Home » দার্জিলিং এর মায়াবী ডাকে ।। শেখ তাহসিন আহমেদ

দার্জিলিং এর মায়াবী ডাকে ।। শেখ তাহসিন আহমেদ

ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় সমরেশের উত্তরাধিকার পড়তে পড়তে নাকি সত্যজিতের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে ঠিক মনে নেই, শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিং যাবার তীব্র ইচ্ছা মনের ভেতর ছিল। যৌবনের শুরুতে শিলিগুড়িতে জন্ম নেওয়া চারু মজুমদারের নকশালবাড়ি আন্দোলনও মনকে নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। সেই শিলিগুড়ি! তারপর অঞ্জন দত্তের গান “খাদের ধারের রেলিংটা” বা “কাঞ্চনজঙ্ঘা” সেই ইচ্ছাকে আরো তীব্রতা দিয়েছিল। ‘৯৬ তে বিয়ের ঠিক আগে আগে বৌয়ের সাথে দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়া নিয়ে আলাপ করতাম, স্বপ্ন দেখতাম। বহু বছর পরে জীবনের মধ্যহ্নে সে স্বপ্ন সফল হল ২০১৮ তে এসে। পরিবারের ইচ্ছাতে আমার ডাক্তার দেখানো ও বৌয়ের ৪ দিনের মেডিকেল কনফারেন্সসকে উদ্দেশ্য করে আর মনে মনে এবার দার্জিলিং ভ্রমণের স্বপ্ন নিয়ে গত ১৮ই এপ্রিল ২০১৮ ট্রেনে ঢাকা ছাড়লাম সকাল ঠিক ৮:১৫ তে। আরামদায়ক জার্নি শেষে বিকাল ৫টায় ট্রেন পৌঁছল চিৎপুর, কলকাতা রেল স্টেশনে। আধঘন্টার মধ্যে এবার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস্ শেষ হওয়াতে আরো ভালো লাগল। বৌ তার সারাদিনের প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে ২ দিন অর্ধবেলা করে আমাকে নিয়ে ডাক্তারের পিছে সময় দিয়েছে, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। ডাক্তার দেখানোর মাঝে ৪ দিনের গ্যাপে দার্জিলিং যাবার প্রোগ্রাম করে ফেললাম। ২২ শে এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার শ্যামলী পরিবহণে চেপে বসলাম ধর্মতলা থেকে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে। ভাড়া এক হাজার রুপি। দালালে ভরা ধর্মতলা বাসস্টপ । ওদের ফাঁদে পড়লে ১২০০/১৩০০ টাকাও ভাড়া গুনতে হতে পারে। পথে দু’জায়গায় হোটেল বিরতি দিয়ে সকাল ৮টায় পৌছলাম শিলিগুড়ি।

সেই শিলিগুড়ি। আগে থেকেই ড্রাইভার কমলদা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। গাড়িতে উঠে বসলাম, উনি মিরিকের পথ ধরে দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। পথে একটা হোটেলে আমরা fresh হয়ে নাস্তা করলাম। সমতলের দু’পাশে চা বাগানের নৈসর্গিক শোভা দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। হঠাৎ শুরু হল পাহাড়ের পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। দু’পাশের সব অসাধারণ দৃশ্য দেখতে দেখতে পাহাড়ী পথ বেয়ে কখনো গভীর ঢালে নামছি কখনো খাড়া উঠছি। এখানের পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে আমার দেশের বান্দরবানের কথা মনে হল। পাহাড়ের রূপ, পাহাড়ের আকর্ষণ অনেকটা একইরকম। বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ভিজিটিং স্পট আছে, তার একটা “সীমানা”। নেপালের কিছু অংশ এর মধ্যে আছে। কিছু জায়গায় খৃষ্টানদের কবর আছে। এখানে চা খেয়ে, বৌয়ের জন্য লাল টুপি কিনে আবার রওনা।

এবার ‘মিরিক’, খুবই সুন্দর একটা জায়গা। বড় একটা লেকও আছে। ওপারে আছে বড় বড় গাছের সারি। পাহাড়ে অসাধারণ দৃশ্য। বেশ কিছু সময় এখানে কাটিয়ে আবার রওনা। পাহাড়ের গা বেয়ে গাড়ির মধ্যে মেঘ বা কুয়াশায় ডুবতে ডুবতে এগিয়ে চললাম। টয় ট্রেনের পাশ দিয়ে ‘ঘুম’ স্টেশন পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং এর প্রাণকেন্দ্রে। ‘চানক্য’ নামের একটা হোটেলে উঠলাম। ১৭০০ রুপি হিসাবে ২ দিনের জন্য। গরম পানিতে গোসল সেরে দুজনা গেলাম দুপুরের খাবার খেতে। মাছ, ভাত, সব্জি, ডাল সহ দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। হোটেলের বাথরুমে স্যান্ডেল না থাকায় তা কেনা যায় কিনা দেখতে বেরুলাম। পথ ধরে দুজনে নিচে নেমে যাচ্ছি। অনেক ঢালু পথ। দু’ধারে বাজার, বেশিরভাগই শীতের কাপড় চোপড়ের। স্যান্ডেল কিনে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম। বিকেল সাড়ে ৪টায় ড্রাইভার কাজলদা ফোন দিলেন। বের হলাম, হেঁটে হেঁটে শহরটা দেখব বলে। বের হয়েই বুঝলাম অতি দ্রুত যা করতে হবে তা হল শীতের কাপড় কেনা। আমি একটা সোয়েটার, মাথার টুপি আর বৌ কিনল ওভার কোট, টুপি এসব। মলে এলাম, মল মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কিছু দোকান আছে যারা ১৮ শতকে ব্যবসা শুরু করে এখানে। তার মানে অনেক পুরোনো ঐতিহ্য, সভ্যতা, কৃষ্টি কালচারের নগর হলো এ দার্জিলিং। আমাদের দেশ থেকে অনেক ছেলেমেয়ে এখানে পড়তে আসে। এতদূরে বাবা মা কেন যে তাদের আদরের সন্তানকে পড়তে পাঠায় তা অবশ্য এখনো আমার কাছে রহস্যঘেরা। তবে এখানেও সেন্ট যোসেফ্স্ স্কু্ল দেখে ভালো লাগল। বিশাল স্থাপত্য। দেখলেই পড়তে ইচ্ছে করে। ছেলেরা মাঠে খেলছে। এই পাহাড় চূড়াতেও জীবন তার গতিতে এগিয়ে চলেছে। পরের দিন অনেক ভোরে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার জন্য টাইগার হিলে যেতে হবে তাই ঘড়িতে এলার্ম সেট করে ঘুমাতে গেলাম। তারপরও রেডি হয়ে বের হতে হতে সাড়ে চারটা বেজে গেল। অত ভোরে জ্যামে জ্যামে গাড়ি ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে। ছোট ছোট ট্রাকে করে দূর থেকে ট্যাংকি ভরে ভরে পানি নিয়ে আসা হয়। এই পানি দিয়েই চলে জীবনযাত্রা। তাই পাহাড়ে পানির অপচয় অনেক বড় অপরাধ বলে মনে হয়। যাহোক, জ্যামের কারণে গাড়ি বেশ কিছুটা দুরে রেখে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চললাম উঁচু চূড়ার দিকে যেখান থেকে দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। উত্তেজনায় আমি একটু বেশিই এগিয়ে গেলাম আর পিছন ফিরে চেয়ে দেখি বৌ ঠিকমত আসছে কিনা। জোরে হাঁটতে ওর মনে হয় একটু কষ্টই হচ্ছিল। আমার কষ্ট আমি টের পাইনি। একটু অপেক্ষা একটু এগিয়ে যাওয়া। একটু উঁচু জাগায় উঠার জন্য এক মহিলা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল সাহায্যের আশায়। আমি কি করব ভাবতে ভাবতে হাত বাড়িয়ে দিলাম উঠতে সাহায্য করতে। বৌয়ের চোখ এড়াল না। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। কষ্ট হচ্ছে তবু কানে এল ওর গলা, তুমি ঐ মেয়ের হাত ধরলে কেন? সাহায্য চাইল যে। তুমি কেন? সেই তো আমি কেন? তবে অসাধারণ ভোর দেখতে দেখতে বিষয়টা ঢাকা পড়ে গেল বলে রক্ষা। ভোরের টকটকে লাল সূর্য দূর করতে পারল না কুয়াশার ঘনত্ব। কুয়াশার চাদরের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারল না কাঞ্চনজঙ্ঘার কোন চূড়া। ভাবলাম, এরপর নেপাল গিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘা ছুঁয়ে দেখব। কফি খেয়ে ব্যর্থ মনোরথে ফিরছি।

এবার গেলাম আরেক স্মৃতিসৌধে। ২০ রুপি দিয়ে টিকিট করে ভিতরে ঢুকলাম। ভারতের গুর্খা রেজিমেন্টের যে সকল অফিসার ও সৈন্য বিভিন্ন যুদ্ধে মারা যায় তাদের সন্মানে স্মৃতিসৌধ। বেশ কিছু লোক দূরবিন সেট করে রেখেছে দূরের শহর দেখাবে বলে। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে পরে চলে আসলাম হোটেলে। ফ্রেশ হব, নাস্তা করব, আবার যাব। এবার গেলাম জাপান বৌদ্ধ মন্দিরে। গৌতম বুদ্ধ আমার প্রিয় মানুষদের একজন। যদিও উপাসনালয় আমাকে খুব একটা টানে না, কিন্তু এখানে বৌদ্ধ স্থাপত্যের সামনে এসে মনটা ভালো হয়ে গেল। অনেক সময় নিয়ে দেখলাম, ছবি তুললাম। এবার গেলাম রক গার্ডেন, ঝর্নার জলে পা ভিজাতে গিয়ে কাপড় ভিজে গেল বৌয়ের। তবু ভালো লাগল ওর আনন্দ দেখে। ড্রাইভারকে অনুরোধ করে আবার হোটেলে ফেরা হল ভিজা কাপড় বদলাতে।

তারপর গেলাম চা বাগান দেখতে। এখানে উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং আসার পথে সমতল ভূমিতে ও পাহাড়ে, দু’জায়গায়ই চা বাগান দেখলাম। চা বাগান দেখতে গিয়ে চা পাতা উঠানীদের পোশাক গায়ে বৌয়ের আরো কিছু ছবি তোলা হল, কেনা হল দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত চা। আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে ফিরে আসলাম হোটেলে। চিড়িয়াখানা আর যাওয়ার ইচ্ছা হল না। ক্লান্ত শরীরে দুপুরের খাবার খেয়ে হোটেল রুমে ফিরলাম। গোসল সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বিকালে আবার মলে, যেখানে নেপালের জাতীয় কবি ভানুর স্থাপত্য। বিখ্যাত মম খাওয়া হল। আমাদের কুলি পিঠার মত, ভিতরে থাকে সব্জি বা মুরগির মাংস। ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল, হঠাৎ করেই। এভাবেই ২য় দিনের মত শেষ হলো দার্জিলিং ভ্রমণ। মনে বড় আশা নিয়ে ২৫ তারিখ ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। যদি আজ দেখা যায় অদেখা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। হোটেলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম কুয়াশার অবস্থা। মনে হলো না এই জমাট কুয়াশা ভেদ করে দেখা যাবে। গরম কাপড় পরে বউ আর আমি রুম থেকে বের হলাম, কিন্তু হোটেল থেকে বের হতে পারি না, দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করে দরজা খুলে বের হলাম, তবে আজ আর টাইগার হিল যাচ্ছি না, যাচ্ছি কাছাকাছি মল এর উঠানে। মল হচ্ছে সান বাঁধানো খোলামেলা একটা জায়গা যেখানে একপাশে আছে মার্কেট, স্থায়ী মঞ্চ, নেপালের প্রধান কবির স্থাপত্য, একপাশে বসার বেঞ্চি আর একটু দূরে আছে ঘোড়ার আস্তাবল। বিকেলে বাচ্চারা এই ঘোড়ার পিঠে চড়ে। যারা সত্যজিতের কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিটি দেখেছেন তারা ছোট্ট মেয়েটির ঘোড়ায় চড়ার দৃশ্য দেখে থাকবেন। মনটা রোমাঞ্চিত হল এই ভেবে যে সত্যজিৎ রায় এখানে, এই রাস্তায়, এই ঢালে স্যুটিং করেছেন, হেটে বেড়িয়েছেন। নাই বা হল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা। ভোরে বহু ছেলেমেয়ে হাটছে, জগিং করছে। অনেকের সাথে আছে আবার পোষা কুকুর। আমরাও ওদের সাথে অনেকক্ষণ হাঁটাহাটি করে মলের একপাশে বেঞ্চিতে বসে কবুতরদের খাওয়া দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি দু’ভাইবোন তাদের পোষা বিদেশি(!) কুকুর নিয়ে আসল আর অনেকগুলো নেঁড়ি কুকুর ডাকাডাকি করে ছুটে আসল পোষা কুকুরটার উপর হামলে পড়বে বলে। এ যেন আমার উঠানে তুমি কে হে? ছেলেমেয়ে দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি তারাও যথেষ্ট ভয় পেয়ে গেছে। অনেক কষ্টে পরিস্থিতি সামলালো আরেকজনের সহযোগিতায়। আমরা আর বেশিক্ষণ বসলাম না। আজই একটু পরেই আমরা রওনা দিব শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে। আজ লুচি আর ছোলাসিদ্ধ দিয়ে নাস্তা করলাম। শিলিগুড়ি বাস কাউন্টারে ফোন করে কলকাতার টিকিট রি-কনফার্ম করলাম।

১০টার দিকে ড্রাইভার কাজলদা গাড়ি নিয়ে আসলেন আমাদের নিতে। হোটেল ভাড়া চুকিয়ে বহু কষ্টে দার্জিলিংকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম। এবার আর মিরিক দিয়ে না গিয়ে যাব হিল কার্টের রাস্তা ধরে। যদিও বেশ কিছুটা পথ আমাদের বেশি যেতে হবে কিন্তু এর সৌন্দর্য্য অন্যরকম। এই পথ দিয়ে না আসলে মার্গারেট ডেক দেখা হত না। মার্গারেট ডেক একটা চা বাগানের চা হাউজ বলা যেতে পারে। অসাধারণ পরিবেশ। চমৎকার ইন্টেরিওর। যেহেতু ঢুকলাম, সুতরাং এই স্বর্গীয় পরিবেশে চা পান না করলে অপরাধ হয়ে যাবে। মেন্যুর দামের দিকে তাকিয়ে দেখি এক কাপ চা ৫৫০ রুপি। কি করি, কি করি। চোখ খুঁজে বেড়ায় কম দামের দিকে। পরে পেলাম ১০০ রুপি এক কাপ। দু’কাপ অর্ডার দিলাম, এক কাপ আমার আরেক কাপ কাজলদার। বউ অবশ্য চা ভক্ত না এবং খেতেও রাজী হলো না। চা খেতে খেতে কিছু ছবি তুললাম তারপর যখন গাড়িতে উঠতে যাব দেখি পেছনের চাকা পাংচার হয়ে গেছে। কাজলদা চাকা বদলানোর কাজে নেমে গেলো, আমি পাশে পাশে থাকলাম আর বউ ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে আর দেয়ালে ঝোলানো বিভিন্ন তথ্য পড়ছে। পরে ওর কাছ থেকে জানলাম মার্গারেট ডেকের মার্গারেটের করুন ইতিহাস। ‘বাদা রিং টং’ চা বাগানে ম্যানেজার পদে চাকরি করেন মার্গারেটের বাবা। সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত মার্গারেট বাবার হাত ধরে সুদূর বিলেত থেকে দার্জিলিং আসেন। চা বাগানে ঘুরতে ঘুরতে, দার্জিলিং এর পথে, পাহাড়ে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ভালোবেসে ফেলে চা বাগানকে, দার্জিলিংকে। এদিকে তার বিলেত ফিরে যাবার সময় ও এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু মন যে কিছুতেই যেতে চায় না। মনের বিরুদ্ধে জোর করে জাহাজে চেপে বসে। কিন্তু যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ সে তার প্রিয় চা বাগানের দিকে, পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। খাওয়া নাই, ঘুম নাই, এভাবে থাকতে থাকতে একসময় অসুস্থ্য হয়ে পড়ে মার্গারেট। তারপর একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। প্রিয় চা বাগানের জন্য, প্রিয় দার্জিলিং এর জন্য এভাবে মৃত্যুবরণ বড়ই কষ্টের, বড়ই বেদনার। পরবর্তীতে তার বাবা ফিরে এসে তার স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি করেন মার্গারেট ডেক। আমার কিন্তু মনে হয় প্রচ্ছন্নভাবে লুকানো আছে আরেক কাহিনি। সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ একজন মেয়ে প্রকৃতির সাথে সাথে হয়ত ভালোবেসে ফেলেছিল কোন নেপালী ছেলেকে বা চা বাগানেরই কাউকে যা তার বাবা মেনে নিতে পারেননি। তাই তার বাবা দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইংল্যান্ডে। কিন্তু কচি মন হয়ত মেনে নিতে পারেনি এই বিরহব্যথা। কে জানে! একে তো আমরাও বিদায় নিচ্ছি তারপর বউয়ের কাছে এ কাহিনি শুনে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। তখন ওখানে বিক্রীর জন্য রাখা ১ কেজি চা ১২০০০ রুপি আর খুব বেশি মনে হলো না। হিল কার্টের পথ ধরে ফিরে আসতে আসতে দু’পাশের সারি সারি লম্বা পিরামিড আকৃতির গাছ দেখতে দেখতে আমাদেরও কখন চোখ ভিজে গেল জানি না। youtube এ তখন অঞ্জন দত্ত গেয়ে যাচ্ছে, খাদের ধারের রেলিংটা,……. আমার শৈশবের দার্জিলিংটা। সন্ধ্যা ৭:৩০ এর বাসে কলকাতার উদ্দেশ্যে শিলিগুড়ি ছাড়লাম। মনে ছোট একটা কষ্ট রয়ে গেল, সময়স্বল্পতায় শিলিগুড়িতে চারুবাবুর বাড়িটা দেখা হল না। যিনি একসময় পুরো পশ্চিমবঙ্গ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। বিদায় শিলিগুড়ি, বিদায় দার্জিলিং।

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top