Home » গান ও গ্রামার সিরিজ ।। সুবীর সরকার

গান ও গ্রামার সিরিজ ।। সুবীর সরকার

 ১.

সাদা কালো ছাড়াও কত কত রং আছে।

কার্তিক মাসের পৃথিবীতে হিম পড়লে

অপেরা হাউসের সামনে পাখি ও পাখির

                                                   পালক

কেউ সরে গেলে।

কেউ নদী ভুলে যেতে বললে।

মনখারাপের দুপাশে দেখি সেই পুরনো 

                                                   খরগোশ

২.

কতদিন আয়নায় মুখ দেখি না।

কতদিন বুধবারের হাটে চিরুনি কিনি

                                                 না।

জলাশয়ে নেমে যেতে যেতে

ইদানিং জোড়া পুকুরের পাশে দেখি ভিনদেশী

                                                পাখিদের তাঁবু।

লিরিক লিখতে গেলেই আমার লিরিল সাবানের

                                                     কথা মনে পড়ে

৩.

আর একটা আলো নিভে যাওয়া হাইরোড।

আর ঠোঁট থেকে ছিটকে আসা হাসি।

নদীর ওপর মেঘ।

মেঘের রং কালো।

কালো মেঘের নিচে অনিবার্য 

                                        হুদুম দ্যও।

চারপাশে ভাঙা চেয়ার।

মৃদুমন্দ বাতাস।

অথচ এখানে কিন্তু দোলনা থাকার কথা ছিল

নির্জন মানুষের চোখে যে শুন্যতা ছায়া ফেলে

সেই ছায়ার গল্পে  নুতন রূপকথা,ব্যাঙের 

                                                            ডাক

৪.

মাছ ও পাখিদের ছবিতে

গান ও গ্রামার খুব নিচু হয়ে 

                                     ঢোকে

দূরের শহরের আলো থেকে সরে আসতে

                                                             থাকি

আমরা ভুলে থাকতে চাই হরিণের 

                                              জলপান।

ফরেস্টের ভেতর যে গোপন গর্ত 

সেখানেই জল খেতে আসে জখম

                                           বাঘ

৫.

ধানক্ষেত গমক্ষেত ভুট্টাক্ষেত থেকে

হাজার হাজার পতঙ্গ উড়ে আসে

তুমি মাটির দেওয়ালে ছবি আঁকতে 

                                             থাকো

জানো তো,কিছুই গোপন থাকে না আজকাল

বন্দুকে মরচে ধরে গেলে।

তিরধনুকে আস্থা না থাকলে।

চোখ ও চোখের জল গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠতে

                                                      থাকে

এদিকে আমরা তাস খেলতে শুরু করি।

আমরা লটারির দোকানে গিয়ে 

                                         সিগারেট ধরাই।

কত কান্না কাঁদবে তুমি।

কত আগুন নিভিয়ে নিভিয়ে একটা নিভৃতি

                                জাগিয়ে রাখতে চাও তুমি!

আগুন তো আগুনের মত জ্বলবে।

ইতিহাস থেকে ছিঁড়ে আনা হবে ভূগোল।

এভাবেই গড়িয়ে যাবে জীবন

অসুখ আর অসুখ পরবর্তী ঘটনাগুলি আপাতত

                                                             বরং

নুতন আখ্যান হয়ে ফিরে আসুক।

আর বাদ্য বাজুক।

আর বাজনা বাজুক।

পালিয়ে যাওয়া গিনিপিগের পেছনে বরং ছুটতে থাকি

                                                             আমরা।

৬.

ভাঙা ঘড়ি ফেলে দিয়ে বারবার আসি 

                                                  নদী কিনারায়।

বাতিল হয়ে যাওয়া ফুটনোট।

কত বছর পরে গান ফিরে আসছে।

এই যে অঞ্চল,মিথ,ইতিকথা কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেঁটে

                                                       বেড়াচ্ছি

এই যে চোখের জলে দুলে উঠছে পৃথিবী

ধরা যাক গুহা,

হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়তে হচ্ছে।

পতাকা হাওয়ায় দোলে।

হাওয়ার ভেতর সাইকেল।

মাঝখানে শূন্যতা বসিয়ে যে যার মত দূরে চলে

                                                         গেল

৭.

ছবি জুড়ে বরফের বাগান।

ছবি জুড়ে কাউবয় টুপি।

সব ছোবলে বিষ থাকে না।

তোমাকে এড়িয়ে জন্মাতে থাকে কথা 

                                          ও কিংবদন্তি

দেওয়ালে ফাটল।

দেওয়ালে পাখিদের ছায়া।

মৃদু ও মন্দ দিয়ে আমরা গড়ে তুলি 

                                                সম্পর্ক।

৮.

একদিন ঘোড়ার পিঠে চড়ে বৃষ্টির দিন খুঁজতে 

                                                           যাবো 

ভ্রমণের গল্পে গান বাজলে 

জেগে ওঠে নাচঘর,মায়াবি 

                                      ঘুঙুর।

নিচু হয়ে মাঠে নেমে আসা লোকজন

কান্নার দাগ অনুসরণ করে কেবল

                                           হেঁটে যেতে থাকে

সরে যাচ্ছে চারণভূমি।

সরে যাচ্ছে ক্ষেত খামার।

পাশবালিশ ও বন্দুক নিয়ে কথা বলছেন

                                                  ভিনদেশী শিকারি 

ঠোঁটের তিল ঠোঁটেই থাকে।

সাঁকো থেকে লাফিয়ে নামি শীতের

                                                  নদীতে।

প্রিয় হয়ে ওঠে হেডলাইটের আলো।

প্রিয় হয়ে ওঠে সাঁতারুদের 

                                   রাতপোশাক।

৯.

‘বারবার রাস্তা আটকে দিলে খুঁজতে শুরু করি নতুন

                                                              রাস্তা’

চমকে দেবার জন্য বেছে নিই মধ্যরাত।

মঞ্চে আলো,চেয়ার,কলম ও

                                       চশমা।

হাওয়ায় তাঁবু উড়ে গেলে 

মৃত উদ্যান জুড়ে গান বাজে।

স্মৃতিতে বৃষ্টি ভেসে এলে মাঠে মাঠে

                                                 ফুটবল

গোলপোস্ট নেই,

শুধু গোলকিপার আছে।

গাছে গাছে হেলান দেয় রোদ।

ঘোরানো সিঁড়ির নিচে দু চারটে 

                                         পাখিশাবক।

ধবল বক উড়ে গেলে

বনজঙ্গলে পড়ে থাকে একটানা

                                          শিস।

সাদা রঙের বাড়ির পাশে কেউ রেখে গেছে

                                                   হলুদ গিটার

হাতঘড়ি খুলে রাখি।

মিউজিয়াম থেকে তুলে আনি হাতকুঠারের

                                                    ছবি 

দৃশ্য বদলে যায়।

না কি দৃশ্যের বদল হয়!

চোরাগোপ্তা খুনের খবরে শিহরণ লেগে

                                              থাকে।

আমরা পিঁড়ি পেতে বসি।

আমরা আপেল খেতে শুরু করি।

গল্পের ভেতর ঢুকে পড়ে শ্যাওড়াগাছ ও

                                              দৈত্যদানব

স্পর্শ করি তপস্যা।

স্পর্শ করি সুড়ঙ্গ।

ঘোলা জলের পুকুরে ব্যাটারি গড়িয়ে

                                             দেই

সাঁকোর নিচে সরোবর।

সরোবরে ভাসতে থাকে বিলুপ্ত

                                      ভাষা।

মাঠের কিনারে যাই।

সূর্যের আলোয় পড়তে শুরু করি

                                              পুঁথি।

১০.

পুরনো পাখিরা ঘরে ফিরছে।

উল্টে যাওয়া দোতলা বাস।

জাতীয় সড়ক দিয়ে মিছিল যায়

নদীর জলে মুখ দেখে আমিও বাড়ি ফিরবার

                                                  রাস্তায়

হামাগুড়ির এই পৃথিবীতে অভিশাপ ঘুরে

                                                       বেড়ায়

চিন্তা করবেন না।

আমি শেষ বলে ছয় রান তুলে নেব সহজেই।

ওড়নায় যখন মুখ মুছবে

তখন চারপাশটা অন্যরকম হয়ে

                                        উঠবে

আশ্বিনের বৃষ্টিতে ভিজে যায় নীলকন্ঠ পাখির

                                                      পালক

প্রস্তাবিত ঘুমের মধ্যে গান ও গ্রামার।

পিঠে পুলির গ্রামে যাই।

মাটির দেওয়ালে হলুদ রঙের 

                                    ময়ূর আঁকা।

বাজনা ভুলে যাওয়া বাদ্যকর 

সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলে ওঠেন_

“আমাদের সব বাজনা নিয়ে নিরুদ্দেশে চলে গেছে

                                              সারিন হাতির মাহুত”

বুকে ব্যাথা,ঝলসানো মাংস খাই।

এবং বাঁশিটি করুন সুরের।

নদীতে সাঁতার কাটা আপাতত বারণ।

সেজে উঠছে বরণডালা।

সারারাত নাচ হবে,ভেজা মাঠে শুয়ে থাকবে

                                                মৃত শালিখ

কার্নিশে ঝুঁকে থাকা মেঘ।

খোলা চুলে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা।

চিরুনি ও প্রসাধন।

ফুটো হয়ে যাওয়া 

                        বেলুন।

দাড়িয়াবান্ধা খেলবো বলে একা একা চলে

                                                     আসি

প্রতিরক্ষা থেকে শিখি।

গড়িয়ে দেই প্রতিহিংসা।

দুপুরের পর দুপুর কেটে যায়

                                   সরষেক্ষেতে।

চারপাশে ম্যাজিকহীন সব মানুষজন

সাদা রঙের শহরে জোকারের টুপি

শিহরণের পাশে ত্রাণশিবিরের মৃদু

                                                 আলো

হাসির শব্দ শুনতে পাই।

অন্যমনস্কতার আড়ালে হর্নের

                                          শব্দ।

হাত থেকে রুমাল খসে পড়লে 

চোখে চোখে জুড়ে বসে সন্ত্রাস।

কুয়াশায় ভোরের আলো।

উজান ও ভাটির মাঝে জন্মাতে থাকে

                                                উৎসব।

আমরা মাঠে মাঠে কুড়োতে থাকি

                                          চশমা ও ধানশিষ


.

.

সুবীর সরকার

সুবীর সরকার. জন্ম 1970, 3 জানুয়ারি. নয়ের দশকে লিখতে আসা এ কবি উত্তরের লোকজীবনের সাথে জড়িয়ে আছেন তীব্র ভাবে. ত্রিশ বছরের বেশী সময় ধরে কবিতা, গদ্য সহ বিভিন্ন ধারায় অনায়াস যাতায়াত করেছেন. বাংলা ভাষার প্রায় সব কাগজে নিয়মিত লেখালিখি করেছেন, করছেন. 1996 সালে তাঁর প্রথম কবিতাবই প্রকাশিত হয় কবিতা পাক্ষিক থেকে. গুরুত্বপূর্ণ কবিতা ও গদ্যের বইগুলো- ধানবাড়ি গানবাড়ি, মাহুত বন্ধু রে, নির্বাচিত কবিতা, বিবাহ বাজনা, নাচঘর, উত্তরজনপদবৃত্তান্ত, মাতব্বর বৃত্তান্ত, ভাঙা সেতুর গান. পেশায় শিক্ষক এ কবি ভালোবাসেন রবিশস্যের খামার বাড়ি, সাদা ঘোড়া আর যৌথ যাপনে চাঁদের আলোয় কবিতা আড্ডা, লোকগানের আমেজ.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top