(মলিয়ের রচিত ‘জর্জ দ্যাদ্যা’ নাটকের হেনরি ফন লন-এর করা ইংরেজি অনুবাদ থেকে রূপান্তরিত। হেনরি ফন লন-এর ছয় খণ্ডে সম্পূর্ণ ‘দ্য ড্রামাটিক ওয়ার্কস অফ মলিয়ের’ এর চতুর্থ খণ্ড থেকে নাটকটি নেয়া হয়েছে।)
তৃতীয় অঙ্ক।। প্রথম দৃশ্য
(চরিত্র- কাইয়ুম, লতিফ, অন্তরা, কুলসুম; স্থান- আসিফের বাসার সামনের ফুটপাথ)
কাইয়ুম- আজ রাতে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। আজ অমাবস্যা নাকি, লতিফ?
লতিফ- তাই তো মনে হচ্ছে, স্যার। দু’হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না।
কাইয়ুম- একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। কেউ আমাদেরকে দেখতে পাবে না।
লতিফ- ঠিক বলেছেন। আচ্ছা স্যার, আপনি তো বিদ্বান মানুষ। দিনে সূর্য আর রাতে চাঁদ ওঠে কেন বলতে পারেন?
কাইয়ুম- এটা জিওগ্রাফির একটা জটিল প্রশ্ন। ড্রাইভারের চাকরি করেও তোমার জানার আগ্রহ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
লতিফ- আমার বাপের খুব ইচ্ছা ছিলো আমাকে জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স পড়াবে। কিন্তু, সবই স্যার কপাল।
কাইয়ুম- লেখাপড়া করলে তুমি ভালোই ফল করতে বলে আমার ধারণা।
লতিফ- স্যার, আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় কুরআন খতম করেছি।
কাইয়ুম- বেশ, বেশ। ওই তো কুলসুমকে দেখা যাচ্ছে।
লতিফ- একটা কথা বলবো, স্যার।
কাইয়ুম- বলে ফেলো।
লতিফ- আমি কুলসুমের প্রেমে পড়েছি। ওকে বিয়ে করতে চাই।
কাইয়ুম- সেজন্যই তো তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আসলাম। যাতে তুমিও কুলসুমকে পটিয়ে ফেলতে পারো।
লতিফ- স্যার, কী বলে যে…
কাইয়ুম- শশশ। ওই বোধহয় ওরা এলো। (খুব কম আলোতে অন্তরা ও কুলসুমের প্রবেশ)
অন্তরা- কুলসুম, দেখো তো ওরা এলো কিনা।
কুলসুম- দুটো মানুষ দেখা যাচ্ছে। খাজা স্যার আর লতিফ মনে হয়।
কাইয়ুম- অন্তরা, অন্তরা।
অন্তরা- খাজা সাহেব, আমি এখানে।
লতিফ- আমার কুলসুম কই?
কুলসুম- আমি এসেছি, লতিফ।
(অন্ধকারের মধ্যে কাইয়ুম কুলসুমকে এবং লতিফ অন্তরাকে জড়িয়ে ধরে)
কাইয়ুম- অন্তরা, তুমি আমার বুকের মধ্যে থাকো।
লতিফ- কুলসুম, কাল সকালেই আমরা বিয়ে করবো।
অন্তরা- (ধমক দিয়ে) এই লতিফ, কী করছো তুমি?
লতিফ- সরি, ম্যাডাম। ভুল হয়ে গেছে।
কাইয়ুম- একি, কুলসুম তুমি?
কুলসুম- স্যার, আপনি বোধহয় অন্ধকারে আমাকে ম্যাডাম ভেবেছেন।
কাইয়ুম- ছিঃ! ছিঃ! কী কেলেঙ্কারি।
অন্তরা- আসিফ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগে তোমাকে দেখা দিতে এলাম।
কাইয়ুম- এক পাশে চলো। কিছুক্ষণ তোমার হাতটা ধরে রাখি। এই লতিফ। তুমি আর কুলসুম আমাদের একটু পাহারা দাও। (কাইয়ুম ও অন্তরা এক পাশে চলে যাবে)
কুলসুম- তুমি একটু এদিকটা দেখো। আমি আমার স্যারের উপর নজর রাখছি।
তৃতীয় অঙ্ক।। দ্বিতীয় দৃশ্য
(চরিত্র- আসিফ, সৈয়দ; স্থান- আসিফের বাসার বেডরুম)
আসিফ- যা ভেবেছিলাম তা-ই ঘটেছে। ঘুমের ভান করে দু’মিনিট নাক ডেকেছি আর অন্তরা ফোন করে কাইয়ুমকে ডেকেছে। এখন চলছে নৈশলীলা।
(সৈয়দকে ফোন করে) হ্যালো বাবা, আপনারা জলদি আসুন। এখানে কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে।
সৈয়দ- এতো রাতে কী মনে করে? তোমরা সুস্থ আছো তো?
আসিফ- তা আছি। কিন্তু এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে।
সৈয়দ- কী ঘটেছে সেটা তো বলবে।
আসিফ- ফোনে বলা যাবে না। যত কষ্টই হোক, প্লিজ আপনারা দু’জন একবার আসুন।
সৈয়দ- নিশ্চয়ই নতুন ঝামেলা বাধিয়েছো। ঠিক আছে আসছি।
তৃতীয় অঙ্ক।। তৃতীয় দৃশ্য
(চরিত্র- অন্তরা, কাইয়ুম, আসিফ, কুলসুম, লতিফ; স্থান- আসিফের বাসার সামনের ফুটপাথ)
অন্তরা- এখন বাসায় ফেরা উচিৎ।
কাইয়ুম- এতো তাড়াতাড়ি?
অন্তরা- অনেকক্ষণ হয়েছে। আসিফ জেগে আমাকে না পেলে তুলকালাম শুরু করবে।
কাইয়ুম- তোমার সঙ্গে কতো কথা বলবো ভেবেছি। কিন্তু সময়টা যেন চোখের পলকে শেষ হয়ে গেলো।
অন্তরা- নিয়মিত দেখা করার একটা বুদ্ধি বের করতে হবে।
কাইয়ুম- সেসব দেখা যাবে। তুমি এখন তোমার ওই উজবুক স্বামীটার কাছে যাবে ভাবলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
অন্তরা- আসিফের মতো লোককে ভালোবাসা যায় না। ওর অঢেল টাকা দেখে বাবা-মা যখন ওর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে তখন কী আর করা। ক্রেডিট কার্ড হিসেবে লোকটা নিতান্ত মন্দ নয়।
কাইয়ুম- আসিফের সঙ্গে তোমাকে দেখলে আমার একটা প্রবাদ মনে পড়ে- “বানরের গলায় মুক্তার মালা”।
কুলসুম- ম্যাডাম, স্যারের বদনাম করা শেষ হলে দ্রুত বাসায় চলুন। দেরি হয়ে গেছে।
কাইয়ুম- কুলসুম, তুমি তো আমাদের মধ্যে “কাবাবমে হাড্ডি” হয়ে উঠেছো। এতো নিষ্ঠুর কেন তুমি?
অন্তরা- ও ঠিকই বলেছে। আজ আমরা যার যার বাসায় চলে যাই। পরে আবার দেখা হবে।
কাইয়ুম- তোমাকে ছেড়ে এক মিনিটও থাকতে পারি না অন্তরা। কী আর করা। গেলাম।
লতিফ- (নেপথ্যে) ও আমার কুলসুম। কোথায় তুমি?
কুলসুম- জাহান্নামের চৌরাস্তায়। দ্রুত তোমার স্যারকে নিয়ে বাসায় যাও। খোদা হাফেজ।
তৃতীয় অঙ্ক ।। চতুর্থ দৃশ্য
(চরিত্র- অন্তরা, কুলসুম, আসিফ; স্থান- আসিফের বাসার নীচতলা)
অন্তরা- কুলসুম, কোন শব্দ করবে না।
কুলসুম- দরজা তো ভিতর থেকে লক করা।
অন্তরা- সমস্যা নেই। আমার কাছে চাবি আছে।
কুলসুম- ম্যাডাম, আস্তে করে লকটা খুলুন।
অন্তরা- (চাবি দিয়ে লক খোলার চেষ্টা করে) কেউ ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে। এখন কী করি?
কুলসুম- কালামকে ডাকুন। ও নীচতলাতেই ঘুমায়।
অন্তরা- (চাপা স্বরে) কালাম, কালাম। এই কালাম, ওঠো।
আসিফ- (জানালা দিয়ে ব্যঙ্গ করে) কালামকে কী প্রয়োজন? আমিই তো আছি। এবার তুমি হাতেনাতে ধরা পড়েছো, সৈয়দা অন্তরা জামান। আমি ঘুমালেই তোমার নৈশলীলা শুরু হয়, তাই না? আজ এই লীলা সাঙ্গ করবো।
অন্তরা- “আফটার ডিনার ওয়াক আ মাইল”- এই প্রবাদ শোনোনি নাকি জীবনে?
আসিফ- তা শুনেছি। কিন্তু হাঁটার সময় মাঝে মধ্যে যে খাজা কাইয়ুমের হাত ধরে “ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে” গানের সঙ্গে নেচে নেচে ঢলাঢলি করতে হয় তা জানতাম না।
বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। তোমার বাবা-মাকে ফোন করেছি। তোমার চরিত্র যে কতো পবিত্র সেটা স্বচক্ষে দেখতে তারা রওনা হয়েছেন।
অন্তরা- হায় আল্লাহ্!
কুলসুম- এখন কী হবে, ম্যাডাম?
আসিফ- আল্লাহ্কে ডাকা ছাড়া আপাতত তোমাদের কিছু করার নেই। আজ আমি তোমাদের সৈয়দ বংশের গর্ব মাটিতে মিশিয়ে দেবো। এতোদিন তুমি আমার চোখে ধুলো দিয়ে নিয়মিত অভিসার চালিয়ে গেছো।
তোমার বাবা-মার কাছে যতোবার আমি তোমার নামে অভিযোগ করেছি, প্রতিবারই তুমি নিত্যনতুন ফন্দি বের করে তাঁদের কাছে আমাকে হাসির পাত্র করে তুলেছো।
আজ তোমাকে ধরতে পেরে প্রতিশোধ নেবার আনন্দ হচ্ছে। তোমার নির্লজ্জতার কথা এবার সবাই জেনে যাবে।
অন্তরা- আসিফ সোনা আমার। দরজাটা একটু খোল না।
আসিফ- সেটি হচ্ছে না। আমার সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত শ্বশুর-শাশুড়ি এসে দেখুন যে তাঁদের কন্যারত্নটি এই মধ্যরাত পেরোনো সময়ে বাসার বাইরে বেরিয়ে প্রেমলীলা চালাচ্ছে।
এই সময়টা তুমি সৃজনশীল কাজে লাগাতে পারো। তুমি তো আষাঢ়ে গল্প বানাতে ওস্তাদ, চিন্তা করে নতুন কোন গল্প বের করো। যেমন ধরো, তোমরা পীরের দরগায় মানত করতে গিয়েছিলে বা প্রসব বেদনায় কাতর প্রিয় বান্ধবীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে।
অন্তরা- যেহেতু তুমি সব জেনে গেছো, সেহেতু তোমার সঙ্গে মিথ্যে অভিনয় করে বা ঘটনা অস্বীকার করে কোন লাভ নেই।
আসিফ- ফাঁদবার মতো কোন গল্প তুমি খুঁজে পাবে না। এবার তোমার গল্পের স্টক ফুরিয়েছে, অন্তরা সোনামণি।
অন্তরা- স্বীকার করছি, আমার ভুল হয়েছে। তোমাকে অনুরোধ করছি। প্লিজ, দরজাটা খুলে দাও। আমাকে এই অবস্থায় দেখলে বাবা-মা দুজনেই হার্টফেইল করে মারা যাবে।
আসিফ- তোমার বুদ্ধির দৌড় কতোদূর আজ দেখা যাবে।
অন্তরা- আমার স্বামীটা কতো লক্ষ্মী। প্লিজ সোনা, দরজাটা খুলে দাও।
আসিফ- যাক। এতোদিন পরে এটা তোমার মুখ দিয়ে বের হলো। ধরা পড়ার পর থেকেই আমার প্রতি তোমার আবেগ একেবারে উথলে উঠেছে। বিয়ের পর থেকে যদি এসব কথা কালে-ভদ্রেও বলতে, তাহলে আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না।
অন্তরা- বিশ্বাস করো, আজ থেকে তোমাকে এমন ভালোবাসবো তুমি বিরক্ত হয়ে যাবে।
আসিফ- এসব মিষ্টি কথায় চিড়ে ভিজবে না। তোমার আসল রূপ আজ সবাইকে দেখিয়ে ছাড়বো।
অন্তরা- আমার কথাটা তো একটু শুনবে। তোমার রাগটা খুবই যৌক্তিক। তোমার ভালোমানুষীর সুযোগ নিয়ে আমি কিছু রঙ-ঢং করেছি, কিন্তু এই বয়সে এসব হয়েই থাকে। তোমার উচিৎ আমাকে ক্ষমা করে দেয়া।
আসিফ- মুখে বলছো বটে, কিন্তু তোমার কথা বিশ্বাস করা কঠিন।
অন্তরা- আমার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য সেটা আমি জানি। তারপরও আমি যখন আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছি, তোমার উচিৎ এই ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দেয়া।
এই মহানুভবতা ও ক্ষমাশীলতা প্রদর্শন করলে তুমি আমার হৃদয় জিতে নেবে। ধীরে ধীরে আমি পুরোপুরি তোমার যোগ্য স্ত্রী হয়ে উঠবো। কথা দিচ্ছি, আজকে থেকে আমি হবো “বিশ্বসেরা স্ত্রী”।
আসিফ- তোমাকে আমি চিনি, অন্তরা। এখন মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে কাজ উদ্ধার করতে পারলে তুমি আমার গলা টিপে ধরবে।
অন্তরা- এইটুকু ফেভার করো, প্লিজ।
আসিফ- এক ফোঁটা ফেভারও তোমাকে করবো না।
অন্তরা- তুমি কতো ভালো, আসিফ।
আসিফ- না, আমি ভালো না।
অন্তরা- আমি মিনতি করছি।
আসিফ- না, না। কখনোই না। তোমাকে আজ শাস্তি পেতেই হবে।
অন্তরা- ঠিক আছে। আমিও তাহলে এমন কিছু করবো, যাতে সারা জীবন তোমাকে অনুশোচনায় ভুগতে হবে।
আসিফ- কী করবে তুমি?
অন্তরা- এখানেই আমি আত্মহত্যা করবো।
আসিফ- হাঃ হাঃ! তোমার মুরোদ আমার জানা আছে, অন্তরা।
অন্তরা- এখনও পুরোটা জানো না, আসিফ। আমি ফেসবুকে “সুইসাইড নোট ও ভিডিও” আপলোড করে যাবো। তাতে বলা থাকবে, আমার মৃত্যুর জন্য তুমিই দায়ী। আমাদের যে বনিবনা হয় না, সেটা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা অনেকেই জানে। কাজেই তোমাকে “আত্মহত্যা প্ররোচনার” মামলায় জেলে ভরতে আমার বাবা-মার বেগ পেতে হবে না।
আসিফ- বুলশিট। এই “টোয়েনটি ফার্স্ট সেঞ্চুরিতে”
অন্তরা- আমার কথায় আস্থা রাখতে পারো। আমাকে যদি এখনই বাসায় ঢুকতে না দাও, খোদার কসম, মরিয়া হলে মেয়েরা কতোদূর যেতে পারে আজই তুমি দেখতে পাবে।
আসিফ- আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
অন্তরা- ঠিক আছে। তুমি যখন চাইছো, তবে তা-ই হোক। (ছুরি বের করে নিজের পেটে ঢুকিয়ে দেয়)
আল্লাহ্, যে আমাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে, সে যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়। এই আমার শেষ চাওয়া তোমার কাছে। (মরার মতো পড়ে থাকবে)
আসিফ- এই অন্তরা। কী করছো তুমি?
অন্তরা- কুলসুম। দরজার দু’পাশে দুজন দাঁড়িয়ে পড়ি, চলো।
আসিফ- (টর্চ নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হয়) এমন অভিমানী মেয়ে। পরকীয়া ধরতে গিয়ে এখন খুনের দায়ে জেলে যেতে হবে মনে হচ্ছে।
(অন্তরা ও কুলসুম ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়)
অন্তরা, অন্তরা। কুলসুম, কুলসুম। (টর্চ নিয়ে খুঁজতে থাকে। কিন্তু কাউকে পায় না)
গেল কোথায় সব? যা ভেবেছিলাম। নিশ্চয়ই এরা আবার কোন কুমতলব এঁটে কেটে পড়েছে। আজ তোমার অনুনয়-হুমকি কোন কিছুতেই কোন কাজ হবে না, অন্তরা।
(দরজা খুলতে গিয়ে) দরজাটা আবার বন্ধ করলো কে? এই কালাম, দরজা খোল।
অন্তরা- এতো রাতে কে এলো? আসিফ তুমি? সারা সন্ধ্যা ফুর্তি করে রাত দুটোর সময় স্যার বাসায় এলেন। একজন দায়িত্ববান স্বামীর আচরণ কখনোই এরকম হতে পারে না।
কুলসুম- স্যার, বাড়িতে সুন্দরী স্ত্রীকে একা ফেলে সারা রাত ক্লাবে বসে মদ খাওয়া ভালো কথা নয়।
আসিফ- তোরা ভিতরে গেলি কী করে?
অন্তরা- বেরিয়ে যাও, লম্পট কোথাকার। এখুনি আমি বাবা-মাকে তোমার বদমায়েশির খবর জানাবো।
তৃতীয় অঙ্ক ।। পঞ্চম দৃশ্য
(চরিত্র- অন্তরা, কুলসুম, আসিফ, সৈয়দ, সৈয়দা; স্থান- আসিফের বাসার নীচতলা)
(সৈয়দ ও সৈয়দার প্রবেশ)
অন্তরা- বাবা-মা তোমরা এসে পড়েছো? দেখো, টাকার গরমে আসিফ আজ ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। মদের নেশা আর জেলাসি ওকে অন্ধ করে দিয়েছে। কী করছে, কী বলছে ও নিজেই জানে না। এই ভোররাতে তোমাদের মিথ্যে খবর দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।
নিজে আমাকে একা ফেলে সারা রাত ফুর্তি করে এখন বাসায় ফিরেছে, অথচ বলছে আমি নাকি পরকীয়া করে বেড়াই। আরও যা বলেছে, আমি মুখে উচ্চারণ করতে পারবো না। (কাঁদতে থাকে)
সৈয়দ- কী হয়েছে, আসিফ? এতো রাতে হৈ-হল্লা করছো কেন?
আসিফ- আমি তো শুধু…
অন্তরা- আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এরকম লম্পট, সন্দেহবাতিকগ্রস্ত লোককে আমার স্বামী বলে ভাবতেও ঘেন্না হচ্ছে। ও তোমাদেরকে পর্যন্ত গালাগাল করেছে, বাবা।
কুলসুম- স্যার, নেশার ঘোরে আপনি বলছেন, আমি আর ম্যাডাম বাইরে ছিলাম আর আপনি ছিলেন ভিতরে। লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনার।
সৈয়দ- তুমি এতো নিচে নামতে পারো, আমি ভাবিনি।
সৈয়দা- ছিঃ, আসিফ! তোমার ঔদ্ধত্য দেখে আমি হতবাক।
আসিফ- ম্যাডাম, কোন ভুল বোঝাবুঝি…
সৈয়দ- লজ্জায় তোমার মরে যাওয়া উচিৎ।
আসিফ- আমার কথাটা তো শুনবেন।
অন্তরা- ওর কথাই শোনো, বাবা। নিশ্চয়ই আবার নতুন গল্প ফেঁদেছে।
কুলসুম- উনি এতো মদ খেয়েছেন যে, মদের দুর্গন্ধে ওনার আশেপাশে যাওয়া যাচ্ছে না।
সৈয়দ- আসলেই তো, তোমার নিঃশ্বাসে মদের দুর্গন্ধ।
আসিফ- ম্যাডাম, আপনার পায়ে পড়ি।
সৈয়দা- খবরদার, আমার কাছে আসবে না তুমি। শয়তান, বদমাশ। যা বলার দূর থেকে বলো।
আসিফ- খোদার কসম। আমি বাসা থেকে বের হইনি। বের হয়েছিলো অন্তরা আর কুলসুম।
অন্তরা- এবার আমার কথার প্রমাণ পেয়েছো, মা?
কুলসুম- আমিও সেটাই বলেছি।
সৈয়দ- এবার তামাশা বন্ধ কর, আসিফ। তুমি বাইরে এসো, মামণি। (অন্তরা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে)
সৈয়দা- অসভ্য ছেলে, অন্তরার কাছে ক্ষমা চাও।
আসিফ- ক্ষমা চাইবো কেন?
সৈয়দ- আর একটা কথা বললে চাবকে তোমার পিঠের চামড়া আমি তুলে নেবো। ক্ষমা চাও, বেয়াদব।
অন্তরা- এতোকিছুর পরেও এই লোফারটাকে ক্ষমা করতে হবে? অসম্ভব। আমি আসিফের সঙ্গে এক ছাদের নীচে আর বাস করবো না।
কুলসুম- এছাড়া কোন উপায় নেই, ম্যাডাম।
সৈয়দ- ছাড়াছাড়ি হলে সমাজে সৈয়দ বংশের সুনাম নষ্ট হবে। তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে, অন্তরা। পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও তুমি একটু ধৈর্য ধরো, মামণি।
অন্তরা- এতো অত্যাচারের পর আমি কিভাবে ধৈর্য ধরবো, বাবা?
সৈয়দা- আমরা তোমার বাবা-মা। আমাদের আদেশ তোমাকে পালন করতেই হবে।
অন্তরা- ছোটবেলা থেকেই আমি তোমাদের কোন কথার অবাধ্য হইনি। এই কথাটাও মেনে নিলাম।
কুলসুম- সৈয়দ বংশের মেয়ে বলে কথা।
সৈয়দ- এই তো, আমার লক্ষ্মী মামণি। আসিফ, এটাই তোমার শেষ সুযোগ। এরপর কোন ঝামেলা হলে শায়েস্তা করবো তোমাকে।
আসিফ- হবে না, বাবা। কথা দিচ্ছি। আমাকে ক্ষমা কর অন্তরা।
অন্তরা- ঠিক আছে। আর ক্ষমা চাইতে চাইতে হবে না।
সৈয়দা- মনে থাকে যেন। চলো সৈয়দ, ভোর হয়ে এলো। উজবুকটার জন্য আজ রাতের ঘুমটাই মাতি হয়ে গেলো।
সমাপ্ত