❑ জুঁই ❑
পূর্ব মিলন
তোমাকে আর এ জন্মে পাওয়া হলো না!
তোমাকে পেতে কতবার
তোমার সান্নিধ্যে গিয়েছি
তা- ফুলেরা জানে পাখিরাও জানে- জুঁই।
কবরে নিদ্রায়ীত হওয়ার পর
আমার প্রতিটি কাল! দীর্ঘায়িত হয়ে ওঠে
ভাবি তোমার মৃত্যু হলে আজ,
আমাদের হতো, গত-জন্মের পূর্ব মিলন।
কবুতর
তুমি এক পরদেশী কবুতর,
যখন উড়ে আসো
পাঠ পেরিয়ে, বন পেরিয়ে,
আমার ঠিকানায়,
তখন তোমার পেখম ধ্বনি
কৃষক দেখে, বৃক্ষ দেখে,
আর নদীরা তোমার ছবি
তুলে রাখে- জুঁই।
তোমাদের ভালো থাকা নিয়ে
আমি আর কখনোই ফিরবো না- জুঁই
এবং ও পৃথিবী তোমার দুয়ারে।
ভালো থেকো ফুল
ভালো থেকো ফল
ভালো থেকো পাখি
ভালো থেকো নদী
ভালো থেকো মাঠ
ভালো থেকো পাঠ
আর জুঁই তুমিও ভালো থেকো, হৃদয়ে
আগুনের পিদিম জ্বেলে।
তোমাদের এই ভালো থাকা নিয়ে বড় ভয়!
পৃথিবীর পথে অখণ্ডিত শাসক ও শোসক
যাদের দাবানলে শিকড় ফুঁড়ে মরে যায় বৃক্ষ।
গুনাহ্
তোমার রাজ্যে অনেক দাবদাহ বয়ে চলছে জুঁই।
প্রজাদের দিকে চেয়ে দেখো
প্রতিটি চোখে অসংখ্য কামনার কুন্ডলী
যেনো তোমাকে ওড়া সর্বদা
গিলে খাচ্ছে, তোমার শরীরের শিরা-উপশিরা।
অথচ- তুমি জানো জুঁই
আমি যখন তোমার রাজ্যে
তোমার খাস দাস ছিলাম।
তখন তোমার প্রজারা ভাবতো
তোমার দিকে তাকানোও ওদের ছিলো গুনাহ্!
গোপনীয় আলাপ
ও খোদা আমাদের জন্য,
একটা আলাদা বেহস্ত তৈরি করো।
যেখানে আমি আর জুঁই
পাশাপাশি বসে চোখে চোখ মেলাবো।
শরীরের কথাপকোথন শুনবো দুজন দুজনার।
আর চুম্বনে আকৃষ্ট হবো বহুবার।
ও খোদা সেখানে তুমি
ফুল পাখি ও প্রজাতির নিষিদ্ধ করো,
এমনকি তোমার ফেরেস্তাও।
যেনো- আমি আর জুঁইয়ের কর্মকাণ্ড
তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ না জানে।
কান পেতে রয়
জুঁই- তোমার ঠোঁট জোড়া হাসলে,
বসন্ত আসে— দখিনা বাতাস বেয়ে…
আমার হৃদয় প্রেমান্থর ঘরে।
তখন— আমার হৃদয়, মন
যপে তোমার নাম সর্বক্ষণ!
তোমার দেবী তুল্য চেহারা
চোখে ভাসে— আমাকে করে আত্মহারা।
দুইযুগ— পর বসন্ত চলে যায়…
দখিনা বাতাস আসে না জানলা দিয়ে
গোরস্তানে একাকী আমার লাশ,
কান পেতে রয় তোমার হাসির অপেক্ষায়।
বসন্ত বৈরীতা
আমাদের বসন্তের দিন চলে এসেছে- জুঁই
তুমিই বলো
কিভাবে আমন্ত্রণ করি এ বসন্ত
কৃষ্ণচূড়া ফুল আর তোমার রূপবতী বান্ধবীদের?
আমিতো তোমাকে হারিয়ে
হয়ে গেছি বোধহীন ভাস্কর
তাই- এ বসন্তদূত এখন আমার কাছে অমূল্য!
তোমাকে ছাড়া বসন্ত উৎযাপন করা যায়?
ভাবলে গা শিউরে ওঠে জুঁই
তুমি যে আমার- প্রথম বসন্ত বৈরীতা।
আজাব
জুঁই তোমার হাতের পরশে
নেতিয়ে পড়া ফুলেরা উষ্ণতায় উজ্জীবিত হয়।
ঠিক তেমনই
আমার জীবনের সমস্ত গুনাহ্!
ক্রমে ধুয়ে মুছে- পবিত্র ইনসান গড় আমাকে।
তখন আমার মন আমার হৃদয়
অপবিত্রতার আজাব থেকে আজাদ পাবে।
আমার জন্য এটুকু কৃপা করো- জুঁই?
মৃত্যু ফুল
কাছে আসো দ্রুত পায়ে
ঈশ্বরের ভাণ্ডার থেকে আমার মৃত্যুর ঘোষণা
ঘোষিত হয়েছে ইতিপূর্বেই।
তুমি জানো জুঁই
তোমাকে ছেড়ে তোমাদের ছেড়ে,
পাখিদের সমাবেশ ভুলে
একটা মৃত্যু ফুল হাতে তুলে
আমি চলে যাবো এক জ্যোৎস্নাহীন প্রভাতে
অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
কোথায় হারালে
তোমাকে কোথায় খুঁজে পাবো জুঁই?
সাগর,
নদী,
পাহাড়,
কোথাও তুমি নেই- নেই, নেই, নেই।
এ কেমন অভিমান তোমার?
ভোরের স্নিগ্ধ ঘাসফুল রেখে-
রূপালী রাঙা বিকেল রেখে-
পাখিদের মাতালি গান রেখে-
তুমি কোথায় হারালে জুঁই?
আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে একা ফেলে…