Home » নিমাই জানার পাঁচটি কবিতা

নিমাই জানার পাঁচটি কবিতা


সিঁদুরমুড়ি ও তৃণভোজী উদ্ভিদেরা

মধ্যাহ্ন চিহ্নের বাড়ির ভেতর গজিয়ে ওঠা তৃণভোজী মৃত্যুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে আজকাল আয়তক্ষেত্রাকার চৌকাঠের পাশে

কাঁচের প্লেটের ওপর গোলগোল মৃত্যুদানাগুলো বেশ চকচকে দেখাচ্ছে রসগোল্লার গায়ে অসংখ্য ছিদ্র বিন্দুর মতো অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভান্ডার
আমি হঠাৎ করে ঘামে ভিজে যাই সিঁদুরমুড়ির গায়ে থাকা একটি পূর্বপুরুষের নাবাল ১৩ কাঠা জমি থেকে ফিরে আসার পর
তখন আমার কোন অঙ্গে সাইটোপ্লাজমীয় রথযাত্রা থাকে না , একটি দৈর্ঘ্যহীন ফিরে আসা থাকে

কাঁটা চামচ দিয়ে খাওয়ার পর সকলেই প্লেট থেকে উড়ে যেতে চায় আপেলের ভেতরে থাকা গর্ভাশয়ের বীজ ও কৃষ্ণকায় অঞ্চল ফেলে স্ত্রী লিঙ্গের ফিজিশিয়ান স্যাম্পল
কতজন খেজুরের নিশ্চিদ্র মরুভূমিময় গ্রানাইট পাথরকে কামড়ে ধরেছে দিনের বেলায়
অথচ দ্যাখো বীজের ক্ষেত্রফল রসালো হলেই শেকড় এনে দেয়
গর্ভস্থ ধানবীজে আমি উদ্ভিদ হয়ে উঠি
আমি শল্কমোচনে অভ্যস্ত নারীর পাশে গিয়ে বসি প্রতিদিন পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার জন্য, আমি ভয়ের ভৌতিক নাটক করি কালো উনুনের জীবাশ্ম রং মেখে
হলুদ জীবিত মানুষগুলোকে ক্রমে ভয় পাই পান্ডুরোগের কারণে, তারা সকলে এক হাতে যকৃৎ অন্য হাতে কাঁচা কাঠের বোঝাই ঠেলাগাড়ি টানতে টানতে নিয়ে যায় শ্মশানের বিরাগক্ষেত্রে

বাড়িতে একপ্রস্থ কান্নার আয়োজন করা হয়েছে

•••••


আমার প্রপিতামহ ও আগুন বাড়ি

বাড়ির উঠোনকে আমার নারীর নিষিদ্ধ কাপড় বলেই ভাবি

আমি পায়ে পায়ে সারাটা ঘর উড়ে উড়ে বেড়াই, হেঁটে হেঁটে বেড়াই, নেচে নেচে বেড়াই সাদা ধুতি পরা কঙ্কালের মতো,
অকারণে জড়িয়ে ধরি ভূমধ্যসাগরের একটা বৃত্তাকার কড়াইয়ের তলদেশ, এখানে এত কালো রং কেন সাদা ঢাকবার জন্য নয়তো
কালো রং আমাদের কলঙ্ক ঢেকে রাখার জন্য আগে থেকে জমা রাখা আছে ব্রাশ আর গ্লিস্টার টিউবটির ভেতর
আমার সিঁড়িঘরে যাওয়ার জন্য আর কোন রাস্তা রেখে যায়নি আমাদের প্রপিতামহ কেবল একটি মাটির কলসির তলদেশে গিয়ে ছুঁয়ে দেখেছেন গর্ভবতী মায়েদের পেটগুলো এমনই ঠান্ডা হয়ে যায় অদৃশ্য শিশুদের লাথি খাওয়ার পর

এখানে অলৌকিক পতনের স্থান চিহ্নিত রাখা আছে প্রদীপের নিচে
আমি এখানে রোজ গঙ্গা জলে নিজেকে ধুয়ে ফেলি নিজেকে অশৌচ পোশাক ভেবে, প্রতিদিন রান্নাঘরের ভেতর যাই আর বেরিয়ে আসি তিনটি মৃত্যুর মাথা সাথে নিয়ে
শরীরের ভেতর অসংখ্য অসুখের চাষ করে রেখেছি ফাগুন কালে, আজ কেমন দ্রিমি দ্রিমি শিমুল ফুলগুলো আমার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে হাঁ মুখে,
বাদুড় উল্টো দিকে স্তনে রেখে আমাকে খাইয়ে যায় সন্ধ্যেবেলার দিতি নারী সেজে, রজনীগন্ধায় বিষধর সাপ থাকে না ,

শুধু দীর্ঘাকার ভয় শবাসনে শুয়ে থাকে বৃত্তাকার চা পাতায়

•••••


সাপ ও অ্যাডিপোজ টিস্যু

নৈসর্গিক বৃষ্টিধারা পেয়ে হঠাৎ আজ উতলা হতেই পারে রিমঝিম জানালার শীতলীকরণ সানাই

আমার কোন কাপড় নেই রাত্রিকালীন লজ্জাকে ঢেকে দেওয়ার জন্য, একটা কালো শরীর আমার পিঠে হাত রেখে গ্ৰামীণ  হাসপাতালের সোডিয়াম আলো দেখাতে চায়, আমি লম্ব বৃত্তাকার নক্ষত্রের পাশে কেবল ঈশ্বরীর ধূসর মুখ দেখতে চেয়েছি বারংবার ঈশ্বরী আমাকে কিছু হিজল ফুল দেখিয়ে মিলিয়ে গেছে বিকেল বেলার মালভূমিতে
রাত তবে কাকে ভেঙে চলে আদিগন্ত ক্ষেত্র ভূমিজ সাপের খোলসে
খোলস আলগা হয়ে যায় আমার মুখের মতো
মুখ দেখে নিজেই কেমন কেঁপে কেঁপে উঠি বৃষ্টি ভেজা শাড়ির মতো আমার প্রতিটি অ্যাডিপোজে এক একটা টিউমার বাসা বেঁধে আছে রাত্রিকালীন অ্যালকোহল নগরীর ভেতর
একটি সর্পগন্ধার চারা গাছ রোপন করেছিল বাবা, আমি শুধু মৃতদেহের পোড়ানোর জায়গাটি নির্ণয় করেছি এতগুলো বছরের পর
মৃতজীবিরা ব চিহ্নের সাথে খেলে বেড়ায় সবুজ ধানের মতো, আমার অবৈধ সংঘ গড়ে উঠেছিল নবম শ্রেণীর উপপাদ্যের ফাঁকে
নদীটি কখনোই নাচতে নাচতে জিরাফ হয়ে যাবে না আমাকে ফেলে উল্টানো স্তন্যপায়ীর মতো

•••••


পাথরকুচি ফুল ও লাল নারী

জোনাকির মতো নিশাচর শিমুল ফুল খাওয়ার পর আমাকে দেখেই উল্টো দিকে হেঁটে হেঁটে বেড়িয়ে যায় অচ্যুত শরীর
ঠিক আমার লাল রঙের নারীটির মতো,

যে প্রতিদিন একটি সিল্কের মতো চকচকে বাতাবি লেবুর দাঁত বরাবর শুয়ে থাকে,
ঘরের রান্নাঘর আসলে একটি হৃদপিন্ডের তৃতীয় কপাটিকা, গর্ভাশয় স্থানের মতো এখান থেকেই প্রতিদিন অসংখ্য রক্ত কোষ ফেলে নারীরাই ভ্রূণ তৈরি করে ছড়িয়ে দেয় গোবর জলের মতো আমার শরীরে কোনো ভঙ্গিল রাত নেমে আসেনি

আমি একটু দু’দণ্ড বিশ্রামের পর পায়রার গায়ে থাকা পালক আর বসন্ত মল্লিকা ফুলের পরাগ নিয়ে নিচু মুখে থার্মোফ্লাক্স থেকে জল গড়িয়ে খাই, আমার তখন উচ্চরক্তচাপের বাতিক ছিল খানিক ঘুমের ঘোরে
সান্তনু ডাক্তার জোর করে খাইয়ে ছিল মনরোগের ঔষধ
মা রান্না ঘরের কোণে বসে পেঁয়াজ খোসার মতো ছড়িয়ে দিত আমাদের স্কুল ফেরত জামাগুলি
একবাটি আলতা ঘোলা জল দিয়ে ধুইয়ে দিতো আমাদের নরম হরিদ্রাভ অপ্রাকৃত বিকেল
আমাদের প্রচন্ড ক্ষুধা দেখে আঁৎকে উঠত প্রতিটি রাস্তার অদৃশ্য লোকজন
মা হেঁটে আসার পর একটি বিরাট কালিদহের মতো বিছানা তৈরি করে ফেলতো কেরোসিন ভিজিয়ে

আমাদের উঠোনে মৃতপ্রায় পাথরকুচি ফুলগুলো কালো রঙের গাউন পরে নিশিপ্রহরে যোগ দিয়েছে এখন

•••••


সরীসৃপ ও বিষফুল উঠোন

বাবা অনেকবার বিবাহের নাম করে অজগরের ঠোঁট দুটো ফাঁক করে অন্তর্বাস খুলে নিয়েছে ব্রহ্মবেলায়

মায়ের কালো রঙের শরীরের ওপর শুধু মাত্র কেরোসিনের মোমবাতিগুলো হঠাৎ করে সন্ধ্যের আগে জ্বলে উঠত আমাদের পড়ার ঘরের ভেতর,
একটা ভৌতিক শল্কমোচন দাঁড়িয়ে আছে ঘরের প্রবৃদ্ধ কোণে,
আমার প্রপিতামহ আমাকে ভয় দেখাতো ঘর থেকে বেরিয়ে আলপথের একটি সাদা রঙের দ্বারকাপুরীর খামার দেখিয়ে,
আর আমি সিন্ধুর উপনদী দেখে হঠাৎ করে ভূগোলের পৃষ্ঠায় কখন যেন হারিয়ে গেলাম বৃষ্টিচ্ছায় হয়ে
আমাদের একবার সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হওয়ার কথা ছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে

কাঁচের প্লেটে মৃত পিঁপড়ের মতো ঘুরে ফিরে দেখছে আমাদের চৌকাঠ আর রান্নাঘরে জীবাশ্ম মাখা কঙ্কালগুলো নরম প্রিয়জন, স্টেনলেস বেসিনে একটু আধটু কফ, বমি, পুঁজ উগরে চলি দিনের বেলায়,
মৃতপ্রায় আয়নার সব রক্ত শুকিয়ে গেছে
আমি কোন মৃত্যুর পরবর্তী সরীসৃপদের আর ভেসে উঠতে দেখিনি দেওয়ালে, ভূগোল পৃষ্ঠায়, জ্যামিতিক শিরদাঁড়ায়

আমি কেবল অপ্রাকৃতের মতো বিষধর হয়ে উঠি নিজের ভেতর জামা পোশাক চিবিয়ে খাই ভাতের থালায়
আমার একটু শ্মশানের হলুদ বিষ দরকার ছিল

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top