগ তেমন পায়নি। যে একটি মাত্র প্রচেষ্টা চোখে পড়ে তা হলো দীনেশ চন্দ্র সেনের বেহুলাঃ ইন্ডিয়ান পিল্গ্রিমস প্রগ্রেস বইটিতে মনসার মূল কাহিনীটি তুলে ধরা হয়েছিল। (2) এই প্রেক্ষাপটে, ২০১৫ সালে প্রকাশিত কায়সার হকের দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস হলো মনসামঙ্গল কাব্য এর প্রথম ইংরেজি অনুবাদ যেখানে গদ্য রূপে মনসা কাহিনীগুলোর একটি সমন্বিত রূপ পুনবিবৃত হয়েছে। (3)

কায়সার হক তার দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস বইটির ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন যে, গুরুত্বপূর্ণ সব মনসা কাহিনী পর্যালোচনা করে বিপ্রদাস, বিজয় গুপ্ত, তন্ত্র বিভূতি, রাধানাথ রায় চৌধুরী আর রায় বিনোদ- এই কজন প্রধান মনসা কবির রচনা থেকে প্রাথমিক উৎস নিয়ে তিনি তার ইংরেজি অনুবাদে এই সমন্বিত সংস্করণটি তৈরি করেছেন। (4) যেহেতু অনূদিত এই সংস্করণটি বিভিন্ন কবির রচনার ভিন্ন ভিন্ন টুকরোকে সমন্বিত করে নির্মাণ করা হয়েছে, তাই এই নির্মিতি যে বিভিন্ন প্রশ্নের সূচনা ঘটাবে তাই স্বাভাবিক আর সেগুলোর উত্তর খোঁজাও বাঞ্চনীয়। ২০১৫ সালে এ বইটি প্রকাশিত হলেও এর ওপর খুব বেশি গবেষণা এখন পর্যন্ত হয়নি। কেবল হাতে গোনা কয়েকটি গ্রন্থ পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। তার সব কয়টিতেই মনসামঙ্গল কাব্য বিষয়ে কায়সার হকের এমন গভীর গবেষণা আর সেই গবেষণার ফলস্বরূপ এমন প্রাঞ্জল অনুবাদের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। কায়সার হকের এই অনুবাদ বিষয়ে অধ্যাপক ফকরুল আলম বলেন, বইটি “মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের বেশ দুর্লভ কিছু রচনার ওপর করা গভীর গবেষণার ফল”, তবুও “সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হল কায়সার হক কেমন এক হালকা মেজাজেই না এই পান্ডিত্যকে ধারণ করেছেন আর কি মনোরম আর সুবোধ্যরূপে তিনি সে গল্প বয়ান করছেন”। (5) অনুবাদটির নির্মিতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে ওয়েন্ডি ডনিগার উল্লেখ করেন যে, অনুবাদের জন্য একটি মাত্র মৌলিক রচনাকে উৎস হিসেবে বিবেচনা না করে “বিভিন্ন রচনা থেকে টুকরো টুকরো গল্পকে একত্রে সমন্বিত করে কায়সার হক দেখিয়ে দিয়েছেন যে, এই কাহিনীগুলোর ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণগুলোর মধ্যকার সীমানা বেশ সুভেদ্য”, আর এভাবে তিনি মনসা কাহিনীগুলোর একটি “নিরপেক্ষ সংকলিত সংস্করণ” তৈরি করেছেন। “’নিরপেক্ষ’ হবার মধ্য দিয়ে কাহিনী বয়ানের ঐতিহ্যের ভেতর হক নিজেকে শামিল করে নিতে পেরেছেন যা তার (অনুবাদ) কর্মকে অনুপ্রাণিত করেছে” (6) আর এর ফলাফলস্বরূপ অনুবাদটি “সমকালীন স্বর” (7) ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই অনুবাদের পুরো আখ্যান জুড়ে যে লঘু ভাবটি বিদ্যমান সে কথা প্রফেসর সোমদত্ত মন্ডলও উল্লেখ করেছেন । (8) এই একই বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে প্রফেসর ফক্রুল আলম বলেন, হকের রচনায় সাপদের দেবীর দুঃসাহসিক অভিযানটি হয়ে উঠেছে চমকদার, প্রাণবন্ত, যৌনতার (শৃঙ্গার রসের) কৌতুকপ্রদ উপস্থাপনা আর হাস্যরসাত্মক সব মুহূর্তে পরিপূর্ণ, যার দরুণ, তার এই সৃষ্টিকর্মটি বর্তমান সময়ে গদ্যে লেখা একটি চমৎকার হাস্যরসাত্মক মহাকাব্যের রূপ লাভ করেছে। (9) যদিও, মনসামঙ্গল কাব্য কিন্তু আদতে ধর্মীয় ভক্তিমূলক রচনা, মধ্যযুগের বিভিন্ন কবিরা যে মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন সেগুলোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল “সাবঅলটার্ন দেবী” (10) মনসার কৃপা লাভ, যেগুলো সন্দেহাতীতভাবেই মূলত বীর রস ও করুণ রসে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু উপরে উল্লিখিত সমালোচকদের পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায়, ঐতিহ্যবাহী মনসা কাহিনীগুলোকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে কায়সার হক তার সমন্বিত সংস্করণটিতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছেন আর তাতে করে রচনাটি রূপ পালটে একটি হাস্যরসাত্মক রচনায় পরিণত হয়েছে। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হল যে, উপরে উল্লিখিত সমালোচকদের কেউই পরিবর্তনগুলোকে স্পষ্ট রূপে চিহ্নিত করেননি আর তার ফলশ্রুতিতে এই পরিবর্তনগুলোর ধরণ, পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ও কার্যকারণ নিরীক্ষণের কাজগুলোও এখনও বাকিই রয়ে গেছে।

এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো, এই অনুবাদে যে পরিবর্তনগুলো সাধিত হয়েছে সেগুলোর ধরণ, প্রক্রিয়া ও কার্যকারণগুলো অনুসন্ধান করা আর তার মধ্য দিয়ে খতিয়ে দেখা যে মূলের প্রতি অনুগত থাকার বিষয়টিকে মোকাবেলা করে এই অনুবাদটি কি করে মনসা কাব্যধারার ঐতিহ্যকে ধারণ করলো। সেই সাথে অনুবাদে কৃত স্বাধীনতার চর্চার স্বরূপ নিরূপণও এই প্রবন্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য। মনসামঙ্গল কাব্যের যে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণকে অনুবাদক তার অনুবাদ কর্মে ব্যবহার করেছেন সেগুলো ও তার সমন্বিত অনূদিত কর্মের সম্পূর্ণটি নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা কিন্তু একটি বেশ বৃহত্তর গবেষণার কাজ। সেই বৃহত্তর গবেষণা প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে এই প্রবন্ধে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে কেবল সেই অধ্যায়গুলোর ওপর যেগুলো অনুবাদক, রায় বিনোদ প্রণীত পদ্মাপুরাণকে উৎস হিসেবে বিবেচনা করে নির্মাণ করেছেন।

উপরে উল্লিখিত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আদতে অনুবাদ কি তা বোঝার চেষ্টা করা। অনুবাদ হলো এমনই এক জটিল বিষয় যার সাথে মূল রচনা আর অভীষ্ট ভাষা এই অন্তত দু’টো “পলিসিসটেম” (polysystem) (11) জড়িত। “পলিসিস্টেম” আসলে সেই অবস্থাকে নির্দেশ করে যেখানে একটি সাহিত্য কর্ম কেবল একটি সাহিত্য ধারার অংশ নয় বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক এবং ঐতিহাসিক কাঠামোর অংশ। অনুবাদের প্রক্রিয়াটি কেমন সে কথা ব্যখ্যা করে লরেন্স ভেনুতি বলেন, অনুবাদ কখনই যোগাযোগ স্থাপনের কাজটি নির্বিঘ্নে সারতে পারে না কারণ ভিনদেশী রচনাটির ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে সংকুচিত করে অনুবাদক আরেক গুচ্ছ ভিন্নতার সন্নিবেশ ঘটায়, যেগুলো মূলত স্বদেশী, স্বদেশী ভাষা আর সংস্কৃতি থেকে টেনে আনা যেন ঐ ভিনদেশী রচনাটি এই স্বদেশী ক্ষেত্রের ভেতরে গৃহীত হতে পারে। (12)

দুটো ভিন্ন পলিসিস্টেমের মধ্যকার ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার এই সমস্যাকে মোকাবেলা করার পাশাপাশি উৎসের নিরিখে অনুবাদটি কতটা যথাযথ হল আর অভীষ্ট ভাষা ও সংস্কৃতির নিরিখে অনুবাদটি কতোটুকু গ্রহণযোগ্য হল সে বিষয়গুলোও একজন অনুবাদককে মাথায় রাখতে হয়; আর এই বিষয়গুলোই অনুবাদে আনুগত্য এবং স্বাধীনতার চর্চার মত প্রশ্নগুলোকে সামনে নিয়ে আসে। আন্দ্রে লুফেভার এর মতে একজন অনুবাদক কি করে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন তা নির্ভর করে অনুবাদটি করতে গিয়ে অনুবাদক মূল রচনাটির বিষয়ে যেসব প্রতিসৃত অবস্থানগুলো গ্রহণ করবেন তার ওপর। তার মতে একজন লেখকের লেখাকে ভুল বোঝার মধ্য দিয়ে আর সেই লেখার বিষয়ে ভুল ধারণা তৈরির মধ্য দিয়েই লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তা অপরের ওপর প্রভাব খাটাতে শুরু করে, আর এ অবস্থাকেই তিনি প্রতিসৃত অবস্থান বলে চিহিত করছেন; লেখক ও তাদের লেখা কোন নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে প্রতীত হয়, অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট বর্ণচ্ছটার মধ্য দিয়ে প্রতিসৃত হয়, ঠিক যেমন করে সেই লেখকদের লেখা তাদের অগ্রজদের লেখাগুলোকে কোন নির্দিষ্ট বর্ণচ্ছটার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত করে। (13) যথার্থতা আর গ্রহণযোগ্যতার দ্বন্দকে মাথায় রেখে, এই প্রবন্ধটিতে মূল রচনা (কেবল রায় বিনোদ প্রণীত পদ্মাপুরাণ এর যে অংশ বিশেষসমূহকে উৎস হিসেবে অনুবাদক গ্রহণ করেছেন) ও সে সব অংশের অনুবাদে আখ্যানের গঠনশৈলী, পটভূমি ও ভাবরসের ব্যবহারের তুলনামূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে অনুবাদটি মনসামঙ্গল কাব্যের ঐতিহ্যকে কতটা ধারণ করতে পেরেছে আর অনুবাদে কতোখানি স্বাধীনতার চর্চা করা হয়েছে তাই খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, এর পাশাপাশি, যে প্রতিসৃত অবস্থানগুলো এই অনুবাদের নির্মিতিতে কাজ করেছে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টাও করা হয়েছে।

পুরো মধ্যযুগ জূড়েই মনসা কবিরা তাদের স্বকীয় কথা বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে দেবলোক ও মর্ত্যলোকে মনসার দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের যে মূল গল্পটি বয়ান করে গেছেন সেই গল্পটি জেনে নেয়া প্রয়োজন। মনসার জন্ম জাদুকরী, কোন নারী তাকে গর্ভে ধারণ করেননি, বরং একাকী পদ্মবনবিহারকালে কামাতুর শিবের চন্দ্রপাত ঘটে আর বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই বীর্য এক ডিমের রূপ নিয়ে পাতালে ধ্যানরত মুনি কশ্যপের কাছে পৌঁছায়। শিবের বীর্য থেকেই যে এই ডিমের উৎপত্তি ধ্যানের মধ্য দিয়ে কশ্যপ সে কথা জেনে যায়, আর যেহেতু শিবের সন্তান কার্তিক আর গণেশ দুজনই পুরুষ তাই এই ডিম থেকে শিবের জন্যে এক কন্যা সন্তান সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয় কশ্যপ। সেই মুনির পাঠ করা বেদমন্ত্রে ঐ ডিম থেকেই চার হাত আর তিন চোখ নিয়ে পূর্ণ যৌবনা সাপের দেবী মনসার জন্ম হয়। তো শিবের কন্যা হয়েও জন্মের পর পাতালেই ছিল মনসার নিবাস, সেখানে সবাই তাকে সাপের দেবী হিসেবে ভক্তি করলেও পিতৃপরিচয়হীনতা দেবলোকে তার সে প্রাপ্য সম্মান লাভের অন্তরায় হয়ে থাকে। পরিতাপের বিষয় হল জন্মের পর মনসা যখন তার পিতৃপরিচয় জানতে পেরে শিবের সাথে দেখা করতে যায় তখন শিব তার নিজ সন্তানকে চিনতে তো পারেই না বরং মনসার রূপে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে যৌন মিলনে উদ্যত হয়ে ওঠে। পিতার এহেন কর্মে ক্ষুব্ধ মনসা শেষমেশ শিবকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, সে শিবেরই ঔরসজাত। শিব তার ভুল বুঝতে পেরে মনসাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। শিবের বাড়ি পৌঁছে মনসা এবার শিবের স্ত্রী চন্ডীর কোপানলের সম্মুখীন হয়। ক্রোধান্বিত চন্ডী মনসার এক চোখ তুলে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে নিজ পিতৃগৃহ ছেড়ে বনবাসে যেতে বাধ্য করে। নিজ সন্তানের এই দুর্গতি দেখে শিবের চোখ থেকে যে জল গড়িয়ে পড়ে তা থেকে নেতা নামে আরেক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়, যাকে শিব বনবাস জীবনে মনসার সহচরী হিসেবে নিয়োগ করে। দেবলোকে দেবী হিসেবে সম্মান লাভের পরিবর্তে মনসার ভাগ্যে জোটে দুর্বিসহ বনবাস। এরই মধ্যে দেবতারা সমুদ্র মন্থন শুরু করেন। সমুদ্র মন্থনে একে একে বিভিন্ন বস্তুর সাথে এক সময় গরল উঠতে থাকে। কে গরল পান করবে বা তা কোথায় রাখা হবে তাই নিয়ে দেব সমাজে কলরব ওঠে। শেষ পর্যন্ত দেবতাদের অনুরোধে শিব সেই গরল পান করে মূর্ছা যায়। গরল পান করা শিবের চেতনা ফিরিয়ে আনতেই এ দফা বনবাস থেকে মনসাকে ফিরিয়ে আনা হয়। চন্ডীর অনুরোধে বিষঝাড়ন মন্ত্র পড়ে মনসা শিবকে বাঁচিয়ে তোলে আর সমস্ত গরল সে তার নাগদের মাঝে বন্টন করে দেয়। কিন্তু তারপরও দেবতাদের সমাজে মনসা তার প্রাপ্য মর্যাদা নিয়ে বসবাসের সুযোগ পায় না। তখন শিব মনসাকে মর্ত্যে গিয়ে নিজ অনুচর চাঁদ সওদাগরের হাতে পূজা নিয়ে দেবসমাজে স্থায়ী দেবতার মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার উপদেশ দেয়। দেবখন্ডের কাহিনীর শেষ এখানেই।
দেবলোকে চন্ডী যেমন মনসার প্রধান শত্রু, সেখানে তার দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান অন্তরায় তেমনি চন্দ্রধর বা চাঁদ সওদাগর হল মর্ত্যলোকে মনসার প্রধান শত্রু। ধ্বংস ও সৃষ্টি এবং মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবনের ক্ষমতার প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে একে একে মর্ত্যলোকের সবাইকে মনসা তার পূজারীতে পরিণত করতে সক্ষম হলেও শিবের পূজারী চাঁদ সওদাগরের পূজা লাভে সে বারংবার ব্যর্থ হয়। মনসাকে পূজা না করার সিদ্ধান্তে চাঁদ অটল থাকে আর বিভিন্ন স্থানে মনসার পূজার আয়োজনগুলোকেও ধ্বংস করে দেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। এর ফলে ক্রুদ্ধ মনসার কোপানলে পড়ে চাঁদ হারায় তার ছয় পুত্র সন্তান। কিন্তু তাতে চাঁদের চিন্তায় তেমন কোন পরিবর্তন আসে না। সে বরং বাণিজ্যে মন নিবিষ্ট করতে লংকা গমনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই মধ্যে চাদের স্ত্রী সোনাকা গর্ভধারণ করে, আর চাঁদের লংকা অবস্থানকালে চাঁদ-সোনাকার পুত্র লক্ষিন্দরের জন্ম হয়। পরবর্তীতে বেশ অনেক বছর পরে বাণিজ্য শেষে লংকা থেকে ফেরার পথে আবারো মনসার ক্রোধের স্বীকার হয়ে চাঁদ তার ধন সম্পদে ভরপুর সবকটি ডিঙার সলিল সমাধির সাক্ষী হয়। এতো বছরের বাণিজ্য থেকে উপার্জিত সব ধন সম্পদ হারিয়ে চাঁদ যতোদিনে তার বাড়িতে ফেরে ততোদিনে লক্ষিন্দর বিবাহযোগ্য হয়ে উঠেছে। তাই চাঁদ আর কালক্ষেপণ না করে লক্ষিন্দরের বিয়ের ব্যবস্থা করে। বিয়ের জন্য পাত্রী হিসেবে ঠিক করা হয় উজানী নগরের সায়বেনের কন্যা বেহুলাকে। আর অপর ছয় পুত্র সন্তানের মতন লক্ষিন্দরকে যেন মনসার নাগেদের ছোবলে মরতে না হয় তাই লক্ষিন্দর আর বেহুলার জন্য ইস্পাতের তৈরি বাসরঘর তৈরি করা হয়। কিন্তু চাঁদের সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যন্ত মনসার ক্রোধ আর বুদ্ধির কাছে হার মানে আর সাপের দংশনে লক্ষিন্দরের মৃত্যু হয়। লক্ষিন্দরের এমন মৃত্যু বেহুলা মেনে নিতে পারে না আর তাই সাপে কাটা মরা হিসেবে লক্ষিন্দরকে যে ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয় সেই ভেলায় বেহুলা তার মৃত স্বামী লক্ষিন্দরের সঙ্গী হয়। তার এ যাত্রার উদ্দেশ্য হল শিবের সভায় গিয়ে তার কাছে লক্ষিন্দরের পুনরুজ্জীবনের আর্জি জানানো। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বেহুলা শেষ পর্যন্ত শিবের সভায় পৌঁছায় আর সেই সভায় নাচের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে শিবের সন্তুষ্টি অর্জন করে। তখন বেহুলার আর্জি অনুযায়ী শিবের মধ্যস্থতায় মনসার নিকট বেহুলা তার স্বামীর পুনরুজ্জীবন দানের প্রার্থনা করলে মনসা সেই প্রার্থনায় সাড়া দেয়। পরবর্তী কালে এই লক্ষিন্দরই মনসার পূজার জন্যে চাদঁ সওদাগরের কাছে প্রস্তাব জানায়। ইতিমধ্যে চাঁদ সওদাগর মনসার কৃপায় লক্ষিন্দরসহ তার অন্য ছয় সন্তান আর তার ডুবে যাওয়া চৌদ্দডিঙ্গা সবই ফেরত পেয়েছে। মনসার অপরিসীম শক্তি ও ক্ষমতার প্রমাণ পেয়ে তাই শেষ অবধি চাঁদ মনসাকে দেবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আর তার পূজা অর্চনার ব্যবস্থা করে। এভাবে দেবলোক ও মর্ত্যলোকে মনসা দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মনসা কাহিনীর সমাপ্তি ঘটে।
মনসামঙ্গল কাব্যের গবেষক আদিত্যকুমার লালা মনসার চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন মনসা কবিদের কাব্যে মনসার এই মূল কাহিনীর বয়ান পাওয়া যায় তাতে “মনসা চরিত্রের দুইটি স্বরূপের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথম ধারায় মনসার অসহায়ত্ব ও নারীজীবনের অসহায়ত্ব পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় ধারায় নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার বাসনা প্রকাশ পায়।“ (14) বিভিন্ন মনসা কবিদের কাব্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষক আরো বলেন যে, মনসা কবিরা “মনসা চরিত্রটিকে স্বৈরাচারী, হিংস্র, প্রতিহিংসাপরায়ণ করে এঁকেছেন।“ (15) কিন্তু এই অনুবাদ কর্মে মনসা চরিত্রের ভিন্ন এক দিকের প্রতিই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আর তার সাথে সাথে রচনাটির গঠনশৈলীতেই এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মনসামঙ্গল কাব্যের মতন একটি ধর্মীয় রচনার চর্চা যে হয়ে আসছিল তা যে মূলত সাপের দেবী মনসার কৃপা লাভের আশাতেই সে কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। সব মনসা কবিই তাদের রচিত মঙ্গল কাব্যে মনসা দেবীর প্রতি তাদের ভক্তির প্রমাণ দিয়েছেন; ফলাফলস্বরূপ, সব মনসামঙ্গল কবিদের রচনাতেই যে মূল দুটি খন্ড দেখতে পাওয়া যায়ঃ দেবখন্ড ও মানবখন্ড সেগুলো সাপের দেবী মনসার প্রতি প্রণতি আর তার স্তুতির সাথে সাথে শিব, বিষ্ণু ও চন্ডীর মতন দেব-দেবীদের স্তুতিতে পরিপূর্ণ। এছাড়াও সে সব রচনার সর্বাগ্রে দেবতার স্তুতি নামে আরো একটি পর্ব সংযোজিত দেখতে পাওয়া যায় যেখানে মনসা কবিরা মনসার পাশাপাশি তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের প্রিয় দেব-দেবীর বন্দনা করেছেন। যেমন, শ্রীরায় বিনোদ প্রণীত পদ্মাপুরাণে পদ্মা অর্থাৎ মনসার মাহাত্ম্য বর্ণনা পাওয়া যায় এভাবেঃ

মনসার গীতকীর্তন করএ জেহি জন।
রাজপদ হএ তার বাড়ে ধনজন।।
যমের ভয় তার নাহি কোনকালে।
দেবীর প্রসাদে লোক স্বর্গভোগ করে।।
দরিদ্রের দারিদ্র্য ঘুচে আরোগ্য হএ রোগী।
দেবীর কৃপায় লোক হএ সুখভোগী।। (16)

এছাড়া মনসা কবিদের প্রত্যেকেই তাদের রচনার শুরুতেই উল্লেখ করেছেন যে, তারা আসলে স্বয়ং মনসা দেবীর দ্বারা আজ্ঞা প্রাপ্ত হয়েই এই কাব্য রচনা করেছেন যা মনসা দেবীর প্রতি তাদের প্রচন্ড ভক্তিরই পরিচায়ক। যেমন, রায় বিনোদের রচনায় পাওয়া যায়ঃ

নিশাতে বুলিয়া স্বপ্নে শঙ্করকুমারী।
পদ্মাপুরাণ পোথা রচিতে পাঁচালী।।
নানা দিশা নানা ভাষা নানা বিধি ছন্দ।
আজ্ঞা কৈলা ব্রাক্ষ্মণী রচিতে পদবন্ধ।।
আমার মাহিত্য জেন গাএ স্ররবজন।
রচহ পাঁচালী তুমি পুরাণ কথন।। (17)

কিন্তু এই অনুবাদের কোথাওই কথকের পক্ষ থেকে মনসা কিংবা অন্য কোন দেব-দেবীর প্রতি ভক্তিমূলক স্তুতি বাক্যের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় না। ফলাফলস্বরূপ, মূল রচনার বিভিন্ন সংস্করণগুলোতে যে দেবতা-স্তুতি, কবির আত্ম পরিচিতি ও দেবী ভক্তিকে গ্রন্থ রচনার কারণ হিসেবে উল্লেখ আর দেবী হিসেবে মনসার মাহাত্ম্য ও এমন গ্রন্থ পাঠের ফলাফলের বর্ণনা পাওয়া যায় তার কোন কিছুই এই অনুবাদে স্থান পায়নি আর তার দরুণ ধর্মীয় রচনা হিসেবে মূল রচনার যে ভক্তি উৎপাদী বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা অনুবাদে অনুপস্থিত। বরং অনুবাদক তার অনুবাদে মনসাকে একজন ছলনাময়ী নারী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন যে কিনা তার শত্রুদের বধ করার জন্যে বারংবার যৌন আবেদনময়ী নারী রূপে আবির্ভূত হয়েছে এবং তার শারীরিক সৌন্দর্য দিয়ে তার শত্রুদের কামবিহ্বল করে ফেলে সেই শত্রুদের বিনাশ নিশ্চিত করেছে। অনুবাদ কর্মটির পরতে পরতে মনসা চরিত্রের এমন উপস্থাপন দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, শংখ ওঝার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মনসা যে ছদ্মবেশ ধারণ করে তার বর্ণনা এই অনুবাদে পাওয়া যায় এভাবেঃ
In no time she became a young attractive woman with all the physical endowments and accoutrements loved by the writers of erotic literature—large, well rounded breasts and buttocks, thighs like banana trees, eyebrows arched like bows—and shooting fatal glances, long curly tresses, a smile with tantalizing naughty hints, eye-catching golden earrings and necklace, bracelets that drew attention to beautiful hands with slender fingers, toe rings attached by chains to anklets with tiny tinkling bells. (18)

মনসা যে “সুগন্ধি পুষ্পের মালা আর পাটশাড়ি” গায়ে জড়িয়ে “গন্ধ চন্দন আর কুমকুম কস্তুরী” দিয়ে নিজেকে সুবাসিত করে এক মোহনীয় ছদ্মবেশ ধারণ করে শংখকে বধের উদ্দেশ্যে শংখের বাড়িতে নিজের স্থান করে নিয়েছিল তার বর্ণনা মূল রচনাতে পাওয়া গেলেও তাতে ছদ্মবেশী মনসার শারীরিক সৌন্দর্যের এমন রগরগে বর্ণনা পাওয়া যায় না। (19) খেয়াল রাখতে হবে অনুবাদে কথকের পক্ষ থেকে মনসাকে দেবী হিসেবে ভক্তি প্রদর্শনের বিষয়টি একদম গোড়াতেই পুরোপুরি বাদ পড়েছে আর মনসা চরিত্রের উপস্থাপনের যে ধারা তা যে মূলানুগ নয় তাও এখন স্পষ্ট। শিব, চাঁদ সওদাগর, চন্ডী এবং বেহুলার মতন অন্যান্য প্রধান চরিত্রগুলোর উপস্থাপনের ক্ষেত্রেও তাদের কামভাব ও যৌনতার বিষয়গুলোকে অতিরঞ্জিত করে অনুবাদে প্রকাশ করা হয়েছে এবং তার মাধ্যমে আদতে একটি একযটিক (exotic) প্রাচ্যকেই অনুবাদে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

আবার, মূল রচনার সবগুলো সংস্করণই যদিওবা পয়ার ও লাচারী এই দুই ছন্দে রচিত অনুবাদক কিন্তু তার অনুবাদে একটি গদ্য সংস্করণই উপস্থাপন করেছেন এবং এই গদ্য সংস্করণ নির্মাণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কায়সার হক উল্লেখ করেন “গদ্য সংস্করণ অনেক বেশি পাঠক বান্ধব এবং এর মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ পদ্য নির্মাণের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। (20) তো তার মানে দাঁড়াচ্ছে, অনুবাদটিকে সহজপাঠ্য করে তোলা অনুবাদকের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। মনে রাখতে হবে, অনুবাদটি কিন্তু মনসা দেবীর পূজারীদের পাঠের উদ্দেশ্যে স্বয়ং মনসার আজ্ঞায় কোন মনসা ভক্তের ভক্তিভরে লেখা ধর্মীয় আখ্যান নয়, বরং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় অনূদিত এই বইখানার (যার বিক্রয় মূল্য পুরো চল্লিশ মার্কিন ডলার) পাঠক হিসেবে যে মূলত প্রাচ্যকে জানতে আগ্রহী পাশ্চাত্যের অভিজাত শ্রেণিকেই কল্পনা করা হয়েছে সে কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর রচনাটির গঠনশৈলীতে এমন সব পরিবর্তন পাশ্চাত্যের সেই পাঠকদের নিকট এই রচনাটিকে এর ধর্মীয় লেবাস থেকে বের করে নিয়ে এসে এর মধ্য দিয়ে পাশ্চাত্যের পাঠকদের জন্য একটি একযটিক প্রাচ্যকে উপস্থাপনের প্রচেষ্টাই পরিলক্ষিত হয় আর তা করতে গিয়ে অনুবাদে যে মূল ধারার মনসামঙ্গল কাব্য –এর গঠনশৈলীর ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে সে বিষয়টিও বেশ স্পষ্ট।

কায়সার হক তার অনুবাদটির ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়গুলোর উৎসসমূহের যে তালিকা দিয়েছেন তা থেকে দেখা যায় “দ্যা বার্থ অব লক্ষিন্দর এন্ড বেহুলা” নামের অধ্যায়টির উৎস রায় বিনোদের পদ্মাপুরাণের  ১৮৫ থেকে ১৯১ এবং ১৯৫ থেকে ২০০ পৃষ্ঠা। এক্ষেত্রে অনুবাদটিতে উৎসে উল্লেখিত সকল ঘটনারই যথাযথ সন্নিবেশন ঘটতে দেখা যায়। অনুবাদক যে মধ্যযুগের বাংলা সংস্কৃতিকে তার অনুবাদে ফুটিয়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা তার শব্দচয়নে স্পষ্ট। বিভিন্ন দেব-দেবীর নাম, নানা প্রকারের সাপের নাম, ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের নামের ক্ষেত্রে অনুবাদক বাংলা ভাষা থেকে বেছে নেয়া শব্দগুলকে তার অনুবাদের ভেতর এমন ভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন যে বাংলা ভাষাজ্ঞানহীন পাঠক কোন প্রকার টীকা- টিপ্পনীর সাহায্য ছাড়াই সে সব শব্দের অর্থ ও ব্যবহার বুঝতে সক্ষম। এসব সত্ত্বেও বিষয়বস্তুর নিরিখে অনুবাদের এই অংশে যে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তা কিন্তু সমঝদার পাঠকের চোখ এড়ায় না। একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে পুত্র সন্তান লাভের বাসনায় মনসার উদ্দেশ্যে সোনাকার পূজা আয়োজনের পুরো ঘটনাটি। ছয় পুত্র সন্তানের মৃত্যুর পরে সোনাকা তার আত্মীয়ার কথায় প্রভাবিত হয়ে পুনরায় সন্তান লাভের আশায় তার স্বামীর সাথে মিলনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেই আত্মীয়া নিজেই সোনাকাকে একজন রমণীয়া হিসেবে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব নেয়। এই অবধি অনুবাদের এই অংশে কাহিনীবিন্যাস মূলানুগই ছিল, কিন্তু পরিবর্তনটা ঘটে যখন মনসাকে উদ্দেশ্য করে পূজা অর্চনা শুরু করে মনসার প্রতি সোনাকা তার পুত্র সন্তান লাভের প্রার্থনা জানায় এবং মনসা তার প্রার্থনা মেনে নেয় এই বলে যে “But there’s a catch”…”If his son marries, he will die of snakebite on his wedding night”। (21) অনুবাদে উল্লেখিত ঘটনার এই অংশটুকু সম্পূর্ণভাবেই অনুবাদকের মস্তিষ্কজাত। এমন সংযোজনের প্রয়োজনীয়তাটি কি? নিশ্চিতভাবেই এই ঘটনা চাঁদের (সোনাকার স্বামীর) জাতশত্রু মনসার প্রতি সোনাকার চরম ভক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মনসা দেবীর পরিকল্পনা অনুযায়ী চাঁদ, সোনাকা ও লক্ষিন্দরের জীবনে অদূর ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে তারই এক প্রচ্ছন্ন আলামতও এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে যা পুরো আখ্যানটিকে সংসক্তি অর্জনে সাহায্য করছে এবং সেই সাথে এই আখ্যানে নাটকীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। পরবর্তী কালে শিবের বেশে মনসা আসে চাঁদ সওদাগরের স্বপ্নে আর তাকে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে লংকা গমনের নির্দেশ দেয় আর এমন প্রবোধও দেয় যে লংকা গিয়ে সে মহাজ্ঞান মন্ত্র শিখতে পারবে আর সেই মন্ত্র ব্যবহার করে সে তার মৃত ছয় সন্তানকেও পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে। যদিও মূল রচনায় কিন্তু এমন ঘটনার উল্লেখ নেই আর তার কারণে মূল রচনাটিতে চাঁদের লংকা গমনের সিদ্ধান্তকে কেবলই একটি খামখেয়ালী সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়। কিন্তু এই অনুবাদক চাঁদ সওদাগরকে একজন যুক্তিবাদী চরিত্র রূপে প্রকাশের আর পুরো কাহিনীটিকে কার্যকারণের সুসংহতি প্রদানে সচেষ্ট ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয় আর ওপরে উল্লেখিত পরিবর্তিত পরিবর্ধন তারই ফল। রায় বিনোদের পদ্মাপুরাণের ১৮৫ থেকে ১৯১ এবং ১৯৫ থেকে ২০০ পৃষ্ঠার অনুবাদের মধ্য দিয়েই যে এই অধ্যায়টিকে গড়ে তোলা হয়েছে সে কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মাঝের ১৯২ থেকে ১৯৪ পৃষ্ঠাতে যে ঘটনার বর্ণনা ছিল অনুবাদে তা এই অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, বরং সে অংশটি নিয়ে অনুবাদকদক ভিন্ন একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। ফলাফলস্বরূপ নিশ্চিতভাবেই, মূল উৎসে ঘটনার যে ক্রম পাওয়া যায় অনুবাদে তা রক্ষিত হয়নি। এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে অনুবাদক তার অনুবাদে বিভিন্ন ভাবেই স্বাধীনতার চর্চা করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য সব পরিবর্তন সাধন করেছেন যা তার রচনাটিকে আরো সুসংগত করে তুলতে সাহায্য করেছে।

একটি সুসংগত আখ্যান উপস্থাপনই যে এই পরিবর্তনগুলো সাধনের একমাত্র উদ্দেশ্য তা নয় বরং অনূদিত রচনাটিতে মূল থেকে ভিন্ন এক ভাবরসে উপস্থাপন করাও এমন সব পরিকল্পিত পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। এমন বক্তব্যের পক্ষে “শিবা’স ডেলিয়েন্স” নামক অধ্যায়টি একটি উপযুক্ত উদাহরণ। “লিংগের দেবতা” শিব আর গঙ্গার বিয়ের পরে কি ঘটেছিল সে কথা বলতে গিয়ে অনুবাদক কেবল এটুকু উল্লেখ করেন যে, Shiva’s life with Chandi was not all bliss. How could it be, when he was Lingaraj, lord of the phallus, the epitome of male potency? Chandi had to bear a lot because of his uncontrollabale casual philandering and even had to learn to share his life with a co-wife, who was none other than the river goddess Ganga, whose mighty waters Shiva had tamed by catching the torrent in his tangled locks.
As ordained by Brahma, an irresistible attraction sprang up between Ganga nad Shiva, and they got married according to gandharva rites. Chandi threw a tantrum when Shiva went home with the new bride perched on his head, but the sage Narada’s intervention restored peace. Shiva’s conjugal life became a meange a trois with his wives consoling each other when he went on the prowl for other females. (22)
যদিও মূল রচনার যে অংশ থেকে অনুবাদটি করা হয়েছে সেখানে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল,

এক জটা বিকশিত কৈলা শূলপাণি।
সেই পথে হৈল গঙ্গা ত্রিপথগামিনী।।
স্বর্গে মন্দাকিনী পাতালে ভোগবতী।
মর্ত্যে অলকনন্দা বহে ভাগীরথী।।
গঙ্গা শিরেতে লইয়া দেব পঞ্চানন।
আপনা ঘরে করিলা গমন।। (23)

যা কিনা স্বর্গে, মর্ত্যে ও পাতাললোক সর্বত্র গঙ্গার যে মর্যাদা তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আর একই সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের ভৌগলিক যে অবস্থান তাতে নদী হিসেবে গঙ্গার ত্রিধারার যে গুরুত্ব তাও এই বর্ণনার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। কিন্তু অনুবাদক সেই পথে হাটেননি বরং উলটো নতুন বিয়ে করা বউকে শিব মাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরছে এমন একটি দৃশ্য তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন আর উল্লেখ করেছেন যে এই দুই বধূকে ঘরে রেখে লিংগরাজ শিব আরো সব নারী সঙ্গের আশায় বারে বারেই ঘর ছেড়ে পথে নেমেছেন। এভাবে গঙ্গার গুরুত্বকে খর্বিত করে আর শিবের কামউদ্দীপনার প্রতি সুবিশেষ গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে তিনি তার অনুবাদে শিবকে বিদ্রূপাত্মক উপায়ে উপস্থাপন করেছেন আর তার মধ্য দিয়ে আদতে হাস্যরসেরই সঞ্চার ঘটিয়েছেন।

কায়সার হকের এই অনুবাদ হাস্যরসাত্মক, প্রাণবন্ত আর যৌনতার (শৃঙ্গার রসের) কৌতুকপ্রদ উপস্থাপনায় পরিপূর্ণ। ভক্তিশ্রদ্ধা ও ভীতি সঞ্চারী সাপের দেবী মনসার পরিবর্তে পাঠক এই অনুবাদে যৌন আবেদনময়ী দেবীকে খুঁজে পান যে তার রূপের মায়াজালে পুরুষ-নারী নির্বিশেষে অন্যান্য সব চরিত্রগুলোকে কাবু করে রেখেছে। সমালোচক ফকরুল আলম যথার্থই বলেছেন যে, এমনতর উপস্থাপন হল আসলে মনসাকাহিনীর “উত্তর-আধুনিক উপস্থাপন”, (24) কিন্তু এর ফলে রচনাটির ভাবরসে যে এক বিশেষ ধরণের পরিবর্তন সাধিত হয়ে গেছে সে বিষয়ে কোনরূপ বিশ্লেষণ তার আলোচনায় পাওয়া যায় না। আদতেই অনুবাদটি মনসা কাহিনীর এক উত্তর-আধুনিক উপস্থাপন কারণ, দেবলোক ও মর্ত্যলোকে মনসার দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের নিমিত্তে যে প্রচন্ড সংগ্রাম তার বর্ণনায় মূল রচনাটিতে যে স্বৈরাচারী, হিংস্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মনসার পরিচয় মেলে তার পরিবর্তে মনসাকে একজন যৌন আবেদনময়ী ছলনাময়ী দেবী হিসেবে পুনর্নির্মাণের ওপর জোর দেয়ার মাধ্যমে মূল রচনায় মনসা চরিত্রের যে বিস্তার দেখতে পাওয়া যায় এই অনুবাদকর্মে তা সংকুচিত করা হয়েছে যার দরুণ একটি ভক্তিমূলক রচনায় পরিণত হবার পরিবর্তে অনুবাদটি মনসামঙ্গল কাব্যধারার একটি প্যারোডিতে পরিণত হয়েছে। আর এর ফলে আরো যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি ঘটেছে তা হল মূল রচনার বীর ও করুণ রসের পরিবর্তে অনুবাদের ভেতর হাস্যরসের সঞ্চার।

এই প্রবন্ধে যে উদাহরণগুলো দেয়া হল তা থেকে বোঝা যায় যে, অনুবাদে মূল কাহিনী ও দেশজ সাংস্কৃতির উপাদানগুলোকে অটুট রাখার চেষ্টা করা হলেও রচনাটির গঠনশৈলী, পটভূমি ও ভাবরসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সব পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবশ্য, মধ্যযুগের মনসামঙ্গল কাব্যের সবগুলো সংস্করণেই তাদের নিজ নিজ বিশিষ্টতা পরিলক্ষিত হয়। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় কায়সার হক তার অনুবাদে স্বাধীনতার চর্চার মধ্য দিয়ে তার নিজস্ব সংস্করণটি উপস্থাপন করেছেন আর তার ফলস্বরূপ তার দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, মনসামঙ্গল কাব্যধারার ঐতিহ্যধারী একটি রচনায় পরিণত হয়েছে; আর এক্ষেত্রে তুলনামূলক অগোছালো,কখনও কখনও দুর্বোধ্য মধ্যযুগীয় ধর্মীয় আখ্যায়িকাকে একটি সুসংহত, সুবোধ্য, একযটিক আর হাস্যরসাত্মক রচনা হিসেবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টাকে অনুবাদকের “প্রতিসৃত অবস্থান” (25) বলে চিহ্নিত করা যায়।

(1) মোহাম্মদ সাঈদ হাসান খান রচিত The Triumph of the Snake Goddess: A Case Study in Filiation and Freedom in Translation” প্রবন্ধটি মূলত Special Volume-1 on Literature, History and Culture (A research Journal), Faculty of Arts, University of Rajshhai, নামক গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। বর্তমান প্রবন্ধটি লেখকের প্রকাশিত সেই প্রবন্ধেরই কিছুটা পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত, অনূদিত রূপ

(2) কায়সার হক (২০১৫) [প্রোলগ], দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, পৃ ৩৭

(3) কায়সার হক (২০১৫) [প্রোলগ], দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, পৃ ৩৮

(4) ফকরুল আলম “এ সোর্ট অব ন্যাশনাল এপিক ফর বাংলাদেশঃ কায়সার হক’স দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস”, দি ডেইলি স্টার, ৭ মে, ২০১৬

(5) ওয়েন্ডি ডনিগার (২০১৫), “সিম্পেথি ফর দ্যা ডেবীঃ স্নেক্স এন্ড স্নেক গডেসেস ইন হিন্দুইজম”, দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, কায়সার হক, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, ২০১৫, পৃ ২৭

(6) ফ্রেংক যে কোরোম “দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, কায়সার হক, কেমব্রিজ, ম্যাসঃ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫, x, ৩৫১ আইএসএসবিএনঃ ৯৭৮০৬৭৪৩৬৫২৯২”, দ্যা জার্নাল অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ভলিউম-৭৫, ইস্যু ২, মে ২০১৬

(7) তাবিশ খাইর, “মনসা, দ্যা স্নেক গডেস”, দ্যা হিন্দু, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫

(8) সোমদত্ত মন্ডল, “কায়সার হক, দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস”, কেমব্রিজ, ম্যাসঃ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫, পৃ ৩৬৮ আইএসএসবিএনঃ ৯৭৮০৬৭৪৩৬৫২৯২”,এশিয়াটিক, ভলিউম ১০, নাম্বার ১, পৃ ২৭৮, ১৫ জুন, ২০১৬

(9) ফকরুল আলম “এ সোর্ট অব ন্যাশনাল এপিক ফর বাংলাদেশঃ কায়সার হক’স দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেসদি ডেইলি স্টার, ৭মে, ২০১৬

(10) সোমদত্ত মন্ডল, ““দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, কায়সার হক, কেমব্রিজ, ম্যাসঃ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫, পৃ ৩৬৮ আইএসএসবিএনঃ ৯৭৮০৬৭৪৩৬৫২৯২”, এশিয়াটিক, ভলিউম ১০, নাম্বার ১, পৃ ২৭৮, ১৫ জুন, ২০১৬

(11) ইতামার ইভান-জোহর (২০০০), “দ্য পজিশন অব ট্রান্সলেটেড লিটারেচার উইদিন দ্যা লিটারারি পলিসিস্টেম”, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, পৃ ১৯৯

(12) লরেন্স ভেনুতি, (২০০০), “ট্রান্সলেশন, কমিউনিটি, ইউটোপিয়া”, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, পৃ ৪৮২

(13) আন্দ্রে লুফেভার, (২০০০), “মাদার কারেজেস কিউকাম্বারসঃ টেক্সট, সিস্টেম এন্ড রিফ্রেকশন ইন এ থিওরি অব লিটারেচার”, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, পৃ ২৪০

(14) আদিত্যকুমার লালা, (২০১৪) মনসামঙ্গল কাব্যঃ জীবনদৃষ্টির বিচিত্র দর্পণে, কলকাতাঃ দ্বেজ পাব্লিশার্স, পৃ ১৪৬

(15) আদিত্যকুমার লালা, (২০১৪) মনসামঙ্গল কাব্যঃ জীবনদৃষ্টির বিচিত্র দর্পণে, কলকাতাঃ দ্বেজ পাব্লিশার্স, পৃ ১৪০

(16) রায় বিনোদ, পদ্মাপুরাণ, শাহজাহান মিয়া স্মপাদিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ ৬

(17) রায় বিনোদ, পদ্মাপুরাণ, শাহজাহান মিয়া স্মপাদিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ ৬-৭

(18) কায়সার হক (২০১৫), দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, পৃ ২০১

(19) রায় বিনোদ, পদ্মাপুরাণ, শাহজাহান মিয়া সম্পাদিত (১৯৯৩), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ ১৪৭

(20) কায়সার হক (২০১৫) [প্রোলগ], দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, পৃ ৩৮

(21) কায়সার হক (২০১৫), দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, পৃ ২৪৪

(22) কায়সার হক (২০১৫), দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, পৃ ১০৮

(23) রায় বিনোদ, পদ্মাপুরাণ, শাহজাহান মিয়া সম্পাদিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পৃ ২০

(24) ফকরুল আলম “এ সোর্ট অব ন্যাশনাল এপিক ফর বাংলাদেশঃ কায়সার হক’স দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস”, দি ডেইলি স্টার, ৭ মে, ২০১৬

(25) আন্দ্রে লুফেভার, (২০০০), “মাদার কারেজেস কিউকাম্বারসঃ টেক্সট, সিস্টেম এন্ড রিফ্রেকশন ইন এ থিওরি অব লিটারেচার”, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, পৃ ২৪০

তথ্যসূত্র
আন্দ্রে লুফেভার, “মাদার কারেজেস কিউকাম্বারসঃ টেক্সট, সিস্টেম এন্ড রিফ্রেকশন ইন এ থিওরি অব লিটারেচার”, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, ২০০০।

আদিত্যকুমার লালা, মনসামঙ্গল কাব্যঃ জীবনদৃষ্টির বিচিত্র দর্পণে, কলকাতাঃ দ্বেজ পাব্লিশার্স, ২০১৪।
ইতামার ইভান-জোহর, “দ্য পজীশন অব ট্রান্সলেটেড লিটারেচার উইদিন দ্যা লিটারারি পলিসিস্টেম”,ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, ২০০০।

ওয়েন্ডি ডনিগার (২০১৫), “সিম্পেথি ফর দ্যা ডেবীঃ স্নেক্স এন্ড স্নেক গডেসেস ইন হিন্দুইজম”, দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, কায়সার হক, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, ২০১৫।

কায়সার হক, দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, অনুবাদ, নিউ ইয়র্কঃ হার্ভার্ড প্রেস, ২০১৫।
তাবিশ খাইর, “মনসা, দ্যা স্নেক গডেস”, দ্যা হিন্দু, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫।
www.thehindu.com/books/literary-review/tabish-khair-reviews-the-triumph-of-the-snake -goddess/article7769899.ece থেকে গৃহীত।

ফকরুল আলম “এ সোর্ট অব ন্যাশনাল এপিক ফর বাংলাদেশঃ কায়সার হক’স দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস”, দি ডেইলি স্টার, ৭ মে, ২০১৬। https://www.thedailystar.net/literature/sort-national-epic-bangladesh-kaiser-haqs-the-triumph-the-snake goddess-1219975 থেকে গৃহীত।

ফ্রেংক যে কোরোম “দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস, কায়সার হক, কেমব্রিজ, ম্যাসঃ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫, x, ৩৫১ আইএসএসবিএনঃ ৯৭৮০৬৭৪৩৬৫২৯২”, দ্যা জার্নাল অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ভলিউম-৭৫, ইস্যু ২, মে ২০১৬।
https://www.cambridge.org/core/journals/journal-
of-asian-studies/article/triumph-of-t he-snake-goddess-by-kaiser-haq-cambridge-mass-harvard-university-press-2015-x-351- pp-isbn-9780674365292-cloth/AB0FD0F98F403A497123B628EB933B90 থেকে গৃহীত।

রায় বিনোদ, পদ্মাপুরাণ, শাহজাহান মিয়া  সম্পাদিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৩।

লরেন্স ভেনুতি, “ট্রান্সলেশন, কমিউনিটি, ইউটোপিয়া”, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ রিডার, লরেন্স ভেনুতি সম্পাদিত, লন্ডনঃ রুটলেজ, ২০০০।

সোমদত্ত মন্ডল, “কায়সার হক, দ্যা ট্রায়াম্ফ অব দ্যা স্নেক গডেস”, কেমব্রিজ, ম্যাসঃ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৫, পৃ ৩৬৮ আইএসএসবিএনঃ ৯৭৮০৬৭৪৩৬৫২৯২”,এশিয়াটিক, ভলিউম ১০, নাম্বার ১, পৃ ২৭৮, ১৫ জুন, ২০১৬।

https://journals.iium.edu.my/asiatic/index.php/AJELL/article/view/766/636 থেকে গৃহীত।

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top