✿ ছায়ামানুষ
আমি অন্ধকারে আমার মুখ আঁকছি
দূরে কোথাও সূর্য ছড়িয়ে পড়ছে
জলের গভীর থেকে আলো উঠে আসে
আমার ছায়া বলে কিছু নেই;
কিন্তু শরীরের বিকল্প একটা মুখ খুঁজছি
সাত রঙ ধরে যে চোখ
চোখের গভীরে শব্দহীন রঙগুলো
পর্দা থেকে সরিয়ে দিলে
একটা ছায়াগ্রহ উঠে আসে
সূর্যের আগুনে আমি শরীর পুড়িয়ে
ছায়া নিয়ে উঠে দাঁড়াই
আলোতে ছায়া হারালেও আগুনে পোড়ে না কোনোদিন
অথচ অবিনাশী ছায়া
ভালোবাসার চোখ খুঁজে পায়নি আজও!
✿ নির্বাসন
ব্রাজিলের বন পুড়ে যাচ্ছে
ধোঁয়ায় ভরে গেছে আমাজানের আকাশ
বনপোড়া গন্ধ নিয়ে বাতাস ছুটছে
নীলকণ্ঠের পর
বাগানবিলাস, তাল আর মাকলা বাঁশে আগুনের তাপ অনুভব করি
যখন সূর্য রোদ নিয়ে ফুলের মধ্যে একটি তিতলি হয়ে নেমে আসে,
লালচে উড়ুক্কু মাছ পুকুর থেকে উড়ে ওঠে
আমি আলু, ঝিঙে, পটলের তরতাজা শরীর নিয়ে রান্নাঘরে যাই
ওদের শরীরে মশলার ঘ্রাণ
বনপোড়া ছাইয়ের কথা আর মনে থাকে না …
নীরব দুপুর তখনও গাছের নিচে
দুপুর আমার দিকে তাকাচ্ছে, আমি দুপুরের ছায়ার মধ্যে কারো স্নানদৃশ্য দেখি
আমরা একে অপরকে চিনি না
তবু আমাদের মধ্যে কথা হতে থাকলে
কবোরু আদিবাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে
নির্বাসিত জীবনের মধ্যেই আরেক নির্বাসন খুঁজে পায়
আয়নায় তখন মানুষের কোনো ছায়া থাকে না!
✿ পরশপাথর
যদিও বাইরে থেকে আমাকে সবাই চঞ্চল দেখে
আমি কিন্তু প্রতিটি মুহুর্তের মধ্যে স্থির হয়ে আছি
সময়ের কাছে সীমাবদ্ধ
অপেক্ষা শুধু স্পর্শটুকুর
আমি সব চূড়ান্তের মধ্যে অসীম
যে আমাকে স্পর্শ করতে চায়
সেই ফিরে যায় ক্লান্ত হয়ে
আমি একটা শূন্যস্থান
প্রতিটি তাৎক্ষণিক এক এবং সীমাবদ্ধ বহু
আমাকে রূপায়িত করেছে মিথের পাথরে
✿ হায় শান্তিনিকেতন
তোমার শান্তিনিকেতন
আমার অস্তিত্বে বসে গেছে
ময়ূরাক্ষীর বুক ছুঁয়ে
এসেছে যে কোপাই
তার জলে আমি আয়না খুঁজে পেয়েছি
পৌষমেলার ছাতিমতলা
অনায়াসে হেঁটে যায় সাঁওতাল পাড়ায়
উদীচীর ঘরে ঘরে সাজিয়ে রাখা
প্রতিটি ফুলদানিতে আমি খুঁজে পাই
এক একটি সতেজ কুয়া
যত্র বিশ্বং ভবেত্যকনীড়ম
যেখানে বিশ্ব বেঁধেছে ঘর একটি বাসায়
অথচ তোমার প্রস্থানের পর
ভাগ হয়েছে আকাশ
দেয়াল উঠছে লাল মাটিতে
আচার্যের ছোঁয়ায় কুয়াগুলো মরে যাচ্ছে
বিদ্যুতের আলোয় তুমি আজ বহিরাগত!
✿ কোমা
আমার বাবা পায়ের ছাপ দেখেই
বলে দিতে পারতেন পশুর নাম
পাখির পেছনে ছুটতে ছুটতে
বিস্তৃত হয়েছিল তার বনসংরক্ষণের সীমা
একবার বাঘের ছাল নিয়ে বাড়ি ফিরলেন
সেই থেকেই বাবা শীতাক্রান্ত
আমাদের বাড়িটাই কুয়াশামগ্ন পাহাড়ের গুহা
বাবা বাঘ হয়ে ঘুমিয়ে আছেন !