কপোলে গচ্ছিত
প্রত্যেক প্রেমিকাকে মা বলে ভ্রম হয়!
তাদের কাছে পুত্র হিসেবে লালিত হতে ভালো লাগে
যেন আমার যৌবনকাল আপেল বন অতিক্রম করছে
প্রেমিকা বলে—এখন পৃথিবীতে জারজকাল প্রবাহিত!
এরপর ঘুমকাল আসবে! আমি ভাবলাম—
বাধ্য ছেলে হয়ে ঘুমের উরুতে মাথা রাখবো।
আলস্য ঋতু চলে যাবার পর ঘুম ভাঙে
দেখি—মা আমার পূর্বপুরুষের সাথে লিপ্সায় মত্ত
এবং উত্তর পুরুষকে দুগ্ধদানে ব্যস্ত
তিনি বলেন—প্রেম কখনো নিজেস্ব সম্পদ নয়;
সবার মাঝে বিলিন হওয়া তার মহত্ব!
ভালাবাসা জোয়ার-ভাটার মতো স্রোতস্বিনী নদী
তার আকাঙ্ক্ষা শুধু মিলন মোহনায় স্থির হওয়া
পুত্ররা চিরকাল অস্থির—অবাধ্য—চঞ্চল!
সে কারণে বিষন্নতা তাদের কপোলের কাছে গচ্ছিত থাকে!
আদমের একাকী অসুখ
মহাজীবনের স্বপ্নে প্রতিদিন মহুয়া আমার—তবু সে ফুরিয়ে গেল! এ যেন বিশুদ্ধ ইচ্ছেশক্তির সমর্পণ। কতো ছুঁই অথচ সে গলে না। আজ আমাদের উৎসবের দিন—কিন্তু সে যেন জুড়িয়ে যাওয়া বরফের মেয়ে! আমার কেবল একাকী নির্জন অসুখ। যার লক্ষণরেখা বরাবর—নৈঃশব্দ্যের হামাগুড়ি। আমার ধুতরা ফুলের মতো হাসিতে সে পাগল হয় না আর! তার চিত্ররূপময় হাসিতে খোলে না মুগ্ধতার জানালা। নক্ষত্রের নাকফুলে সে যেন গৃহবন্দী। আমিও হাঁটছি তার গভীর তলদেশে! তার খনিজ গমের সিন্দুকে চোখ রেখে বলেছি—স্বর্গীয় উচ্ছাসের কথা। তবু তার তীব্র ও নরম সাহস আমাকে করে তোলে জড়োসড়ো। আমি তার চোখে পরিয়ে দিয়েছি জীবন দেখার চশমা অথচ কিছুতেই যেন মেটে না তার শরীরি উদ্বেগ! সে যেন স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হাওয়া! তাই তার মুখে লেপ্টানো উদ্ভন্ত আদমের রেখা! আমার সহজ প্রেম— নৈরাশ্যময় তিক্ততায় ভরা। সে কি ফেলে এসেছে আয়নার ওপারে বাস্তবের মুখোশ? যে কারণে জীবনের শরীরে তার বড্ড অনীহা। কিন্তু আমি তার সুক্ষ্মতাপ্রিয় প্রতিভায় মুগ্ধ আদম। তার ভঙ্গুর হৃদয়ে পরাতে চাই অমরাবতীর অঙুরি। কারণ আমি সেই স্বর্গত্যাগী আদম যার একাকী অসুখে পুড়ে গেছে পৃথিবীর যাবতীয় শস্যের পেট! হাওয়া খেয়ে বেঁচে থাকা এ এক দারুণ হাশর।
আকাশ পাড়ের শুকতারা
ডুবন্ত সূর্যের আলো নিয়ে বসে আছি—মধুশালায়। সূর্য ডুবে গেলে আমিও ডুবে যাই। আলো ছাড়া চোখ বড় দুঃখের। লুপ্ত সৌরভের কাছে উদাস হয়ে ডুবে যাচ্ছি। যেন আমি সাগর বেলাকার ঝিনুক। গরম দুধের বাটির মতো আমার স্বপ্ন। মরা গাঙের আকাশ পাড়ের শুকতারা আমি! তুমি আকাশ প্রিয় সূর্য মহুয়া। কালো জামের বিচির মতো তোমার জমাটবাধা চোখ দিয়ে বের হচ্ছে—সুরের আগুন। অথচ আমরা উজান ভাঁটির খেলায় জমে উঠেছি এই পোড়ামুখো দেশে। মধুর ঠোঁটের মতো স্মৃতি ঝুলে পড়ছে আগুন ঝলসানো পদ্মফুলে। তোমার ছবির মতো মুখে কপাল জুড়ে রহস্যমেদুর আল্পনা। যেন তুমি আহ্লাদী মাটির পোড়ানো পুতুল। রূপোর ঝিনুক থেকে আলতা কুঁড়িয়ে মুছে দিচ্ছি—তোমার স্বর্গীয় পায়ে। রাখালিয়া রসিকতা আমার। যেন আমি শুধু তোমার স্রষ্টার মতো একক খেলুড়ে!
নকশাকাটা শরীল
বিদুষী কবিতার মতো তোমার প্রতি আমার একক পক্ষপাত! যদিও এই শুড়িখানার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে—সাতটি নরকের কালো ঢেউ। আর তাতে ভেসে যাচ্ছে চাকা ও জাদুকর! লাজুক কবিতার শিরোনামে—আমি ঢুকে পড়ছি তোমার শারীরিক সৌখিন শিসির ভেতর। তুমি আমাকে দৈত্য বানাতে চাও? কিন্তু পারো না! তোমার স্তনের পাথরে ঘষে দিচ্ছি ঠোঁটের কষ্টিপাথর! তুমি বলছো মধুশালায় আজ নামবে পাহাড়ী জ্যোৎস্না! যেন সুধা সমুদ্রে ডুবে বাতাসে পাতা ফাঁদে—বিষাক্ত মাকড়সার মতো আটকে পড়ি আমি! তোমার নকশাকাটা দেহে ঠোকরাচ্ছে আমার স্মৃতির আঙুল! এই সস্তা রাগে—তুমি যেন ফুটে আছো শাকুরার বাগে।
তৃতীয় ডানার অসুখ
মহুয়া থেকে যত পালাতে চাই—ততই সে আমার কবিতার ভেতর ঢুকে পড়ে! যেন তুমি কোনো অনিন্দ্য সুন্দর চমকানো প্রাসাদের জানালা। ঢুকে পড়েছো শান্তির বাতাস ও আলো। সেই আলোয় চোখ অন্ধ হচ্ছে আমার! দরজা খুঁজে পাচ্ছিনে। যেন তোমার সরু কোমরে কামড়ে আছে—একটা ভীতু অথচ বনজ শামুক! আর হেলে পড়া মসৃণ স্তনে ঘাপটি মেরে পড়ে আছে—হরেক রঙের প্রজাপতি। তুমি কবিতার মতো পুরনো ও প্রাচীন পৃথিবীর নারী। তবু তোমার সুরে বিপুল প্রলাপ। অথচ লুপ্ত নাভির গন্ধেভরা রহস্য মেদুর খেতে আমি দিন-রাত্রি আবৃত্তি করছি—তোমার সরীসৃপ পিঠের সুনিদ্রা। কারণ এই শুড়িখানার বিমূর্ত বাস্তবতার সূর্যের ভেতর খুঁজে নেব—খনিজ গমের ওম। ছালছাড়ানো মাংসের উত্তাপে হেসে উঠবে আমার হাসিমাখা মুখের বাড়ি! তুমি শুধু ইঙ্গিতময় নক্ষত্রের বয়ানে ঢেলে দাও—তৃতীয় ডানার অসুখ।
হাওয়ার বাকসো
প্রচ- শূন্যতায় শুয়ে আছো মরুভূমির মতো ডানা মেলে। আমি একটা মাত্র বালু হয়ে উড়ছি হাওয়ার মোহনায়। তোমার কাছে মহত্বের সংজ্ঞা শিখে যাযাবর হতে চেয়েছি। কিন্তু মাথার উপর সূর্য—ঘরের ছায়া হয়ে আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কিছুই হলো না আমার এই আক্ষেপ নিয়ে যখনই তোমার লাল হাসিতে উতলে উঠেছি—তখনই দেখেছি তুমি সীমাহীন জলের মতো খুলছো। আর আমি পাঠ করছি—সাঁতার পোশাকের ডিজাইন। যেন শৈশবে মাছ হবার সৌখিন বাসনা আমাকে পুড়িয়ে দিবে! আর সেই থেকে তোমার আলগা জৌলুস কাড়ে না আমায়। কারণ ওই রকম একটা গমের দানা থেকে জন্ম আমার!
আর আমি জানি—ওই বাকসোর লোভেই আমাকে হারাতে হবে সব! তুমি লোভের উপর মরমী চাদর বিছিয়ে দাও। হাওয়া-বাকসো; আমাকে দম দিয়ে ছেড়ে দাও। যেতে হবে—অনেকদূরে…
চরিত্রে ঠাসা আয়না
বংশহীন ফুলের মতো আজ আমার হেদায়েত হলো। ভাবছিলাম—পতঙ্গের প্রণয়ের কোনো ভঙ্গি আমার মুখস্ত আছে কিনা? তোমার নাকে শিমফুলের মতো শোক ফুঠে আছে। আমি ঘোষণা করছি—নারী-ই আসল মানুষ! পুরুষ প্রেমে-কামে নিদারুণ পশু! চরিত্রে ঠাসা আয়নার মতো তার বিচিত্র ছল। শোক মিথ্যে হলে ভালোবাসা শুকায়ে যায়। মানুষ কখন ভাবুক হয়? শরীর ভালো না থাকলে কল্পনা হয়ে ওঠে বেদনার। আর তখন জীবন হয়ে ওঠে শুধুই ফাঁকির। অথচ তোমার ছোট্ট নদীটার তীরে বৈঠা ফেলে বেঁধে রেখেছি—ভবিতব্যের নৌকো। সাথে সারথী হবে অমরবতীর উত্তরপুরুষ। প্রত্যেক মাতালের মতো আমাকে মেটাতে হলো দেনা। আগে এসেও আমি সর্বশেষ বহিরাগত। তবু এখানে এলে তোমাকে ভুলে থাকা যায়। এই ওষুধে আমার সামান্য বিশ্বাস। মহুয়া, মরে গেলে মানুষ—ভারি হয়ে যায়?
মাতালের স্বরলিপি
অসংখ্য ভুল পাঠের পর মনে হলো—একমাত্র সমুদ্রের সাথেই তোমার তুলনা চলে। তোমার অতলস্পর্শী ব্যক্তিত্ব ও রহস্যময় বর্ণিল চরিত্র—এই শুড়িখানায় বসে প্রথম আবিস্কার করি। মাতাল নিজেকে সবচে’ ভালো চেনে। কারণ তখন তার সঙ্গী কেবল মন। শরীল সে হারায়ে ফেলে। মাংস কখনো সুবিচার দিতে শেখেনি সেটা কি জানো? তোমার শান্ত-সুনীল ওই দিগন্তচুম্বী ফেনিল আবেগ সমুদ্রের মতো প্রবল ¯িœগ্ধ ও সুষমার ভরপুর। প্রথম কোন শুড়িখানায় তোমাকে পান করছিলাম নিপাট ও নিরেট উপস্থপনায়? সেই নেশা আজো কাটিনি আমার! বলতে পারো—মাতালের স্বরলিপি পাঠে অস্থির আমি!
প্রেমের পবিত্র ঘোড়া
শুড়িখানা থেকে ফিরে সীমাহীন ক্লান্তির ঘোরে জুতোসমেত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম—আমার কবর খুঁড়ছি আমি! নিজেই নামাচ্ছি নিজের লাশ! অনেকগুলো বিবাহিত প্রেমিকা দেখতে এসেছে আমার মৃত মুখ। ঘেউ ঘেউ করে কাঁদছে তারা! অন্য মহিলারা দেখে—আমাকে আরো ভালোবেসে ফেলবে—এই ভয়ে আমি কবরে শুয়ে পড়ি। দূরে দাঁড়িয়ে নারকেলের ঝুলে পড়া পাতা ধরে একটা রমনী হাসছে—আমি তার হাসি শুনতে শুনতে গোরকাল পেরিয়ে স্বর্গের সিঁড়িতে পা রাখি! দেখি মহুয়া—সে প্রলাপ জপছে—আগে এবং পরে তোমাকে দেখবো বলে—এতো অপেক্ষা করেছিলাম। আমরা পরস্পরের কাছে দেহহীন একক সত্ত্বার ভেতর সাঁতার কাটতে কাটতে মাছ হয়ে গেলাম! প্রেম হলো—একই সূর্য দিন শেষে ডুবে পূণরায় উঠার মতো সত্য ও পবিত্র ঘোড়া! যার দৌঁড় কোনো প্রতিযোগিতায় নয়।
আমাকে ধার করো
শিশুর দৃষ্টি দিয়ে ভালোবাসি—যেন তুমি নিরপেক্ষ ফুল! আর কখনো ঘৃণা ও হিংসা শব্দটি লিখবো না আমি। আমার চোখের দৃষ্টি তোমাকে ধার দিয়েছি। এখন তুমিই আমাকে দেখতে পারো—আমার ঘনত্ব কতো? তাতে বিশুদ্ধ নষ্ট হবে যে!