ত্রিপুরার একগুচ্ছ কবিতা ।। গুহাচিত্র ।। রাহুল সিনহা


ইনসমনিয়াক পংক্তিমালা
দেওয়ালে বিমর্ষ মানচিত্র
এঁকেছে কদিন জলো হাওয়া,
আর তার মধ্যে ফুটে ওঠে
আমাদের দীর্ঘ পথ চাওয়া।

এই রাত নক্ষত্রের নয়,
এ নয় গানের দিন আর
এখন রাতেরা জেগে থাকে
বুকে নিয়ে স্তব্ধতার ভার।

সারাদিন যাকে ছুঁয়ে থাকি
রাত হলে সেই তো অধরা,
এই নিদ্রাহীন রাত শেষে
স্বপ্নে সে কি এসে দেবে ধরা?

এই অবান্তর বেঁচে থাকা
এই পরিব্রাজনের পর
তুমি কি আমার জন্যে আছো?
তুমি কি আমায় দেবে ঘর?
———


গুহাচিত্র
বন্দরের পানে ডাকে পাড়ের বাতাস
কুহকের মতো টানে রাত
মাতালের মতো সেও হেঁটে যায় একা
ফেলে যায় প্রসারিত হাত।

যে পথে নিশ্চিত ছিল চুক্তিবদ্ধ সুখ
সে হদিশ হাওয়ায় উড়িয়ে
সে গিয়েছে নক্ষত্রের পদচিহ্ন ধরে
জন্মছক আগুনে পুড়িয়ে।

এই তার যাত্রাপথ ধুলোতে মলিন
পায়ে নেই কোন পিছুটান
এখানে সে লিখে রাখে নিজস্ব কাহিনী
বিষাদের সুরে গাওয়া গান।

ছাইগাদা ধুয়ে গেলে সমুদ্রের ঢেউয়ে
সেই পাললিক দুঃখ ক্ষত
ভেসে ওঠে গূঢ়তর গুহার প্রাচীরে
এঁকে রাখা বাইসনের মতো।।
———–


আজ যানে কি জিদ না করো….
কালো কফি শেষ হয়ে এলো কাপে বসে বসে,
এখনও জবাব এলো না তোমার।
আপাতত তোমার চুলের মতো কালো আকাশ
ভেঙে বৃষ্টির ফোঁটারা ভিজিয়ে দিচ্ছে পথঘাট,
আমি জানালার কাছে বসে আছি,
বয়ে যাচ্ছে সুসময়।
কবে তিনগাঁয়ের ঘাটে লাগলো সাদা বেনের পোত,
পিরিলির বামুন আর দেখাদেখি আরও জমিদারবাবুরা
নুনের দেওয়ানি শিখে গেলো।
আমি এখনও ঠায় বসে,
তুমি কেন চলে যেতে চাইছো কে জানে?
মেটেবুরুজের দেওয়ালে কান পাতলে
এখনও শোনা যাচ্ছে
‘যব ছোড় চলে লখনউ নগরী…’,
ফরিদা খানুম এখনও শেষ করেননি গজল,
বাতাসে মিলেমিশে ঘুরে বেড়াচ্ছে
আতর সুবাস আর নোনা ঘামের গন্ধ ।
দরদাম করতে ভালো লাগে না বলে
বিনিদামে ছেড়ে দিচ্ছি যা কিছু জমানো,
হাতে এখন শুধু অফুরন্ত সময়,
এখুনি তোমার না গেলে নয়,বলো?
————


চাঁদ সদাগর
এইখানে শুয়ে আছে রোদ,
বৃষ্টি ছিল কিছুক্ষণ আগে
যে পথের পাশে জলসত্র
ডেকে নিত আদরে সোহাগে।

এই পথে হেঁটে যায় ছায়া
অনাদরে পড়ে থাকা গান,
ধুলোর সংসার ভেঙে দিয়ে
হাতছানি দেয় চোরাটান।

সোপানের নিচে বসে থাকি,
ক্লান্ত চোখে স্বপ্ন রাতভর
কালীদহ চিরে উঠে আসে
ডুবে যাওয়া চৌদ্দ মধুকর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top