ছায়া
কেউ একদিন জোৎস্নায় মিশে গেছে
তবু কেন বিদ্যুৎ চেঁচায়?
খোয়াড় ছাড়া মোরগের মতো মেঘ ডাকে
দিক্বিদিক ভুলে একপশলা বৃষ্টি ঝাঁপটায়।
দূর্বাঘাস ভিজে ভিজে সাড়া হয়-
ঝোঁপের পাশে প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রথম চুম্বনের মতো কেঁপে ওঠে
প্যাঁকপ্যাঁক গীত শেষে হাঁসেরা বেড়ার নীচে দেহ লুটায়।
কেউ তো নেই
তবু কেন পাতা নড়ে?
বানডাকা ছাগীর মতো আঁছড়ে পড়ে ঢেউ
জলের সোহাগে কচুরিফুল ফোঁটে
চাল ভাঁজার আওয়াজ লেপজুড়ে তাপ ছড়ায়।
কেউ একদিন জলে মিশে গেছে
তবু কেন কুপি জ্বলে?
বিরান মাঠে হেলে পড়া খুঁটিতে পেঁচা ডাকে
কঞ্চির খোপের ভেতর খড় জমে রয়।
কেউ একদিন চলে গেছে
তবু ধানমুখী বাবুই’র মতন তার পলক পড়ে আছে।
শিশির
একটু নির্জনতা চাই—
এ শহরের নির্জনতামুক্ত একটু নির্জনতা
যে নির্জনতায় একটুকরো হাওয়া
দস্যি মেয়ের মতো ঘুরে বেড়ায়
কচি কলাপাতার গন্ধ গায়ে মেখে
যে নির্জনতার স্পর্শ পেতে
শাদা বক শিকার ভুলে আকাশে উড়ে বেড়ায়
যুবতী কাশবন ঘোমটা ফেলে উদাসী চোখে আকাশ-নীলে চেয়ে রয়।
এমন একটু নির্জনতা চাই
কাদা মাটির মতো কোমল নির্জনতা
যে নির্জনতায় কোনো রমণী প্রেমিকের জন্যে বুনে রাখে
ফুলতোলা এক প্রেমকাঁথা
একটি মাটির পিদিম জ্বলজ্বল করে দাম্পত্য জীবনের প্রথম রাতের মতো
একটি ঘুড়ি দিগন্তের আলিঙ্গন পেতে ঘর ছাড়ে পিছু না ভেবে
কলমিলতা জলের সোহাগে বুদ হয়ে রয়।
এমনি একটু নির্জনতা চাই
সে নির্জনতায় আমি-স্বচ্ছ শিশির সারা প্রহর ঘুমিয়ে রবো
কোনো কোলাহল অবচেতন ভুলেও ঘুম ছুঁবে না আমার।
পরিণতি
বাবার মৃতদেহ উঠানে রেখে আমার ছেলেরা কুলখানি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল, আর আমার মেয়েরা ভোজের দিনের সাজসজ্জা নিয়ে। আমার স্ত্রী, যার সাথে আমি শেষ রাত কাটালাম, শোকপ্রকাশে ব্যর্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
আমার আত্মীয় যারা এসেছিলেন তারা হায়! হায়! হায়! হায়! বলতে বলতে বাড়ি ফিরে গেলেন। পড়শি যারা ছিলেন, লাশ দেখার ভয়ে ঘর থেকে বের হলেন না।
আর একদল শেয়াল যারা আমার উপর নজর রাখছিল তারা বলে উঠলো, এ-কে কি গোরে রেখে আসার কেউ নেই!
উত্তরে জিব্রাইল এসে বলে গেলো,খোদার আদেশ-তোমরাই একাজ সমাধা করো।
ব্যাধ
ভাগ্যদেবী, সুপ্রসন্ন হও
শালকোড়া দেহে আমি তবুও মানবেতর।
প্রেমরিক্ত এক সাধারণ মানবশিশু
কণ্ঠে জালের কাঠি, বিষণ্ন সমস্ত মন
শজারু তাড়াতে ক্ষতবিক্ষত মৃত্তিকা-মন্দির
সরাইয়ে নেই আর মৃত্তিকা সঙ।
তবে দ্বিধা মুছে মুখ ফেরাও দায়িনী
এবার; মুক্ত করো এই অভিশপ্ত জীবন।
কোবিদ
জীবনের কোন বাঁকে দেখবে সূর্যোদয়-
সূর্যাস্তে নেমে আসে ঘন পদ্মপাতায় জল?
নৌকোর পালে দোলে গেলে মহির হাওয়া
উজানের দেশ থেকে; নিরবে খুব গোপনে
কোন চোখ আঁকে, প্রিয়তমা, শুদ্ধস্বরে
তোমার আঁচলে কলা কাব্যের শিশমহল।
বিষকল
বাসি রুটি খেতে গিয়ে এক ছেঁচো ইঁদুর আটকা পড়ে কলে
দু’দিন পর তার মুক্তি মেলে রোডের ধারের ডোবা-জলে।
দুঃস্বপ্ন
ভর রাতে ঘুমিয়ে দেখি আমার পা দু’টো ঝুলে আছে ফ্যানে
শেষের কবিতা
আজো বুঝোনি প্রেমের সন্ধি-সমাস
অথচ বেলা-অবেলায় করে যাচ্ছো অদ্ভুত ইচ্ছের সম্প্রসারণ
অলংকার বাদ দিয়ে গড়েছো যে ব্যাকরণ, সে কি জানে নিরব ভাষার মানে?
যে বুলি-ই আওড়াও না কেন তোমায় রাখিনা আর কবিতার কোনোখানে।
এলকেমি
আমাদের জানা হয়ে গেছে
এই মৃত শহরের আর কোনো ভোরে আলোর ভিতর কোনো আলো আর কোনোদিন কোলাহল করবে না।
সদ্যোজাত বিড়ালদের মৃত্যু দিয়ে এ শহর ফিরে যাবে পত্তনপূর্বের উঠানে
যেখানে নিঃসঙ্গ আর ধূসর জোৎস্না খেলা করে
ফের কোনোদিন ক্লান্ত হবে না।
প্রয়াত প্রতিস্বর
নিহত নক্ষত্রের নিচে আর কতোদিন নিহত হবো, চন্দ্রিমা?
আর কতদিন ডুবে ডুবে ভেসে উঠব শীতলক্ষ্যার তীরে–বলতে পারো?
আর কতদিন বৃষ্টি চোখে মৃতবৎসা মেঘের মতো কেঁদে ভাসাবো বুক?
অথচ তুমি দেখবে না, শুনবে না কোনো স্নিগ্ধ গোলাপের বুকে মরণ-অসুখ!
সংক্রান্তি
এমন উস্কানিমূলক বৃষ্টিতে শুভ্র মরে যায়
কাঁপে কুমুদের ডাল, বয় নীল ভরা মেঘ
শুধু বোঝে না ইড়া, উত্তর মেঘের পাশে হাওয়ার উল্লেখ।
চাতক
বুকে আমার একখণ্ড মেঘ
বুকে আমার জমি
বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি জমে
ধুধুই মরুভূমি।
কবিতা
তুমি এক অবাধ সম্পাদকীয়
আমি রাতদিন পড়ে যাই
মাঝেমাঝে লিখবার চেষ্টা করে
ফের তোমাতে হারাই।
ধ্যান
উলঙ্গ কাপালিক আমি নাম জপে ডুবে যাই ভাবসাগরে।ওরে শবরী, তোর
নৃত্য বিলাসে পোষাবে কি মন ?যখন চোখও পোষে না শরাব আগারে।উঠে ধ্যানের শোর।
মৃত্যুর গ্রাফিতি
যে গুহায় এক ফুটফুটে শিশুর জন্মানোর কথা ছিল
কতগুলো বর্ণহীন রক্ত জমাট বেঁধে এক মানচিত্র এঁকেছে তার বুকে
যে মানচিত্রের ব্যাখ্যা শুধু মৃত শিশুটি জানে
আর জানে না কেউ।