Home » বন্ধু (অভিনেতা) শ্যাম’কে লেখা মান্টোর একটি চিঠি ।। অনুবাদঃ অজিত দাশ

বন্ধু (অভিনেতা) শ্যাম’কে লেখা মান্টোর একটি চিঠি ।। অনুবাদঃ অজিত দাশ

আমার বন্ধু শ্যাম স্বাধীনভাবে জীবন উপভোগ করেছিল। আমি তখন পাকিস্তানে ছিলাম। শ্যাম আমাকে চিঠিতে লিখলো, ‘আমি মানুষকে ঘৃণা করি এবং আমি এই ধারণাটি নিয়েই বাঁচতে চাই। এ জীবনই আমার প্রিয়তমা যাকে আমি অস্থি-মজ্জা দিয়ে ভালবাসি।’

শ্যাম ছিল অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারি। যারা সভা-কমিটিগুলোতে পায়জামা, কুর্তা এবং টুপি পরে থাকতো এবং ভাল ব্যক্তির মতো বসতো তাদেরকে গালি দিত সে। যে ব্যক্তি মদ্যপান করে জীবন বিষয়ে বড় বড় কথা বলতো তাদেরকে সে গালির বন্যায় ভাসিয়ে দিত। সম্পদ ও খ্যাতি অর্জনের জন্য শ্যামকে অনেক লড়াই করতে হয়েছিল। বিপর্যস্থ অবস্থায় সে টাকা হাতে নিয়ে বলত, ‘বন্ধু তুমি কত কষ্ট দেবে? একদিন না একদিন তো তোমাকে আমার পকেটে আসতেই হবে।’ শ্যাম গাড়ি-বাড়ি, খ্যাতি সবই পেয়েছিলো কিন্তু আমাকে একদিনের জন্যও ভুলেনি।

এদিকে পাকিস্তানে এসে আমার দুরাবস্থা। এখানে তেমন চলচ্চিত্র নিয়ে কাজও হয় না। কিসের জন্য চিত্রনাট্য লিখবো? ওদিকে ‘ঠান্ডা গোস্ত’ লেখার জন্য মামলা চলছিলো। আমার অবস্থা খুব খারাপ। আদালত আমাকে তিন মাসের কারাদন্ড এবং তিনশ টাকার জরিমানা করেছিলো। মন বিষিয়ে গিয়েছিলো। এই ভাবনাটি বার বার মাথায় ঘোরপাক খেতে লাগলো- এত দিন যা কিছু লিখেছি সব জ্বালিয়ে দেব। এরচেয়ে ভাল ছিলো কোনো অফিসের কেরানীর চাকরি করা। কমপক্ষে স্ত্রী ও সন্তানেরা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারতো। দিনে দিনে আমার মদ্যপানও বাড়ছিল।

একদিন ‘তেহসিন পিকচারস’-এর মালিকের চিঠি এলো। বললো শীঘ্রই দেখা করতে, বোম্বাই থেকে চিঠি এসেছে। আমি পাকিস্তানে আর বোম্বাই থেকে আমাকে কেই বা চিঠি লিখবে? তারপরও গিয়েছি। বন্ধু শ্যামের চিঠি এবং সাথে পাঁচশ টাকা। আমি কেঁদেই ফেলেছি। ও কিভাবে বুঝতে পারলো আমার টাকার খুব প্রয়োজন। অনেকবার তাকে চিঠি লেখার চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রতিবারই লিখে ছিঁড়ে ফেলেছি। আচ্ছা শ্যামকে ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার কি? এর জবাবে সে অবশ্যই আমাকে লিখত- মান্টো এই তোমার জবাব?

একবার কোনো একটা কাজে শ্যাম লাহোর এসেছিলো। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ওর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। শ্যাম আমাকে গাড়ি থেকেই দেখেই হাত নেড়ে ইশারা দিয়েছিলো। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতেও বলেছিলো কিন্তু ওর ভক্তদের ভিড় থেকে বাচার জন্য ড্রাইভার গাড়ি থামায়নি। শেষে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ওর সঙ্গে দেখা করি। বলেছি রাতে তার হোটেলে যাব।

হোটেলে গিয়ে আমি বাইরের দর্শকের মতো বসেছিলাম। ভক্তদের ভিড় ঠেলে ওর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে হয়নি।কিছুক্ষণের মধ্যে শ্যাম এসে বললো-

সবাই হীরা মন্ডিতে যাচ্ছে। তুমিও আমার সঙ্গে চলো।

-না

-কেন?

-আমি যাব না। তুমি যেতে চাইলে যেতে পার।

-তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি যাবো, আর আসবো।

শ্যাম চলে গেল। আমিও বাড়ি চলে এসেছি। আমি জানতাম আমি আর শ্যাম এখন অনেক দূরের মানুষ। যেমন হিন্দুস্তান আর পাকিস্তান। এখন আমরা একে অপরের বন্ধু নই। যেমন করে পাকিস্তান আসার পর ইসমত আমার কোনো চিঠির উত্তর দেয়নি। আর দিলেও কি উত্তর দিত।
—————-

ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা সুন্দর শ্যাম চাড্ডা (১৯২০-১৯৫১) মান্টোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ছবিতে [মন কি জিত (১৯৪৪), মজবুর(১৯৪৮), দিল্লাগি (১৯৪৯), পতংগ (১৯৪৯),  চাঁদনী রাত (১৯৫০), মিনা বাজার (১৯৫০)] অভিনয় করেছেন। ১৯৫১ সালে শবিস্তান চলচ্চিত্রের শুটিং এ ঘোরা থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। 

—————
দোজখনামা থেকে। মূল চিঠি প্রাপ্তি এবং প্রচ্ছদ ছবি ঋণ Hindikavita Facebook Page

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top