১.
-ছেলেটার নাম অমল।আর মেয়েটার নাম নন্দিনী।
-নাহ্ ।
-কেন? ভালই তো নাম।
-না-আ।জমছে না।
-আচ্ছা, বেশ। ধরা যাক, ছেলেটার নাম উইলসন আর মেয়েটার নাম কায়ানাৎ।
-হুম,হতে পারে।কিন্তু…
-কিন্তু কী?
-এত বড় বড় নাম!এখন কি আর চলে! তাছাড়া…
-তাছাড়া?
-কিছু একটা যেন নেই।
-কী নেই?
-সামথিং।সামথিং ইজ মিসিং।
– হুম।সামটাইমস্ সামথিং ক্যান মেক আ ডিফারেন্স।
-রাইট।
-ভাবছি দাঁড়াও।
-ভাব।
-ভাবছি-ই-ই।
-কী?
-কী হতে পারে?কী হতে পারে…?
– সেই মনের মানুষ টারে…কী নাম হতে পারে?
-আচ্ছা,তুমিও তো বলতে পার।এবার বরং তুমি বল।
-উহু,সে কথা তো ছিল না।কথা ছিল নাম দেবে তুমিই।
-হ্যাঁ,তা ছিল।কিন্তু তোমার তো নামগুলো তেমন পছন্দ হচ্ছে না।
-হুম।আরও ভাব।আরও কত হাজার হাজার নাম আছে।
-তা আছে।দাঁড়াও।
-দাঁড়ালাম।
-ধরা যাক, ছেলেটার নাম মেঘল।আর মেয়েটার নাম বৃষ্টি।
-ছেলেটার নাম এবার কিছুটা ঠিক লাগছে।কিন্তু মেয়েটার নাম নিয়ে আর একটু ভাব।
-আবার?
-প্লিজ।
-ওকে।কী নাম?কী নাম?
-কী নাম?কী নাম দেবে তারে?ভাব।
-হুম,ধরা যাক বন্যা।
-দুৎ!
-কিন্নি?
-ধ্যাৎ!
-কৃষ্টি!
-মোটামুটি।
-খুশি?
-হ্যাঁ,এটা রাখা যেতে পারে।
-পছন্দ ?
-হ্যাঁ,কেন নয়।হতেই পারে।
-বেশ,তবে ডান?
-ডান।
-ছেলেটার নাম মেঘল।আর মেয়েটার নাম খুশি।
-এবার এগোও।
-আহ্,একটু ফিল করতে দাও।
-দিলাম।
-ছেলেটার নাম মেঘল।আর মেয়েটার নাম খুশি।
-বেশ।
-ছেলেটার নাম মেঘল।আর মেয়েটার নাম খুশি।
-আরে,তারপর কী?
-বলছি।বলছি।মেঘল আর খুশির গল্প।
২.
টু-বেডরুম।যদিও ওদের দুটো বেডরুম লাগেনা কখনো।একটা বেডরুমেই দিব্বি চলে যায়।একটা বেডরুমে ওরা শোয়।আর একটা বেডরুম সাজানোই থাকে।যদি কেউ আসে তার জন্য।কেউ আসে না কোনোদিন।আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী যেই আসুক,ড্রইং রুমে বসে গল্প করে চলে যায়।এখন সবাই এত ব্যস্ত,অন্যের বাড়িতে রাত কাটানোর সময় আর কারও নেই।খুশি তবু সুন্দর করে চাদর পেতে,ফুলদানি পরিষ্কার করে তাতে প্লাস্টিকের ফুল রেখে,ওয়েস্ট বাক্সের মুখ বন্ধ করে,ভেজা কাপড় দিয়ে দেয়ালের ছবি পরিস্কার করে ওই বেডরুমটা সাজিয়েই রাখে সবসময়।যেন হটাৎ করে কেউ এলে অপ্রস্তুত না হতে হয়।
একটা স্টাডি রুম আছে।ওখানে কম্পিউটার টেবিলে একগাদা কাগজ ছড়ান ছিটান থাকে।পাজামা থাকে বিছনার ওপর ছড়ান।খোলা থাকে ডায়েরির পাতা।জানলার পৈটের ওপর মাঝেমধ্যেই পেপার ওয়েট রাখা থাকে।এ সব কাজ মেঘলের।ভীষণ রেগে যায় খুশি।তুমি আবার পেপার ওয়েটটা জানলার ওপর রেখেছ?
-ওটা ওখানে আছে?এই দেখো,কাল রাতে কিছুতেই খুঁজে পেলাম না।টেবিলে খুঁজলাম। কম্পিউটারের পেছনে খুজলাম।উফ্,ওখানে গেল কিকরে?আমি তো ওখানেও খুঁজলাম।দেখতে পেলাম নাতো!তুমি কিকরে পেলে?
-পর্দার পেছনে ছিল।
-ও-ও-ও…
-সেটা কথা নয়।কথা হচ্ছে, ওটা ওখানে যাবে কেন?
-সেটা আমি কিকরে জানব?
-তুমি ছাড়া কে জানবে?
-তুমিও জানতে পার।
-মেঘল তুমি ভাল করেই জানো যে ওটা তুমিই ওখানে রেখেছ।
-আমি?
-হ্যাঁ তুমিই।তুমি এত অগোছালো কেন বলত!ওভাবে অর্ধেক ভেতরে আর অর্ধেক বাইরে বের করে যদি রাখ, হাতে লেগে বা পর্দায় ধাক্কা লেগে ওটা তো যেকোনও সময় পড়ে ভেঙ্গে যাবে?
-আমার ঘড়িটা কোথায়?
-কথা ঘুরিও না মেঘল।
-আরে বাবা,এত কী আর খেয়াল থাকে।জানো তো অফিসের এত প্রেসার।
-একদম অফিসের অজুহাত দেবেনা।তুমি কাল স্টোরি বুক পড়ছিলে।মোটেই অফিসের কাজ করছিলে না। আর তার জন্য তুমি বালিশ চটকে, পাশবালিশ দুমড়ে,বিছনার চাদরে চা ফেলে একেবারে যা-তা করে রেখেছ।বুকসেলফে পেন, জানলায় পেপার ওয়েট, এ ঘরের আলমারির চাবি ও ঘরে প্রিন্টারের ওপর রেখে এসেছ।একটু তো গুছিয়ে রাখতে শেখো।যে জিনিসটা যেখানকার সে জিনিসটা সেখানে রাখলে কি…
-তুমি একটা জিনিস মিস করছ ডার্লিং।
-কী?
-দ্য ল।
-কিসের ল?
মেঘল আলতো করে ইজি চেয়ারটাতে বসে।অল্প অল্প পা দোলাতে শুরু করে।তারপর একটু হাত কচলে বলে,দ্য ল অফ মর্ডান ফিজিক্স।
একটু থেমে সে আবার শুরু করে,আধুনিক পদার্থবিদ্যা বলছে,উই আর মুভিং টুয়ার্ডস র্যানডামনেস্।আমরা এবং এই গোটা বিশ্বপ্রকৃতি ক্রমশ ছড়াচ্ছে।আরও ছড়িয়ে যাচ্ছে।আরও বিশৃংখল হয়ে পড়ছি আমরা।তুমি যতই চেষ্টা করনা কেন,আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন,র্যানডামনেস্ ইজ আওয়ার ডেস্টিনি।কিছুই পরিপাটি থাকবে না প্রিয়ে!
-তাহলে এস,তোমার ময়লা গেঞ্জি আর আন্ডার প্যান্ট তোমার অফিসের ব্যাগে ঢুকিয়ে দি।আর তোমার ফাইলের কাগজ জানলা থেকে ছড়িয়ে দি বাইরের বাগানে।হাওয়ায়।
-এই এই এই কী করছ?আরে দাঁড়াও।আরে ওগুলো ঢুকিও না।ইস্…
-উই আর মুভিং টুয়ার্ডস র্যানডামনেস্ হ্যান্ডসাম!
-আরে, কী করছ?ওগুলো ইম্পপটেন্ট কাগজ।দাঁড়াও,দাঁড়াও!এই না …
-টুয়ার্ডস র্যানডামনেস্…
-আচ্ছা আচ্ছা, তথাস্তু!
খুশি থমকে যায়।মেঘল খুশির চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে, তথাস্তু!আর নোংড়া হবে না।
খুশি মুচকি হাসে।সেই হাসির দিকে ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে মেঘল।কিন্তু খুশি চিৎকার করে ওঠে, একি, তুমি আবার বিছনার চাদরটা কুঁচকে দিচ্ছ?হামাগুড়ি দিচ্ছ ওর ওপর!
বেশ,তবে উড়েই আসছি বলে মেঘল একটা ছোট্ট লাফ দিয়ে খুশির ঠিক কাছে এসে দাঁড়ায়।
৩.
বিয়ের ঠিক চার বছর আগে মেঘলের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল খুশির।আর দেখা হওয়ার তিন মাস বাদেই খুশিকে প্রথম ‘তথাস্তু’ বলেছিল মেঘল।সেদিন মেঘলের সঙ্গে হেঁটে যেতে যেতে রাস্তায় এক পাখি বিক্রেতাকে দেখে খুশি বলেছিল,খাঁচায় পোরা পাখি দেখলেই আমার বড় অস্বস্থি হয়।মনে হয়,ওদের থেকে আকাশ সরিয়ে নিচ্ছি আমরা।মানুষ কেন সবকিছুকেই পোষ মানাতে চায়?বন্দি করতে চায়?কেন মানুষ ভাবতে পারে না ওই গোটা আকাশটাই আমার।আর আকাশে উড়ে যাওয়া সব পাখিই আমাদের!
সেদিন প্রথম খুশির দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে মেঘল বলে উঠেছিল,তথাস্তু!তারপর, সামনে সেই পাখিওয়ালার কাছ থেকে সব পাখি কিনে খাঁচা খুলে উড়িয়ে দিয়েছিল সব্বাইকে।ভীষণ আনন্দ পেয়েছিল খুশি।ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছিল অল্প একটু জল।সেই জলই সাক্ষী,আজও রাস্তায়, সঙ্গে খুশি থাকুক বা না থাকুক,মেঘল যতবার কোনও পাখি বিক্রেতাকে দেখেছে,সবকটা পাখি কিনে তাদের উড়িয়ে দিয়েছে।
সেই শুরু।এরপর অনেকবার তথাস্তু বলেছে মেঘল।খুশির দিকে তাকিয়ে।বিয়ের পর একটা ভাড়া বাড়িতে উঠেছিল ওরা দুজন।একদিন ঘুমের ঘোরে একটা সাজানো গোছানো বাড়ির স্বপ্ন দেখেছিল খুশি ।সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে মেঘলকে বলেছিল সে স্বপ্নের কথা।বলেছিল বাড়ি নিয়ে তার মনের গোপন ইচ্ছের কথাও।সেদিনও খুশির চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে মেঘল বলেছিল, ‘তথাস্তু’।নিজের যথাসর্বস্ব পুঁজি আর ব্যাঙ্কের লোন নিয়ে কিনে ফেলেছিল একটা সাধের ফ্ল্যাট।খুশির স্বপ্নের ঘর।খুশিও নিজের বিয়ের বেশ কিছু গয়না বিক্রি করে দিয়েছিল এই ঘরের জন্য।
মেঘলের কাছের আত্মীয় বলতে তেমন কেউ ছিলনা।থাকার মধ্যে ছিল মায়ের খুড়তুতো ভাই, চঞ্ছুমামা।তিনি কয়েক বছর আগে লাঙ ক্যান্সারে মারা যাবার পর মামিকে এই ফ্ল্যাটে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল মেঘল।কিন্তু মামি রাজি হননি।ছেলে টুবাকে নিয়ে নিজের ভাইয়ের বাড়িতে চলে গেছিলেন রিষড়ায়।তবু প্রতি বিবাহবার্ষিকীতে মামি আর মামাতো ভাইকে প্রায় কোলে করে নিয়ে আসে মেঘল।খুশিও খুব যত্নয়াত্তি করে ওদের।
খুব ভাল রান্না করতে পারে খুশি।তাই সেও চায় বাড়িতে লোকজন আসুক।কিন্তু সবাই এখন বড় ব্যস্ত।বোন থাকে চেন্নাইতে।চাকরী করে।ছুটি পায় না।জামাইবাবুও খুব ব্যস্ত অফিসের কাজে।আজকাল সব যোগাযোগ তাই ফেসবুক আর মোবাইল ফোনে।
মেঘল বুঝেছে খুশির এত আবদার নেই।সে শুধু মেঘলকে নিয়েই আনন্দে থাকতে চায়।চায় প্রতিদিন নিত্যনতুন রান্না করতে।গল্প করতে আর ঘর গুছিয়ে রাখতে।হ্যাঁ, সে একটু বেশী পিটপিট করে বটে,কিন্তু এও তো ঠিক যে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা একটা গুণ।মেঘল বাড়ি ফিরে কোনদিন দেখেনি,বিছনার চাদর কোঁচকানো আছে।খাবার টেবিল এলোমেলো পড়ে আছে।খুশি কোনদিন বলেনি, “আজ বড্ড আলসেমি লাগছিল।তাই বারান্দার গাছে জল দেওয়া হয়নি”।কিংবা “তোমার স্টাডি রুমটা আজ গোছাতে ভুলে গেছি গো…”।সে খুশিকে বলেওছে, এত রোজ রোজ গোছানোর কী দরকার?থাক না দু-একদিন এমনি পড়ে।এলোমেলো।দুজন তো লোক।কে আর দেখতে আসছে।
খুশি বাধা দিয়ে বলেছে,একদম না।এটা আমাদের ঘর।এ ঘর নোংড়া আর এলোমেলো হবে না কোনদিন।আমি যতদিন আছি।…বাই দ্য ওয়ে,“ক্লিনলিনেস ইজ নেক্সট টু গডলিনেস” এ কথাটা শুনেছ তো বহুবার।আমিই কতবার বলেছি।আচ্ছা বলতো, এ কথাটা কে প্রথম বলেছিল?
মেঘল মাথা নেড়ে বলেছে, জানিনা।
উত্তরে খুশি হেসেছে।তারপর আবার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো জিজ্জেস করেছে,তা বেশ।বলতে পারবে কত সালে?
-আরে কে বলেছে, তাই যখন জানিনা,কত সালে তা বলব কিকরে?
মেঘলের এই ভ্যাবাচাকা অবস্থাটা ভীষণ পছন্দ খুশির।সে যেন এই মূহুর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিল বহুদিন।সুযোগ পেয়ে সে সুযোগ হাতছাড়া না করে বলে উঠেছে, কথাটা প্রথম বলেছিলেন জন ওয়েসলে।সেই সতেরোশ আটাত্তর সালে।তাঁর ধর্মীয় উপদেশে।কিন্তু আইডিয়াটা তারও আগেকার।বহু প্রাচীন।ব্যাবিলনীয় আর হিব্রু ধর্মে এর সূত্র লুকিয়ে আছে।তুমি যদি ওল্ড টেস্টামেন্ট দেখো…
-হে যীশু,আমায় রক্ষা কর।
-কী হল, পুরোটা শোনো।না শুনে কোথায় যাচ্ছ?
-ক্রুশবিদ্ধ হতে।
-এই দাঁড়াও।দাঁড়াও বলছি…
-হে পিতা, এ কন্যে কী করছে, কী বকছে এ নিজেই জানে না। এ বাচালকে তুমি ক্ষমা কর।
৪.
মিটিং চলাকালীন মেঘল দেখল খুশির ফোন আসছে।ভাইব্রেট করাই ছিল।“মিটিং।কল ইউ লেটার” টেক্সট করে সে মোবাইল ফোনটা টেবিলে উল্টে রেখে দিল।অফিসের জরুরী মিটিং চলছে।এ সময় কনসেনট্রেশন চলে গেলে মুশকিলে পড়বে।তার ওপর আজ মেঘলের প্রেজেনটেশন আছে।গতকাল অনেক রাত অবধি জেগে মেঘল পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশনটা তৈরী করেছে।এখন কনসেনট্রেশন চলে গেলে পুরো পরিশ্রমটাই জলে যাবে।মিটিংয়ে মন দিল মেঘল।
মিটিং আর প্রেজেনটেশন শেষ হতে দুঘন্টা লেগে গেল।উফ্,আজ হিমাদ্রিটা না ডোবালে আরও আধ ঘন্টা আগে মিটিং শেষ হোত।যাক, প্রেজেনটেশনটা ভাল হয়েছে বলে তাও রক্ষে, নইলে আজ বসে কাছে…মেঘল পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করল।একি, পনেরোটা মিসিড কল।প্রত্যেকটাই খুশির।এতগুলো মিসড কল কেন? অফিসের টাইমে তো ও এত ফোন করে না।তারপর আজ মিটিং আছে বলে এসেছিল।টেক্সডও তো করল মিটিং শুরুর সময়।
হ্যাঁ, রিং হচ্ছে।কিন্তু বেজে বেজে থেমে গেল।আবার চেষ্টা করল মেঘল।আবার বাজছে।কিন্তু কেউ ধরছে না।আশ্চর্য! এমন তো কোনোদিন হয় না।
মেঘল টেক্সড করল, “কোথায় তুমি”? বারো মিনিট কেটে গেল।কোনও উত্তর এল না।মেঘল আবার মেসেজ করল, “রেগে আছ? ফোন ধরিনি বলে? বিশ্বাস কর, খুব জরুরী মিটিং ছিল”।নাহ্, কোনও রিপ্লাই আসছে না।আর একবার ফোন করা দরকার।
একবার নয়।মেঘল আরও চারবার ফোন করল।কিন্তু খুশি ফোন ধরছে না।হটাৎ কী হল!বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল মেঘলের।অফিসে কোনোমতে ম্যানেজ করে বাড়ি ফিরল মেঘল।
এক্সট্রা চাবির গোছাটা মেঘলের কাছে থাকেই।কলিংবেল নয়া টিপে সেটা দিয়ে ফ্রন্ট দোরটা খুলল সে।ভাবল, আজ মনে হচ্ছে বেজায় রেগেছে।অনেকক্ষণ ধরে রাগ ভাঙ্গাতে হবে।দরজা খুলে মেঘল চমকে গেল।এমন দৃশ্য যে দেখতে হবে মোটেই ভাবিনি সে।মেঘল দেখল,সারা ঘর অগোছালো হয়ে পড়ে আছে।ফুলদানিটা গড়াগড়ি খাচ্ছে মেঝেতে। ড্রইংরুমে একটা চেয়ার উল্টে পড়ে গেছে।মেঘল বেডরুমের দিকে এগোল। খুশি শুয়ে আছে।হতবম্ব হয়ে মেঘল দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল খুশির দিকে।কী হয়েছে খুশি?ঘরদোরের একি অবস্থা হয়েছে!তোমাকে এতবার ফোন করলাম।ধরলে না যে…তোমার কি শরীর খারাপ?
খুশি কোনও উত্তর দিল না।শুয়ে থাকল একইভাবে।অর্ধেক চোখ বুজে।মেঘল এবার আর একটু এগোল।খুশির ঠিক কাছে এসে একটু ঝুঁকে ওর মাথায় হাত রাখল।তারপর মৃদুস্বরে ডাকল,খুশি! এই খুশি!
মেঘলের হাতটা ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল খুশি।তারপর তাকে জড়িয়ে ধরল। ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল অনেকক্ষণ ধরে।খুশিকে এভাবে কাঁদতে মেঘল আগে কখনও দেখেনি।তাই সে কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না।শুধু বারবার তার মাথায় আর চুলে হাত বোলাতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর, খুশিকে কিছুটা শান্ত করে, আবার বিছনায় শুইয়ে ধীরে ধীরে বাথরুমের দিকে এগোল মেঘল।কিছুটা খুঁজে মেঝে পরিস্কার করার ন্যাতা আর হারপিকের বোতলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকল সে।বাথরুমে মেঝেতে চাপচাপ রক্ত পড়ে আছে।পুরো মেঝেটাই মনে হচ্ছে গাঢ় লাল।মেঘল কলটা চালাল।নীচে রাখা বালতিটা ভরতে শুরু করল।এবার জল,হারপিক আর ন্যাতা দিয়ে এত রক্ত ধুয়ে ফেলবে সে।কিন্তু মাংসপিন্ডটার দিকে চোখ যেতেই আরও একটু আড়ষ্ট হয়ে গেল মেঘল।
এটাই সেই ভ্রুণ যেটা একটু আগে বেরিয়ে এসেছে।আজ সকালেও যাকে পেটের মধ্যে সাজিয়ে রেখেছিল খুশি।গুছিয়ে রেখেছিল পরিপাটি করে যত্নে।এটাকে এবার সরিয়ে ফেলতে হবে।মেঘল এগোতে যাবে ঠিক তখনি চিৎকার করে উঠল খুশি।না-আ-আ,ওকে সরিয়ো না।থাকতে দাও।এভাবেই থাকতে দাও।এলোমেলো।এ বাথরুমটা তুমি কোনোদিন পরিস্কার কোরো না।
মেঘল বাথরুম থেকে মাথা বের করে,বিছনায় বসা খুশির চোখের দিকে গভীরভাবে তাকাল।কিন্তু শত চেষ্টা করেও আজ আর সে ‘তথাস্তু’ বলতে পারল না কিছুতেই।