Home » মবতন্ত্র // রোমেল রহমান

মবতন্ত্র // রোমেল রহমান

কুশীলব
নেতা
১ মবজীবী
২ মবজীবী
৩ মবজীবী
সবাই = একদল মবজীবী
তরুণ – তরুণী
যুবক
লোক
°

[ অফট্রাক থেকে বিলাপ শোনা যায়, একজন তরুণ / তরুণী ফাঁকা মঞ্চে বিলাপের সাথে পার্ফমিং আর্ট করে চলে। বিলাপ শেষ হলে সে-ও বেরিয়ে যায় ]

বিলাপ:

এমন এ দিনরাত্রি মানুষের দাঁত নখ চোয়াল অধর মানুষের মাংসে চায় ভোজ! হুঙ্কার দেয় যেন চতুষ্পদের ক্ষুধা চোখেমুখে! ক্ষিপ্র স্বর, ব্যাঘ্র নিশ্বাস, ওঠে আর নামে, কাকে সে সাবাড় করতে উদ্যত আজ? তারই মতন এক হাড় মাংস মজ্জা আর রক্তের রাঙা মানুষের? দুঃখের ভারা বেয়ে যায় আজ অন্তরে গুপ্ত সাধুতা! কাকে কে বাঁচাবে আজ কার হাত থেকে কখন কিভাবে? দিনক্ষণ ঠিক নেই, নেই অভিযোগের মা-বাপ! চৈতন্যে উন্মাদনা, পাঁজরে পাঁজরে খ্যাপা ষাঁড়! জিহ্বায় রক্তের স্বাদ নিতে উন্মত্ত ভিখারি সে আজ। গণরোষ জারি করে লুটে নিতে চায় স্বাধীনতা! এ-তো নয় এই জল হাওয়া কিংবা মাটির সাকিন! ক্ষমা চাই, প্রীতি চাই আরও কয়েক ফোঁটা। মানুষ এমন কেন বিক্ষুব্ধ তলোয়ার আজ? হায়েনার কৌশলে ভূপাতিত করে সে শিকার ? এইসব কেন হচ্ছে রোজ আজকাল? নর হত্যায় যদি মুক্তি আসে, তবে সে বিপুল পরাজয়, মানুষের মধ্যে আজ মানবের মৃত্যু ঘটে গেছে! কাঠামোতে সুশোভন আদতে সে রাক্ষস ভয়ানক! খেতে খেতে খিদে বেড়ে খেয়ে নেয় নিজেরই ছায়া! সবটুকু শেষ হলে ফিরে ফিরে আসে হাহাকার! গণরোষ জারি করে মানুষের হাতে যদি খুন হয় মানুষ, থাকে না মানব বেঁচে আর।

[ একদল যুবক-যুবতী দৌড়ে মঞ্চের এদিক-ওদিক যায়। হঠাৎ মাঝখানে থামে। নেতা মিছিলের ভঙ্গিমায় নির্দেশনা দেয়!]

নেতা : শ্লোগান কি আছে?
সবাই : আছেএএএএ!
নেতা : কোন সে শ্লোগান?
সবাই : মবতন্ত্র!
নেতা : আরো জোরে…
সবাই: মবতন্ত্র!!
নেতা : জোর যার..
সবাই : মুল্লুক তার!
নেতা : বাকি সব?
সবাই : ছারখার!!
নেতা : কোন তন্ত্র?
সবাই : মবতন্ত্র!
নেতা : জোরসে বলো?
সবাই : মবতন্ত্র!
নেতা: আরো জোরে?
সবাই : মবতন্ত্র!
নেতা : জোর হলো না..
সবাই: মবতন্ত্র!
নেতা : আরে বাড়া…
সবাই : মবতন্ত্র!
নেতা : ফাটায় দে না..
সবাই : মবতন্ত্র!
নেতা : এক লাঠি এক তন্ত্র..
সবাই : মবতন্ত্র মবতন্ত্র…

[ সবার দিকে তাকিয়ে! ]

নেতা : আহা সাবাস! শ্লোগানে জোস না আসলে কামে জোস আসবে না! মবজীবি হইতে হইলে জবানে দম থাকা চাই! মববাদের একগান, জবান হবে মেশিনগান!
সবাই: মার্হাবা মার্হাবা!
নেতা : ভাইগণ আপনেরা শুনছেন, ধর্ম অবমাননার একটা অভিযোগ আসছে আমাদের মবখানায়! সেই কুলাঙ্গারকে আইজ আমরা পিটায়া তুলা তুলা কইরা ফেলবো! ফেলবো কিনা বলেন?
সবাই : ফেলবো ফেলবো!
১ মবজীবী : কোথায় কে ধর্ম অবমাননা করছে?
২ মবজীবী : জানি না! নেতা বলছে মাইনা নেও! উনার কাছে ডকুমেন্ট আছে !
১ মবজীবী : ডকুমেন্ট আমগোরে দেখাক! আমরাও একটু ঘাইটা দেখি ব্যাপারটা আসলে কি! আন্দাজে অভিযোগ পাইয়াই একটা লোকরে পিটাইতে যাবো?
২ মবজীবী : ধুর! তোমার এইখানে কাজ করা হবে না! তুমি বেশি বুঝো! এইখানে কাজের অন্যতম নিয়ম হইলো মুখ বন্ধ রাখা! মানে, প্রশ্ন করা যাবে না! নেতার নির্দেশনায় নাটক করতে হবে! নিজে হোলপাক্নামি করলেই আউট! দল থিকা ঘেটিঘুল্লি দিয়া বাইর কইরা দেয়া হবে।
১ মবজীবী : তা বইলা চুপ থকবো?
২ মবজীবী : চুপ কোথায়? এসাইনমেন্ট বাস্তবায়নের জন্য শ্লোগান দিবা, হুংকার দিবা, মারামারি করবা! রাতে যাবার আগে ভাগের পয়সা নিয়া যাবা! আরকি?!

[ সবাই শ্লোগান তুলে বেরিয়ে যায় ]

নেতা : জ্বালো জ্বালো জ্বালো…
সবাই : আগুন জ্বালো!
নেতা : অবমাননাকারীর আস্তানা..
সবাই : জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও!

[ মঞ্চের অন্য পাশ দিয়ে সেই দলটা শ্লোগান দিতে দিতে এসে থামবে।]

নেতা : দাবি শুধু এক্টাই..
সবাই : কলাগাছে আপেল চাই!
নেতা : চাই চাই এক্টাই…
সবাই : কলা গাছে আপেল চাই..
নেতা : তুমি কে আমি কে?
১ মবজীবী : কলাখোর কলাখোর…
সবাই : আপেলখোর আপেলখোর..

[ নেতা হুঙ্কার দিয়ে বলে ওঠে ]
নেতা : হেই, কলাখোর বল্ল কেডা? কোন সে চুতিয়া?
সবাই : আমরা না.. ওওও..
নেতা : এই গাধাটা? এরে আনছে কে? কার রিক্রুট?
সবাই : জানি না! জানি জানি! উনাররররর..
নেতা : অ, তোমার রিক্রুট? তা তুমি তো গেঞ্জমে ওস্তাদ তোমার আনা লোক এমন ভুল করে ক্যান?
২ মবজীবী : আসলে বস, গ্রামের থিকা আইজকা আসছে তো, টাউনের ভাউ বুঝে নাই! গরিব মানুষ কাজবাজ নাই! চাকরির সন্ধানে আসছিলো! মববাজিতে ঢুকায় দিলাম। আমার গ্রামের ভাই! মাফ কইরা দেন, দিন কয় গেলেই ফিট হয়্যা যাবে!
নেতা : উহু! মাফ চাইতে হবে, তাকে! সে ভুল বইলা আমার পুরা বাহিনীরে বেকুব বানায় দিবে আর মাফ চাবা তুমি তাতো হয় না! গোড়া থিকা যদি খাড়া না, তাইলে আগায় গিয়াও হবে না!!
২ মবজীবী : ঐ ছরি ক বসরে!
১ মবজীবী : আসলে বস আমি ভাবছিলাম শ্লোগানটা ভুল বলতেছেন আপনি! তাই ঠিকটা বলার চেষ্টা করতেছিলাম!
নেতা : ভুল?! ভুল বলতেছি আমি? এ শালা পাগল না রামছাগল?
১ মবজীবী : না মানে কলা গাছে আপেল তো সম্ভব না! তাই বলতেছিলাম যে কলা গাছে কলা চাই!
( নেতা সবার দিকে তাকিয়ে হাসে। সবাই ১ মবজীবির দিকে তাকিয়ে হাসে)
নেতা : বোঝো অবাস্থা! আরে গান্ডু, কলা গাছে তো কলাই হয়! কিন্তু আমাদের দাবি কি? আমাদের দাবি কলা গাছে আপেল চাই! কলা গাছে কলা চাইলে কি সেইটা দাবি থাকে?
১ মবজীবী : কিন্তু যুক্তিতে..
নেতা : অই, এরে সরা! যুক্তিবাদী দিয়া মবগিরি হয় না! আমার চক্ষের সামনে থিকা খেদা!

( নেতা আবার শ্লোগান তোলে। সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।)

নেতা : ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিবাদ..
সবাই : মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ!
নেতা : ফ্যাসিবাদের ভুত
সবাই : শাঁকচুন্নির পুত..
নেতা : জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও..
সবাই : ফ্যাসিবাদের আস্তানা..
নেতা : কলা চাই কলা চাই..
সবাই : তেঁতুল গাছে কলা চাই!!
নেতা : হেই গান্ডুর বাচ্চারা। আপেল গাছ ক! ( দম। নিয়ে শ্লোগান তোলে)
কলা চাই কলা চাই..
সবাই : আপেল গাছে কলা চাই!
নেতা : দাবি শুধু এক্টাই..
সবাই : কলাগাছে তেঁতুল চাই!
( ক্ষেপে মারতে তেড়ে আসে)
নেতা : ওরে আমার গাধার বাচ্চারা! তোমার বাপের গাছে কলা চাও!
১ মবজীবী : বস! যেইটা সম্ভব না সেইটা দিয়া শ্লোগান টানলে তো ভুলভাল হবেই!
নেতা : তুমি জ্ঞান দিতে আসবা না। সম্ভব না রে ই সম্ভব করা আমাদের কাজ! তাতে কাজ না হইলে সান্টিং দিয়া কাজ আদায় করা আমাদের কাজ! মাইর দেয়া, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ কিংবা গণধোলাইয়ের কলাকৌশল!
১ মবজীবী : তাতে কি কলা গাছে আপেল ফলবে?
নেতা : অন্তত নগদে কলাগুলান লুইটা নিতে পারবো আমরা!
২ মবজীবী : বস কলা নেয়া কি আমাদের রাজনীতির উদ্দেশ্য?
নেতা : জ্ঞান ফলাবা না! বেশি জ্ঞান ফলাবা না! পার্টি, পোলাপাইন চালাইতে গেলে টুকটাক ঠেক দেয়া লাগে! মালপানি না আসলে মিছিল-মিটিং, চা বিড়ি খর্চাপাত্তি আসবে কি হাওয়া থিকা?
২ মবজীবী : দখলবাজি করা লাগবে?
নেতা : এদ্দিনে টের পাও নাই? দখল না নিলে উপর থিকা লাফ দিয়া পড়বে না মাটি ফাইটা ফাল দিয়া উঠবে কোলে? প্রতিটা সেক্টরে মব নিয়া হাজিরা দিতে হবে! জানান দিতে হবে, বাড়াবাড়ি করলে টেংরি ভাইঙ্গা গুড়া মশলা বানায় দেয়া হবে! সব প্রতিষ্ঠানের উপরের লোকজন টাইনা নামানো হবে! লাগ্লে মাইরা নামানো হবে! ট্যাগ দিয়া নামানো হবে! জাতীরে ব্যস্ত রাখতে মববাজি জরুরী! মাইরের সময় দেখবা পাবলিকও লাফ দিয়া আগায় আসে মারতে! তার দীর্ঘ দিনের রাগ, বঞ্চনার ক্রোধ আমাদের হাতে হাত মিলায়া মিটায়! আর আমরা তারে শরিক কইরা কাজ সারি! এইটা কি ভুল?
১ মবজীবী : নাহ! রাজনীতি!
নেতা : ব্যস! ঐটুকু বুঝলেই হইলো! বেশি বোঝা আমাদের কাজ না! ঐটা আমাদের পোঙ্গাপাকা বুদ্ধিজীবী বাহিনী বুঝলেই হবে!

( বেরিয়ে যায়, সাবাইকে ইশারা দিয়ে)

[ নেতার নেতৃত্বে কয়েকজন রাস্তায় দাড়িয়ে এক তরুণ তরুণীকে ধরে টেনেহিঁচড়ে এনে বিচার করছে।]

৩ মবজীবী : অই ঐ ছেমড়ি তোর কি লাগে?
তরুণ : বন্ধু!
( লাথি দিয়ে)
৩ মবজীবী : মাঙ্গিরপুত! বইন লাগে না, বউ লাগে না, বেগানা মাইয়া নিয়া ঘুরাঘুরি! লদকালদকি? মার হারামির বাচ্চারে!
( মেয়েটা ছেলেটাকে বাঁচাতে যায়। তাকে লাঠি দিয়ে ঠেলে ফেলে দেয়)
নেতা : সর এইখান থিকা বজ্জাত! বেপর্দা! ঐ অর মোবাইল নে! অর বাপ মারে ডাক! তাগোর বিচার হবে, মাইয়া ছাইড়া ফ্যাত্না তৈরি সমাজে?

[ হুড়মুড় করে এক যুবককে পেটাতে পেটাতে মবজীবি ১,২ ঢোকে ]

যুবক : আমারে বাঁচান। আমারে বাঁচান! আমার কোন দোষ নাই!
নেতা : কেডারে কুত্তাডা?
১ মবজীবী : বস এইটারে ছুইলা ফালান! বাইঞ্চোদ চুল রাখছে মাইয়া মান্সের মতন! বিটি না বেটা না হিজড়া বোঝা যায় না! দাঁড়ায় মুততেছিলো! আর্ট কালচার করে! গিটার অর গোয়ার মইদ্দে দেন!
নেতা : আরেবাস! তুমি তো দেখি পাকা কর্মি হইয়া উঠছ! অনেক সম্ভাবনা দেখতেছি তোমার মধ্যে!
১ মবজীবী : চিন্তা কইরা দেখলাম, কাজে নাইমা মিউ মিউ করার মানে নাই!
নেতা : বুঝলাম! কিন্তু আমি কি এরে ধইরা আনতে বলছিলাম?
১ মবজীবী : না!
নেতা : তাইলে সাইধা প্যাচ লাগাইতে গেছো কোন দুঃখে? আমারে গর্তে ফেলানোর প্লান?
২ মবজীবী : এইসব কি বলেন? আমরা তো আরও ভাব্লাম আপনে খুশি হবেন!
নেতা : খুশি করবা আমারে? আমার কমান্ড না মাইনা! ইচ্ছা মতন মববাজি কইরা আমারে খুশি করবা? না-কি হাই কমান্ডের নজরে নিজেরে জাহির কইরা নেতা হইতে চাও? ডিগবাজি? আমি বুঝি! খুউব ভালো বুঝি!
১ মবজীবি : আপ্নে কিন্তু বস বেশিই বুঝেন! আমাদের মনে এইসব ছিল না!
নেতা : তোমার মনের খবর বুঝতে আমার তোমার কাছে যাইয়া বুঝতে হবে?
২ মবজীবী : হ্যা হবে!
নেতা : বাবা! তোমারও তো দেখি মুখ ফুটছে? তা ওরে সামনে দিয়া খেলাটা তুমিই খেলতেছ?
২ মবজীবী : আপ্নে আসলেই বেশি বুঝেন!
নেতা : আমার গ্রুপ থিকা বাইরাও! যাও! আমি আমার পার্টির হিসাবের মইধ্যে খেলি! বেশি খেলি না, কমও না! তোমরা সেইখানে বেশি খেলা দেখাইতে আসছ! আউট! আইজ থিকা আমার মব বাহিনীতে তোমরা নাই!
১ মবজীবী : না থাকলে নাই! ভাড়ায় আপনার মতো গুন্ডাগিরি করার থিকা নিজেই বাহিনী বানাবো! অই তোরা কে কে আমার সঙ্গে যাবি আয়? যা মাল কামাই হবে সব সমান ভাগ হবে! এনার মতো মজুরি সিস্টেম না!

( ২/৩ জন বেরিয়ে যায় নেতার গ্রুপ থেকে)

নেতা : অ! তাইলে ঠিকই ধরছি! তলে তলে ঘোগের বাসা?

( দুয়েকজন নিয়ে দাঁড়ায় নেতা। হুংকা দেয় যাদের সালিশ করছিল তাদের দিকে। পালটা তারা এবার তাকে ঘিরে ধরে)

নেতা : হেই! এইদিক আয়! তোর সালিস হবে! দিন দুফুরে মাইয়া মানুষ নিয়া..
( আচমকা কষে একটা চড় দিয়ে ফেলে দেয় নেতাকে তরুণ)
তরুণ : নিজের বাপের নামটা আগে ঠিক করেন তারপর সমাজ ঠিক করতে আইসেন!
নেতা : শুয়ারের্রররর..

(যুবক ল্যাং মেরে ফেলে দেয়!)

যুবক : দেশটা তোর বাপের না! মনে যা চায় যেম্নে চায়! ধর্মের নামে, পার্টির নামে, গুন্ডামির নামে ফতোয়া নাইলে হুংকার দেয়া? চলবে না বাজান! আর তোমরা নিজেরা তো কম্যুনিস্টদের মতো! এক জায়গায় হইলে বেশিক্ষণ এক থাকতে পারো না! টুকরা টুকরা হও! আগে বাপ ঠিক করো,পরে মার্কা।

[ ১ মবজীবীর গ্রুপ একজনকে ধমক দিয়ে নিচে নামতে বলছে সঙ্গে তার দলবল! ২ মবজীবি তার দল নিয়ে হাজির। নেতা তার দল নিয়ে এসে অবাক!]

১ মবজীবী : পুলিশ ফুলিশ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না! আগুন দিয়ে দেবে বিক্ষুব্ধ জনতা! নেমে আসেন! আমাদের কথা না শুনলে বিপদ বাড়বে!

( অফ ট্রাক থেকে একজন লোকের কন্ঠস্বর)

লোক : আরে ভাই আমি তেমন কিচ্ছু লিখি নাই ফেসবুকে! যাতে আমার বিচার করতে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নামাতে হবে আপনাদের! আর আমাদের কি কথা বলার, লেখার স্বাধীনতা নাই? আপনাদের কে দায়িত্ব দিয়েছে এইসব নজরদারি করতে?
১ মবজীবী : আপ্নের মুখ ভাইঙ্গা দিয়া তারপর বোঝাবো কে দায়িত্ব দিছে! মত প্রকাশের নামে বজ্জাতি?
লোক : বজ্জাতি মানে কি? বোঝার ক্ষমতা আছে কিছু আপনাদের? সিভিক সেন্স আছে? গোঁয়ার মূর্খের মতো গায়ের জোর ছাড়া?
১ মবজীবী : ওরে আমার পন্ডিত! এতোদিন কই ছিলেন?
লোক : ছিলাম! জ্যান্ত ছিলাম। আপনাদের চোখে পড়িনি এই যা দুঃখ! আপনাদেরই তো দেখি নাই মাঠে-ময়দানে! কোত্থিকা উদয় হইসেন সুযোগ বুঝে?
১ মবজীবী : এই ওরে নামা তো! গেট ভাঙ!

[ ২ মবজীবী তার দল নিয়ে এসে বলে ]

২ মবজীবী : একি! আমার শিকারে তুই মুখ দিয়ে ফেললি? বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? সব জায়গায় হাজির হতে নাই সবার!
১ মবজীবী : এইখানে আবার ভাগ কিসের? এলাকা ভাগ করা আছে নাকি কুত্তার মতো?
২ মবজীবী : চোপ! বেয়াদব! গায়ে জনার্দন খেলতেছে তাই না? সব গলে যাবে! পাব্লিক উলটো মার দেয়া শুরু করলে আমাদের গুন্ডামী চলবে না। হিসেব করে হাত দে সব জায়গায়! আমি আনলাম তোকে আর তুই আমাকে ডিগবাজি দিচ্ছিস আজকে?
১ মবজীবী : প্রথম ডিগবাজিটা তুমি আমারে দিয়া দিয়ায়ছিলে মনে নাই?

( নেতার প্রবেশ, তার দলবল নিয়ে)

নেতা : আরে সর্বনাশ! দুই মহা নেতার মধ্যে আমার মতন পাতিকাকের আগমন! ধুর, ভুল হয়ে গেলো!
২ মবজীবী : সেইটা টের পাইলে সরে যান!
নেতা : তা শিকারটা ধরবে কে?
১ মবজীবী : আগে আসছে যে সে!
২ মবজীবী : উহ! আমরা তো যাবো না। এবং একা একা খেতে দেবো না!
নেতা : আসো! তাইলে টস করি?
১ মবজীবী : উহু! টসের ফান্দে আমি নাই! আমি আসছি আগে, এই মব লিঞ্চিংটা আমি খেলবো!
২ মবজীবী : আমরা কি তাকায় তাকায় দেখতে আসছি? দেশটা তোমার নিজের দখলদারি?
নেতা : সেইটাই! নিজের পালে হাওয়া পাইয়া ভাইবেরাদর নেতাফেতা সবারে পালটি দিলে তো মুশকিল!
১ মবজীবী : আমার কোন নেতা নাই!
২ মবজীবী : কস কি? এতো তাড়াতাড়ি গাদ্দারি?
নেতা : মাইর খাওয়ার বেশি দেরি নাই!
১ মবজীবী : টাইম নষ্ট কইরেন না!
২ মবজীবী : আমরা থাকতে তুমি একা ঐ লোকরে নামায়া মারতে পারবা না! ভাগ সমান সমান! আমরাও মারবো তারে!
নেতা : আসো মিলামিশা কাম সারি?
২ মবজীবী : এক পা নড়লে খবর আছে আইজ তোর!
১ মবজীবী : কে কার খবর করে দেখা যাক!?
( অফাট্রাক থেকে ভেসে আসে)
লোক : হা হা হা হা.. নিজেরাই মরবি তোরা! নিজেদের নিজেরাই খেয়ে মরবি!

[ ধীরে দেখা যায় তারা তিনদল থাবার ভঙ্গিমা করে ঘুরতে থাকে মঞ্চে। যেকোনো সময় যেকারো উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে তারা! ধীরে নেতা আর ২ মবজীবী মিলে এক পক্ষ হয় তাদের বিপরীতে ১ মবজীবী ]

[ অফট্রাক থেকে ভেসে আসে।]

দাবি আজ এক্টাই
ফ্যাসিবাদের বিনাশ চাই।

যে যায় লঙ্কায়
সে ক্যানো রাবণ হয়?

মব সালিসি বন্ধ করো
আইন কারো বাপের না।

মনগড়া ফোতোয়াবাজি
চলবে না চলবে না।

[ চারদিক থেকে কালো কাপড় দিয়ে বা জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে জনগণ। বন্দি হয়ে যায় তিনদল মবজীবি। আতংকে তারা জড়সড় হয়ে যায়।]

[ পুঁথি কিংবা র‍্যাপের ছন্দে গাওয়া হয়.. ]

যুদ্ধে গিয়া যোদ্ধা যদি ঘোড়া হয়ে যায়
ঘোড়া কার পিঠে উঠে কার ঘাস খায়?
লড়ে পিটে জিতে আনা গোলাপের চারা
ভুল হাতে যায় যদি যাবে তবে মারা!

আকাশে বাতাসে শুনি হায় হায় রব
মানুষের মধ্যে নাকি ঢুকে গেছে ঢপ।
লড়াই করতে গিয়ে লুটেপুটে খায়
রক্তের দাগ ভুলে লোভে ডুবে যায়!

এই যদি হয় আজ সর্বনাশ হবে
মানুষের সঙ্গে খুব গাদ্দারি হবে,
দখলের রাজনীতি নাহোক আবার
মানুষ মানুষে হোক এক সংসার।

-*-

৩ নভেম্বর ২৪

*প্রথম মঞ্চায়ন : মুক্ত মঞ্চ, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, খুলনা।

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top