Home » অসমীয়া কবিতা ।। মূল ও অনুবাদ: হাফিজ আহমেদ

অসমীয়া কবিতা ।। মূল ও অনুবাদ: হাফিজ আহমেদ

সস্তা

সস্তা আমার জীবন, যৌবন
আমার শ্ৰম এবং ঘাম
সস্তা আমার সকল কাম।
 
সস্তা নয়
আমার জন্যে
মানবাধিকার, ন্যায় আর সমতা।
আমি সস্তার মানুষ
অতি সস্তাতেই বারবার বিক্ৰি করা  হয় আমাকে
আমার দাম অতি সস্তা।
 
 এখন মুখ খোলার সময়

এখন মুখ খোলার সময়
এখন নিজের দিকে তাকানোর সময়।
 
এখন নিজের শরীরে নিজে
হাত বোলানোর সময়
ভাইয়ের পিঠে চাবুকের দাগ দেখে
চিৎকার করার সময়।
 
এখন ওদের মুখোশ
টান মেরে খুলে
ফেলার সময়।
 
এখন সারা দুনিয়াকে
ওদের হারামিপনার স্বরূপ
দেখানোর সময়।
 
এখন তেল মারা
বন্ধ করার সময়।
আমাদের গায়ের রক্ত চুষে
ওদের যে চর্বি আর ভুড়ি বাড়ছে
ওই ভুড়ি ফাটানোর সময়।
 
এখন ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়।
ছেলে, মেয়ে, ভাই-বন্ধু
সবাইকে জাগানোর সময়।
এখন অন্ধকারের বুকে লাথি মেরে
দূর করার সময়,
এখন সূৰ্যটা কেড়ে আনার সময়।
এখন পাড়াপড়শিদের জাগানোর সময়
“হুশিয়ার হো! বৰ্গি এসেছে দেশে।”
 
জানি না তার সাথে কোথায় দেখা হয়েছিল
 
জানি না তার সাথে কোথায় দেখা হয়েছিল
নেলী, কোকরাঝাড়, বাঁশবাড়ি কিংবা খাগ্ৰাবাড়িতে?
 
হয়তোবা নেলীতেই হয়েছিল দেখা
সবুজ শাড়ি পিন্ধে, বুকে জাপটে ধরে তার দেবশিশুটি
দৌড়াচ্ছিল সে,
পিছনে তার দৌড়াচ্ছিল কসাইয়ের দল
রক্তে রাঙা হয়েছিল দিমাল নদীর পাড়।
 
বাঁশবাড়িতেই হয়তো দেখা পেয়েছিলাম তার
পরিবার-পরিজনের রক্তে কসাইরা
হোলি খেলার পর
অবশেষে সে ঠাঁই পেয়েছিল আশ্ৰয়শিবিরে
সাব্ৰা আর সাতিলার প্যালেস্টাইনী
ভাই-বোনদের মত,
রাতের আধারে নিনাদিত হয়েছিল
পিশাচের অট্টহাসি
বেকী নদীর পাড়ে পড়েছিল
তার অৰ্ধদগ্ধ দেহ।
 
কিংবা তার সাথে দেখা হয়েছিল খাগ্ৰাবাড়িতে?
ঘাতকের বন্দুকের গুলি থেকে বাঁচতে
ঝাঁপ দিয়েছিল সে বেকীর বুকে
বুকের মাঝে ছিল চার মাসের ফেরেস্তা
রক্ষা পেয়েছিল সে
নরপিশাচদের হাত থেকে
রক্তে রাঙা করে বেকীর পানি
ভেসে উঠেছিল সে
ভাটির কোনো এক অজানা চরে।
 
জানি না কোথায় তার সাথে দেখা হয়েছিল আমার
কিবা ছিল তার পরিচয়
একটি কথাই জানি শুধু
সে ছিল  জন্মদাত্ৰী মা
তোমার, আমার এবং অনেকের
অন্য একটি কথাও জানি আমি
মায়ের ইজ্জত রক্ষা করতে অসমৰ্থ
আমরা
একেকজন কাপুরুষ, নপুংসক।

নাটক চলিতেছেনাটক

শ্ৰদ্ধেয় দৰ্শকমণ্ডলী
নাটক চলিতেছে, নাটক
প্ৰত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্ৰীর
সুন্দর অভিনয়ে
নব্য জাৰ্মান প্ৰভুরা মুগ্ধ
 
চার বছর নৃত্য-নাটিকা পরিবেশন
করার পর
রঙ-রসে মাতোয়ায়া হয়ে
মসিরুপী অসি নিয়ে
ইহুদীগুলোকে সনাক্ত করতে
রঙমঞ্চে প্ৰবেশ করিয়াছে
আইকমেন
 
দ্বিতীয় অংকের পর
দেখিতে পাইবেন
গেস্টাপো বাহিনীর
অভিনয় কেমন মনোমুগ্ধকর
ইহুদীগুলোকে নিয়ে যাবে
কনসেনট্ৰেসন ক্যাম্পের দিকে
 
অবিশ্যি নাটকের শেষ
মূল নাটকের চেয়ে
আলাদাও হতে পারে
 
সময় পরিবৰ্তিত হয়েছে
মূল নাটকখানিও
দৰ্শকের অনেকেই
 
পূৰ্বেই করেছে পাঠ
ইহুদীরা তাই
বাঁচলেও বাঁচতে পারে
এবং
হিটলারদের স্বাৰ্থেই
নব্য ইহুদীদের পরিণত করা হতে পারে
ক্ৰীতদাসে।
 
বাঁশবাড়ির ফজল মিঞা
 
বাঁশবাড়ির ফজল মিঞার কথা-
তোর কি মনে পড়ে, হাফিজ?
শ্যামলা বর্ণের ফজল মিঞা
ছোট-খাট ফজল মিঞা
বড়পেটা বাজারে
সব্জী বিক্ৰী করে রাতে
সবার শেষে
ফিরে আসতো যে ফজল মিঞা।
তোর কি মনে পড়ে
সেই সবুজ ধানের ক্ষেত,
সেই মাদ্ৰাসা,
এবং আশ্ৰয় শিবির?
স্মৃতির ধূসর শ্লেটে
যোগ-বিয়োগ করে
কখনোকি বের করতে পারবি
নিজের জন্মভূমিতেই হঠাৎ
কেন দানবের শিকার হলো ফজল মিঞা?
তুই চুপ কেন, হাফিজ
ত্ৰিশটা বসন্ত পেরিয়ে এসেও?
 
(১৯৯৪ সালে বোড়ো উগ্ৰপন্থীরা সরকারি আশ্ৰয় শিবিরে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিলো দুশতাধিক লোক। ফজল মিঞাও সেদিন নিহত হয়েছিল।)

Ajit Dash

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভাষা
Scroll to Top