গুচ্ছ কবিতা ।। রক্তের চিৎকার ।। হানিফ রাশেদীন


ভোরের কথা
উসকে দাও ভোরের আগুন
অন্ধকার দেয়ালের নির্জন কোণ হতে
ফুটে উঠুক সূর্যমুখী ফুল
নির্মল আলোয় ভরে উঠুক বিষণ্ণ মুখগুলো
ধুলোয় মিশে যাক উৎপীড়নের নকশা
কোথাও শুরু হোক বসন্তের গান গাওয়া

কোথায় সমব্যথীরা?
হৃদয়বানেরা কোথায় আজ?
কোথায় হারাল সেই মাথা না-নোয়ানোর দল?
কে আছো, কিছু একটা বলো ভোরের বাতাসকে
যেন সে এসে নিভিয়ে দেয় অনন্ত রাত


যে গল্পের শেষ নেই
এ কেমন মাথা নুইয়ে চলার দিন এল
শূন্যে মিলিয়ে যায় তোমার আমার বিশুদ্ধ স্বপ্নের চিত্রসমূহ
তোমার আমার কণ্ঠ হতে উচ্চারিত ভালোবাসার প্রতিটি শব্দ
মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর এক ফোঁটা জল নেই পৃথিবীর কোথাও
মেঘের গর্জনে ভীত, সন্ত্রস্ত তোমার আমার স্বচ্ছ মুখ
দেখার দৃষ্টি আছে আমাদের তবু পরস্পরকে দেখতে পাই না


মানুষের হাহাকার
চোখের ঘুম মুছে একবার জেগে ওঠো
চাঁদের নৌকো ভিড়িয়েছি তোমার দৃষ্টির কিনারে

জানি না জেগে থেকে মানুষ কেমন করে ঘুমোয়
পুবালি বাতাসে শুনতে পাই নূপুরের ঝঙ্কার

এই জলে বলো কেমন করে ভাসাব নৌকো
সমুদ্রের তলদেশ হতে উঠে আসে মানুষের হাহাকার


আগুন ও বরফ

আঁচল হতে রক্ত ধুয়ে ফেললেই কি দাগ মুছে যায়
পৃথিবীর ইতিহাস তো আগুন ও বরফের সংঘাত

কে সর্বপ্রথম কেটে নিয়েছে উড়াল দেয়া পাখির ডানা
সুন্দরবনের কোন বৃক্ষে প্রথম জেগেছিল জ্যোতি

বিভ্রম সামলে দেখো কোথায় বয়ে যায় স্বচ্ছ বাতাস
কেউ তো সেতারে ধরে রেখেছে মিলনের সুর

বসন্তের আলোড়নে একদিন কেঁপে উঠবে বৃক্ষশাখা
একদিন নিশ্চয়ই মানুষ মানুষকে মন দিতে শিখবে


রক্তের চিৎকার
ধারালো পেরেক ঠুকে শত ছিদ্র করা হল
তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
উপড়ে ফেলল চোখের মণি
বুক চিরে
হৃৎপিণ্ড বের করে এনে উল্লাসে মেতে উঠল
শেষে চাপাতির আঘাতে ছিন্ন হল মস্তক
 
হাহাকার করে উঠল ভোরের পাখি
শাসকেরা মাটির তলদেশে পুঁতে রাখল
রক্তাক্ত ধুলো
ভেবেছিল নিশ্চিহ্ন হল পথের কাঁটা
হাতে লেগে থাকা রক্তের রঙ
মেহেদির রঙ বলে মানুষজনকে ধোঁকা দিল
 
কে জানতো সেই রক্ত একদিন জ্বলে উঠবে
একশ হাত মাটির তল হতে
সেই রক্তে যে আগুন লুকোনো আছে
সেই রক্ত
আবার চিৎকার করে উঠল নতুন মিছিলে


নাট্যমঞ্চে
লুট হয়ে গেছে প্রেমিকের চোখের মণি
থমকে আছে পত্র-পল্লব, ফুটে উঠছে শত রকম ক্ষত
জগতের হাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হৃদয়ের আয়না
মনে হচ্ছে কোথাও কিছু নেই, কোনো গন্তব্য
গলিতে নেই কারও পায়ের আওয়াজ-আপন কী পর
শেকলের নূপুর বাজিয়ে নৃত্য করছে নর্তকীর দল
চোখের কার্নিশে বাসা বাঁধে না কোনো স্বপ্নের বোধ
কে জানে জ্বলে ওঠা আগুনের শিখায়
নাট্যমঞ্চে উদ্ভাসিত হয় কী না সাম্য ও ন্যায্যতা


হে মাতৃভূমি
পুষ্পোদ্যানে ফাঁদ পেতে আছে শেয়াল
আকাশে কাকের বিদঘুটে চিৎকার
ধানক্ষেতে ঘাপটি মেরে আছে ইঁদুর
রাজপথে নিষ্পেষণের চাকা
অলিগলিতে ঘুরছে হায়েনার দল
পাটক্ষেতে তোমার ছিন্নভিন্ন প্রতিবিম্ব

সবুজ উদ্যান রক্তে রঞ্জিত
বসন্তের রঙ রক্তে রঞ্জিত
নদীর স্রোত রক্তে রঞ্জিত
রক্তে রঞ্জিত তোমার অশ্রু

হে মাতৃভূমি,
আঁচল হতে ঝেড়ে ফেলো অশ্রু
বুকের অজস্র ক্ষতচিহ্ন
দুঃখ করো না, তোমার আপন আলোয়
ফুটিয়ে তোলো চাঁদ আর সূর্য

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top