Home » একগুচ্ছ কবিতা ।। তৈমুর খান

একগুচ্ছ কবিতা ।। তৈমুর খান

রাস্তা
রাস্তা যেমনই হোক লক্ষ্য শুধু হাঁটা
একটি পৃথিবী থেকে অন্য এক পৃথিবীর দিকে
আমাদের ভাষার ভিতরে অন্য এক ভাষা আছে
আমাদের বাঁচার ভিতরে অন্য এক বাঁচা

রাস্তা খুঁজে খুঁজে বনভোজনের মাঠে
একটি শুধু মৃত প্রেম বয়ে নিয়ে গেছি
আমরাই নক্ষত্রের সাইকেলে

ooooooooooooo

সবিনয় নিবেদন
তারপর সোনালি হাঁস, স্বপ্নদিঘি, চাবিগুচ্ছ
স্বপ্নের তীর ধরে সোজা হেঁটে গেছি
মৃত বিশ্বাসকে বাঁচিয়ে তুলেছি
তারপর সবিনয় নিবেদন
একে একে আকাশে বাতাসে চিঠি লিখে গেছি

ooooooooooooo

চরিত্র
সারাটা দিন অন্নহীন
শোনো, তবু কখনো চোর ছিলাম না
খড় বিছিয়ে রাত্রিযাপন
শোনো, তবু রাতে যাইনি কারও কাছে
আগুন ছিল, উত্তাপে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়েছি
এ ছাই কেউ নেয়নি হাতে তুলে

ooooooooooooo

নববর্ষের চিঠি
মালতীকে চিঠি লিখিব
আমরা কেমন নববর্ষ আনিতেছি
এমন আর কখনও আসে নাই

মাটির কলস কিনিয়া আমরা জল ভরিব
রবি ঠাকুরকে মালা পরাইয়া পথে নামাইব
নতুন কাপড় পরিয়া শঙ্খ বাজাইব

তুমি দূর হইতে জলহরিণীর মতো চাহিয়া রহিবে
তোমার উৎসুক মুহূর্তগুলি পাপড়ি মেলিবে

এবার আমরা সত্যিকারের বাঙালি হইব
তুমি বাঙালার মাটিকে প্রণাম করিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিবে ।

ooooooooooooo

এই দেশের নাগরিক
যেভাবে দোলাচ্ছ জীবন, দোলাও
দুলে দুলে পেরিয়ে যাই একুশ শতক

খাঁচার ভেতর খাঁচা
তার ভেতর এই বাঁচা—
জল দাও রোজ স্বাধীনতার পেয়ালায়

কে যায় ? সংবিধান !
ধর্মনিরপেক্ষ জমি
জমিতে জমিতে ফসল সংশয়

ও ভোটবাক্স, দোলাও জীবন
আমরা গণতন্ত্র খুঁটে খাই ।

ooooooooooooo

ঘাতক
পাতায় পাতায় অনিশ্চিত জীবন লেখা গাছ
ছায়ায় বসেছ ঘাতক !
দু’দণ্ড বিশ্রাম নিয়ে হাতে তুলে নেবে অস্ত্র
বিমূঢ় পথের ধারে লুটিয়ে থাকব
নিথর বিশুষ্ক দাহ্য কাঠ ।

আমার মৃত পৌরুষে উড়ে এসে বসবে বিকেলের কাক
মিছিলের শেষ শ্লোগানের ডাক
বাতাসের স্বরলিপি হয়ে বেজে যাবে —
কেউ আর ডাকবে না
আকাশের শূন্য করতলে
অচল পয়সার মতো ভেসে উঠবে চাঁদ

ইতিহাস রোজ এসে লিখে নেয় :
আর একটি কারবালা, ধ্বংস এবং এজিদ….

ooooooooooooo

প্রণয়কাল
ঝড়ের মাতম এগিয়ে আসে
শ্রাবণের কাঁকন ভেঙেছে
উপছে ওঠে বুক, বুকের সন্দিগ্ধ শিষ

এলোমেলো বাঁশি খুলে দেয় সুর
স্বরলিপি কে কার সন্তান ?
বাগানে বাগানে চলে বৃষ্টির স্কুল

আলপথ ধরে হেঁটে আসে মরশুম
ঝিলিক রোমাঞ্চ জামা পরেছে বিকেল
আমরা পাতক হই রোজ তার কাছে

কেউ নেই লাইনে এখন , সন্ধের শ্লোক শুধু
অঙ্কুরোদ্গম চাইছে স্বপ্নের বীজ
প্রত্যেক প্রেমিকই চাষি, হৃদয় তার শ্রাবণের মাঠ

ooooooooooooo

সীতা
এখনও বলিনি কথা ওকে
আমার অসুখ জেনে গেছে প্রত্যেকে

সুর ছিঁড়ল, দূর গেল দূরে
পাখি উড়ল বনে
আমি একা মগ্নভাষা কুড়োবার
টানে
বসে আছি একাকী গোপনে

নীলক্ষেত ডুবে যায়, নৌকায় ভরসা চেপে ঘোরে
বর্ষাহীন জলাশয় , স্রোতে ভাসে মহাশয়
সোজাপথের মাঝি তার নাম সংশয়
কেবল দোলায় জীবন জীবনের ভারে

দাও দাও ছিন্ন হাত, যেটুকু বাঁশি বাকি আছে
তাই বাজাব, ওগো রাবণ, সীতা তো তোমারই কাছে….!

ooooooooooooo

নির্বাসনের হুইসল
প্রেমের রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে সন্ধে হয়ে এল
এই অন্ধকারে সব নির্জন গ্রাম্য স্টেশনে
আলো জ্বলে গেছে

কোনটা প্রেমের ট্রেন ? কোন দিকে যাবে ?

কেউই বলতে পারে না –

কোনও কোনও জানালায় কিশোরী রাই
কোনও কোনও জানালায় নিমাই সন্ন্যাসী

স্টেশনেই হয়তো আমার রাত কেটে যাবে
কেউ জিজ্ঞাসা করবে না কুশল
কেউ ভিক্ষা দেবে নাকো প্রেমে অন্ধ ভিখিরিকে
শুধু নির্বাসনের হুইসল বাজবে
ট্রেন চলে যাবে ছেড়ে
দূরে, বহুদূরে…..

ooooooooooooo

বিদ্বেষের বাড়ি
বিদ্বেষ বাড়ি তৈরি করেছে
আমরা দেখতে যাচ্ছি বিদ্বেষের বাড়ি
সঙ্গে আলো নেই
সঙ্গে আছে ধর্মের সুড়সুড়ি

জয়ের পতাকা উড়ছে
বিজয়ের রথে ছুটছে ধ্বনি
কুরুক্ষেত্রে বাণ ছুড়ছে
আমাদের নবজন্মের ফাল্গুনী

রক্ত গড়ছে
সেতুতে সন্ধ্যা নামে
বিদ্বেষ বাজাচ্ছে বাঁশি
জাত-ধর্মের নামে ….

ooooooooooooo

নির্বুদ্ধিজীবী
বিপদ এসে বিপদ মুক্ত করবে আমাদের
বিশ্বাস জাগাচ্ছে সব রাজনীতির লোক
অঙ্গীকার এসে করছে আস্ফালন
চণ্ডাল অশোক আজ হবে ধর্মাশোক

আমরা নির্বুদ্ধিজীবী দলে দলে
মঞ্চের চারপাশে পরম কৌতূহলে
হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছি
হয়তো বুঝি না কিছু তবু মাজা দোলে

এ নাচে, ও নাচে
সুখেও অসুখ বাঁচে
চাঁদ গড়াগড়ি যায়
আমাদের স্বপ্নের কাছে…

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top