০০০০
পেছানোর ফরমুলা
মফস্বলে বড় হতে থাকা আমাদের কৈশোর কাটে যৌবন প্রাপ্তির অপেক্ষায়; আড্ডা-প্রেম-গান-কবিতায়। বামে নদী-ডানে পুকুর, আড্ডার জায়গা শুকনা থাকে আমাদের জন্যে।
‘হবে’ শব্দটা মস্তিষ্কের ভেতর থেকে গলা বেয়ে বা’দিকে নামে, আলোচনা চলতে থাকে মস্তিষ্ক বনাম মনের সঙ্গে, আলোচনার মূল বিষয় ‘প্রেম’।
-হবে?
-হচ্ছে না, পথ পাল্টাতে হবে!
পাল্টা-পথে হবার চেষ্টা শেখায় নানান কৌশল, মনে করায় শেষরাতে জাফরান কালিতে লেখা ‘প্রেম তাবিজের’ ব্যবহার-উপকারিতা সহ দু’শ-একাশি টাকা গচ্ছার প্রসঙ্গ!
‘প্রথম প্রেমে সফল না হইলে পরবর্তী প্রেম অসম্ভব’- ভাবনাটা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয় আমাদের।
অপ্রাপ্তবয়স্ক আমরা খুঁজি নিষিদ্ধ-প্রাপ্তবয়স্ক জায়গা!
ইশকুল ফাঁকি দেয়ার-টপকানোর-দেয়াল আমাদের চিনে রাখে; বলে― ভবিষ্যৎ অন্ধকার!
আলোর পথে আমরাও খুব একটা যাই না,
‘আগানো’ আমাদের কাছে শেখে ‘পেছানোর ফরমুলা’।
০০০০
সুষম বন্টন
কৃষ্ণচূড়ার লাল তিনটি স্ত্রী ফুল জড়িয়ে যাচ্ছে একটি পুং পাতার সঙ্গে আবার গোলাপের চারটি পুং পাতা জড়িয়ে যাচ্ছে একটি স্ত্রী ফুলের সঙ্গে।অন্যদিকে মিছিলের আওয়াজ, রজনীগন্ধা-শিমুল’দের অনশন, দাবি একটাই― প্রেমের সুষম বন্টন চাই!
০০০০
বৃষ্টি-ভাবনা
বৃষ্টি পড়ছে চাঁদে, আষাঢ়-শ্রাবণে শ্যাওলা জমা পুরোনো-কনক্রিট-ঢালাই ছাদ-রে চাঁদ-চাঁদ লাগে যখন তোমারে ভাবি, ভাবি চাঁদের কলঙ্ক/সৌন্দর্য গুলা শ্যাওলা।
আমারে দিয়া হওয়া তোমার কলঙ্ক গুলারে ভাবি!ভাবতে ভাবতে আওলায়া যাই।আওলায়া গিয়া
ভাবি― হাবু’দের বাড়ির আড্ডার কথা; টুয়েন্টিনাইন, কলব্রীজের কথা।ভাবি ইন্টারমিডিয়েটে অকৃতকার্যতার কথা, পদার্থ-বিজ্ঞানের কথা, বাড়ি থেকে কিছুদিন হারিয়ে থাকার কথা!
ভাবি শাহবাগের কথা, মধুর ক্যান্টিন-আজিজ সুপার মার্কেট-মারজুক শা’র মাজারের কথা, কবিতার কথা; জীবনানন্দ দাশ, আবুল হাসান, হুমায়ুন আজাদ, শিবরাম চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপল কুমার বসু, নির্মলেন্দু গুণ, ভাস্কর চক্রবর্তী, আল মাহমুদ-দের কথা; তাদের বৃষ্টি-ভাবনার কথা।
ভাবতে-ভাবতে বৃষ্টি থামে; শেষ ক’ফোটা বৃষ্টি দেখতে দেখতে―
‘আওলায়া দিয়া কত-কত ভাবনাই না ভাবাও;
তোমারে কে ভাবায়, বৃষ্টি?’
০০০০
সদ্য সাবেক সহ-প্রেমিক
তার মহল্লার সব চিপা-চাপা গলি, গলির আশ-পাশের চা-দোকান, চায়ের কাপ, তৃতীয়/চতুর্থ চেষ্টায় জ্বলা লাইটারের আগুন, পাশে বসে থাকা মুরুব্বির খোঁচা সম্মিলিত মুচকি হাসি― ‘নতুন প্লেয়ার!’, চামচ-কাপের সঙ্গীতচর্চা, পাশের সেলুনের আয়না-চিরুনি; কুচিকুচি হয়ে কেটে-পরে-থাকা চুল, ময়লার ভাগাড়, বৈদ্যুতিক তারে গুন-গুন করতে থাকা দাঁড়-কাক, টিনের চালে-পড়া-আমের শব্দ, তার অংশের চাঁদ-সূর্য; বৃষ্টির ফোঁটা, তার আসা-যাওয়ার অনির্দিষ্ট সময়, শুকাইতে দেয়া তার যাবতীয় পোশাকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় প্রায় চার বছর; ইদানীং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে! তাদের সাথে-সাথে অভ্যাস নামক ব্যাপার-টাও আমার সঙ্গে অভিমান করে আছে―
দূর থেকে তাদের মশকরার আওয়াজ পাওয়া যায়, সহ-প্রেমিকের চরিত্রে নাকি আমাকে বেশ মানায়!