Home » নির্মাণের মধ্যে আত্মার অনুভূতি না থাকলে তা দিয়ে রেনেসাঁ হয় না ।। নূরুল আনোয়ার ।। অনুলিখন- অজিত দাশ

নির্মাণের মধ্যে আত্মার অনুভূতি না থাকলে তা দিয়ে রেনেসাঁ হয় না ।। নূরুল আনোয়ার ।। অনুলিখন- অজিত দাশ

সঙ্গীত ও ক্রিকেটের গভীর সমঝদার ডক্টর নূরুল আনোয়ার যাকে আমি নূরুল কাকা বলে ডাকতাম তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সম্ভবত ২০১৩ অথবা ২০১৪-এর দিকে। তখনও আমি ছাত্র। তবে এইটুকু স্পষ্ট মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ দেখে কবি নূরুল হক এক সন্ধ্যায় নূরুল আনোয়ার কাকার লেক সার্কাসের বাসায় নিয়ে যান। সেদিনের সেই সন্ধ্যার আনুষ্ঠানিক পরিচয়ের পর নূরুল আনোয়ার কাকার সঙ্গে একরকম নিয়মিত একটি যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সপ্তাহের প্রায় ২-৩ দিন নিয়মিত ধানমণ্ডি লেকে কাকার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো কিংবা বাসায় একান্তে তাঁর সঙ্গে বসে সঙ্গীতের নানা বিষয়ে গল্প শোনা এবং জানার সুযোগ হয়েছিলো। কখনো কখনো তাঁর পরিচিত শিষ্যদের বাসায় গিয়ে তালিম দেওয়ার সময় আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং সেখানে সমবেত সকলের সামনে হারমোনিয়াম ধরে গান গাইতেন, গল্প করতেন আর সঙ্গীতের খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করতেন। সঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার কারণে উচ্চাঙ্গ সংগীত বিষয়ক অনেক টেকনিক্যাল জ্ঞান ধরতে পারিনি যথা সময়ে কিন্তু গান শেখা কিংবা ধারণ করার যে দর্শন একজন মানুষ কিংবা শিল্পীকে অর্জন করতে হয় সেটুকু বুঝতে অসুবিধা হয়নি কখনো। নূরুল আনোয়ার  কাকার সঙ্গীত আর ক্রিকেট প্রজ্ঞার পাশাপাশি তার ব্যক্তিত্বও বেশ আকর্ষনীয় ছিলো। একেবারেই অপরিচিত এক তরুণের প্রতি এমন আন্তরিকতা, আগ্রহ আর দায়িত্ববোধ এ যুগের মানুষের খুঁজে পাওয়া বিরল হবে। ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ, কার্যকরী পরামর্শ এবং মতামত দিয়েছেন। কারণে অকারণে খোঁজ নিয়েছেন। ২০১৫ এর দিকে যখন নিয়মিত বিকেলে ধানমণ্ডি লেকে কাকার সঙ্গে ঘুরে বেড়াই তখন বিভিন্ন সময়ে সুযোগ পেলে তার বেশকিছু আলাপের রেকর্ডিং করে রেখেছিলাম। প্রায় আট দশটি রেকর্ড যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হারিয়ে গেলেও এই দুটো রেকর্ড সেই সময়ে অনুলিখন করে রাখাতে খুঁজে পেয়েছি। ডক্টর নূরুল আনোয়ারকে নিয়ে ২০১৭ সালে জ্ঞাতিজনে আয়োজিত হয়েছিলো ৩৮তম আড্ডা। এছাড়াও লেখালেখির উঠান সঙ্গীত সংখ্যায় ‘পূর্ব বাংলায় শাস্ত্রীয়সংগীত চর্চা’ শিরোনামে রয়েছে নূরুল আনোয়ারের একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক লেখা। গতকাল ৪ অক্টোবর ২০২৩ সঙ্গীত ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ডক্টর নূরুল আনোয়ারের মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখালেখির উঠান অনলাইনে তাঁর দুটো রেকর্ড এর অনুলিখন প্রকাশ করার জন্য তাদের প্রতি রইলো অশেষ কৃতজ্ঞতা।

ডক্টর নূরুল আনোয়ারের জন্ম ১৯৪৪ সালে ময়মনসিংহ জেলায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ও  গবেষণা সম্পন্ন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান কর্মরত ছিলেন ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত। উপমহাদেশের স্বনামধন্য শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য ও মিথুন দে’র কাছ থেকে নিয়েছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথের সরাসরি ছাত্র ও বিশ্বভারতী উপাচার্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে বিশুদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীতের দীক্ষা নেন। ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে অন্যতম এক নাম অধ্যাপক ড. নুরুল আনোয়ার ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শিশুতীর্থ-আনন্দধ্বনি’ সংগীত বিদ্যায়তন। যে বিদ্যায়তন বাংলাদেশকে বহু স্বনামধন্য শিল্পী ও আলোকিত মানুষ উপহার দিয়েছে। সংগীত ও সাহিত্য চর্চার সুবাদে তিনি যেসব কিংবদন্তীতুল্য মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলেন শান্তিদেব ঘোষ, কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও ওয়াহিদুল হক। ড. আনোয়ার জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদে যোগদান করেন ১৯৭৮ সালে। সমগ্র বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি বহু কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রসিদ্ধ দৈনিক পত্রিকায় সংগীত ও ক্রিকেট বিষয়ক বহু লেখাও লিখেছেন তিনি। ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বই তিনটি। রবীন্দ্রসঙ্গীত-বাংগালির সংস্কৃতির শীর্ষ পরিণতি এবং বাংলা গানের বনফুল। এবং ক্রিকেট নিয়ে তার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা থেকে ২০২২ সালে।

― অজিত দাশ  

⋯⋯○○○⋯⋯⋯⋯⋯⋯⋯⋯⋯


অনুলিখন-১
রেকর্ডিং ২০১৫, ধানমণ্ডি লেক
::
তুমি যদি গান না কর একটার পর একটা আসতেছে তুমি বুঝবা কেমনে। ব্রহ্ম সংগীতে আইসা তুমি আজকের যে গান পাও সেইটার রেপ্লিকা পাইলা। নতুন রেপ্লিকাটার নাম হইলো রবীন্দ্রসঙ্গীত। তুমি আইতাছ তো একশ বছর আগে থেইকা রামনিধিগুপ্ত, নিধুবাবু, রামপ্রসাদ সেন, এইভাবে সুর, কাব্য এরকম শতাব্দীর মধ্যে রোল খাইতে খাইতে রামমোহন রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত আইলো। এর পর বাংলা গানের কোনো ফর্ম নাই। হেমন্তদের কাল পর্যন্ত ঠিক ছিলো কারণ ওরা ক্লাসিক্যাল শিখছে। এই ক্লাসিক্যাল শিইখা ওরা কিন্তু খেয়াল গান গাইতে পারেনাই। ফিল্মে মডার্ন গান গাইছে। হইছে কী জান, কারোরে ভাল কওয়া মন্দ কওয়া- তোমার রুচিইতো নাই সংগীতের! সংগীতের তুমি রূপ বোঝ না, ফর্ম বোঝ না। তুমি আব্দুল আলীমের গান শুন ওইটা কোন অঞ্চলের গান? আব্দুল আলীম ভাটিয়ালী ছাড়া গায়নাই। শচীনদেব বর্মন কিন্তু ভাওয়াইয়া গাইতে পারে না।

তুমি যে অনীল বিশ্বাসের গান শুনতেছ, খেমচাঁদ প্রকাশের গান শুনতেছ, সি রামচন্দ্রের গান শুনতেছ, জয় কিষানের গান শুনতেছ, শচীনদেব বর্মন সহ আছেনা আরো যারা বম্বে মাতাইছে এদের গান হইলো সব কিছু মিলাইয়া একটা কন্সট্রাকক্টেড ফর্মে দাঁড়াইয়া আছে। আর রবীন্দ্রনাথের গান হইলো আরো ক্লিন, আরো বেশি ওয়েল কন্সট্রাকটডেড। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্যই হলো তাঁর গান। আমিতো এগুলো থেকে পরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের দিকে গেছি। এইজন্য ওয়াহিদ ভাই (প্রয়াত ওয়াহিদুল হক) আমারে বলত ‘নূরু বোম্বাই ঘুইরা বাংলাদেশে আইছে’।

ফর্ম জিনিসটা খুব আঞ্চলিক (Strongly identified)l খুব হার্ড ক্যারেক্টার। পৃথিবীটা ফর্মের খেলা। রবীন্দ্রনাথ এইটা বুচ্ছে এক্কেবারে হাড়ে হাড়ে। ভাসাইয়া থুইয়া গেছে। শিল্প সাহিত্য সংগীত তছনছ কইরা ফেলছে রবীন্দ্রনাথ। ফলে রবীন্দ্রনাথের গান গাইবার সময় সেইটার পেছনে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড কাজ করে তুমি বুঝতে পার না। রবীন্দ্রনাথ যেসব ঐতিহ্য দ্বারা সমৃদ্ধ হইছেন তার সবটা আমরা চিনি না। প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য, বৈদিক ঐতিহ্য, আগুনের পরশমণি গানটা আছেনা, প্রাচীন ভারতে ঘৃতাগ্নি দেওয়া হইতো…

জ্ঞাতিজনের ৩৮ তম আড্ডায় (২০১৭) বাম দিক থেকে কবি নূরুল হক, ডক্টর নূরুল আনোয়া, অনুবাদক গৌরাঙ্গ হালদার এবং অজিত দাশ

যে নাকি আসলে গানকে লিড করে এখন সেইটাকে কী বলে গুরু… তুমি রবীন্দ্রসংগীত গাও খবর রাখনা অন্যান্য সংগীতের। তুমি নজরুলের দুই-একটা গান গাও অথচ তোমার সঙ্গে সঙ্গীত ঐতিহ্যের কোনো যোগাযোগ নাই। পড়ার মধ্যে দিয়ে নাই, চর্চার মধ্যে দিয়েও নাই। কন্ঠে গাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। গান কই গিয়া নামছে… এবার বোঝ রবীন্দ্রনাথ কী জিনিস… ছেলেপেলেরা এই সময় পচা জিনিস গিলছে। সব কিছুতেই ওরা যেন যৌনতার কৌতূহল মিটানোর জন্য তৈরি হয়। পোশাক-আশাক, গান-গীতি। খুব খারাপ। তুমি যেন পোলাপাইনদের কাঁচা মাংস খাওয়া শিখাইতেছ। কাঁচা মাংস খাওয়া একটা সমাজ। প্রযুক্তির যত নব উদাহরণ খেলাধুলা, মানুষের চলাফেরা এইসব একটা ডিজারেবল দিকে গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। যন্ত্রতো তোমাকে শান্তি দিতে পারে না। যেখানে নির্মাণের মধ্যে আত্মার অনুভূতি নাই সেটা দিয়ে রেনেসাঁ হয় না, সভ্যতা হয় না।
⋯⋯○○○⋯⋯⋯⋯○○○⋯⋯


অনুলিখন-২
রেকর্ডিং ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ধানমণ্ডি লেক
::
সবইতো কল্যাণ গ্রুপ। কল্যাণ একটা ঠাটের নাম। জেনেরিক গ্রুপ। কাজেই সৈকত (কাকার কাছে গান শিখতেন আমার বয়সী আরেকজন তরুণ, ডাক্তার) যে গান শিখছে ছায়ানট থেকে, আমার ভাতিজা তুল্য সে আসলে নীরিক্ষা করছে। আমি বললাম ছায়ানটে তুমি কতগুলো গান শিখতেছ, আমার কতগুলো গান শিখতেছ। অসীতও শিখাচ্ছে। তোমার গানের অভাবটা হলো কোথায়? সৈকতকে একটা গান শিখাইলাম-

“ একলা বসে একে একে অন্যমনে পদ্মের দল ভাসাও জলে অকারনে।/ হায়রে বুঝি কখন তুমি গেছ ভুলে ও যে আমি এনেছিলেম আপনি তুলে, / রেখেছিলেম প্রভাতে ওই চরণ মূলে অকারনে। ”

গন্ডগোলে ত। বলতে পারবে না যে হয়ে গেছে হয়ে গেছে। আমি ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে গ্রামের পাকা পুকুর আছেনা ঘাট বাঁধানো, পদ্ম ফুল ফুটে থাকে, এরকম জায়গায় গিয়ে গাইতাম- “একলা বসে একে একে অন্যমনে পদ্মের দল ভাসাও জলে অকারণে।” খুব টেটনামি না এটা একটা। সাইকেল চালাইয়া যাইতাম মধুপুর এর দিকে, ময়মনসিং এর দিকে।
“দিনের পরে দিনগুলি মোর এমনি ভাবে।/ তোমার হাতে ছিঁড়ে ছিঁড়ে হারিয়ে যাবে।” খুব সুন্দর গান। ছায়ানটের কোচিং সৈকতের কাছে অসুবিধে লাগতেছে। গান যে ডিরেক্ট শিখা কত লাভজনক। আমিতো গানকে প্রাকৃতিক করি। গাইতে গাইতে এমন একটা ভাব রাখি যেন মনে হয় এটা খুব সোজা। তুমি যদি আমার সাথে চল, গানের টিচিং এর জন্য পরে… আগে গানের একটা প্রাকৃতিক ফ্রেম মনের মধ্যে ধারন করতে হবে। ক্লাশ ওয়ানের পরে ছাত্রদের তারা এমবিবিএস শিখাচ্ছে। এই ইনজাকশন দাও, এইটা কর… তাতে কি হবে গান মরে যাবে। রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে কোন কিছু নেওয়া যায়! এটা কিসের মধ্যে পড়লো বাঙ্গালি বাঙালি? বাঙালি একটা নর্দমার ড্রামের মধ্যে পড়ে আছে। তুমি কত আতর দিয়া গন্ধ ঠিক করবা। রবীন্দ্রনাথের ডেভেলপমেন্ট সীমাহীন। এটা একটা ভয়াবহ ব্যাপার। তবে বাঙালি এটা বুঝতে পারছে এক রবীন্দ্রনাথই যথেষ্ট।

মায়াবন বিহারীনি একটা বানাইয়া দেখুক কেমন লাগে। না খেয়াল, না ধ্রুপদ, কিছুই না। “চমকিব ফাগুনের পবনে,/পশিবে আকাশবাণী শ্রবণে,/ চিত্ত আকুল হবে অনুখন,/ অকারণ। ইউডাতে আমার এক ছাত্র বলতেছে, “স্যার সব ঠিক আছে, কিন্তু এই অকারণ বললেই তো গানের মিনিং হারাইয়া ফেলি। গানটা তো বুঝতেছি। যেই অকারণ বলে তখনি মানেটা হারাইয়া ফেলি স্যার।”
একটা লোক রাস্তা দিয়া হাটতাছে, মাঝখানে গিয়া রাস্তাটা বন্ধ দেখলে সে কোনদিকে যাইবো। অকারণ কইলেই তো গন্ডগোল লাগে। কাব্য বিষয়টাই আলো-আধারি। সবই তোমাকে লিইখা দিব?… দুই ফোটা পানি নিন, এক ফোটা এটা নিন। কাব্যের মধ্যে হেয়ালি থাকে। তোমরা যে কাব্য লিখ সম্পূর্ণ করতে চাও না। যে কথাটা বলতে চাও। উপস্থাপনাটাকে একটু অ্যালিগরিক কর। বিহারীনি তো একটা ক্রিয়া। বিহার মানে তো সে পশ্চিমাকে বুঝছে… অর্থ টা মিলব কেমনে। “ থাক থাক নিজ মনে দূরেতে/ আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে ।” রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন বাঁশির উপরেই ছিলো ।

জ্ঞাতিজনের ৩৮ তম আড্ডায় (২০১৭) বাম দিক থেকে কবি নূরুল হক, ডক্টর নূরুল আনোয়া, এবং অজিত দাশ

একটা রবীন্দ্রনাথের গান শুনবা আর বুঝতে চেষ্টা করবা। দেখবা তখন তুমি কই আছ। “অজানা মনির নতুন খনির” আমি তোমাকে এটার কথা বলতে বলছি না। কবিতাতো তুমি লিখই। ভয়াবহ ব্যাপার। যতদিন অগ্রসর হইতেছে। ততই সব চুপ হইয়া যাইতেছে। একটা হইলো গাওয়া যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। গান গাইলেই তার অর্থ ভুইলা যায়। দেখবা ছায়ানটে গান করে না, “কেটেছে একলা বিরহের বেলা আকাশ কুসুম চয়নে” দেখবা একটা স্বরের উপর দাড়াইয়া আছে। কওতো এটার মিনিংটা কি? “আকাশ-কুসুম চয়নে ”। একটা রবীন্দ্রনাথের গান যদি তুমি বিএ পাশ ছেলেরে কিংবা কলেজের মাস্টারকে বিশ্লেষণ করতে বল দেখবা তার যদি মাথা ব্যাথা না হইছে… ঐতিহ্য জানা নেই, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা নেই, কাব্য পড়েনাই… “একলা বসে একে একে অন্যমনে ” এই গানটা সৈকতকে করতে দিলাম এই কারণে, এটা শুইনা রাখ, করতেই হবে এমন কথা নাই। আসলে গানের সাবজেক্ট ম্যাটার টা যেন বের করতে পারে। আর সব বিষয় তুমি স্পর্শ করবা কিন্তু কিছুটা তোমার মনে নাও ঢুকতে পারে। স্বর না চিনলে তো তোমার সব গেল। আলুও গেল। ছালাও গেল। স্বর হলো বিল্ডিং ব্লকস। তুমি বললা কাকা বিল্ডিংটা খুব ভাল বানাইছি কিন্তু ইট দেইনাই ব্যাপারটা এইরকম হবে। আর অসীতকে বলছি যে তুই ছেলেটার গলাটাকে একটু ঠিক কর। গলাটাকে কালচার করতে করতে একটা ধ্বনি আসে। এমনি ক্রিকেট খেলা আর পাঁচ বছর প্র্যাক্টিস করে ক্রিকেট খেললে তো স্পষ্টই বোঝা যায়। ব্যাট হাতে নিয়ে স্টেপ দিলেই বোঝা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top