ইউনুস এমরে জলের উপরিভাগের স্বভাবে স্বচ্ছ, কিন্তু খানিকটা বাদেই তাঁর বোধি- সচল সন্তরণশীল মাছেদের খেলাধুলা, হট্টগোল প্রণালী মর্মে আসে, অনুধাবনে ধরা-অধরায় লুকায়; তাঁর পদাবলী বাঁশির সুরে সহজিয়া; আমরা মায়াবী এক অভিব্যক্তির পিছনেপিছন যাই, সব আশা-ই যেভাবে অন্তে এক নিরাশার উঠোনে গিয়ে পড়ে, ইউনুস এমরের সুরের আলো-আঁধারি, চাবি গোছার টুংটাং আমাদের খাদের তলদেশে এক রূপকথা বাড়ির দরজার সামনে এনে দাঁড় করায়- যেখানে কোন দরজা নেই; তিনি প্রাতিস্বিক মেধাকে মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রাচীন তুরস্কের লৌকিক জ্ঞান, আর সংবেদের ঐতিহ্যের মাঝে; লিখতেন প্রাচীনপন্থী আনাতুলীয় ভাষায়।
বেড়ে দেওয়া ভাতের সহজলভ্য গার্হস্থ বাঙলায় এমন কবিকে আমরা মরমী সুফী কবি বলে ডাকি। এই কবি চেনা জীবন ও বস্তুজগতের বর্ণনার ভিতর বলতেন অচেনা ভুবনের চেনাচেনা আকুতির কথা। ইউনুস এমরে তুরস্কে জন্মেছিলেন ১২৩৮ সনে, আর ১৩২০-এ জীবনের অন্তহীনতা আলিঙ্গন করেন।
♦♦ খোঁজ ♦♦
দীনহীন এই কাঙাল এক সকল ভাবিয়া কয়
আমার মতন অভাগা আর দুঃখী ভবে কী রয়,
ভাঙা দিল হাল, মনভাঙা পাল নয়ন ভরা জল
কুটুমছাড়া দুনিয়ার এতিম আছেনি ভুবনের তল?
জনম দুঃখী কপাল পোড়া আমি যাই কথা কইয়া
বিচ্ছেদ অনলে অঙ্গ জ্বলে দিবারাতি রইয়া রইয়া,
মালিক, আর করো না দ্বিতীয় জনে এমন ভিখারী
তোমার কাছে মীন চায় নীড়াশ্রয়, ও দয়ার নিকারী।
এই মড়া যে প্রেমের মড়া পাবলিকে না বোঝে
তিনদিন পরে তারা যায় সাদা কাফনের খোঁজে,
আমারে ধোয় খালে বিলের নাপাক পানির ধারা
আমার শব ঘুম মানে না গোলাপ জল ছাড়া।
আমার দেহ কাবা শরীফ সে যে অবজ্ঞা না মানে
ঝড় তুফানের হাঁক শোনে না তোমার প্রেমের টানে,
মাটির তলে যামু না আমি চাই যে তোমার নজর
হাওয়ার উপর ভাইসা থাকুম পিপাসার্ত কবর।।
English version : I wonder- is anyone here
——————
♦♦ আমি থাকতে আসিনি ♦♦
আমি এখানে থাকতে আসিনি,
চলে যেতে এসেছি।
আমি ভাণ্ডারী এক- দোকান পসারী
যার যেমন মন চায় কিনে নিক-
ডালা খুলে ধরেছি দানাপানি, নুন তেল বাঁশি।
আমি মোড়লি করতে আসিনি
গৃহীত হতে এসেছি।
একটি হৃদয়ই হতে পারে বঁধুর বরাভয় আবাসভূমি;
টোনাটুনির নীড় গড়ে তুলতে আমি এসেছি।
আমি আকন্ঠ প্রেমের দোচুয়ানি টেনে বুঁদ
হয়ে আছি;
যে-জন প্রেমের ভাব জানে
কেবল সেই এ-লীলার মর্ম বুঝিতে পারে!
একের সনে এক যোগ দিলে
গণিত শাস্ত্রে হয় দুই,
একের সনে এক যোগ দিলে
নিগূঢ়তত্ত্বে দুইয়ের বদলে হয় এক!
এক আর একে দুইয়ের হিসাব আমি
বদলে দিতে এসেছি,
আমি হার মানা জেতার অঙ্ক শাস্ত্রে
একের সাথে একের যোগে এক বলতে এসেছি।
সে চলনদার, আমি তার নাইওরী।
আমি তার ফুলবাগানে ময়না পাখির ডাক;
আমি মন্মাতাল- বন্ধুর বাগানে বুলবুলি
সুরের সর্বনাশে মরতে এসেছি;
আমি সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়!
সে-যে আমার ক্বলবে জেওর-
নিঃশব্দের ঘরে রঙের আঁচড়
আমি নাই মুরশিদ – আমি যে নাই হয়ে গ্যাছি;
দেখো; তুমি আমারে খুঁজে বের করো!
ইংরেজি পাঠ: I haven’t come here to settle down.
———–
ইংরেজি ভাষান্তর : কবির হেলমিনস্কি
রেফিক আলগান
বদরুজ্জামান আলমগীর
কবি, নাট্যকার, অনুবাদক। জন্মেছিলেন ভাটি অঞ্চল কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে। পড়াশোনা বাজিতপুরে, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বহুদিন দেশের বাইরে- যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় থাকেন।
বাঙলাদেশে নাটকের দল- গল্প থিয়েটার- এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য; নাট্যপত্রের সম্পাদক। নানা পর্যায়ে আরও সম্পাদনা করেছেন- সমাজ ও রাজনীতি, দ্বিতীয়বার, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, পূর্ণপথিক, মর্মের বাণী শুনি, অখণ্ডিত।
প্যানসিলভেনিয়ায় কবিতার প্রতিষ্ঠান- সংবেদের বাগান-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
প্রকাশিত বই:
আখ্যান নাট্য: নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে (বাঙলা একাডেমি, ১৯৯৭)
কবিতা: পিছুটানে টলটলায়মান হাওয়াগুলির ভিতর (অপরাজিতা, ২০০৫)
আখ্যান নাট্য: আবের পাঙখা লৈয়া (জন্মসূত্র, ২০১৬)
প্যারাবল: হৃদপেয়ারার সুবাস (ঘোড়াউত্রা প্রকাশন, ২০১৮)
কবিতা: নদীও পাশ ফেরে যদিবা হংসী বলো (ঘোড়াউত্রা প্রকাশন, ২০১৯)
কবিতা : দূরত্বের সুফিয়ানা (ভাঁটফুল, ২০২০)
ভাষান্তরিত কবিতা: ঢেউগুলো যমজ বোন (ঘোড়াউত্রা প্রকাশন, ২০২০)