জীবন পেয়ালা
পান করি মোরা সত্ত্বা-পেয়ালা থেকে
সদাই মোদের দু’চোখ বন্ধ করে,
পেয়ালার সব সোনালী কিনারা থেকে
নেমে আসা সব অশ্রুতে চোখ ভরে।
জীবনের সেই শেষ বেলাতে এসে
যখন চোখের শেষ পাতাটা পড়ে,
জীবনের সব প্রবঞ্চনাগুলো
শেষদৃষ্টির সাথেই গিয়েছে সরে।
সজাগ চোখে পড়লো যে আজ ধরা
সোনালী পেয়ালায় কিছুই যে আদৌ নেই,
স্বপ্নের ঘোরে পান করেছি তাতে সুধা,
কিন্তু সেসব – স্বপ্নের আবেশেই।
কবি পরিচিতি: মিখাইল ইউরিয়েভিচ লেএরমন্তফকে (১৮১৪-১৮৪১) আলেক্সান্দর পুশকিনের (১৭৯৯-১৮৩৭) পরেই রুশ সাহিত্য-সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ কবি বিবেচনা করা হয়। লেএরমন্তফ একাধারে গদ্য সাহিত্যিক এবং চিত্রকরও ছিলেন এবং ঐ জায়গাগুলোতেও তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় ভালোমতই দিয়েছেন। তিনি মূলতঃ রোমান্টিক কবি, যদিও তাঁর কবিতা সামগ্রিক অর্থে সব সময় রোমান্টিক বলয়ে আবদ্ধ ছিল না। ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য তাঁর কবিতায় ছিলো, কিন্তু রোমান্টিক যুগের ভাবাবেগকে ছাপিয়ে কবিতায় যুক্তি ও বাস্তবতা অনুসন্ধানের এক ধরনের প্রয়াশও তাঁর মধ্যে দেখা যায়। তার গদ্য সাহিত্যে তিনি যে কখনো কখনো মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলেছেন, তার কবিতাতেও তার প্রভাব পড়েছে। রোমান্টিক যুগের মত অতীত বন্দনাও তাঁর কবিতায় অতটা দেখা যায় না। চিত্রশিল্পে তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশেষতঃ কাউকাসুসের বিস্তৃত পটভূমি, তাঁর সময়কার নারীর অবয়ব, যুদ্ধ সেইসাথে আরো বিবিধ বিষয় ক্যানভাসে ধরে রাখতে চেয়েছেন। মাত্র ২৭ বছর বেঁচে ছিলেন এই ক্ষণজন্মা প্রতিভা। অনেকাংশেই প্রথাবিরোধী সাহিত্যিক আকারে তিনি তাঁর সময়ে উপস্থিত ছিলেন।