আমার কাছে সকালটা খুব ব্যস্ত সময়। ঘরদুয়ার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা থেকে ধোয়ার জন্য কাপড়চোপড় মেসিনে দিতে দিতে আমি নিজে স্নানটা সেরে নিই। ঠাকুরঘরে প্রদীপ জ্বালানোর পর কাপড়গুলি মেলে দিতে হয়। রান্নাঘরে ঢুকলেই যেন নানা রকম কাজ হাঁ করে থাকে। ব্রেকফাস্ট খেতে বসার আগেই লাঞ্চে খাবার জন্য কিছু একটা প্রস্তুত করে রাখতে। সাধারণত অফিসের কেন্টিনে আমার সহকর্মীরা খায় যদিও আমার খাবারের স্বাদ কেন্টিনের খাবারে পাই না বলেই আমার কাজ আরও বেড়ে যায়।
আসলে আমি খাদ্যরসিক। একা থাকি তাও নানা ধরনের খাবার আমার রান্নাঘর ভরে থাকে। ইউটিউবের সহজ রেসিপি থেকে নিজের মতো একটা টুইস্ট এনে খাবার রান্না করতে আমি ভালোবাসি। এই টুইস্ট শব্দটি আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। সেটা খাবারেও হতে পারে আবার আমার কলমটাতেও হতে পারে।
মোটের উপর আমার টুইস্ট চাই। খাবার হোক অথবা কাহিনি – সাদামাটা জিনিস আমার পছন্দ নয়।
যেভাবে খাদ্যরসিককে এক কথায় বলতে হবে –‘বাহ কী বানিয়েছে’! ঠিক একইভাবে একটা কাহিনি পড়ার সময়েও পাঠককে অনুভব করতে পারতে হবে আমার কষ্টাশ্রিত গল্পটিতে একটা সাংঘাতিক টুইস্ট আছে। চমকে উঠতে হবে পাঠককে। সেখানেই আমার সফলতা। খাদ্যরসিক বলে প্রত্যেকের মধ্যে যেমন আমি পরিচিত তেমনই আমাকে অনেকেই গল্পকার হিসেবেও জানে।
হ্যাঁ,আমি গল্প লিখতে ভালোবাসি। লেখার চেষ্টা করি। তবে সেই লেখাগুলি প্রকৃ্ত অর্থে গল্প হয়ে উঠে কিনা আমি জানি না। কিছু একটা সম্পূর্ণ হয়ে উঠার পরে পাঠকসমাজে ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকি। কে জানে কেমন হয়েছে। শেষের গল্পটি আমার শুভাকাঙ্খীদের মন-মগজ স্পর্শ করতে পেরেছে কিনা। অফিসের কাজেও কিছুদিন অন্যমনস্ক হয়ে থাকি। ছটফট করতে থাকি। সেরকম কোনো শুভাকাঙ্খীর সঙ্গে দেখা হলে আড়চোখে লক্ষ্য করি। আছে নাকি তার কোনোধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমার গল্পটার প্রতি! প্রত্যাশা মতো তার হৃদয়ে আমার গল্পটি স্থান পেয়েছে কি? নানা প্রশ্নের আলোড়ন মনে। অবশ্য আজ পর্যন্ত আমার নিরাশ হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি আসেনি। সবসময় প্রত্যেকের থেকে আশাব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া পেয়ে এসেছি।
হয়তো সেইজন্যই আমার নিজের মধ্যেও একটা বিশ্বাস গোপনে বাসা বেঁধেছে।
নিজের সঙ্গে নিরন্তর একটা প্রতিযোগিতা চলে। আজকাল আমার লেখাগুলিতে আমি নিজেই একটা নতুন ধারা বহন করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছি। একটা কাহিনিকে কেবল কাহিনি হিসেবে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমার ইচ্ছা করে না।
সেখানেও টুইস্ট।
কীভাবে আনতে পারি একটা টুইস্ট!
মনের মধ্যে বহু জল্পনা কল্পনা চলে। অনেকক্ষণ ধরে নিজের মধ্যে কাহিনিটাকে লালন করি। কাহিনির চরিত্রগুলির সঙ্গে কথা বলি। কীভাবে সাজাই লেখাটা। কীভাবে এগোই। পাঠককে একটা সহজ সরল কাহিনি বলব না কাহিনির আড়ালে একটা নতুন দিক উন্মোচন করার প্রয়াস করি। একটা কাহিনিতে কেবল পাঠকের চোখে ধরা দেওয়া কথাটুকুই প্রকাশ করব না সেই কাহিনির গায়ে ভর দিয়ে জীবনের অন্য কিছু না দেখা সত্য বের করে আনলে ভালো হবে।
মোটকথা অজস্র প্রশ্ন।
একটা সময় আমি হতাশ হয়ে পড়ি।
কথাগুলি ভাবা অনুসারে হয়ে উঠে না।
আমার সঙ্গে কেন যে এমন হয়! লিখতে চাওয়া কথাটা মনের ভেতরে তোলপাড় শুরু করেছে অথচ আমি শব্দে সেই অনুভবগুলিকে বের করে আনতে পারছি না। লিখছি কাটছি! আবার লিখে আবার কাটছি। একটা সময়ে চুলগুলি খামচে ধরে অনেকক্ষণ দুই চোখ বন্ধ করে বসে থাকি।
নাহ!
এভাবে হবে না। কিছু একটা হয়ে উঠছে না।
কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন আমার শব্দগুলিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রেখেছে। অজস্র শব্দ আমাকে ঘিরে আছে, অথচ শব্দগুলোকে আমি শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে পারছি না। কী এক অদ্ভুত বৈসাদৃশ্য। একই মানুষের একই মনের ভেতর এক সময়ে এতগুলো অমিল! এত বিশৃঙ্খলা।
জটিল! খুব জটিল মানুষের এই মন।
কাগজ-কলম সামলে উঠে আসি আমি। ফ্রিজটা খুলে কোথায় কি আছে দেখি। টুইস্ট একটা দিয়ে কিছু একটা রান্না করার জন্য কী কী সামগ্রী আমার ভেতরে আছে ভালো করে যাচাই করে নিই। থাকার মধ্যে সবই আছে। তবে আমার কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। যেভাবে আমার ভেতরে অনেক কথার ভার অথচ আমি কিছুই লিখতে পারছি না।
নিজের অরুচিতে আমি নিজেই হতভম্ব। আমি নাকি আবার খাদ্যরসিকা! তাহলে আমার খেতে ইচ্ছা না করার কী কী কারণ থাকতে পারে! হাজার মাইল দূরে কর্মরত আমার স্বামীকে কথার মধ্যে জানাই–
‘জান, আমার কোনো কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না। কী যে হয়েছে বুঝতে পারছিনা।’
তার স্বাভাবিক উত্তর,‘কখনও কখনও হয়। সব সময় মানুষের দেহ মন একরকম থাকে না। এত ভাবার কী, আছে!’
হয়তো তাই! সবসময় তো মানুষের মন একরকম থাকে না। কখনও কখনও ইচ্ছে নাও করতে পারে!
মাসিক পত্রিকাগুলোর পৃষ্ঠা উল্টে যাই। প্রায় প্রতিটি প্রথম সারির পত্রিকা এবং কাগজের আমি নিয়মিত পাঠক। কিন্তু কিছু একটা পড়তেও দেখছি ভালো লাগছে না! তাড়াতাড়ি করে পুনরায় এসে টেবিলটার পাশে দাঁড়াই। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে পুনরায় কিছু একটা লেখার চেষ্টা করি। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে থাকা কথাগুলিকে একটা টুইস্ট দিয়ে সাজাতে চেষ্টা করি।
ইস! কী যে হয়েছে আমার! শব্দগুলি কোথায় যেন লুকিয়ে পড়েছে! কোনোভাবেই লিখতে পারছি না।
আমাকে বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে। না আমি ভালোভাবে খেতে পারছি, না লিখতে পারছি। আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় দুটিই আমার কাছ থেকে কেন দূরে সরে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না।
স্বামীকে বললেই বলে, ‘তুমি কথাগুলো নিয়ে বড়ো বেশি ভাব। নিজেকে সময়ের হাতে কিছুটা ছেড়ে দাও তো। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে!’
কোথায় কী, একদিন দুদিন করে আজ প্রায় ছয় মাস পার হয়ে গেল। আমি একটি শব্দও লিখতে পারিনি। খেতে ইচ্ছা করে না যদিও পেট ভরানোর জন্য কিছু একটা সিদ্ধ করে রান্না করে গিলে যাচ্ছি মাত্র। খাদ্যরসিক মনটা যেন বিদ্রোহ করছে।
আমার ভয় লাগছে। ভীষণ ভয়। যদি আমি কিছুই লিখতে না পারি। ক্রমান্বয়ে সেই ভয়টা আমাকে গ্রাস করে ফেলছে। রাতে ঘুমোতে পারছি না। অদ্ভুত কিছু চিন্তার চাপে আমি মানুষটা ক্রমশ নিজের কাছেই অপরিচিত হয়ে পড়ছি। কথাগুলি সামলাতে না পেরে কাঁদছি। অফিস যেতে হবে বলে যাই। অন্যমনস্কতার জন্য বসের কাছে কতবার গালি খেয়েছি।
সত্যিই আমার জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বিশৃঙ্খলা।
দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে এক বছর পার হয়ে গেল। আমি আমার লেখক পরিচিতি ক্রমান্বয়ে হারিয়ে ফেললাম। এখন আমাকে কোনো কাগজে সাক্ষাৎকারের জন্য অথবা গল্প চেয়ে ফোন করে না। কোন সম্পাদক বিহুর সংখ্যা অথবা শারদীয়ার সংখ্যার জন্য লেখা চেয়ে জোর করে না। কেউ আজকাল আগ্রহের সঙ্গে বলে না, ‘দিদি আপনার একটা গল্প পেলে আমাদের পত্রিকার সম্মান বৃদ্ধি পেত। অনুগ্রহ করে এই সংখ্যার জন্য একটা গল্প দেবেন।’
স্রোত থেকে বেরিয়ে এসে এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে এভাবেই ঝুলে রইলাম আমি। স্বামী বলে, ‘যেভাবে তুমি ইচ্ছা না হলেও কিছু একটা রান্না করে খেয়ে নাও, ঠিক সেভাবেই তোমার প্রিয় কলমটিকে অল্পস্বল্প চর্চায় রাখতে পারতে।’
হ্যাঁ! স্বামী বলা কথাটা আমি একশো ভাগ ঠিক বলে মনে করি। সাহিত্যের নিরলস সাধনাকে আমার এভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়নি। কিন্তু কিছু কাজ মনের তাড়না না থাকলে করা যায় না। বেঁচে থাকার জন্য খাবার প্রয়োজন বলে আমরা খাই। কিন্তু আমার সৃষ্টির দ্বারা অন্যকে বাঁচিয়ে তুলতে হলে আমার কলমটাকে কীভাবে শুধু চালিয়ে নেব! যেকোনো কাজের প্রতি সৎ হওয়াটা আমি বিশ্বাস করি। আমার কলমটার সঙ্গেও আমি হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম। কিন্তু এখন আমি এরকম একটি সময়ে এসে উপনীত হয়েছি যে আমার কলমটা স্থবির হয়ে পড়েছে। শব্দগুলি আত্মগোপন করেছে। সেই ক্ষেত্রে আমি টানা হেঁচড়া করে মনটাকে লিখতে বাধ্য করতে পারি না। কেবল লিখতে হবে বলেই লিখতে পারি কি? আমার নামের আগে লেখক শব্দটি একটা পরিচিতি গড়ে দেবে বলেই আমি লিখতে পারি না। আমার কলম দিয়ে বের হওয়া প্রতিটি শব্দকে প্রতিটি বাক্যকে হৃদয়ে অনুভব করতে না পারা পর্যন্ত আমার কলম স্থবির হয়ে থাকবে।
সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছুদিন নিজেকে কেবল পড়ার মধ্যে আবদ্ধ রাখব। বেশি-বিদেশি বহু গল্পকারের গল্প সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলাম। এখনও আমার সংগ্রহে প্রায় ছয় সাতটি এই ধরনের গল্পের বই আছে যার একটি অক্ষরও আমি পড়ে দেখিনি । অনেকগুলো মাসিক পত্রিকা পড়ে আছে, পড়া হয়ে উঠেনি।
একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকার একটি গল্প পড়ে কিছুক্ষণ আমি স্তব্ধ হয়ে রইলাম। গল্পটা বড়ো পরিচিত। গল্পের শব্দগুলি বড়ো আপন বলে মনে হতে লাগল। মাঝখানে দুটো একটা পরিবর্তন। চরিত্রের নামগুলি কেবল আধুনিক করা হয়েছে। লেখকের নামটা দেখলাম। নতুন লেখক। নামটা আগে শুনিনি। খবর করে জানতে পারলাম পত্রিকাটির সম্পাদকের নিজের মানুষ গল্পের লেখকটি।
বুঝতে পারলাম সেই জন্যই কথাগুলি সহজ হয়ে পড়ল।
পত্রিকাটি এবং এক বছরের পুরোনো কাগজ হাতে নিয়ে আমি সম্পাদকের কার্যালয়ে উপস্থিত হলাম। প্রমাণ সহকারে কাগজটি এবং পত্রিকার গল্প এই দুটি তার সামনে মেনে ধরলাম। আশা করেছিলাম তিনি কিছুটা হলেও অপ্রস্তুত হবেন। এত বড়ো একটা ভুল তার দ্বারা কীভাবে হতে পারল বলে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন।
কিন্তু না। সেরকম কিছু হল না।
তিনি আমাকে অবাক করে আশ্চর্য প্রশ্ন করলেন, ‘কী প্রমাণ আছে এই গল্পটি এক সময় আপনি লিখেছিলেন? এই ধরনের অনেক কথা আমাদের সমাজে সবসময় চলতে থাকে। তার ভিত্তিতে আমার ছেলে এই গল্পটি নির্মাণ করেছে। তার মধ্যে যদি এক বছর আগের আপনার গল্পের সঙ্গে কোন মিল খুঁজে পেয়েছেন, তাতে আমাদের কী করার আছে! একই সমাজে বাস করি আমরা। পটভূমিতো একই রকম হবেই। আর আপনিও যে একেবারে মৌলিক কিছু একটা সৃষ্টি করেছিলেন সেকথা জোর দিয়ে কীভাবে বলবেন! কে জানে আপনার গল্পে হয়তো আপনার অগ্রজ কারও ছায়া পড়েছে! আর সত্যি কথা বলতে গেলে আপনি তো এখন লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছেন। গত এক বছরে আপনার কোনো নতুন সৃষ্টি আমরা পড়তে পাইনি। আপনি নিশ্চিতভাবে আপনার লেখকের পরিচিতি থেকে সরে গেছেন। আমি ধরে নিয়েছি আপনি আমার ছেলের বিরুদ্ধে দেওয়া এই অপবাদ আপনার মানসিক অবসাদের ফসল। এরকম ক্ষেত্রে আপনার এই অভিযোগ একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষমা করবেন!’
এক প্রচন্ড শক্তিতে যেন আমাকে কেউ নাড়া দিয়ে গেল। সম্পাদকের রুম থেকে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে এলাম। দুটো কান থেকে যেন আগুন বর্ষিত হচ্ছে। সম্পাদকের কথায় আমি ক্ষুণ্ণ হয়ে পড়েছি।
আমার সৃষ্টির মৌলিকতার ওপরে সন্দেহ করে!
আমার সততা সম্পর্কে আঙ্গুল উঠায়!
আমার মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে উঠেছে।
এত প্রহসন!
দ্রুত পদক্ষেপে বাড়ি এসে পৌঁছলাম।
এরকম একটি অপবাদের পরে আসলে আমার কী করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। আমার প্রতিবাদের ভাষা কেমন হওয়া উচিত আমি স্থির করতে পারছিলাম না। আশ্চর্য হয়েছি। ভীষণ আশ্চর্য। সৃষ্টির অন্তরালেও থাকতে পারে এই ধরনের ভয়াবহ সত্য! একটি সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করা সংবেদনশীল বিষয়ও এভাবে কলুষিত হতে পারে! সত্যিই হতাশ হয়ে পড়েছি।
কী করি! কী করা যায়!
টুইস্ট!
হঠাৎ একগাদা শব্দ গল গল করে বেরিয়ে এসে গলার কাছটা চেপে ধরল। কী হয়েছে বুঝতে পারার আগেই আমি টেবিলটা বিছানার কাছে টেনে এনে ধড়াম করে বিছানায় বসে পড়লাম।
কলমটা দিয়ে নিরন্তর কিছু শব্দ বেরিয়ে এল। সাদা ফুলস্কেপ কাগজের পৃষ্ঠাগুলি আমার নীল অক্ষরে ভরে উঠল। গলায় আটকে থাকা শব্দগুলি আমার কলম দিয়ে নির্গত হয়ে এইবার শৃঙ্খলাবদ্ধ নেমে এল। বহুদিন পরে আমার বুকটা নির্ভার হয়ে পড়ল। যে তাড়নার জন্য আজ প্রায় এক বছর আমি ছটফট করছিলাম আজকের একটি অনাহূত অভিজ্ঞতা যেন আমার সেই সত্তাকে বেঁধে রাখা শিকলটা খুলে দিল!
পুনরায় একটা টুইস্ট!
আমাকে খুঁজে পাওয়ার অজুহাতে সময় আমার এতদিন পরীক্ষা নিয়েছিল হয়তো! আমার কাছ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করার এক সহজ তামাশা করে দেখল সময়। নিজেকে আরও বেশি গভীরভাবে বোঝার জন্য এই ধরনের পরিস্থিতিরও কতটা প্রয়োজন তা সময় আমাকে শিখিয়ে দিয়ে গেল। কলমটা আরও জোরে চেপে ধরলাম। আগের চেয়েও বেশি প্রত্যয়ের সঙ্গে।
হঠাৎ আমার পেটটা মুচড়ে উঠল।
ওহো!
আজ বহুদিন হয় আমার খাদ্যরসিক মনটাও কোথাও হারিয়ে ফেলেছিলাম! এক এক করে প্রিয় তরকারির নাম আমার মনে এল। স্বভাবগতভাবে একটা টুইস্ট দিয়ে কিছু একটা রান্না করে খেতে খুব ইচ্ছা হল। কলমটা রেখে বড়ো আশা নিয়ে রান্নাঘরে উঠে এলাম।
টুইস্ট…
ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একটা হাসি খসে পড়ল।
————
অঙ্কিতা বরুয়া: অসমের নগাঁও জেলার শালনা চাবাগিচায় জন্ম। বিবাহসূত্রে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা। প্রকাশিত গল্প সংকলন ‘জোনবিলর ভেনাস’ এবং উপন্যাস ‘অয়নবৃণা’

বাসুদেব দাস
১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলার যমুনামুখে বাসুদেব দাসের জন্ম হয়।শৈশব কেটেছে গুয়াহাটি শহরে। ১৯৮২ সনে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষা তত্ত্বে এম এ করেন। আজ পর্যন্ত অসমিয়া অনূদিত গল্পের সংখ্যা তিনশো ষাটের ও বেশি।সম্প্রতি NEINAD এর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership এর দ্বারা সম্মানিত করা হয়।