Home » বদরে মুনীরের একগুচ্ছ কবিতা

বদরে মুনীরের একগুচ্ছ কবিতা

জওয়াবিতার

নীরবতা!
অসম্মতির লক্ষণ হ’য়ে ছেয়ে আছো
অকরুণ সিন্ধু-তীরে সন্ধ্যার আকাশ।
ধর্মযুদ্ধ শেষ হ’য়ে আসে,
প্রান্তরে পচনশীল ঘাসে
ভাঙা ঢাল, নিঃস্ব শিরস্ত্রাণ
সূর্য-স্বীকৃতির অভিলাষে
খোলামকুচির মতো হাসে;
মরতে-মরতে লাশ থেকে লাশে
ধর্মযুদ্ধে আসে অবসান।
নীরবতা!
অসম্মত তীর হ’য়ে আঁকড়ে আছো ছিলা,
টংকারে জীবনানন্দ, ট্রামের ঝংকার!
নীরবতা!
শব্দ ভেঙে গেছে, কত শব্দ ভেঙে গেল
অসহ্য নিঃশব্দে ঠুকে পাথরে পাথর!
নীরবতা, কীসের এত অহংকার তোর?

নাটোর, ৯/৭/’১৮

বো কো হারাম

আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাব গহিন জঙ্গলে;
জঙ্গলে পুলিশ নাই, বাস নাই, বয়ফ্রেন্ড নাই।
জঙ্গলে গৃহশিক্ষক নাই,
বিজ্ঞাপন নাই, বিশ্ববিদ্যালয় নাই;
জঙ্গলে পোশাকশিল্প নাই,
লাশের বেঢপ পায়ে চামড়া কেটে
নূপুরের কামড়ে-ধরা নাই।
আমার মেয়েকে নিয়ে লোকালয়ে থাকব না,
চলে যাব আফ্রিকার ঘন-কালো, গভীর জঙ্গলে;
জঙ্গলে সমাজ নাই, শিল্পকলা নাই,
মহিলা সমিতি না্ই, গ্যাংরেপ নাই।

‘সাবাস বাংলা-…’

হাফ-সেঞ্চুরি পার,
মানবিক হত্যার!
দশদিনভর
রোজ সকালের তামাদি খবর
খুনের বাহার, খুনের বহর
কেউ কিছু বলছে না
হিমাদ্রি গলছে না
‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন…’
‘সব ছল্ ছল্ ছল্…’
বীভৎস জঙ্গল!

গান মানে…

কবিরা, কলম ঢুকাও,
নিজেরই অন্য কোথাও;
গাইয়েরা গাই পালো,
দুধ বেচে মদ গেলো;
কন্দুক মানে গোল্লা,
গান মানে বন্দুক!

খুনের মন্ত্র

খা রে, খা… আত্মরক্ষা
বক্ষিলারে খা, দে টাকা…
ছন্দে ছন্দে ট্রিগার,
চুম্মা,… মানবাধিকার!

‘শকুনের দোয়া’

হত্যায় যারা হাততালি দিয়ে যাচ্ছে
তাদের পাঞ্জা উড়ে যাবে টাকা ধরতে,
ঢিলা বেল্টের পাৎলুন খ’সে পড়বে—
কেননা, কব্জি ছুটে গেছে মাল কামাতে!

বাংলা সবার মা

কেউ নাস্তিক, কেউ নেশাখোর
বাংলা সবার মা!
জীবন সবার, আল্লাতালার,
রাষ্ট্র সবার না।
২৫/০৫/২০১৮

ভেদ: ভার্চ্যুয়াল, রিয়্যাল

রাতে ভালবাসা, লাল-লাল পাতা, সকালে প্রত্যাহার!
দিনে গ্রেপ্তার, জাতি উদ্ধার, রাত্রে ক্রসফায়ার।

বাঘ… বাঘ…

সেঞ্চুরি! সেঞ্চুরি!!
আহ্ পাবলিক চির নৈতিক ঠাস্ ঠাস্ ঠাস্ এমএ-পাশ জোচ্চুরি:
সামান্য ইন্জুরি…
নট-আউট টাইগার!
আসো জনগণ, জনগণমন,
এনজয়… বড় ইনজয় করো
বাঘের বলাৎকার।
২৮/০৫/২০১৮

জিবারিশ

মুখ-ভর্তি থুথু নিয়ে শুয়ে থাকি, মহামিত্র আলস্য এমন;
হাড়ে-হাড়ে ঘড়ির টিকটিক যেন, ছাল-বাকলা সতর্ক, জর্জর!
মজবুত, কাগুজে কোষে অর্থহীন, আপামর শব্দ দেখে-দেখে,
দেখি— যদি দেখা যায়, বাক্যের ব্যবস্থা-মুক্ত, বিচলিত ছবি।

ভাংতি নিউজঃ গণকবর উদ্ধার //  কাদেম হাঞ্জার

কাল গেছিলাম ফরেন্সিক অফিসে।
আমার ডিএনএ-র নমুনা চাইছিল।
কিছু নাকি হাড়হাড্ডি পাইছে ওরা, এখনও অজ্ঞাতনামা…
আশার ছুরির ডগায় একটা কমলালেবুর মতো আমি এপিঠ-ওপিঠ করি!
*
এখন অবশ্য বাড়িতেই, ভাইয়ো,
তোমার ছবির আশপাশের নকল ফুলের ধুলা মুছছি
আর একটু ভিজিয়েও ফেলছি ফুলগুলা, কান্নায়…
মেডিক্যাল-রিপোর্ট বলছে,
হাড়হাড্ডির যে-ব্যাগটা আজ আমি সই-ক’রে নিলাম, সেটা ‘তুমি’।
কিন্তু এত্তটুকু মাত্র!
*
ওদের সামনের টেবিলে আমি তাকে শোয়ায় দিলাম।
আমরা আরেকবার গুনে দেখলাম:
ছয়টা ফুটা-ওয়ালা একটা খুলি, ঘাড়ের একটা হাড়,
পাঁজরের তিনটা বাতা, থ্যাঁৎলানো ঊরুর ভাঙা হাড়,
কব্জির ছোট-ছোট হাড়ের একটা গোছা,
আর কয়েকটা কশেরুকা।
*
এ-ও কি সম্ভব, যে, এই এতটুকুই একটা ভাই?
মেডিক্যাল-রিপোর্ট তা-ই বলে।
*
হাড়গুলা ফের ব্যাগে তুলে রাখলাম,
হাতে লেগে-থাকা মাটি ঝাড়লাম,
টেবিলের ধুলাময়লা মুছলাম
তারপর তোমাকে পিঠে নিয়ে চ’লে আসলাম।
*
বাসে, আমার পাশের সিটে ব্যাগটাকে বসিয়ে রাখলাম।
টিকেট নিছিলাম দুইটা (এ যাত্রায় কিনলাম আমিই);
আমি আজ বড় হ’য়া গেছি, এত বড় যে
তোমাকে পিঠে ক’রে ব’য়ে আনতে পারি,
এবং তোমার গাড়ি-ভাড়াও দিতে পারি!
*
কাউকেই বলিনি, আমি এই এতটুকুমাত্রই পাইছিলাম।
তোমার স্ত্রী-সন্তানেরা দেখি, সোফাটা ঝাড় দিচ্ছে
যেখানে তোমাকে বসায় রাখছিলাম,
চাচ্ছিলাম, কেউ একজন-ওদের ব্যাগটা খুলুক।
শেষবারের মতো ওরা তোমাকে দেখুক।
কিন্তু তুমি এতটাই আবেদন-সংবেদন-হীন, যেন এক টুকরা হাড়।
শেষে ওরা জিগ্যেসই করলো,
সোফায় চোখের পানির দাগ লাগলো কোত্থেকে?!
*
একঘন্টা ধ’রে এই ভেজা, স্যাঁতসেতে হাড়গুলা আমি
কফিনের গহ্বরে সাজাচ্ছি, গোছাচ্ছি…
যেন তোমার কঙ্কালটা পুরা করা যায়।
ও পাশের পেরেকগুলাই কেবল জানে,
কত অপ্রতুল এই কয়টা হাড়।

কাদেম হাঞ্জার(Kadhem Khanjar) ইরাকের কবি, ‘পারফরমার’। কয়েক বন্ধু মিলে “কালচার মিলিশিয়া” গ্রুপ নিয়ে ঘুরে ঘুরে কবিতা পড়েন, পারফরম করেন— বিশেষত সেই মৃত্যুচিহ্নিত জায়গাগুলায়, যেখানে বোমায় উড়ে গেছে গাড়ি, বিধ্বস্ত বাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স;… কিংবা কোনো মাইন-কবলিত মাঠে, আইএস পরিত্যক্ত জেলখানায়, গণকবরের পাশে।

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top