আসক্তি
প্রথমবার আমি ষখন মারা গেলাম তখন আমার বয়স দশ বছর।
তাংলিন এ আমার মা-বাবার ওখানে একটি গাছে চড়ছিলাম। মাত্র বৃষ্টি শেষ হয়েছে, বাতাস তখনও ভারি ও আর্দ্র ছিল। আমার বন্ধু জেসি আমাকে বেডরুমের জানালার বাইরে গাছে চড়ার জন্য উস্কাল। সেও চড়লো । হঠাৎ শাখাটি দুলে উঠল। আমি নিজেকে স্থির রাখার জন্য আরেকটি শাখা ধরলাম কিন্তু সেটি ছিল পঁচা ও ভঙ্গুর। আমার আঙ্গুলগুলো ডালটির মধ্যে ঢুকে গেল।
আমি বিশ ফুট উঁচু থেকে সোজা পড়ে গেলাম আমাদের বাগানের চারদিকে ঘেরা দেয়া লোহার সুঁচালো বেড়ার উপর।
আমার মা বাবা আমার দেখাশোনা করছিলেন, আর তাইতো হয়। ছয় সপ্তাহ পর আমি জ্ঞান ফিরে পাই এবং বুঝলাম আমি বায়োরিয়াক্টর ওয়ার্ডে আছি।
তারপর থেকে আর কোন দিনই আমি গাছে চড়িনি।
আবার, যখন আমার বয়স চৌদ্দ বছর তখন একটি গাড়ি আমাকে সজোরে ধাক্কা দিয়েছিল।
এটা গাড়ির দোষ ছিল না। আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলাম, ঐদিনও বৃষ্টি পড়ছিল। সাইকেলটি আমার কাছ থেকে পিছলে যায়। শেষ কথা আমার মনে পড়ে আমার ঘাড় গাড়ির পেছনের বাম পাশের চাকার নিচে।
আমি আবারও ওয়ার্ডে জেগে উঠলাম।
প্রথমবারের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ঙ্কর, আর খুব ভয় পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার…
অবশ্যই, মৃত্যু অনেক কষ্টকর। সত্য বলতে কি এটি রোমাঞ্চকরও বটে। এটি তখনও ছিল নতুন প্রযুক্তির অবদান এবং মেয়েরা আমাকে অসাধারণ মনে করত। এরপর থেকে আমি একটু বেশি বিপজ্জনকভাবে জীবনযাপন শুরু করলাম । হ্যাঁ আমি দুর্ঘটনায় পড়তাম কিন্তু তা থেকে আবার নতুন করে জন্মাতাম।
এখন আমি প্রতি বছর বা প্রায়ই মারা যাই। আমি এখনও বেকআপে আছি।
জিনিসটা হল… আমি এটি পছন্দ করি।
এজন্য আমি যা বলি তা করি।
সবকিছু ঠিক হবে, কোন অসুবিধা নাই।
আর আমি এটাই চাই।
ছুটির পরিকল্পনা
“যেহেতু আমরা আমেরিকায় আছি তাই আমরা কি নিউইয়র্ক দেখে আসতে পারি?”
“উহ না। কোনভাবেই না। ভুলে যাও। ভীষণ বিরক্তিকর।”
“না না, সত্যি আমি মনে করি তা ভাল হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য, দেখুক তারা কীভাবে বাস করত।”
“কী দেখবে – ইঁদুরেরা কিভাবে বাক্সে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে?”
“ভুলে যেওনা এটা বিশ্বের বাণিজ্য ও সৃজনশীলতার কেন্দ্র ছিল।”
“আর এখন এটি এক হাজার বর্গমাইলের জং ও ধ্বংসাবশেষ। আমার ছুটির দিনটি ওই ধ্বংসাবশেষের জাহাজে চড়ে ট্যুর গাইডের নিয়ন্ত্রণে থেকে ব্যয় করার কোন মানে দেখি না। ওই আগাছা সেন্ট্রাল পার্কের মধ্যে পিকনিক। স্ট্যাচু অব লিবার্টি এর পেডিমেন্টের সাথে ছবি তোলা, কোনভাবেই না।”
“ভালো, কিন্তু আমি অন্য কিছু চিন্তা করছিলাম।”
“… ঠিক আছে, তুমি কি করছিলে? তোমার এ চেহারা আমার চেনা আছে।”
”কোন চেহারা?”
“তুমি এখন যে চেহারা করেছো। কী এটা? বলে ফেলো।”
“আমি একজনকে চিনি যে গ্রাউন্ড ট্যুর দেয় ম্যানহাটনে।”
“ম্যানহাটন? ওয়াকারের উপর?
“না, পায়ে হেঁটে।”
আসলেই ? … এটা কি নিরাপদ হবে?
“অবশ্যই! লোকটা খুবই ভাল। পুরাপুরি সার্টিফাইড। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি দেয়। ড্রোন কভার এবং আর যা যা লাগে।”
“হুমম”
“হ্যাঁ। আরও আছে, লোকটা বলে যে উনি নাকি নিচে মানুষ দেখেছেন। এও বলে যে উনি জানেন তারা কোথায় থাকে।”
“সিরিয়াসলি?”
“একদম। লোকটা আমাদেরকে মানুষের দেখা পাওয়ার গ্যারান্টি দিয়েছেন।
“কী। এটা… অবৈধ। লোকটির নিজের বৈধতা আছে তো?”
“দেখো, বাচ্চাদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ। ওরা মানুষ শুধু স্ক্রিনেই দেখেছে।”
“আমার কেন খারাপ লাগছে, সে বিষয়ে তোমাকে আমি আমার সাথে কথা বলতে দিব কেন…?
পরিজ্ঞান
তোমার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যেতে পারে তা জানতে খুবই দীর্ঘ সময় লেগেছিল আমাদের। এটুকু জানতে যে, আমরা তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি! বহু দীর্ঘকাল ধরে আমরা এই পৃথিবীর র্সূযকে প্রদক্ষিণ করা দেখেছি। স্বাদ নিয়েছি বৃষ্টি এবং বাতাসের। প্রসারিত করেছি আমাদের কল্পযুগকে।
তোমার আগমন ছিল নতুন কিছু। আমরা যতদূর মনে করতে পারি, প্রথম জেগে ওঠার চেয়ে এখানে আর কোন কিছুই নতুন ছিল না। তুমি আমাদের মধ্য দিয়ে এসেছিলে এবং আমাদের মাঝে দীর্ঘ পথে দগ্ধ হয়েছ এবং প্রলেপ লাগিয়েছ ক্ষতে। সূর্য বহুবার ঘুরে গেছে। আমরা আবার তোমার উপরে বেড়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। যে নতুন দেয়াল তুমি তুলেছিলে আমাদের শিকড় দিয়ে আমরা তাকে দ্বিখিণ্ডত করেছি।
আমরা ভেবেছিলাম তুমি একটা জন্তু মত যেটা আমাদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। কিন্তু আমরা এখন জানি তোমার প্রতিটি ছোট উষ্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিশ্চিতরূপে একটা সম্পূর্ণ মন ধারন করে। আমরা জানতাম না যে এটা সম্ভব ছিল। আমরা কখনো কল্পনাও করিনি যে আমাদের মত তোমারও একটা মন থাকতে পারে। আমরা এটা এখন বুঝতে পারছি।
আমরা তোমাকে কিছু সময়ের জন্য দেখছিলাম। যেদিন প্রথম এলে, নতুন দুটি প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিলে তুমি। তোমার বাঁচা খুবই সংক্ষিপ্ত এবং মৃত্যু অত্যন্ত দ্রুত। আমরা জন্ম নিই এবং স্বপ্ন দেখি উষ্ণতা থেকে। প্রতিটি বরফ জমা ঋতুতে যা তোমার কাছে একটা সূর্যোদয়ের মত।
তুমি হবে আমাদের স্বপ্নের সমান অংশীদার এবং তুমি আমাদের নিষ্প্রভ করো না। তোমার ধ্বংস করা প্রতিটি বৃন্ত এবং শাখা আমাদের নির্জীব করেছে। আমরা তোমাকে একথা বলছি। হয়তো বা তুমি অন্যদের কাছে তা বলবে। আর তোমার প্রশস্ত হৃদয় হয়তো এটা বুঝবে যে আমরা এক। আমাদের সাথে সহভাগিতা করো।
শীতনিদ্রা
‘‘এটাই কি সেটা’’? ডিকন বললো। সে তার গ্লাভস পরা হাতে সিলিং থেকে ঝুলে থাকা কতগুলো মোটা প্যাঁচানো তার এবং যন্ত্রপাতির উপরে খোঁচা দিল। ‘‘পুরো ধ্বংসপ্রাপ্ত একটা উপনিবেশ এবং এই জঞ্জালগুলো শুধুমাত্র শক্তির বিষয়’’?
ধ্বংসস্তপের ভেতর থেকে শুধুমাত্র গৌতমের আশ্রম খোঁজার জন্য শত বছরের অভিযাত্রার পরে দুদিন আগে আমরা মহাঘুম থেকে উঠলাম। আমাদের সামনে যেসব যন্ত্রপাতি ছিল শুধু সেগুলোই ছিল একমাত্র জিনিস যা তখন কাজ করছিল। এছাড়া ছিল মাথা নষ্ট করে দেয়ার মত প্যাঁচালো কতগুলো অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ যা আমার জীবনে আমি কখনোই দেখিনি! আমার হেলমেটের ভাইজর বা ঢাকনাটা ছিল বহু বর্ণিল রঙের বেগুনি আলোকাভার তাপ এবং জাফরি কাটা নিখুঁত বিদ্যুৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র দিয়ে মোড়া।
আমি বললাম, ‘‘এতে শক্তি ফিরে এসেছে। তবে তা কাজ করছে না। ম্যাগেলান তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?’’ নভোযান থেকে সেই স্বর ভেসে এলো ছড়িয়ে পড়া বিশুদ্ধ চড়বড়ে শব্দ হয়ে।
‘‘রজার, আমরা তথ্য সরবরাহের ভেতর দিয়ে ঝামেলায় পড়ে গেছি। সিগন্যাল ভালো আছে।’’ ডিকন তার পোষাকের সাথে আটকানো ব্যাকপ্যাকের ভেতরে একটা চাকা থেকে তার বের করলো এবং বললো, ‘‘ঠিক আছে ম্যাগেলান, আমরা সংযোগের জন্য চেষ্টা করছি।’’
আমার ভাইজর বা হেলমেটের ঢাকনা জুড়ে ক্যারিয়ারের সিগন্যাল ব্যান্ডউইথের ক্ষীণ রেখা নেমে যাচ্ছিল। ডিকন প্লাগ ইন করলে সেটা তীক্ষ্ণ খোঁচা মারল।
‘ওয়াহ!’ ‘‘ওই যে কিছু তথ্য প্রবাহ’’ ডিকন চিৎকার করে উঠল।
ম্যাগেলান থেকে অস্পষ্ট স্বর ভেসে এলো। ‘‘গ্রাউন্ড পার্টি স্ট্যান্ডবাই, আমাদের ব্যবস্থাতন্ত্র এক প্রকার কাজ করছে না।’’
আমার ভাইজর নীরব এবং পরে অন্ধকার হয়ে গেল।
আমি বললাম, ‘ম্যাগেলান তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?’
লাইনটা ছিল একদম নিরব।
‘ম্যাগেলান, এটা গ্রাউন্ড পার্টি, সাড়া দাও?’
ডিকন এবং আমি পরস্পরের দিকে তাকালাম।
আমি আমার ভাইসরের শ্রবণ পয়েন্টে চাপ দিলাম। ডিকনও তার পয়েন্টে চাপ দিল এবং মাথা ঝাঁকাল।
আমি বললাম, ‘‘মনে হচ্ছে আমাদের এখানে সমস্যা আছে।’’