Home » এন্টি-সেমিটিজম,  জায়নবাদী বয়ান ও হলোকাস্ট ব্যবসায় // জগলুল আসাদ

এন্টি-সেমিটিজম,  জায়নবাদী বয়ান ও হলোকাস্ট ব্যবসায় // জগলুল আসাদ

জায়নবাদের কূটাভাস : প্রতিক্রিয়া ও প্রতিকৃতি

এন্টি-সেমিটিজম শব্দটার অর্থ সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ইহুদি- বিদ্বেষ বা ইহুদি-ঘৃণা। এই শব্দটা আমরা সবাই জানলেও philosemitism কনসেপ্টটা এতো পরিচিত নয়।  জায়োনিজমের জন্ম ইউরোপীয়  এন্টিসেমিটিজমের প্রতিক্রিয়ায়,এটাই আমাদের প্রচলিত  জানা কথা। কিন্তু মজাটা হলো, জায়োনিজম নিজেও যে এন্টিসেমিটিক,এটা বোঝা একটু কষ্টসাধ্য।

ইসরায়েল শাহাক দেখান যে, জায়োনবাদ একই সাথে এন্টি-সেমিটিজমের প্রতিক্রিয়া ও “মিরর-ইমেজ”। ইহুদি জায়নবাদ ও খ্রীষ্টীয় জায়নবাদ, আসলে, এন্টিসেমিটিজম  ও ফিলোসেমিটিজমের  এক অদ্ভুত মিশ্রণ।

জায়নবাদীদেরকে মনে হবে ফিলোসেমাইট, অর্থাৎ ইহুদি-প্রেমী, যেহেতু তারা ইহুদিদের রাজনৈতিক মুক্তির জন্যে কাজ করে, ইহুদিদের ধর্মীয় ঐতিহাসিক  একটা স্মৃতি ও আধ্যাত্মিক বাসনাকে বাস্তবায়িত করতে চায়, তাই সহজ যুক্তিতে মনে হবে জায়নবাদে ইহুদিপ্রেম বা ফিলোসেমিটিজম আছে।

কিন্তু, স্টিফেন মাসাদ দেখান, এন্টিসেমাইটরা যে যুক্তি ব্যবহার করেছে, জায়নবাদীরাও সেই একই যুক্তি ব্যবহার করেছে। এন্টিসেমাইটারা চেয়েছে ইহুদিরা চলে যাক ইউরোপ থেকে, জায়নবাদীরাও তা-ই চেয়েছে যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে চলে যাক,ইউরোপে না থাকুক। সেই হিসেবে জায়নবাদীরা এন্টি-সেমাইট।

জায়নবাদীরা বলেছে, ইহুদিরা ইউরীপীয় জাতিগোষ্ঠী থেকে আলাদা, এন্টি-সেমাইটরাও তা-ই ভাবে। কিন্তু প্যালেস্টাইনিরা সর্বদা এটাই মনে করেছে যে ইউরোপীয় ইহুদিরা ইউরোপীয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এন্টি-সেমাইটরা যেভাবে ইহুদি নিধন করেছে, জায়নবাদীরাও একইভাবে নিধন করছে প্যালেস্টাইনিদের।

হলো/কস্ট ঘটেছে এন্টি-জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ যারা ইউরোপেই থাকতে চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই হলো/কস্ট ঘটেছে। হলো/কস্টে যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের কাউকেই ইউরোপ আমেরিকা জায়গা দিতে চায়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে এই মতৈক্য গড়ে উঠে যে, ইহুদিরা হোয়াইট ইউরোপীয়ান। হলোকস্টকে  শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় হত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নাজি গণহত্যা শুধু  ইউরোপের ৯০% ইহুদিকেই হত্যা করেনি, এই হত্যার মধ্য দিয়ে জায়নবাদের শত্রুদেরও হত্যা করেছে, কারণ জায়নবাদীদের আহবানে এই ইহুদিরা নিজ নিজ দেশ ও আবাস ছেড়ে বের হয়ে যায়নি। ইহুদিদেরকে ইউরোপ ছাড়া করবার অভিন্ন লক্ষ্যে  নাজিবাদী আর জায়নবাদীরা একাকার। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো নাজীবাদী পলিসিই বাস্তবায়ন করছে। এক অর্থে যা-ই নাজিবাদি, তাহাই জায়নবাদী।

হার্জল নিজেও ইহুদিবিদ্বেষের জন্যে ইহুদিদেরকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ইহুদিরা যেখানে যায়, সাথে করে ইহুদি বিদ্বেষও নিয়ে যায়। ইহুদি বিদ্বেষের জায়নবাদী বহি:প্রকাশ হচ্ছে ইসরাইল রাষ্ট্র। হার্জল তাঁর ডাইরিতে লিখেছিলেন: “এন্টি-সেমাইট দেশগুলো হবে আমাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু, এন্টি-সেমাইট দেশগুলো হবে আমাদের মিত্র”। (The anti-Semites will become our most dependable friends, the anti-Semitic countries our allies.)। তা-ই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। আর, জায়নবাদ সত্যিকার অর্থে একটা  এন্টি-জুইশ মুভমেন্ট। এ অর্থে,  জায়োনবাদীদের চেয়ে বড় নাজীবাদী ও এন্টি-সেমাইট আর নাই। এন্টি-সেমিটিজম জায়োনবাদের এলাই; এন্টিসেমিটিজম না থাকলে জায়দবাদকে এন্টি-সেমিটিজম আবিস্কার করতে হয়। এন্টিসেমিটিজম জায়নবাদের জন্যে ট্রাম্পকার্ড এবং একই সাথে ডিফেন্স ও অফেন্স মেকানিজম।

অন্যদিকে, খ্রিস্টান জায়নবাদীতার ভেতরেও রয়েছে একই সাথে ইহুদিপ্রেম ও ইহুদিবিদ্বেষ। ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টানরা মনে করে, ইহুদিরা খোদার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট। আবার, একই সাথে, তাদের একটা অংশ এও মনে করে যে, জেসাস ক্রাইস্টকে হত্যা করেছে ইহুদিরা। খ্রিস্টান জায়োনিস্ট তথা ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানরা মনে করে, যিশু খ্রিষ্টের দ্বিতীয় আগমনকে ত্বরান্বিত করতে ইহুদিদেরকে প্যালেস্টাইনে জড়ো করা উচিত। তাই একদিকে তাদের একটা অংশ হিটলারের  ইহুদি নিধনে খুশি হয় এই জন্যে যে,এর ফলে  ইউরোপ ছেড়ে যাবার এবং প্যালেস্টাইনে ” ফিরে” যাবার উদ্যোগ-আয়োজন সম্পন্ন হয়।

ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টানগণ ইহুদিবাদকে ধর্ম হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে ; ইহুদিদেরকে তারা রেইস বা নেশন বা জাতি হিসেবে গণ্য করে। ইহুদিদেরকে এইভাবে জাতি হিসেবে গণ্য করার ব্যাপারটাকে ইহুদি বুদ্ধিজীবীদেরও প্রভাবিত করে। এবং, উনবিংশ শতাব্দীতে এই “জাতি” বা “রেইস” এর ধারণা “জাতিগত বিশুদ্ধতা”-র ধারণার আবির্ভাবকে সম্ভব করে তোলে, ফলে “জাতিগত নিধন” এর ধারণাও জন্ম নেয়। এই “জাতি” র ধারণা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়  নাজিদের  দ্বারা ইহুদি নিধনকে  মতাদর্শিক ন্যায্যতা দেয়।

ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিস্টানরা মনে করত, ইউরোপকে ইহুদি মুক্ত করতে প্যালেস্টাইনকে ইহুদি-আবাস বানাতে হবে, এবং এর ফলে সম্ভব হবে জেসাস ক্রাইস্টের ত্রাণকর্তা হিসেবে পুনরাবির্ভাব। ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টান তথা খ্রিস্টান জায়নবাদীদের চিন্তার সাথে ব্রিটিশ শাসকদের ফরেন পলিসির মিলনের ফলে তাদের ভেতর যে মৈত্রী ঘটে, তা প্যালেস্টাইনে  জায়নকরণের সূত্রপাত ঘটায়।

ইলান পাপে সিদ্ধান্ত টানেন যে, ইহুদি জায়নবাদী ও খ্রিস্টান জায়বাদীদের ভেতরে এইভাবে এন্টিসেমিটিজম ও ফিলোসেমিটিজম মিলেমিশে থাকে।

প্রত্নতত্ত্ব ও জ্বীনতত্ত্বের জায়নবাদী ব্যবহার

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্নার্ড কলেজের অধ্যাপিকা নাদিয়া আবু এল হজের দুটি বই__Facts on the Ground: Archaeological Practice and Territorial Self-Fashioning in Israeli Society ও  The Genealogical Science: The Search for Jewish Origins and the Politics of Epistemology ইসরাইলের কিছু দাবির জ্ঞানগত দিক পরীক্ষা করে। প্রথম বইটি, জুইশ অরিজিন নির্ণয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু দিয়ে সত্য অনুসন্ধান নয় শুধু, সত্য নির্মাণের রাজনীতিকে উন্মোচিত করে । দ্বিতীয়টি, জেনেটিক্স বা বিজ্ঞান দিয়ে ইহুদিদের এনসেস্ট্রি নির্ধারণের বিষয়টি তুলে আনে।

” Facts on the Ground: Archaeological Practice and Territorial Self-Fashioning in Israeli Society” বইটিতে দেখানো হয়েছে, ইজরাইলি আর্কেওলজি কীভাবে প্যালেস্টাইনের কালচারাল অবশেষকে ধবংস ক’রে প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলের  দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। আর্কেওলোজি যেন কোন ভূখণ্ডের জীবনী রচয়িতা, ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে যেন “সত্য” লুকায়িত, তা-কে দখল করতে হবে, তুলে আনতে হবে। বইটি ইতিহাস নিয়ে  প্যালেস্টাইন ও ইজরাইলের পাল্টাপাল্টি দাবিকে পরীক্ষা করেছে। ঔপনিবেশিক অবস্থিতিকে গঠন করবার যে মতাদর্শ, সেটির “সত্য” কে যাচাই করবার জন্যে  ডিসিপ্লিন হিসেবে আর্কেওলোজি কীভাবে ম্যাপিং, জরিপ ও খননকে ব্যবহার করে, নাদিয়া তা-কে তুলে এনেছেন। ১৯৪৮ সালে প্যালেস্টাইনিদেরকে তাঁদের ভূখন্ড থেকে উচ্ছেদ ক’রে এবং তাদের গ্রামগুলিকে বোমা ও বুলডোজার দিয়ে ধবংস ক’রে তার উপর বনায়ন কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়ে ইজরাইল “নাকবা” র চিহ্নকে অদৃশ্য করে। এই ডিনায়ালের মধ্য দিয়ে তারা তাদের অবস্থিতির ন্যায্যতাকে ইউরোপ-আমেরিকার কাছে তুলে ধরে। হ-লো-কস্টের যারা ভিক্টিম তাঁদের অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মূল্য দেওয়া হয়, কিন্তু নাকবার স্বীকার প্যালেস্টাইনি রিফিউজিদের  সাক্ষ্যের কোন epistemological status স্বীকার করা হয়না। জায়োনিস্টরা Jewish indigeneity এর গল্প তৈরি ক’রে তাদের কলোনিয়ালিস্ট প্রজেক্টকে ‘হক’ প্রতিপাদন করে। প্যালেস্টাইনিদের দলিল,প্রমাণ, সাক্ষ্যকে অস্বীকার(Denial) করা জায়োনিজমের চিহ্ন। অনেক সময় তথ্য সঠিক ব’লে বুঝলেও সেগুলোকে তারা রিকগনাইজ করে না। এভাবে, নাদিয়া দেখান আআর্কেওলোজির চর্চা  ভূগর্ভস্থ “সত্য” (Facts on the ground)এর কথা ব’লে ইসরাইলি সমাজের আত্মনির্মাণ (self-fashioning) ঘটায়।

ব্যাপক জেনেটিক্স রিসার্চের মধ্য দিয়ে ইহুদি কমিউনিটির প্রমাণ করতে চায় তাদের অভিন্ন ও সাধারণ এনসেস্ট্রিকে। সারাপৃথিবীর মানুষের মধ্যে যারা নিজেদেরকে ইহুদি বলে তাদের কোন কমন অরিজিন আছে কিনা? তাদের উৎসস্থল প্যালেস্টাইন কিনা? বাইবেলে বর্ণিত জুইশ যাজকদের বংশধারা সঠিক কিনা? ডিএনএ রিসার্চ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজে। নাদিয়া আবু এল হাজ-এর The Genealogical science  বইটি দেখায়, বিজ্ঞানীদের এসব  উত্তর খোঁজার প্রচেষ্টা কীভাবে ইহুদিদের ইতিহাসের বৃহত্তর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ডিস্কোর্স দ্বারা প্রভাবিত। নাদিয়া দেখান হিউমান পপুলেশন জেনেটিক্স কীভাবে “রেইস” সম্পর্কে বিদ্যমান ধারণাকেই পুনরুৎপাদন করে ও টিকিয়ে রাখে। জেনেটিক রিসার্চ উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর আসলে দিতে পারে না। মানুষের বায়োলজিকাল সেল্ফকেই এই প্রোজেক্ট অথেন্টিক সেল্ফ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। তাছাড়া,  ডিএনএ-এর সাক্ষ্য সুপ্রাচীন  কোন জনগোষ্ঠীর অভিন্ন উৎস ও কোন ভুগোলের সাথে তাদের জিনগত সংশ্লিষ্টতাকে প্রমাণ করতে পারে না। বিজ্ঞানের মাধ্যমে জিউস পিপুলহুড নির্মাণের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ও এথিকাল সমস্যাকে তুলে আনেন নাদিয়া।

নাদিয়া বেশ সফলভাবেই দেখান, কীভাবে শাস্ত্র হিসেবে আর্কেওলোজি ও জেনেটিক্স ইহুদিদের জাতীয় আবাসের দাবি, সেটলার নেশনহুডের আকাঙ্খাকে পুনরুৎপাদন করে।  এক্ষেত্রে নাদিয়াকে সাইদের অনুগামী মনে হবে।

ইসরাইলি জায়নবাদী ন্যারেটিভ ও হলোকাস্ট

স্লোমো স্যাণ্ড ইসরাইলের তেলাবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের  অধ্যাপক। হিস্টোরিওগ্রাফি নিয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ  বই  Twilight of History।  মূলত, শ্লোমো স্যান্ড কীভাবে তার ইতিহাস দর্শনে পৌঁছলেন, কার কার লেখা ও কনসেপ্ট থেকে তাঁর ইতিহাস বিষয়ক অবস্থান গড়ে উঠলো, সেটির বর্ণনা Twilight of History বইটি।   ইতিহাসে স্থান ও কালের ধারণা, ইতিহাসের ইতিহাস,  উৎপত্তির অর্থ, সত্য, রাজনীতি ইত্যাদি কীভাবে ইতিহাসের ভাষা ও বয়ান নির্মাণ করে, তা  উঠে এসেছে তাঁর এই বইয়ে। মূলত এটি তাঁর অপর দুই বিশ্বখ্যাত  গ্রন্থ—The invention of the Jewish people ও The invention of The Land of Israel –এর তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা।

স্লোমো স্যান্ড ” The invention of the Jewish people” বইটি দুটো কারণে লিখেন ব’লে জানান। প্রথমত, একজন ইসরাইলি হিসেবে ইসরাইলকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করবার বাসনা থেকে । দ্বিতীয়ত,তিনি বিরোধিতা করতে চেয়েছেন জুইশ এসেনশালিজমকে অর্থাৎ, ইহুদিদেরকে খোদার পছন্দনীয় জনগোষ্ঠী ও জাতি হবার দাবিকে।

স্লোমো স্যান্ড যুক্তি দেন , “ইহুদিজাতি” বা জুইশ পিপল বা নেশন ধারণাটি একটি রাজনৈতিক নির্মাণ। ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্মই এই বিশ্বাসের উপর ভর করে যে, বাইবেলীয় কাল থেকেই ইহুদিরা একটি একইভূত জাতি,রোম কর্তক ছিন্নভিন্ন হয়ে ২ হাজার বছরের নির্বাসন শেষে তারা ফিরে এসেছে তাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে। অথচ প্রাক-জায়নবাদী পর্বে ইহুদি কল্পনায় ফিলিস্তিন  ছিল একটা ধর্মীয় ও পবিত্রভূমি, এটা কোন মাইগ্রেশানের জায়গা নয়। ফিলিস্তিন ছিল ইহুদিদের একটা অধিবিদ্যিক গন্তব্য।

Twilight of History বইটিকে তাঁর আত্মক্ষার প্রতিবেদনও বলা যায়। বইটির একাংশে স্লোমো দেখাচ্ছেন হলোকাস্টকে  সত্য-মিথ্যা নানা বিবরণী সহযোগে কীভাবে এক পৌরাণিক গাম্ভীর্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

স্লোমো  উল্লেখ করছেন , নাজিদের জাতীয় পরিশুদ্ধির ধারণায় , ইহুদিরা ছিল জার্মানদের জাত্যাভিমানের প্রতি হুমকিস্বরূপ । বলশেভিক, “রোমা” জনগোষ্ঠী ,মানসিক রোগগ্রস্থ  ,সমকামী এবং অনার্য স্লাভদেরকেও বিবেচনা করা হতো  হীনতর প্রজাতি হিসেবে , যারা জার্মান জাতির জন্যে গৌরবহানিকর!  আধুনিক জাতীয়াতাবাদের একটি অন্তর্নিহিত উপাদান হচ্ছে “ নির্মূলকরণ”।   জাতির শত্রুকে অমানবিকরূপে চিহ্নিত করা সব ধরনের জাতীয়তাবাদের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় । তবে ,অপরের প্রতি এই নৃতাত্ত্বিক ধারণাকেই  গণহারে নির্মুলকরণের একমাত্র কারণ হিসেবে ভাবার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে । বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ,বিশেষত ,যেসব যুদ্ধে জার্মান জড়িয়েছিল,সেগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে ,কেননা তা অপরাধের আমলাতান্ত্রিক কারিগরিকে ক্রমবর্ধমান হারে উগ্র করে তুলেছিল ।

সমস্যা হচ্ছে ,হলোকাস্ট পদটি শুধু তাদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হয় নাজি’রা যাদেরকে ইহুদি হিসেবে গণ্য করতো ,অথচ  “ রোমা”রাও নাজিদের এই নির্মুলকরণের শিকার হয়েছিল ব্যাপকহারে। উল্লেখ্য, রোমা বলতে ,১৪ ও ১৫ শতকে উত্তর ভারত থেকে দেশান্তরিত হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরা জনগোষ্ঠীকে বোঝায় ,যাদের ভাষা রোমানি। কিন্তু রোমা হত্যাকে হলোকাস্টের ভেতরে ফেলা হয় না । একইভাবে , যেসব পোলিশ বুদ্ধিজীবিদের জন্যে আসউজ  নির্মাণ  করা হয়েছিল এবং যারা ছিল নাজি নৃশংসতার প্রথম শিকার ,তাদেরকেও বাদ রাখা হয় হলোকাস্টের মর্তবা থেকে ।  মনে রাখা উচিত , রাউল হিলবার্গের কথা, যিনি হলোকাস্ট রিসার্চার এবং ইউরপীয় ইহুদীদের নিয়ে অতুলনীয় গবেষক ,তাকেও ২০১২ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল হিব্রুতে অনূদিত হওয়ার জন্যে । কারণ, তার কাজের ফোকাস ছিল ভিক্টিমরা নয়, বরঞ্চ অপরাধকারীদের সুদির্দিষ্ট চরিত্র উন্মোচন।  তাছাড়াও , অপরাধ সংগঠনকারীদের সাথে  ইহুদীদের সংস্রবকে তিনি সমালোচনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন,খণ্ড খণ্ড যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ইহুদীরা, তা নিতান্তই অপ্রতুল ও  বিবেচনাঅযোগ্য।  Raul Hilberg এর বইটির  নাম The destruction of European Jews। রাউল হিলবার্গের গবেষণা হলোকাস্টের নতুন গবেষকদের অসন্তুষ্ট করেছিল । ১৯৮০ এর দশক ও তারপর থেকে বিপুল পরিমান বইপুস্তক ,প্রবন্ধ-নিবন্ধ,সিনেমা ভিক্টিমের ইহুদি বিশেষত্বকে জোর দেয় । ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত ও ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ধারণায়ন থেকে সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন ক’রে তারা হ-লো-কাস্টকে এক আধুনিক মিথোলজিতে রূপান্তরিত ক’রে ফেলে। এটা এমন বিশেষত্ব লাভ করে যে, এটা আর জেনোসাইড থাকে না, এমনকি এটাকে ইতিহাসের ভয়ালতম গণহত্যা বলেও অভিহিত করা হয় না ; এইটা হয়ে ওঠে এক বিশেষ ক্যাটেগরি এবং ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্যুত এক “আইকন”, যেটির মতাদর্শিক কাজকর্ম পশ্চিমা সংস্কৃতিতে এক সমস্যা । এমন কি জেনুইন উত্তরাধুনিক তাত্ত্বিক  লিওতারও এটাকে “ as an act outside the human which they have not tool for understanding” ব’লে অভিহিত ক’রে মিথিকাল পর্যায়ে নিয়ে যায়।

অপরাপর  নানা গোষ্ঠীর উপর সংগঠিত গণহত্যা থেকে ইহুদি-নিধনকে আলাদাভাবে কনসেপচুয়ালাইজেশন ন্যায্য হতে পারে তখনি, যখন অপরাধকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং সীমা নির্ধারন করা হবে । উদাহরণস্বরূপ, ইহুদি নিধনের ঘটনাকে অস্বীকার করা যেমন অপরাধ, তেমনি অপরাধ হবে  ভিক্টিমের সংখ্যা ১১ মিলিয়নের পরিবর্তে  ৬ মিলিয়ন ব’লে প্রচার করলে। যদি এই সচেতনতা থাকে যে, ঘটনার পরম্পরাকে বিন্যস্ত ক’রে একটা কাহিনি তৈরি করলেই সেটা অতীতের বাস্তবতা হয়ে উঠে না, তাহলেই শুধু হলকাস্টের নির্দিষ্টতার ধারণায়নকে  গ্রহণ করা যায় ।  উদাহারণস্বরূপ , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ফরাসি বিপ্লব এখনও অতীতের অসম্পুর্ণ  উপলব্ধি আকারে আছে , যা ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে। ফরাসি বিপ্লবের শুরু ও শেষ নিয়ে কোন ঐকমত্য নাই , একই কথা প্রযোজ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত সম্পর্কেও। স্থান ও কালের যেকোন বিভাজনে, যেকোন ঐতিহাসিক ঘটনার সৃজনে  যুক্ত থাকে মতাদর্শিক খেয়াল যা ঘটনা নির্বাচন,বাছাই ও বিন্যস্ত করণে  প্রভাব রাখে  এবং  এভাবে তা-কে প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন অর্থ দেয় । কলিংউডের বরাত দিয়ে বলা যায় , ঐতিহাসিক ঘটনা শুধু ব্যাখ্যা বা বর্ণনাই করেন না, ফ্যাক্ট বা ঘটনা সৃষ্টিও করেন। .

ইহুদিদেরকে  অন্যান্য ভিক্টিমদের থেকে আলাদা ক’রে তাদের উপর আপতিত আঘাত ও  বিপর্যয়কে অনন্যভাবে জোরারোপের  নানারকম নৈতিক প্রতিক্রিয়া  আছে ।  যেমন, এতে ইজরাইল ও তার নানা সহমর্মীদের মধ্যে ইহুদি নিধনের মতাদর্শিক  তাৎপর্য  তৈরি হয় । এটি ইসরাইল ও অন্যান্য ইহুদিরা যে ইতিহাসের অনন্ত মজলুম —এই ধারণাকে শক্তিশালী করে । যা কিছুই ইহুদি না ( not jewish), সেটির প্রতি তৈরি করে গভীর সন্দেহ। ইহুদি পরিচয়ের প্রতি যতো কাল্পনিক হুমকিই হোক না কেন, এটি তার প্রতি অনিয়ন্ত্রিত আচরণকেও ন্যায্যতা দেয়। হলোকাস্টের যে ধারণা ফলিয়ে তোলা হয়েছে, তা ইসরাইলের সকলের থেকে আলাদা থাকার তত্ত্ব বা  ethnocentric isolationism-কে ন্যায়ানুগ প্রতিপন্ন করে। শেষমেষ, এটা প্যালেস্টাইনের প্রতি ইসরায়েলের  চর্চিত বীভৎস নীতিকেই  জাস্টিফাই করে এবং এই উপলব্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে যে, এককালের মজলুম বা  নির্যাতিত অপরকালে  জালিমের ভূমিকাও নিতে পারে ( The roles of victim and executioner are often exchanged)। 

জায়নবাদের হলোকাস্ট ব্যবসায় : জালিমের মজলুমিয়াত

হলোকাস্টকে এক অনন্য জুলুম এবং ইহুদিদেরকে অনন্ত মজলুম হিসেবে বাঁচিয়ে রেখে ফিলিস্তিনিদের উপর জায়নবাদীরা তাদের সমস্ত জুলুমকে ন্যায়সঙ্গত ক’রে রাখে । হিট-লারকে বলির পাঠা করে ইউরো-আমেরিকান-ইস-রাইলি জোটের জুলুমকে আড়াল করা হয়। অথচ হিটলারের চেয়ে কোন অর্থেই ইউরো-আমেরিকান শাসকগোষ্ঠী  কম পাশবিক নয়। হলো-কস্টের জন্যে দায়ী  শেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ইউরোপীয়রা, কিন্তু সেটার মূল্য চুকাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। মাহমুদ দারবিশ,  এডওয়ার্ড সাইদ প্রমুখ প্যালেস্টাইনিদের বলেছেন ” victims of the victims”। একদার ভিক্টিম এখন ইতিহাসের নজিরবিহীন আগ্রাসী শক্তি। তাদের ভিক্টিমহুড তাদের ভেতরে সহমর্মিতার কোন এথিক্স তৈরি করেনি। বরঞ্চ,তাদের একদার ভিক্টিমহুড তাদেরকে নৃশংসতা চালিয়ে যাবার পক্ষে যুক্তি যোগায়। তারা নিজেদের এখনো ভিক্টিমই মনে করে, আর পশ্চিমারা ধোঁয়া যোগায় তাতে। যদিও ইসরায়েলের সব ইহুদিকেই হলো-কস্টের সারভাইভার বলা যাবে না , আর বেশিরভাগ জায়োনিস্ট নেতা তো ভিক্টিম পদবাচ্যই নয়। যখন ইউরোপীয় ইহুদিরা নাজি সহিংসতার নির্মম অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছিল, তখন জায়নবাদীরা  ফিলিস্তিনের ভূমিকে উপনিবেশ বানানোর প্রকৃয়ায় ব্যাপৃত। জায়নবাদীরা হলো-কস্টের ভিক্টিম বলে চিহ্নিত হতে পারে না।

ওমার খলিফা একটা আর্টিকেলে যুক্তি দেন যে,মজলুমিয়াত বা ভিক্টিমহুড একটা ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বর্গ। এটা কোন প্রাধিকার ( Entitlement) নয়। কিন্তু ইসরাইলি ন্যারেটিভে সব ইহুদিকেই  ভিক্টিমরূপে দেখানোর কোশেশ চলে। ইসরায়েলের ন্যারেটিভ নির্মাণের শক্তি বিপুলাকায়।

আমে-রিকা যেমন ৯/ -১১ এর সূত্র ধরে আফগান-কে তছনছ করে,রাসায়নিক অস্ত্রের অজুহাতে ইরাককে বিধবস্ত করে, ইস-রাইলও ৭ অক্টোবরের অজুহাতে গাজাকে নরক বানাচ্ছে। নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন ” ৭ অক্টোবরের হামলা ইসরায়েলের ৯-/১১”। ইজরাইল মধ্যপ্রাচ্যে একটুকরো আমেরিকার প্রতিচ্ছবি!  ইস-রাইল ইজ আমেরিকানাইজড, এন্ড আমেরিকা ইজ ইজরাইলাইজড। Amy Kaplan তার ” Our American Israel ” বইয়ে আরও লেখেন: Israel is the mirror of America’s idealised self-image।

প্রায় সব অর্থেই, ইসরায়েল আমেরিকার লিগাসি বহন করছে। রেড ইন্ডিয়ানদের উপর, কালো অস্ট্রেলিয়ানদের উপর সব জুলুমকে আমেরিকা ন্যায্য মনে করেছে, আর ইসরাইলও গাজাবাসীর  উপর হওয়া,ফিলিস্তিনিদের উপর সংঘটিত প্রতিটি অন্যায়কে ন্যায্য মনে করে।

ইউরোপ-আমেরিকা ইউক্রেনের পক্ষে সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করছে “রাশিয়ান আগ্রাসন”-এর বিরুদ্ধে, অথচ ই-সরা-ইলী আগ্রাসনে ক্ষতবিক্ষত ফিলি-স্তিন এখনো তাদের চোখে, চমস্কি কথিত, worthy victim হইতে পারে নাই, যার পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি-সাহস যোগানো যায়,অপরাধীকে রুখবার প্রেরণা পাওয়া যায়।

সমস্ত পশ্চিমারা হলো-কস্টের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আর ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে চলমান হত্যা ও ” আল-নাকবা”র স্মৃতিকে বিস্মৃত ও অদৃশ্য করে সত্যিকার মজলুমকে তাদের মজলুমিয়াত থেকেও বঞ্চিত করে।

২০১৫ সালে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, হলোকস্ট মুসলিমদের ব্রেনচাইল্ড।  হাজ আমিন আল-হুসেনী, যিনি ছিলেন জেরুজালেমের তৎকালীন গ্রান্ড মুফতি,হিটলারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ইহুদিদেরকে পুড়িয়ে মারতে। হিটলারের ইচ্ছে ছিল ইহুদিদেরকে ইউরোপ থেকে বিতারিত করা, সমূলে ধবংস করা নয়। আমিন আল হুসাইনী এর জন্যে দায়ী ,নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ও অন দ্য রেকর্ড বলেছেন এ কথা।   অথচ বার্লিনে আমিন আল হুসেনি হিটলারের সাথে দেখা করেন ১৯৪১ সালে, ২৮ নভেম্বরে। ইহুদিদের ব্যাপারে জার্মান সরকারের পলিসি  ১৯৩৮ সালের আগেই নেওয়া। এবং ইহুদি-নিধন পুরোপুরি কার্যকর করার সিদ্ধন্ত হয় আমিন হুসেনীর হিটলারের সাথে সাক্ষাতের ৬ মাস আগেই।  হিটলারের সাথে  গ্র‍্যান্ড মুফতির সাক্ষাত ইহুদি বিষয়ে জার্মান সরকারের পলিসিগত সামান্য পরিবর্তনও ঘটায়নি।  ইসরাইলি জায়নবাদী শাসকদের মুসলিমবিদ্বেষ ও জালেমি হঠকারিতা  কোন পর্যায়ে পৌঁছালে হিটলারকেও কিছুটা ছাড় দিয়ে একজন মুসলিমের ঘাড়ে এমন দায়  চাপানো যায়! অথচ,  মুফতি হুসাইনি হিটলারকে কি বলেছিল তার  জার্মান অফিসাল রেকর্ড পুরোটা প্রকাশিত হয়, সেই ১৯৬৪ সালেই।

পশ্চিমে  হলোকাস্টের সার্ভাইভাররা গুরুত্ব পায়, তাদের সাক্ষ্য মূল্যবান বলে বিবেচিত হয়, আর “নাকবা” য় বেঁচে থাকা উদবাস্তু মানুষদের কণ্ঠ শুনবারও উপযোগী মনে করা হয় না, তাঁদের সাক্ষ্য তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া তো  দূরের কথা!

জায়োনিস্টরা স্মৃতিকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করে, নাজি নৃশংসতাকে দোষারোপ ক’রে নিজেদের অপরাধকে জাস্টিফাই করবার এই constitutive  coupling তাদের পাশবিকতার মূল। নিজেদের ভেতরকার সত্যিকার পশুকে তারা দেখতে পায় না অথচ ফিলিস্তিনিদের তারা মানব পশুই মনে করে; প্রতিদিন শত শত শিশু ও সিভিলিয়ান হত্যা তাদের কাছে পশুর মৃত্যুর অধিক কিছু নয়। এই অমানবিকতা সভ্যতার ফেরিওয়ালারা উপভোগ করছে। একদার ইউরোপীয় জালিমরা এখন আরোতর জালিম। নিশ্চিন্তে, সহাস্যে, অনুশোচনাবিহীন ।

জগলুল আসাদ

পেশাগতভাবে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ”চিন্তাযান” নামে একটি জার্নাল সম্পাদনা করেন। সাহিত্য,রাজনীতি, ভাষাতত্ত্ব, ইতিহাস, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top