[স্লোভিনিয়ান কবি অ্যালিস স্টিগার এই সময়ে ইউরোপের জনপ্রিয় তরুণ কবিদের একজন। জন্ম ৩১ মে, ১৯৭৩। যুগোস্লাভিয়ার পতনের পর নতুন যে তরুণ প্রজন্ম লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তাদের মধ্যে অ্যালিস অন্যতম। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে যা পাঠক মহলে বিপুল সাড়া ফেলে এবং স্লোভেনিয়ার একজন নতুন লেখক হিসেবে তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করে। অ্যালিসের এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সাতটি এবং প্রবন্ধের বই দুটি। তিনি ১৯৯৮ সালে বেস্ট স্লোভেনিয়ান কবি হিসেবে ফ্রান্স থেকে ভেরোনিকা পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে ইয়ং ইউরোপিয়ান লেখক হিসেবে পেট্রার্ক পুরস্কার এবং ২০০৭ সালে প্রবন্ধের জন্য স্লোভেনিয়ার ‘রোজাঙ্ক’ পুরস্কার ও ‘ইন্টারন্যাশনাল বিয়েনেক পুরস্কার’ অর্জন করেন। তাঁর লেখা কবিতা ও প্রবন্ধ চাইনিজ, জার্মান, স্পেনিশসহ প্রায় ১৫টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। স্লোভিন ভাষা ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা চারটি- ‘দ্যা বুক অব থিংস-২০১১’, ‘অ্যা কালেকশন অব লিরিক অ্যাসেস-২০১৫’, ‘এসেনশিয়াল ব্যাগেজ-২০১৬’, ‘অ্যাবসিউলিশন-২০১৭। এছাড়া, তিনি ভিজুয়াল আর্ট নিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোচি-মুজিরিস বিয়েনলে’র সঙ্গে ভারতে কাজ করছেন। সংগীতশিল্পী (গোয়ালিকা, উরোস রোজকো, পিটার এন. গ্রুবার) এর সঙ্গেও কাজ করেছেন এবং পরিচালক পিটার জেক এর সঙ্গে ‘বিয়োন্ড দ্য বাউন্ডারিস’ চলচ্চিত্রটিতেও কাজ করেছেন ।]
মানুষ যেনো ছায়া
মানুষ যেনো ছায়া-ফেলে যাওয়া চিঠির,
চিঠি ছড়িয়ে পড়ে দিকবিদিক
অথচ ছায়া- কখনো ছেড়ে যায় না
আটকে থাকে-কোনো অতল গহ্বরে।
শব্দগুলো ফুরিয়ে যায়
শব্দগুলো ফুরিয়ে যায়
সবশেষে, সবজায়গা থেকে
যেনো তুমি ক্রমশ
বিরল হয়ে ওঠতে পারো-
কোনো মূল্যবান
জমানো পাথরের মতো।
শব্দগুলো ফুরিয়ে যায়,
শব্দগুলো অপ্রস্তুত হলে পরে-
স্তব্ধতা ছিঁড়ে এক নতুন
বিশ্বাস জেগে উঠে-নিশ্চিহ্ন
ডুবে যাওয়া, প্রেমের মিলনে
গলে পড়া শব্দের মতো
কবিতা ফুরিয়ে যায়,
অবশেষে পড়ে থাকে
আকারহীন কোনো শরীর-
না তোমার, না আমার
কিন্তু তীক্ষ্ম সূচের মতো
আমাদের বিদ্ধ করে-প্রতিনিয়ত
অথচ কিছুই গাঁথে না
জোড়া দেয় না।
শরীর কেঁপে উঠে
জিহ্ববা প্রসারিত হয়ে উঠে
কিছুই না যদিও-সব ফুরিয়ে যায়।
দুটো হাত জেগে উঠে
একটি শরীর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে
চারপাশে- যেনো একটি নাম
কেবল অনুপস্থিত, উপেক্ষিত
রয়েছে প্রতিটি নতুন দিনে।
শব্দগুলো ছেঁড়া টুকরো
শব্দগুলো ছেঁড়া টুকরো
টুকরো টুকরো করা পুরানো গান
অমৃতকথা-ভাজ করা থাকে
প্রতিটি নতুন শব্দের বুকে।
শব্দগুলো আটকে থাকে,
ছটফট করে-মিইয়ে যায় দিনে দিনে
বিপ্লবে, কবিদের ভাষায়।
তখনও কিছু না বলা শব্দের ক্রিয়া-
ভাবভঙ্গি – মৃত্তিকায় জড়ো হয়
শরীরের মতো- জেগে ওঠে
শুন্যতায় স্তব্ধ হয়ে-অনির্ণিত অলিখিত
হয়ত কেউ এগিয়ে আসে
কেউ কেউ আবারও জড়িয়ে পড়ে
ম্লান কোনো পদচিহ্নের
প্রতিধ্বনিতে- না কোনো কল্পনায়,
না কোনো জায়গায়
একটি শব্দে- ‘কখন আসবে সেই ভোর?’
আজকের বিচ্ছেদের গানে।
মাকড়সা
এক বিশাল মাকড়সা
বিনে সুতোয় জাল বুনছে
আমাদের চারপাশে
অন্য পৃথিবীতে কেউ গোপনে
আমাদের ভাষা, আমাদের
ভাবনা জেনে যায়
অথচ শুন্য চৌকাঠ
অন্ধকারে একা একা
ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর আমরা
কোনো গোপন আরশীতে ডুবে
আমি হাত বাড়িয়ে দিই তোমার দিকে
যখন তোমাকে পাই
মনে হয় পৃথিবী
জাবড়ে ধরেছে আমাকে
কুমারি বনের মতো
কুমারি বনের মতো
আমরাও অঙ্গার নিভিয়ে রেখেছি
যে তুমি নিজের মধ্যে ডুব দিয়েছ,
মনে রেখো সে প্রতিধ্বনি।
সময় যে খুঁড়ে চলে
অনন্তকে সেই আঘাত করে।
সূর্য আটকা পড়ে আছে
সূর্য আটকা পড়ে আছে
শতবর্ষ পুরানো ওকের চুড়োতে
যদি আমিও আটকা পড়ে যেতাম
বিশ্বাস বরাবরই মনে করিয়ে দেয়
স্পষ্ট ভঙ্গিতে-
আমার চোখেও আকাশ রয়েছে
এইচ. হেনরির ইংরেজি অনুবাদ থেকে ভাষান্তরিত