রাত্রিপুরাণ
রাতগুলো নিভৃতে আসে
অমাবস্যায় একাকার হয়ে যায়
ট্রান্স-সাইবেরিয়ান পথ —
অমৃতলোকের গান শোনাবে বলে
আঁধারে প্রমিথিউস হয়ে বসে থাকে কিছু হাহাকার
অন্যমনস্কভাবে…
রাতগুলো ফ্যাকাসে হয়ে আসে
অমাবস্যার ঘোর কেটে গিয়ে হয়তো
জোৎস্নার ফুলগুলো ভাসে।
মাস্টারবাড়ি স্টেশন
আলো ছায়ার শেষ বেলায়
কে যেন অবলীলায় ডেকে যায়।
একটি আবছা বাড়ি, কিছু সর্ষেফুলের ক্ষেত
নেই হাঁকডাক, ফেরিওয়ালার চিৎকার
ঢং-ঢং ঘণ্টাধ্বনি।
সময়ের সাথে সেঁওতিরা ঝরে যায়; গুণ টেনে
প্রস্থানের প্রস্তুতি নেয় আরো কিছু;
কিছু ফুল নির্বাক তাকায় অরোরা অপেক্ষায়।
খালি ইস্টিশন এক!
শূন্য কামরার প্রলুব্ধতায়
কিছু বেখেয়াল ঝিঁঝি
উতরোলবিহীন পৌষের কুজ্ঝটিকা
ঘিরে রাখে মাস্টারবাড়ি স্টেশন।
সে স্টেশনে প্রস্থানের অপেক্ষায় আমি ও আমরা
সাথে হিসেব নিকেশের তীব্র ব্যস্ততায় সময়ের ঘোড়াগাড়ি।
কার্পাসঝরা সময়ের বয়ন
সময় ফুরোয়, সময় ফুরিয়ে যায় এক কার্পাসঝরা
বিকেলের অভিসন্ধিতে। ঈষৎ ফিরে দেখি থোকা থোকা কচুরিফুলের বহর, তাদের গোলাপি আভায় প্রচ্ছন্ন হয়ে
আছে নৈঃশব্দের সুর। দিনরাত একাকার, বিশদ
কানাকানিতে চলমান ঠুমরি ও দাদরার লড়াই।
অ্যাকর্ডিয়নে নিবদ্ধ যে সুর,
সে সুর সম্মুখের পথ দেখায়।
সময় ফুরোয়, সময় ফুরিয়ে আসে কিছু কথা
বাকি রেখে। অব্যক্ত হয়ে পেছনে পড়ে থাকে
খুবসুরাৎ রজনীগন্ধার ঝাড়।
আর কতকাল নির্মুকুল হয়ে থাকবে
অসময়ের বয়ন?
সময় ফুরোয়, সময়ের সাথে সাথে আমিও যে ফুরোই। প্রতিদিনকার রোজনামচা ভর্তি হয়ে থাকে কিছু
টানাহ্যাঁচড়ায়, শুধু অপাঙক্তেয় হয়ে পড়ে থাকে
কিছু ধবল-পৃষ্ঠা সময়ের তাড়ায়।
স্মৃতি বিস্মৃতির সারি
দিন থেকে ক্রমেই হয়ে যাচ্ছে রাত
এ যেন রাতের আকুল প্রার্থনা
সাত নম্বর গলিতে আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে একটি
নিস্পন্দ ল্যাম্পপোস্ট তার ক্ষয়ে যাওয়া আলো নিয়ে;
কালে-কালে মহল্লায় হয়েছে বেশুমার পরিবর্তন
এ তিমিরের ভাষা বুঝি কোনো পাখি বুঝে না
কান পাতলে ভেসে আসে কিছু অবোধ্য হিজিবিজি
কিচিরমিচিরের বদলে বুলি ফুটিয়ে হেঁকে চলে কিছু মর্মঘাতী চিৎকার।
ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে থাকে রাতের স্বতন্ত্র কর্মযোগ
সুবহ সাদেকের টানে —
কিছু কথা বিলীন হয় কিছু মনে জমে থাকে, তবুও স্বতঃস্ফূর্ত পা টেনে নিয়ে চলে হাজার বছরের পুরনো স্রোতে
— ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা ইট-সুরকির এ লেনে।
মরফিউসের সাথে কিছুক্ষণ
এইসব চলমান বৃত্তান্ত ছেড়ে চলো পালিয়ে যাই
থলকমলের কাছে, আজ্ঞাবহ হয়ে শিখে ফেলি
সকল ক্যামোফ্লেজ ছিন্ন করার মূল সূত্রগুলো —
দ্যাখো মিষ্টিসিজম ভুলে কিভাবে নদীগুলো মিশে যাচ্ছে
সাগরের বুকে, আর এক পশলা বৃষ্টি দিয়ে কিভাবে
পুরাকালের আকাশ ভিজিয়ে দিচ্ছে সমস্ত মহাতত্ত্বকে
ঝরাকালের ট্র্যাডিশনে থমকে আছে
একটি পরিযায়ী দুপুর, সে দুপুরের ঠাকঠমক ভেদ
করার চেষ্টায় ঝুঁকে আছে জড়সড় ভারুই
কাছে আসার তাড়নায় জঙ্গলে কারফিউ জারি
করেছে এরটিক্ বাতাস;
আকাশের গর্জন পাখিরা বোঝে না,
কিংবা পাখিদের ডানার সম্প্রসারণ ঐ আকাশ
উদভ্রান্ত সময়ে সবকিছু কেমন যেন অগোছালো
যতটা অনুবাদ করার চেষ্টায় সামনে এগোই ঠিক
ততোটাই অনূদিত হয়ে পড়ি, পেছনে টেনে ধরে রাখে
সময়ের প্যাঁচানো অক্টোপাস
খেঁকশিয়াল হয়ে বুকের পাঁজরে ঢুকে যেতে চায়
গোপন ঝড়-বিষাদ, মনঃসমীক্ষণের বিফল চেষ্টায় অযথা বাগবিতণ্ডায় জড়ায় বাঘা দ্যাবাপৃথিবী
তুমি কি শ্রাবণের ঝড় নাকি সে ঝড়ের আদিরূপ?
পলকে উড়েছো, ঘুরেফিরে দ্বীপান্তরিত হয়েছো
দ্যুতিমান প্রহেলিকায়
আমি অযথা খুঁজাখুঁজি করে হয়রান
শতবর্ষী দেবদারুদ্রুম
চলো পালিয়ে যাই
পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় খুঁজে নেই
পরবর্তী অনুচ্ছেদে, দাড়ি-কমা দিয়ে অর্থবোধক
করে নেই একটি সুস্থির দেবালয়
আশরাফুল কবীর
আশরাফুল কবীর কবি, অনুবাদক ও সাহিত্য সমালোচক। জন্মস্থান জমিদারপাড়া, মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর। নিজ জেলা হবিগঞ্জ। বাংলা ও ইংরেজিতে সমান দক্ষতায় কবিতা লিখেন। কবিতার পাশাপাশি করেন অনুবাদ এবং সাহিত্য সমালোচনাও। তাঁর লেখা নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, সাহিত্য পাতা, ওয়েব পোর্টাল ও বিশেষ ম্যাগাজিনগুলোতে। নিয়মিতভাবে তাঁর কবিতা অনূদিতও হচ্ছে বিভিন্ন ভাষায়। পেশায় একজন ব্যাংকার।
প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা মোট ৪। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : ক্রৌঞ্চমিথুনের কথোপকথন (২০১৭), মাস্টারবাড়ি স্টেশন (২০২২) ও শীতোষ্ণবলয়ের গুঞ্জন (২০২৩)।





