Home » বাঁকা পাঁজরের মেয়ে (পর্ব পনের ) // নুরুদ্দিন ফারাহ, অনুবাদ: লুনা রাহনুমা

বাঁকা পাঁজরের মেয়ে (পর্ব পনের ) // নুরুদ্দিন ফারাহ, অনুবাদ: লুনা রাহনুমা

২৫

ইবলা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে টিফোর কাছে থেকে আসা সবকিছু সহজভাবে গ্রহণ করতে। কিন্তু টিফোর মনের ভেতর অনুভূত ক্রোধ এবং অসন্তুষ্টিকে নির্জীব করার জন্য অসীম ধৈর্য প্রয়োজন। যখনই সম্ভব হয়, টিফো চলে আসছে ইবলার বাড়ি। কয়েকটি ঘন্টা একসাথে থেকে চলে যাবার সময় কিছু টাকা রেখে যায় ঘরের ভেতর কোথাও। বালিশের নীচে বা টেবিলের উপর।

ইবলার ঘর থেকে চলে যাবার কাজটি টিফো এমনভাবে করে যেন সে প্রতিদিনকার স্বাভাবিক কাজকর্মগুলো সারতে একটু বাইরে যাচ্ছে, কাজগুলো শেষ করে আবার ফিরে আসবে সময় মতো। তা সে যেকাজ যাই হোক না কেন। সকালের দিকে ইবলার ঘুম বেশ গভীর থাকে। তাই টিফো কখন ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অধিকাংশ সময়ই জানতে পারে না ইবলা।

এভাবে ইবলার ঘরে টিফোর আসা যাওয়া সম্পর্কে আশা অনেকবার কথা তুলেছে। বিরক্তি প্রকাশ করেছে। এবং আশার অন্তহীন, দাম্ভিক এবং অগ্রহণযোগ্য বকবকানিগুলো ইবলার কাছে কখনো আপত্তিকর মনে হয়নি।

কিন্তু আশা প্রতিদিন একই সুরে গান করে না। সকল সময় একই জনের পক্ষে কথাও বলে না। বরং সে একজনের প্রতি বিরক্ত হলে অন্যজনের প্রতি সদয় অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। আজ যদি সে টিফোর উপর বিরক্ত থাকে, তাহলে আজকে সে আউইলের সম্পর্কে একটি ভালো কথা বলবে; আগামীকাল আবার আশা কথার সুর পুরোপুরি পরিবর্তন করে বলবে: ‘টিফো হচ্ছে সেই মানুষ যাকে তোমার সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন,’ এই কথা বলে সে ইবলাকে অনুনয় করবে টিফোর প্রতি অনুরক্ত থাকতে। আবার তৃতীয় দিন আশার মনোভাব কী হবে তা একমাত্র খোদাই জানেন, ইবলা বলে মনে মনে। তবে যার পক্ষেই বেশি বলুক না কেন, একটা ব্যাপারে লেশ মাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আশা, ইবলার সাথে টিফোর আর্থিক লেনদেন এবং বৈবাহিক আচরণে একেবারেই সন্তুষ্ট নয়।

‘লোকটা তোমার সাথে বেশ্যার মত আচরণ করছে,’ আশা একদিন ইবলাকে বলে।

‘কীভাবে?’

‘কীভাবে? এইভাবে পুরুষরা বেশ্যাকে ব্যবহার করে।’

‘বুঝলাম না।’

‘বুঝতে না পারলে বলবো তুমি খুব বোকা। পুরুষরা বেশ্যাদের কাছে গিয়ে ঠিক এইভাবে টাকা পয়সা ফেলে আসে যেভাবে সে তোমাকে টাকা দিচ্ছে এখন।’

‘কিন্তু আমি বেশ্যা নই।’

‘আমিও তাই বলছি। তুমি বেশ্যা নও। তাহলে তোমার সাথে কেন সে এমন আচরণ করবে?’

‘কিন্তু আমি একা থাকতে চাই না,’ এই ছিল ইবলার শেষ কথা। ‘তবে যাই হোক না কেন, আমি বেশ্যা হয়ে থাকছি না তার সঙ্গে। তিনি আমার স্বামী।’

‘কিন্তু প্রথম স্ত্রীর সাথে সে যেভাবে চলছে এই সমাজে, তোমার সাথে তেমনভাবে মেলামেশা করছে না। তোমাদের দুজনের সাথে তার আচরণ সম্পূর্ণ আলাদা। তুমি বুঝতে পারছো না?’

এই কথাটা ইবলা নিজেও ভেবেছে অনেকবার। আর ভেবে অবশেষে একটি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘আশা নামের মহিলাটির আমাকে বলে দিতে হবে না আমার করণীয় কী। আমি কী করব আর কী করব না, সে আমার সিদ্ধান্ত। এখন আমার বয়স বিশ বছর, কিংবা বিশের কাছাকাছি হবে। বিয়ে করা বা ডিভোর্স দেওয়া, সে আমি নিজে করেছি। তাই আশাকে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে হবে না। আমি তাকে বলবো আমার ব্যাপার থেকে একদম দূরে থাকতে। ভবিষ্যতে, আমার যেকোনো কাজের জন্য আমি নিজেই দায়ী থাকবো। আগামীকাল আমি আশাকে কথাটি জানিয়ে দিবো। হ্যাঁ, কালকেই বলবো কথাটি। আর এরপর থেকে আমিই হবো আমার আমি। আমি আমার নিজের থাকবো। এবং আমার কাজগুলি আমার নিজের হবে। আর এভাবে একসময় আমি হয়ে উঠবো আমার কাজের প্রতিফলন।’

ইবলা সত্যি পেরেছিল আশাকে বলতে। বলেছে তার ব্যাপারে নাক গলানো থেকে বিরত থাকতে। এবং কথাটি বলতে পেরে খুব আনন্দ হয়েছে ইবলার মনে। ‘এখন আমি আমার কর্তা। বেলেত ওয়েনের বিধবা নেই এখানে। আমার কাজিন নেই এখানে। আমার ভাই গ্রামে চলে গেছে, আমাকে আদেশ দিতে কখনো ফিরে আসবে না আর। টিফো নেই এখানে, তাই কেউ আমাকে আদেশ দিতে পারবে না— অন্তত আউইল বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত তো নয়ই। এবং যখন সে বাড়ি ফিরবে, যা এখন আর বেশি দেরি নয়, আমি তাকে ঠিক জানিয়ে দেব, তার যোগ্যতা অনুযায়ী সে কতোখানি প্রাপ্য। এখন আমি নিজেই আমার সিদ্ধান্ত-কর্তা।’

এখন যেকোনোদিন আউইল বাড়ি চলে আসতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বাড়িতে অবস্থানের স্থায়িত্ব সম্পর্কে অনিশ্চিয়তায় আছে ইবলা। স্ত্রী শহরে আসার পরেও টিফো ইবলার কাছে আসা বন্ধ করেনি, যেমনটি ইবলা আশা করেছিল ঘটবে। বরং অভিসারের সময় বদলে তিনি এখন দিনের বেলায় আসেন, যা ইবলার জন্য আরও খারাপ হয়েছে। যদিও ইবলা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছে টিফোকে তাদের ‘গোপন বিবাহ’ সম্পর্কে তার ধারণার কথাটি বলতে, যে বিয়ের পিছনে একটি বিছানা ভাগ করা এবং টিফোর কাছ থেকে তার কিছু অর্থ উপার্জন করা ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু কথাগুলো বলতে গিয়ে ইবলা দ্বিধায় পড়ে যায়। কথাগুলো বলার জন্য সে সঠিক শব্দ খুঁজে পায় না, এমনকি বলার সময়টুকু পর্যন্ত পায় না। একদিন— আউইল ফিরে আসার আগের দিন— টিফো তার অভিসারের অভিসন্ধি সারতে এসেছিল ইবলার কাছে। তারা দুজন বিছানায় এক বা দুই মিনিটের মতো ছিল। টিফোর বিছানার কাজ শেষ করতে খুব বেশিক্ষণ লাগে না। কয়েক মুহূর্তেই কাজ শেষ হয়ে যায়।

‘কী ক্লান্তিকর একটা দিন,’ কাজ শেষ করে মেঝেতে দাঁড়িয়ে নিজের কাপড় পরতে পরতে টিফো বলে।

‘আপনি আজ কী করলেন?’ ইবলা প্রশ্ন করে।

‘আমি আমার স্ত্রীকে রেখে তোমার কাছে এসেছি। তাকে বলেছি যে শহরে আমার কিছু কাজ আছে। তারপর গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর, যে মুহূর্তে আমি রাস্তায় প্রথম বাঁকে পৌঁছেছি, তখন দেখতে পেলাম আমার স্ত্রী আমাকে অনুসরণ করছে। আসলে, এর আগেও সে বেশ কয়েকবার এমন কাজ করেছে। কিন্তু প্রতিবারই আমি তাকে ফাঁকি দিতে পেরেছি। আরেকটি মোড়ের কাছাকাছি গাড়ি থামালাম আমি, যেখান থেকে আমার স্ত্রী ট্যাক্সি নেবে বলে আমি অনুমান করি। তারপর আমি গাড়ি বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকি। আমার স্ত্রী গলির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে, কিন্তু সে ট্যাক্সি খুঁজে পায় না একটাও। তাই আমি এমন এক জায়গায় আমার গাড়িটি পার্ক করলাম যেখানে সে আমাকে দেখতে পারবে না। আমার স্ত্রী আমাকে আর দেখতে না পেয়ে নিজের নখ কামড়াতে কামড়াতে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। আর অবশ্যই সে মনে মনে নিজেকে গাল দিয়েছে খুব করে।’ কথা শেষ করে টিফো হা হা হাসে। নিজের পেটটি উঁচু করে দেখায় এবং অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে বকবক করতে থাকে, যা ইবলার বোধগম্য হলো না।

ইবলা গাড়ি সংক্রান্ত কথাবার্তার কিছুই পাঠোদ্ধার করতে পারে না। জীবনে কখনোই সে কোনো গাড়িতে চড়েনি এবং ভবিষ্যতে চড়তেও চায় না। এখানে আসার পর থেকে এই সব দিনে যতবার সে শহরে গিয়েছে, কখনই বোন্দেরের বাজারের বাইরে যায়নি, এবং প্রতিবার আশার সঙ্গে গিয়েছে। সৌভাগ্যবশত আশা ট্যাক্সিতে চড়ার জন্য এক সিলিং ব্যয় করতে রাজি ছিল না। ‘কেন, ট্যাক্সিতে চড়তে হবে কেন? তারচেয়ে ভালো হাঁটো। আর যত পারো জুতা কিনে নাও। তাতে খুব বেশি খরচ হবে না তোমার। আর এতো তাড়াহুড়া কেন? একটু আগে বাড়ি থেকে যাত্রা করবে। বজ্জাত দোকানদারগুলো অবশ্যই তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকবে। এবং কোনো কাজ যদি আজকে সারতে না পারো, তাহলে আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করো।’ আশা এসব কথা বলে। তাহলে আর টিফোর গাড়ি নিয়ে ভাববে কেন ইবলা? ইবলার এতোসব ভাবনার মুহূর্তে টিফো চুপ করে আছে। ইবলাকে ভাবার সময় দেয় হয়তো। ‘অকপটতাই একমাত্র শান্তি,’ ইবলা ভাবে।

‘আপনার স্ত্রী কি জানে যে আপনি আরেকটি বিয়ে করেছন? আপনি কি তাকে বলেছেন আমার কথা?’ ইবলা জিজ্ঞেস করে টিফোকে।

‘না সে জানে না। আর তাকে জানানোর কোন ইচ্ছাও নেই আমার। কেন সে জানবে তোমার কথা?’ ইবলার দিকে মুখ ঘুরিয়ে টিফো বলে, সম্ভবত পুরোনো মুখটিকে এখন আরও ভালোভাবে দেখার জন্য চোখ কুঁচকে তাকায়, যে মুখটি আগে কখনও এমন একটি প্রশ্ন করার সাহস করেনি।

‘আপনার আরেকজন স্ত্রী আছে আমি জানি, এবং আমি ভেবেছিলাম তিনিও হয়তো আমার কথা জানেন।’

‘তাকে জানতে হবে না।’

‘ধরুন তিনি জেনে ফেললেন, তাহলে কী হবে?’

‘কিছুই না,’ রুক্ষভাবে বলে টিফো।

‘তাহলে কথাটি উনাকে জানিয়ে দিন।’ আর ইবলা মনে মনে বলে, ‘কুলাঙ্গার কোথাকার!’

‘না। তাকে বলার প্রয়োজন নেই কিছু।’

‘কেন?’

‘কারণ, আমি তাকে জানাতে চাই না।’

‘তার নাম কী?’ প্রশ্নটির সাথে ইবলা আরো যোগ করতে চাইলো ‘ . .  ‘মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ ।’

‘তুমি কেন তার নাম জানতে চাও?’ রাগত স্বরে প্রশ্ন করে টিফো।

‘দেখুন, তিনি হচ্ছেন অন্যজন যিনি আমার সাথে আপনাকে ভাগ করে নিচ্ছেন। ইসলাম একজন পুরুষকে চারটি স্ত্রীকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে,’ ইবলা মুখে একটা চতুর হাসি নিয়ে পরামর্শ দেয়, দ্বিতীয় স্ত্রীর কথা প্রথম স্ত্রীকে জানাতে বাধা নেই টিফোকে ব্যাপারটি মনে করিয়ে দেয় সহানুভূতির সাথে।

‘সে আমি জানি।’

‘আপনার কি আমরা দুজন ছাড়া আরও দুটো স্ত্রী আছে?’ ইবলা সাথে যোগ করতে চেয়েছিল ‘পালিত বেশ্যা বাদ দিয়ে।’

‘দেখো, আমি আমার স্ত্রীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে চাই না এই বয়সে এসে। তাই তুমি আমার সাথে এসব কথা বলবে না আর কখনো।’

‘না। না। রাগ করবেন না। আমি আপনাকে শুধু একটা কথা জানাতে চাই। কথাটি আপনার জানা প্রয়োজন এখন।’ মনে মনে ইবলা বলে, ‘এই গর্ধবটাকে আমার এখন মাখন মাখাতে হবে।’

‘হ্যাঁ। বলো। আমি শুনছি।’

‘আপনার মতো আমিও বিবাহিত।’ কথাটি বলে ইবলা একটু অপেক্ষায় থাকে। ভাবছে এই কথায় টিফো কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, ‘কথাটা তোমাকে কেমন আঘাত করছে স্বামী?’

‘আমার সাথে। তুমি বিবাহিতা আমার সাথে। আহ! আহ! হা হা।’ কথাটি বলে টিফো যতটা সম্ভব কিম্ভূতকিমাকার ও কৌতুকপূর্ণভাব ধরার চেষ্টা করে ইবলার সামনে। তারপর লোকটি মারাত্মকরকম পেট দোলানো হাসি হাসে, এবং নিজেকে পরীক্ষা করে দেখে সাথে সাথে।

‘আপনার সাথে না। আরেকজনের সাথে। দেখুন, আপনারা দুজন আমার কাছে আসেন পালা করে। আপনি যখন রাতের বেলা আসতেন, তখন তার পালা ছিল দিনে। আপনার মনে আছে সেই রাতের কথা যেদিন সকালে আপনি বাইদোয়া থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় এসে আমার ঘরের জানালায় টোকা দিয়ে আপনার স্ত্রীর আগমনের কথা বলেছিলেন, সেই রাতের কথা মনে আছে?

‘হ্যাঁ, মনে আছে’ বলে লাফিয়ে উঠে বসে টিফো।

‘সেই রাতে তিনি এখানে ছিলেন। আমার সাথে ছিলেন। আপনার মনে আছে আমি আপনাকে তক্ষুণি চলে যেতে বলেছিলাম?’

‘হ্যাঁ। আমার মনে আছে।’

‘তিনি তখন আমার সঙ্গে বিছানায় ছিলেন। এই জন্যই আপনাকে বলেছিলাম আমার কাছ থেকে চলে যেতে। আপনাকে আমি মিথ্যা বলেছিলাম যে তখন আমার মাসিক হয়েছে।’

‘তার নাম কী?’ টিফো বলে। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে কয়েকবার।

‘আপনি আমাকে আপনার স্ত্রীর নাম বললেই আমি আপনাকে তার নাম বলবো,’ ইবলা লোকটিকে ব্ল্যাকমেইল করে।

‘আমার স্ত্রীর নাম আরদো,’ টিফো বলে।

‘বলুন “আমার অন্য স্ত্রীর নাম আরদো”, কারণ আমিও আপনার স্ত্রী। এটা ভুলে যাবেন না।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ভুলবো না। কিন্তু এই লোকটার নাম কী?’

‘আমার অন্য স্বামীর নাম আউইল,’ ইবলা জবাব দেয়।

‘তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলছো।’

‘না। আমি মিথ্যা বলছি না। কেন আমি আপনাকে মিথ্যা বলবো? আপনার আরেকজন স্ত্রী আছে আর আমার আরেকজন স্বামী আছে। আমরা সমান: আপনি একজন পুরুষ আর আমি একজন নারী, তাই আমরা সমান। আপনার আমাকে দরকার আর আমার আপনাকে দরকার। আমরা দুজন এক সমান।’

‘আমরা এক সমান নই। তুমি একটা মেয়ে। তুমি আমার তুলনায় নিকৃষ্ট। আর তোমার যদি আরেকটি স্বামী থাকে তাহলে তুমি একটা বেশ্যা,’ টিফো বলে। কথা বলতে বলতে সে দাঁড়িয়ে পড়েছে, রাগে তার ঠোঁট এবং হাত কাঁপছে থরথর করে। ‘কিন্তু আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না।’ বলে সে ইবলার দিকে আঙুল তোলে।

‘আশাকে ডাকুন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন আউইল নামের একজনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে কিনা। ডাক দিন তাকে। চ্যালেঞ্জ করছি আমি আপনাকে।’ ইবলাও এখন দাঁড়িয়ে শক্ত হয়ে কথা বলছে।

টিফো চিৎকার করে ডাকতে থাকে আশাকে। আশা নিজের ঘর থেকে ছুটে এসে বেদম হাঁপায়।

‘এটা কি সত্যি?’ টিফো জিজ্ঞাসা করে।

‘কী সত্যি?’ আশা জানতে চায়।

‘এই কথা যে ইবলা আউইলের স্ত্রী?’

একটু ইতস্তত করে অনিচ্ছাসত্ত্বেও আশা বলে, ‘হ্যাঁ, সত্যি।’

‘তাহলে আমার সাথে তোমার ডিভোর্স হয়ে গেছে,’ এক দমে কথাটি বলে টিফো দরজায় দাঁড়ানো আশাকে একপাশে ঠেলে বাইরে চলে গেল।

‘চলে যাবেন না এক্ষুণি। এই ডিভোর্সের সাক্ষী রাখতে চাই আমি,’ ইবলা চিৎকার করে উঠে টিফোর কথার সাথে।

‘সাক্ষীর দরকার নেই। আমি আমার কথা রাখবো। তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিলাম,’ টিফোও চেঁচিয়ে উঠে ভয়ংকরভাবে।

ঘরের ভেতর এইমাত্র সৃষ্টি হওয়া তুমুল এই হট্টগোলকে ইবলা একেবারেই পাত্তা দেয় না।‘কাল আউইল আসবে। আগামীকাল,’ ইবলার মুখ থেকে শুধু এই কথাটিই শোনা যায়। রাতে ঘুমের ভেতর সে চমৎকার একটি স্বপ্ন দেখলো।

২৬

ইবলা আর আশা মাটিতে কুঁকড়ে বসে আছে। তাদের দুই হাত কোলের উপর রাখা। তাদের চোখ সেই লোকটির উপর স্থির হয়ে আছে যার কাছে তারা পরামর্শ নিতে এসেছে। কোন আপাত কারণ ছাড়াই, ইবলা ভীষণ ক্লান্ত বোধ করছে। সম্ভব হলে, কারো স্পর্শকাতর সহানুভূতিতে আঘাত না করে যদি চলে যাওয়া যেত, তাহলে ইবলা এক্ষুণি চলে যেত এখান থেকে। আর যে লোকটির কাছে পরামর্শ চাইতে এসেছে তার জন্য অসুবিধা তৈরী না করে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় ইবলার। কিন্তু লোকটি একজন বিচক্ষণ মানুষ। এবং তিনি এমন একটি ভবিষ্যদ্বাণী করতে যাচ্ছেন যার উপর ইবলার জীবন এবং ভাগ্য নির্ভর করে। জায়গাটিতে ধুলো উড়ছে। ধুলোর ভেতর ইবলার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে না, তবে সে খানিকটা দমবন্ধ অনুভব করছে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে আঁকাআঁকি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এতক্ষণে। আঙ্গুলগুলো নোংরা, নখগুলো বড় হয়েছে এবং অনেকদিন কাটা হয়নি একটিও নখ, দেখতে বেঢপ আকৃতিহীন লাগছে। গায়ের পোশাকটি ময়লা হয়েছে, ধোয়া দরকার। ইবলা নিজের পোশাকের দিকে তাকায় এক ঝলক, সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে পোশাকটিকে ধোবে।

যে লোকটির কাছে তারা পরামর্শ নিতে এসেছে তাকে সাধু সন্তের মতো লাগছে না। সম্ভবত এটাই ইবলাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করলো। জ্ঞান এবং আশীর্বাদ ঈশ্বরের পক্ষ থেকে তাদেরকেই দান করা হয় যাদের কেউ কখনও উচ্চস্থানীয় বলে মনে করে না— বিজ্ঞ মানুষ তাই বলে এবং হয়তো এটাই সত্যি, ইবলা ভাবে। লোকটির মুখে ঘন দাড়ি, মুখের দাড়ি মসৃন করে ছাঁটা নয়, কিন্তু কাঠের চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে আঁচড়ানো আছে যে চিরুনীটি এখন তার মাথায় লাগানো আছে: লোকটিকে দেখতে একজন ভারতীয় শিখের মতো দেখাচ্ছে। ইবলার কাছে মনে হলো তিনি আজেবাজে কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো লোক না। তার পেট সামনের দিকে সামান্য প্রসারিত এবং অসতর্ক পর্যবেক্ষকের কাছে তাকে একজন ধনী ব্যক্তি বলে মনে হতে পারে, যে নিজের পেটে হাত বুলিয়ে আদর করবে এবং বিড়বিড় করে কিছু অস্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করবে।

ইবলা লোকটির কথা কিছুই বুঝতে পারে না। তবে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই আশা তাকে মুখ ঝামটা দেয়, আতংকের ছাপ ফুটে উঠে চোখে মুখে। তাই ইবলা সেখানে কিছু বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারপর আবার ইবলা নিজের স্মৃতির জগতে ডুব দেয়, যে জগতের ভাবনা মূলত তাকে নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্যে পৌঁছে দেয় না কোনোদিন। এমন আরো অনেক কিছু আছে যা ইবলার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইবলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজের প্রয়োজনেই তাকে এই সাধুর উপদেশ শুনে যেতে হবে।

সাধুর হাতের তসবির পুঁতিগুলি গণনা করছে। লোমশ ও মোটা আঙ্গুলের নীচে তসবির কিছু পুঁতি লুকিয়ে রেখে আঙ্গুল তুলে ইবলা ও আশার দিকে দেখায়। হাতের ইঙ্গিতে সাধু বলেন, তারাও যেন তার সাথে তসবি গণনা করে। তসবির পুঁতিগুলি তিনি মোট চারবার গুণলেন। যখনই কালো রঙের তেত্রিশটি পুঁতিকে বিভক্ত করা একটি লাল রঙা প্রবালের কাছে এসে পৌঁছায় গণনা, তখন প্রতিবার তিনি মাটিতে একটি চিহ্ন আঁকেন। তসবির পুঁতি গণনা করে সাধু যা পেয়েছেন তার একটা নমুনা বোঝাতে আঁকা হচ্ছে এগুলো। আর চিহ্নটি হচ্ছে একটি বিন্দু, বা দুইটি বিন্দু। গণনায় যদি জোড়া নাম্বার আসে তাহলে তিনি দুইটি বিন্দু আঁকছেন। আর গণনায় যদি বেজোড় সংখ্যা আসে, তাহলে তিনি একটি বিন্দু আঁকছেন। একটি বিন্দু আঁকার সময় তিনি তার তর্জনী ব্যবহার করছেন। আর দুটি বিন্দু আঁকার সময় অন্য যেকোনো দুটি আঙ্গুল ব্যবহার করছেন। এবার তিনি চতুর্থবারের মতো তসবি গণনা করছেন। ইবলা এবং আশা মাটিতে বসে গবাদি পশুর মতো ধৈর্য ধরে আছে, অপেক্ষা করছে সাধু লোকটি গণনায় কী দেখতে পেল তা জানার জন্য।

লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছে তার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। মুখের প্রায় পুরোটা বলিরেখায় ঢেকে গিয়েছে যা ক্ষত চিহ্ন দিয়ে ঢাকা। তিনি ভ্রু কুটি করে নিজের শুস্ক ঠোঁট জোড়া চাটলেন। সম্ভবত এটা তার একাগ্রতার চিহ্ন।

‘গণনার ফলাফলে লোকটিকে খুশি মনে হচ্ছে না,’ ইবলা ভাবে।

‘কী দেখলেন?’ আশা জানতে চায়। যদিও সমস্যাটা ইবলার, তবুও সে এখানে কথা বলতে পারবে না। তার বয়স অনেক অল্প। তাছাড়া লোকটির সাথে কথা বলা ইবলার কাছে ভীষণ অদ্ভুত কাজ বলে মনে হলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আশাকে তার হয়ে কথা বলতে দিতে রাজি হয়েছে। বর্তমান সমস্যাটির সাথে সংযুক্ত সকল বিষয়ে কথা বলা, এবং লেনদেন করার অনুমতি দিয়েছে।

‘কিছু ব্যাপার অস্পষ্ট আছে,’ সাধু লোকটি কথা বলে অবশেষে।

‘আমরা আপনাকে সবকথা বলেছি। সবকিছু। কোনো তথ্য গোপন করিনি,’ আশা বলে।

‘কোথাও ফাঁক আছে,’ লোকটি বলে।

‘কোথায়?’

‘আপনারা আমাকে যে তথ্য দিয়েছেন সেখানে।’

ইবলা এবার নিজে কথা বলবে সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু সে মুখ খোলার আগেই আশা তাকে আলোচনা থেকে দূরে থাকার ইশারা করে।

‘আমাকে পুরো ঘটনা না বললে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবো না। এই মেয়ের জীবনে অনেক পুরুষ আছে। অনেক। চার জনের বেশি। আসলে এই চার নাম্বারটি কেবলমাত্র একটি ছায়ার প্রতিনিধিত্ব করে— খুব তুচ্ছ বিষয়।’

‘আমরা আপনার কাছে কিছু লুকাইনি,’ জোর দিয়ে লোকটিকে বোঝানোর চেষ্টা করলো আশা।

তিনি মাথা নেড়ে বোঝালেন আশার কথা বিশ্বাস করছেন না। এই মুহূর্তে চুপ করে থাকা ইবলার জন্য কষ্টকর প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই লোকটির কাছে পরামর্শ করতে আসার সিদ্ধান্ত ইবলার ছিল না। আশার কথায় সে এখানে আসতে রাজি হয়েছে কারণ তার কাছে মনে হয়েছিল সে একটি বিধ্বস্ত মানসিক অবস্থার মধ্যে আছে।

আশা তাকে ফাল নামক গণনার ফলাফলের সত্যতা বিশ্বাস করিয়ে ফেলছিল। আর ইবলা আবার আশার পরামর্শের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। পুনর্বার। কিন্তু তার কাছে অন্য কোন উপায় ছিল না বলেই সে আশার পরামর্শ গ্রহণ করেছিল।

‘আমাকে আগে সবকিছু বলুন। তারপর আমি আপনাদেরকে বলছি ফাল-এ আমি কী দেখেছি।’

‘আমরা আপনাকে সব কথা বলেছি।’

‘আমার কাছে তা মনে হচ্ছে না। আপনারা আমার সময় নষ্ট করছেন।’

‘ফাল-এ আপনি যা দেখছেন তা কি খারাপ কিছু নাকি ভালো, সেটা শুধু বলেন? আমরা আপনার ফি দিয়ে দিচ্ছি।’

‘ভালো না খারাপও না।’

‘তাহলে কী দেখলেন?’

‘সে অসুস্থ। কেউ তার উপর খারাপ নজর দিয়েছে। বড় নজরটি এখনো খুব ছোট আছে। এবং তাকে সুস্থ করে তোলা যেতে পারে।’

‘কে সুস্থ করবে?’

‘হাসপাতালে নিয়ে যাবেন না। তাকে একজন মেডিসিন-ম্যান, একজন মাওলানার কাছে নিয়ে যান। মাওলানাকে তার উপর পবিত্র গ্রন্থ কুরআন পাঠ করতে হবে। তাড়াতাড়ি করবেন, নইলে একটা কিছু খারাপ হয়ে যাবে। খুব ভয়ঙ্কর কিছু।’

‘পবিত্র গ্রন্থ পাঠের জন্য শুভ সময় কখন?’ আশা জানতে চায়।

‘আজ নিয়ে যেতে পারবেন তাকে?’

আশা ইবলার দিকে তাকায়। ইবলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

‘হ্যাঁ,’ আশা উত্তর দেয়।

‘তাহলে আজই নিয়ে যান মাওলানার কাছে।’

‘এই নিন আপনার ফি,’ আশা লোকটির হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে।

‘দশ শিলিং? আমি এটা নেবো না।’

‘কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন আমরা যা ঠিক মনে করি তাই দিতে। তাই আমি আপনাকে দশ শিলিং দিচ্ছি।’

‘এটি যথেষ্ট নয়, এটি খুবই কম। আরো পাঁচ যোগ করেন, মাত্র পাঁচ সিলিং বাড়িয়ে দিন। আমি মানুষের কাছে তাদের জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী চার্জ করি এবং আমি তাদেরকে দেখে অনুমান করতে পারি কার সামর্থ কেমন।’ আশা লোকটিকে আরও পাঁচ সিলিং দিলো। তারপর তারা সেখান থেকে চলে আসে।

বাড়ি পৌঁছে ভেতরে পা দিতেই ইবলার মনে হলো বাড়িতে অনেক মানুষ গিজগিজ করছে। একজন ভাড়াটিয়া মহিলাকে একটি ছোট মেয়ে কোলে করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ইবলা। ছোট মেয়েটির চোখ বন্ধ, আর মহিলাটির গায়ের কাপড়ে রক্তের দাগ। ইবলা স্তম্ভিতের মতো দাঁড়িয়ে দেখছে ঘটনাটি। আশা সবাইকে পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে কাজে মন দিয়েছে এতক্ষণে। সম্ভবত আশার কাছে এটি খুব দৈনন্দিন ঘটনা, এবং ইবলার কাছেও। কিন্তু ইবলা ভেবেছিল শহরের মানুষেরা এইসব কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে ড্রাম বাজানোর শব্দ শোনা যায়। এবং মহিলারা সবাই খুব উঁচু গলায় কথা বলছে বাড়ির ভেতর।

‘ওহ খোদা, কী ভীষণ কষ্টের সময় ছিল সেটা,’ ইবলা এখনো মনে করতে পারে। জীবনে মাত্র দুইবার তার মনে হয়েছিল- সে যদি জন্ম না নিত তাহলে খুব ভালো হতো। এই দুইবারের একটি হচ্ছে যখন তার সুন্নত করা হয়েছিল। সুন্নত করানোর এই ব্যাপারটি কেবল কষ্টকরই নয়, ভীষণ বর্বর একটি কাজ, ইবলার কাছে মনে হয়। ‘এই পৃথিবীতে কি এমন কোন মানুষ আছে যার সুন্নতে খৎনা করা হয় না?’ অবাক হয়ে ভাবে ইবলা।

সব কথা মনে পড়ছে ইবলার। তারা তার ভগাঙ্কুরটি কেটে ফেলেছিল এবং ঠোঁটদুটি একসাথে সেলাই করে দিয়েছিল। প্রস্রাব করার জন্য একটি ছোট পথ রেখে তারা গিরিপথটি আটকে দিয়েছিল। গ্রামের লোকেরা তার পা দুটি বেঁধে রেখেছিল। শরীরের নিচে কোনো গদি বা অন্য কিছু না দিয়েই তারা তাকে শুকনো মাটিতে শুইয়ে রেখেছিল, কারণ তখন তার প্রচুর রক্তপাত হবে। খৎনা করা মেয়েটি বেশি কান্নাকাটি করলে আশেপাশের মানুষজন জোরে জোরে ঢোল পিটাতো, যাতে করে ঢোলের শব্দে মেয়েটির কান্না হারিয়ে যায়। কোনো মেয়ে অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে তারা মেয়েটির মুখে এক টুকরো কাপড় ঢুকিয়ে দিতো। আর তারা বলতো, যদি কোন ছেলে বা সদ্য ব্যভিচারিণী কোন মহিলা দেখে ফেলে তাহলে খৎনার ক্ষতস্থানটি আর কোনোদিনই সারবে না। তাই মেয়েটিকে তারা দশ থেকে বারো দিনের জন্য একটি ঘরে আটকে রাখতো।

ইবলার এখন সেই ভয়ানক যন্ত্রণাময় রাতটির কথাও মনে পড়ে যায়— প্রথমবার যখন যে যৌন সম্পর্ক করেছিল। সেটি ছিল আউইলের সঙ্গে। আর তা ছিল খুবই কষ্টকর, বর্ণনাতীত কষ্টদায়ক। ইবলার রক্তপাত হয়েছিল এবং আউয়াল তার রক্ত দেখে আনন্দিত হয়েছিল, কারণ পুরুষের বীরত্ব নির্ভর করে নারীর সতীত্ব ভাঙার উপর।

ইবলা নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পাশের ঘরের ভাড়াটিয়াদের কর্মকান্ড। আশা একবার এসে ওর সাথে কথা বলে যায়। কিন্তু ইবলা শুনতে পায়নি কিছু, যদিও আশা ভেবেছে ইবলা শুনেছে। আপন মনে ইবলা ভাবতে থাকে, নারীকে সৃষ্টিকর্তা আদমের বাঁকা পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেছেন, তাই সে এতো বাঁকা যে তাকে কিছুতে সোজা করা যায় না। আর তবুও যদি কেউ তাকে সোজা করার চেষ্টা করে, তবে সে সেটিকে ভেঙে ফেলে। হয়তো এই কারণে কিডনিকে বলা হয় ‘একজন নারীর ভাগের মাংস’, কারণ যে পুরুষরা কিডনি খায়, পুরুষকুলের ভেতর তাদেরকে নিম্ন এবং ভিন্ন শ্রেণীর হতে দেখা যায়।

গায়ের পোশাকটিকে টেনে সোজা করে ইবলা, দুই হাত বুকের উপর রাখে। তারপর নিজের ঘরের দিকে চলে যায় নিঃশব্দে।

একবার মনে হলো আশাকে ডাকলে হয়। ডেকেও ছিল ইবলা। উত্তরে আশা জানিয়েছে সে একজন মাওলানাকে খবর পাঠিয়েছে বাড়ি আসার জন্য। মাওলানা আসলে ইবলাকে জানানো হবে।

(চলবে)

বাঁকা পাঁজরের মেয়ে (পর্ব চৌদ্দ ) // নুরুদ্দিন ফারাহ, অনুবাদ: লুনা রাহনুমা

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top