কবিতা ।। বিস্বাদের নীল চোখ ।। ফারুক আফিনদী

✿ জীবন: সন্ধ্যা ও শিশির

দেখলাম। জীবনটিবন কিছু নেই। লকলকে কোনো দৃশ্য দেখিনি কখনো এ নামে, বিষাদ বা
বিস্বাদের নীল চোখ-। হাত, নিখাদ বুক, ভাষাময় নিশ্চুপ মুখ- যা দেখছি, তাদের কারো নাম
জীবন নয়। তাদের একটা নাম আছে, আমার নামের মতো। যেমন আমাকে ডাকলে আমি চলে
আসি। যখন ডাকবে নাম ধরে, আমরা চলে যাব। সঙ্গে যাবে হাত, চলে আসবে পা। খোলা বুক
নিয়ে আমরা চলে যাব নীল বা আরো কালো চোখের মতো। আমার নামের মতো এদের নাম,
প্রত্যেকেরই আছে মুখ। কিন্তু জীবন নামে কাউকে তো দেখিনি কোনোদিন।
এটা দেখছি যে চঞ্চল একটা হরিণ ছুটিয়ে দেয়া হয়েছে অরণ্য থেকে প্রান্তরের দিকে। যেন ছুটতে
পারি মায়ায়। মায়ায়। আর পেছন থেকে বাড়ানো আছে এক অক্লান্ত অমসৃণ শিকারী হাত, ছুটছে-
হ্যাঁ, দড়ি বেঁধে ধরে আছে জনমভর। টানছে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাসে নিঃপ্রেমে- অনিঃশেষ প্রেম-।
একটা সাদা মেষ যেভাবে বারবার গো ধরে মুখ দিচ্ছে শস্যে- ঘাসে-। যেতে চায় না এই মাঠ ক্ষেত
ছেড়ে।

এখানে, খেসারি- মটরের পাতায় জমে আছে
সন্ধ্যা

ঘাসের ওপর রাখা আছে
শিশির

সূর্য ওঠো- এই! মুক্তা- এই!

 বিষাদ ছুঁই

বিষাদ ছুঁইব। চাঁদের মতো- ফাঁস করে দেবো, হাতে নিয়ে দেখবো ওর অরক্তিম ধুলা।
বিষাদ! বিষাদ! ছুঁইব তোরে।
এবার। এবার। দেখ।

চন্দ্রিমা থেকে উঠে এসে সরোয়ার্দীর ঘাসে-

গাছের নিচে— একটু ছায়া, একটুুখানি রোদ। কেউ দাঁড়িয়ে- শুয়ে কেউ– চামড়া বেচা নারী,
উন্মুল শিশু, রাজনৈতিক কর্মী এবং এক কবি। আর দৈনিকের রিপোর্টার (ভুল খবর নিয়ে এসেছে
এখানে, এখানে কোনো সমাবেশ নেই, পিঁপড়ার মতো আসছে না লোক)। অফিস শেষে গাঁজা খেতে
এসেছে এক যুবক। এক তরুণীর লাল চোখ চাঁদ ঘুরে এলো।

সিগ্রেটের গ্লিটারিং ছাইয়ের ওপর…। ধীরে- ঝরে পড়ে চাঁদের মহিমা। বিষাদ ছুঁই- চন্দ্রারোপিত
বিষাদ- এ পর্যন্তই। এরপর ঘাম ঝরিয়ে নামে রাত। রাতচরা পাখিটির চোরা চোখ- ক্রুর অন্ধকারে
ওড়ে। আমি বারবার চকচকে ছাইয়ের মহিমা খুঁজি। পাই কি?

ভেবেছি, বিষাদ ছুঁইব-
ব্লেন্ডারে ঢেলে দিই ক’মুঠ বিষাদ দানা। বিষাদিনী এসে— ঢালে কাঁচের মগে এক মগ পানি- এক
চামচ লাল চিনি। ইলেকট্রিক সুইচ অন। আমি চেয়ে থাকি, চেয়ে থাকে বিষাদিনী। আমরা আর
তাকাতে পারি না। আলোর সাথে আলো মেশে, মধুর বিষ-। ঝরতে থাকে বিষাদের ওপর।

নিচে হতে থাকে অপেয় জুস।

 অতিমহাজাগতিক

এই চাঁদ
চাঁদের দেহ থেকে এসে- সূর্যরে নিচে- ধূসর ফড়িংয়ের মতো ঘুরে
বোবা-; অন্ধকারে-

মিশিয়েছে হলুদ ঠোঁট-
একে একে-

এক চাঁদ- ফিরিয়ে রয়েছে দুদিকে মুখ-
আধো রাঙা-
রূপার মতো বুক তার হয়ে পড়েছে
বিস্তৃত- কৃষ্ণচুড়ার বনে-

বেরিয়ে পড়েছি আমি, তুমি এসেছ এই উজ্জ্বল উঠানে

রাঙা-ঠোঁট নিয়ে সরে গেলো এক চাঁদ। নীল!
নীল হয়ে চলেছে
জোছনা-। এরপর-

তুমি আমি- ঘরে, অন্ধকারে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top